‘আমরা সবাই জানি আমাদের প্রত্যাশা কী, খোলাসা করতে চাই না’
'টি-টোয়েন্টিতে অতটা ভালো দল নয় বাংলাদেশ'- এমন বলতেই অনেকটা তেলে-বেগুনে জ্বলে ওঠার মতো 'রিঅ্যাকশন' দিয়েছিলেন রাসেল ডমিঙ্গো। পরে একই প্রসঙ্গে প্রধান কোচের সঙ্গে সুর মিলিয়ে কথা বলেন এই ফরম্যাটে বাংলাদেশ দলের অধিনায়ক মাহমুদউল্লাহ রিয়াদ।
টি-টোয়েন্টিতে টানা তিনটি সিরিজে বাংলাদেশ রীতিমতো শাসন করেছে। ক্রিকেটের মারকাটারি এই ফরম্যাটে স্বপ্নের ছন্দে সময় কাটানো বাংলাদেশ তিনটি সিরিজই জিতেছে। জিম্বাবুয়ে সফরের পর ঘরের মাটিতে অস্ট্রেলিয়া ও নিউজিল্যান্ডের বিপক্ষে বিজয় কেতন ওড়ায় বাংলাদেশ।
বিশ্বকাপের আগে বড় দুটি দলের বিপক্ষে সিরিজ জয় বাংলাদেশের জন্য বড় অনুপ্রেরণা। আর এই অনুপ্রেরণা কাজে লাগিয়ে এবারের টি-টোয়েন্টি বিশ্বকাপে স্পেশাল কিছু করে দেখাতে চান মাহমুদউল্লাহ। বিশ্বকাপ মিশনে যাওয়ার আগে দল, দলের প্রত্যাশা, দলের শক্তির জায়গা, নিজের অধিনায়কত্ব, টুর্নামেন্টের ফেবারিটসহ আরও অনেক বিষয় নিয়ে দ্য বিজনেস স্ট্যান্ডার্ডের সঙ্গে কথা বলেন তিনি। টিবিএস বিশ্বকাপ ম্যাগাজিনে প্রকাশিত সাক্ষাকারটি পাঠকদের জন্য তুলে ধরা হলো-
টিবিএস: বিশ্বকাপ প্রস্তুতি নিয়ে অনেক প্রশ্নের উত্তর দিয়েছেন। তারপরও প্রশ্নটা এসেই যাচ্ছে, প্রস্তুতিতে কতোটা সন্তুষ্ট?
মাহমুদউল্লাহ রিয়াদ: আমাদের যে রকম প্রস্তুতি হয়েছে, তাতে সন্তুষ্ট। কারণ ব্যক্তিগতভাবে আমার মনে হয়, বিশ্বকাপের আগে আমাদের জেতার অভ্যাস তৈরি করাটা খুব দরকার ছিল। সবচেয়ে বড় ব্যাপার হচ্ছে, জয়ের মধ্যে থাকলে আপনার মধ্যে যে আত্মবিশ্বাস কাজ করবে, ভালো ক্রিকেট খেলে হেরে গেলে সেই আত্মবিশ্বাস থাকবে না। আমরা জয়ের ধারায় আছি, বিশ্বকাপ প্রস্তুতিতে এটা আমাদের কাজে দেবে। এই আত্মবিশ্বাস নিয়েই বিশ্বকাপে আমরা শুরু করতে চাই।
টিবিএস: দুবাইয়ের উইকেট নিশ্চয়ই অস্ট্রেলিয়া, নিউজিল্যান্ডের মতো হবে না, আবার খুব স্লো-টার্নিংও হবে না। এটা বাংলাদেশের জন্য সহায়ক কিনা, বড় দুটি দলের বিপক্ষে সিরিজ জয় কতোটা ভূমিকা রাখতে পারে?
মাহমুদউল্লাহ: আমার মনে হয় ওমান ও আরব আমিরাতের উইকেটগুলো স্পোর্টিং হবে। কারণ আইসিসির বেশিরভাগ ইভেন্টে উইকেট স্পোর্টিং হয়। আমার আশা স্পোর্টিং উইকেটে আমরা ভালো কিছু করতে পারব। অস্ট্রেলিয়া এবং নিউজিল্যান্ড বিশ্ব ক্রিকেটে বড় দুটি দল। তাদের বিপক্ষে সিরিজ জয় আমাদের আত্মবিশ্বাস যোগাবে এবং বিশ্বকাপে অনুপ্রেরণা হিসেবে কাজ করবে।
টিবিএস: অধিনায়ক হিসেবে প্রথমবারের মতো বিশ্বকাপ খেলছেন। কতোটা রোমাঞ্চিত?
মাহমুদউল্লাহ: অবশ্যই আমি খুব রোমাঞ্চিত। রোমাঞ্চ তো থাকবেই। তার চেয়ে বড় হচ্ছে দায়িত্ব অনেক। দর্শক-ভক্তদের প্রত্যাশা, দলের প্রত্যাশা, দেশবাসীর প্রত্যাশা যেন আমরা পূরণ করতে পারি। স্পেশাল কিছু যেন করতে পারি, সেই লক্ষ্য থাকবে।
টিবিএস: অধিনায়ক হিসেবে দলের কাছ থেকে বাস্তবসম্মত প্রত্যাশা কেমন? মূল পর্বে কোন কোন দলের বিপক্ষে বাংলাদেশের জেতার সম্ভাবনা সবচেয়ে বেশি?
মাহমুদউল্লাহ: প্রত্যাশাটা আমাদের মধ্যেই আছে এবং আমি এটা পুরোপুরি খোলাসা করতে চাই না। আমরা সবাই জানি আমাদের প্রত্যাশাটা কী। কারণ আমরা যখন দলের মধ্যে কথা বলেছি, আমরা জানি আমরা কী করতে চাই বিশ্বকাপে। প্রতিটা দলই শক্তিশালী, আমাদের আক্রমণাত্মক ক্রিকেট খেলার মানসিকতা রাখতে হবে। আমি যেটা বিশ্বাস করি, সেরা দলকে হারাতে হলে সেরা দল হতে হবে। অথবা সেরা দল হতে চাইলে, সেরা দলকে হারাতে হবে।
টিবিএস: দায়িত্ব কাঁধে তুলে নেওয়ার জন্য তরুণদের ক্ষেত্রে এটাই সেরা সময় কিনা?
মাহমুদউল্লাহ: সেটা বলা যায়। আর আমার বিশ্বাস তরুণরা দারুণ পারফরম্যান্স করে দলের জন্য অবদান রাখবে।
টিবিএস: এবারের বিশ্বকাপে গড় বয়সে বাংলাদেশ সবচেয়ে তরুণ। এরপরও এবারই সবচেয়ে বেশি প্রত্যাশা। ব্যাপারটা কীভাবে দেখছেন?
মাহমুদউল্লাহ: তরুণ-অভিজ্ঞ মিলিয়ে আমাদের দলের ভারসাম্য বেশ ভালো। এই ব্যাপারটা আমাদের দলের জন্য বড় ইতিবাচক একটা দিক। যা বিশ্বকাপে ভালো খেলতে আমাদের সাহায্য করবে।
টিবিএস: অনেকেই আছেন, যারা প্রথমবারের মতো বিশ্বকাপ খেলছেন। সেই হিসেবে দল কম অভিজ্ঞ। সাথে আছে বায়ো বাবলে থাকার ব্যাপার। সব মিলিয়ে দলের সবাই মানসিক দিক থেকে কী অবস্থায় আছে? খেলোয়াড়রা যথেষ্ট মোটিভেশন পাচ্ছেন কিনা?
মাহমুদউল্লাহ: যেহেতু আমরা শেষ তিনটি সিরিজে বেশ ভালো ক্রিকেট খেলেছি এবং তিনটি সিরিজেই জিতেছি, এটাই আমাদের জন্য সবচেয়ে বড় মোটিভেশন। আমরা ভালো একটা ছন্দে আছি, ভালো টিম স্পিরিট আছে আমাদের মধ্যে। এটা বড় মোটিভেশন। আর আপনি যখন দেশের হয়ে খেলবেন, এরচেয়ে বড় মোটিভেশন আর কিছু হয় না। সর্বোচ্চ পর্যায়ে যখন আপনি দেশকে প্রতিনিধিত্ব করবেন, এটাই সবচেয়ে বড় মোটিভেশন হওয়া উচিত। দলের মানসিক অবস্থা বেশ ভালো। আমরা যেহেতু বড় একটা ছুটি পেয়েছি, আমার আশা সবাই পরিবারের সাথে ভালো সময় কাটিয়েছে। এমন সময় কাটিয়ে অনুশীলনে ফিরলে সবাই চার্জড আপ থাকে।
টিবিএস: তুলনা বাদ দিলে ব্যক্তিগত হিসেবে টি-টোয়েন্টি বিশ্বকাপে আপনার রেকর্ড ততোটা উজ্বল নয়। এবার আপনি দারুণ ফর্মে। নিজের ব্যাটিং নিয়ে প্রত্যাশা কী?
মাহমুদউল্লাহ: হয়তো আগের বিশ্বকাপগুলোয় আমার ব্যাটিং পারফরম্যান্স অতো ভালো নেই। কিন্তু এই মুহূর্তে আমার ব্যাটিং নিয়ে আমি বেশ ভালো অনুভব করছি। আমার ব্যাটিং যেন আরও ভালোভাবে করতে পারি এবং দলের জন্য অবদান রাখতে পারি, এটাই আমার প্রত্যাশা থাকবে।
টিবিএস: বর্তমান বাংলাদেশ দলটির এমন কোনো দিক আছে কিনা, যেটা বিশ্বকাপে বাংলাদেশকে অন্য দলের চেয়ে আলাদা করে তুলতে পারে।
মাহমুদউল্লাহ: আমার মনে হয় বর্তমানে আমাদের ফিল্ডিং বিভাগটা বেশ ভালো। খেয়াল করলে দেখবেন, শেষ কয়েকটা সিরিজে আমরা দুর্দান্ত কয়েকটি ক্যাচ নিয়েছি, দারুণ রান আউট করেছি কিছু। ম্যাচ বাঁচানোর মতো কিছু বাউন্ডারি বাঁচিয়েছি, দুই রান বাঁচিয়েছি। যেগুলো আমরা সব সময় খেয়াল করি না কিন্তু এগুলোই দলের জন্য অনেক সময় অপরিহার্য হয়ে ওঠে এই ফরম্যাটে। তো এই দিকটাতে আমাদের ভালো একটা উন্নতি হয়েছে। তারপরও উন্নতির শেষ নেই। আমাদের বোলিং বিভাগ খুব ভালো কাজ করছে। আমার মনে হয় বিশ্বকাপে যখন সুযোগ আসবে, আমাদের ব্যাটসম্যানদের একটু দায়িত্ব নিতে হবে দলকে এগিয়ে রাখতে।
টিবিএস: এবারের বিশ্বকাপে কোন দলকে ফেবারিট বলে মনে হয়, কাউকে এগিয়ে রাখার সুযোগ দেখেন?
মাহমুদউল্লাহ: আমার মনে হয় বিশ্বকাপের প্রতিটা দলই শক্তিশালী এবং যেকোনো দলই বিশ্বকাপ জিততে পারে। এই ফরম্যাটাই এমন যে, নির্দিষ্ট দিনে যেকোনো দল যে কাউকে হারাতে পারে। এটা দলের হয়ে আরেকটা দল যদি একটুও ভালো খেলে, সেটাই যথেষ্ট। আমার মনে হয় প্রতিটা দলই সেটা করতে চাইবে।