র্যাঙ্কিংয়ের দুই নম্বরে উঠে যা বললেন মিরাজ
শ্রীলঙ্কার বিপক্ষে দারুণ বোলিংয়ে আইসিসির ওয়ানডে বোলার র্যাঙ্কিংয়ে দুই নম্বরে উঠে এসেছেন মেহেদী হাসান মিরাজ। বাংলাদেশের বোলারদের মধ্যে এটাই সেরা নয়, সাকিব আল হাসান শীর্ষেও উঠেছিলেন। তবে মিরাজের জন্য দুই নম্বর জায়গাটি বিশেষ। দুই নম্বরে উঠে ডানহাতি এই অফ স্পিনার জানিয়েছেন, এমন সাফল্যের কথা কখনও ভাবেননি তিনি।
শীর্ষে না উঠতে পারলেও বাংলাদেশের সবাইকে ছাড়িয়ে গেছেন মিরাজ। ২০০৯ সালে সাকিব শীর্ষে উঠলেও তার রেটিং পয়েন্ট ছিল ৭১৭। দুই নম্বরে ওঠা মিরাজের রেটিং পয়েন্ট ৭২৫। যা যেকোনো বাংলাদেশি বোলারদের মধ্যে সর্বোচ্চ।
আরও একটি ভালো ভালো লাগার জায়গা আছে বাংলাদেশের এই স্পিনারের। ২০১০ সালে দুই নম্বরে উঠেছিলেন আব্দুর রাজ্জার। এরপর বাংলাদেশের প্রথম স্পিনার হিসেবে এমন স্বীকৃতির মালা মিললো মিরাজের। ক্যারিয়ার সেরা র্যাঙ্কিংয়ে পৌঁছে উচ্ছ্বসিত মিরাজ অনেক কিছু নিয়েই কথা বলেছেন।
অনুভূতি
আলহামদুলিল্লাহ! র্যাঙ্কিংয়ের দুই নম্বরে আসতে পেরে আমার কাছে খুব ভালো লাগছে। আমি কখনও ভাবিনি ওয়ানডে ক্রিকেটের র্যাঙ্কিংয়ের দুই নম্বরে আসব। আমার কাছে খুব ভালো লাগছে।
ওয়ানডে যাত্রা
আমি যখন টেস্ট খেলা শুরু করি, তখন আমি কেবল টেস্ট বোলারই ছিলাম। তবে আমার নিজের মধ্যে সব সময় একটা জিনিস কাজ করত যে, আমি শুধু টেস্ট খেলব না, আমি সব ফরম্যাটই খেলব এবং যেন সফলতার সঙ্গে খেলতে পারি। আমি যখন ওয়ানডে ক্রিকেট শুরু করলাম, আমার চিন্তাই ছিল আমি কীভাবে টিমে অবদান রাখতে পারি এবং নিজে পারফর্ম করতে পারি।
আমি ফোকাস রেখেছিলাম যে, ওয়ানডে ক্রিকেট খেলতে হলে আমার ইকোনমি রেটটা ঠিক রাখতে হবে। কারণ আমি যদি ইকোনমিটা ঠিক রাখি তাহলে আমার দলে খেলার সম্ভাবনাটা বেশি থাকবে। দলের অবস্থা অনুযায়ী যদি আমি ব্রেকথ্রু দিতে পারি এবং গেমপ্ল্যান অনুযায়ী খেলতে পারি তাহলে আমার জন্য ভালো হবে এবং দলের জন্যও ভালো হবে। কিন্তু আমি বেশি কিছু চিন্তা করিনি। আমি শুধু ছোট ছোট জিনিসগুলো চিন্তা করেছি এবং ছোট ছোট বিষয় নিয়ে কাজ করেছি। কোন জায়গাটায় উন্নতি করলে দলের সাহায্য হবে, আমি দলে খেলতে পারব, ওইসব জায়গা নিয়ে কাজ করেছি, কোচদের সাহায্য নিয়েছি।
ওয়ানডেতে জায়গা পোক্ত করা
টেস্ট দিয়ে শুরু করেছিলাম। প্রথমদিকে ওয়ানডেতে তেমন সুযোগও পাইনি। আমি নিয়মিত ওয়ানডে খেলছি ২০১৮ সাল থেকে, যেটা আমাদের ওয়েস্ট ইন্ডিজ ট্যুর হয়েছিল, আমরা জিতেছিলাম। এরপর থেকে আমি নিয়মিত ওয়ানডে খেলছি। এরপর এশিয়া কাপ, দেশের মাটিতে ওয়েস্ট ইন্ডিজ, আয়ারল্যান্ড ট্যুর, বিশ্বকাপ খেলেছি।
ওখান থেকে শুরু হয়েছে। ওখান থেকে ছোট ছোট পারফর্ম করতে করতে আজ এই জায়গায়। আমার মনে হয় যে ওয়ানডে ক্রিকেটে ব্যাটসম্যানদের রানের জন্য অনেক তাড়া থাকে। তাই আমি মনে করেছি যে, আমার যদি ওই জায়গাটায় ফোকাস থাকে, আমি যদি ভালো করতে পারি তাহলে আমার সুযোগ বেশি থাকবে। আর বিশ্বকাপ অনেক বড় একটা ইভেন্ট ছিল। যা আমার আত্মবিশ্বাস অনেক বাড়িয়েছে। সেখানে অনেক বিশ্বমানের খেলোয়াড় থাকে।
ইংল্যান্ডে তো স্পিন ট্র্যাক না। আমি চেষ্টা করেছি যতটুকু সম্ভব ভালো করা যায়। বিশ্বকাপে অনেক ভালো উইকেট থাকে। আমি নিজেকে মানসিকভাবে ওইভাবে সেট-আপ করেছিলাম যে, আমি যদি উইকেট নাও পাই, ব্যাটসম্যান যেন আমাকে মারতে না পারে, আমাকে ডমিনেট না করতে পারে। আমি যেন দলের প্রয়োজনে যেকোনো সময় রান চেক দিয়ে ২-১টা উইকেট বের করতে পারি। এটাই চেষ্টা করেছি। কয়েক ম্যাচে হয়েছে। দক্ষিণ আফ্রিকা ম্যাচে হয়েছে, নিউজিল্যান্ড-ইংল্যান্ডের সাথেও ২ উইকেট করে পেয়েছি। ছোট ছোট জিনিসই অনেক সময় পার্থক্য গড়ে দেয়। আমি সেগুলো নিয়েই চিন্তা করেছিলাম।
সতীর্থদের সমর্থন ও অভিনন্দন
সবাই অনেক সাপোর্ট করছে, টিমমেটরা সবাই আমাকে অভিনন্দন জানিয়েছে। অনেক ভালো লাগছে যে, টিমমেটরা সবাই আমাকে সাপোর্ট করছে। এটা আসলে আমার জন্য অনেক বড় একটা পাওয়া, যখন আমার টিমমেটরা আমাকে সাপোর্ট করে এবং সবাই যখন আমার সাথে কথা বলে, ব্যাকআপ করে। আমার কাছে এটা অনেক ভালো লাগে। কারণ খারাপ সময় কিন্তু সবারই যায়। ভালো-খারাপ সব সময়ই যখন টিমমেটরা সাপোর্ট করে, এটা কিন্তু একটা খেলোয়াড়ের জন্য অনেক বড় পাওয়া। আমার খারাপ সময়ে সবাই আমাকে সাপোর্ট করেছে, উৎসাহ দিয়েছে।
চোখের সামনেই 'আইডল'
আমরা জুনিয়ররা সব সময় সিনিয়রদের কথাই বলি। একটা সময় আমরা বিদেশি খেলোয়াড়দের আইডল মনে করতাম। এখন কিন্তু বিশ্বমানের খেলোয়াড় আমাদের চোখের সামনেই আছে, আমরা একসঙ্গেই খেলছি। আমরা তাদের কাছ থেকে দেখে শিখতে পারি। আমরা শেষ দুটি ম্যাচে ব্যাটিংয়ে ভালো করতে পারিনি। সেখানে কিন্তু আমাদের শেখার অনেক কিছু ছিল। মুশফিক ভাই, রিয়াদ ভাই যে পার্টনারশিপ দিয়েছে, শেষ ম্যাচটায় মুশফিক ভাই যেভাবে খেলেছে- শুধু এ দুইটা ম্যাচ নয়, বিগত ম্যাচগুলোতে যেভাবে খেলেছেন।
বিশ্বকাপে সাকিব ভাই ব্যাটিং-বোলিং দুইটাতেই যেভাবে পারফর্ম করেছেন, তামিম ভাই ওপেনারদের মধ্যে সর্বোচ্চ রানের দিকে আছেন। ১৪ হাজারের বেশি রান করেছেন, এটাও কিন্তু অনেক বড় অর্জন। আমরা তাদেরকে দেখেই শিখতে পারি। টেস্ট ক্রিকেটে সবচেয়ে বেশি সফল মমিনুল হক সৌরভ ভাই। আমাদের মধ্যে উনার ১০০ সবচেয়ে বেশি। তিনি কীভাবে কঠোর পরিশ্রম করেন, ডেডিকেটেড থাকেন, সেটা কিন্তু আমাদের জুনিয়র খেলোয়াড়দের শেখা উচিত। আমরা সব চোখের সামনেই দেখতে পাই।