‘আমি পুরো ধ্বংস হয়ে গিয়েছিলাম, সবার অবস্থা ছিল চূর্ণ-বিচূর্ণ’
করোনাভাইরাসের ছোবলে ধুঁকতে হয়েছে পুরো বিশ্বকে। এই মহামারিতে স্বজন হারিয়েছেন অনেকেই। করোনার দ্বিতীয় ঢেউয়ে ভারতের টালমাটাল অবস্থা। দেশটিতে হুহু করে বেড়েই চলেছে করোনা আক্রান্ত রোগীর সংখ্যা। প্রতিদিনই দীর্ঘ হচ্ছে মৃত্যুর মিছিল। এই মিছিলে হারিয়ে গেছেন ভারতের নারী ক্রিকেটার ভেডা কৃষ্ণমূর্তির মা ও বোন।
ভারত জাতীয় নারী দলের হয়ে ১০ বছর ধরে খেলে আসা কৃষ্ণমূর্তির পরিবারের ৯ জন সদস্য করোনায় আক্রান্ত হয়েছিলেন। এর মধ্যে গত মাসে কর্ণাটকে দুই সপ্তাহের ব্যবধানে মারা যান কৃষ্ণমূর্তির মা ও বোন। মর্মান্তিক এই ঘটনায় হৃদয় ভেঙে যায় কৃষ্ণমূর্তির, প্রচন্ড ভেঙে পড়েন তিনি। তার ভাষায়, তিনি পুরোপুরি ধ্বংস হয়ে গিয়েছিলেন। পরিবারের বাকি সদস্যদের মনের অবস্থা ছিল চূর্ণ-বিচূর্ণ।
পরিবারের সঙ্গে ঘটে যাওয়া এই ভয়াবহতা নিয়ে ক্রিকেট বিষয়ক ওয়েবসাইট ক্রিকইনফোকে দীর্ঘ এক সাক্ষাৎকার দিয়েছেন কৃষ্ণমূর্তি। যেখানে তিনি কথা বলেছেন নিজের এবং পরিবারের অন্য সদস্যের মানসিক অবস্থা, দুই সপ্তাহের কঠিনসহ লড়াইসহ আরও অন্যান্য বিষয় নিয়ে।
ভারত নারী দলের হয়ে ৪৮টি ওয়ানডে ও ৭৬টি টি-টোয়েন্টি খেলা কৃষ্ণমূর্তি নির্মম অভিজ্ঞতার বর্ণনায় বলেছেন, 'আমি এই ইন্টারভিউটা দিচ্ছি কারণ এখনও অনেক মানুষ জানেন না কোভিড-১৯-এ কীভাবে সাড়া দিতে হবে। আমি তাদের শিক্ষিত করতে চাই, যেন তারা শুধু ইন্টারনেটে লেখা জিনিস পড়েই পরিচালিত না হয়। দেরি হয়ে যাওয়ার আগেই সবার উচিত ডাক্তারদের সঙ্গে পরামর্শ করা। আমার মতো বিপদে টিক সময়ে ঠিক পদক্ষেপ নেওয়ার সামর্থ্য থাকা উচিত সবার।'
বোনের মৃত্যুতে কী অবস্থা হয়েছিল, সেই করুণ বর্ণনা দিতে গিয়ে কৃষ্ণমূর্তি বলেন, 'ভাগ্যে বিশ্বাস করার দিক থেকে আমি সামনের কাতারের একজন, আমি ভাগ্যে খুব বিশ্বাসী। কিন্তু আমি খুবই আশা করেছিলাম যে আমার বোন বাড়ি ফিরে আসবে। সে যখন ফিরে এলো না, আমি পুরোপুরি ধ্বংস হয়ে গিয়েছিলাম। আমরা সবাই চূর্ণ-বিচূর্ণ হয়ে যাই।'
এরপরও নিজের মনকে বুঝিয়েছেন কৃষ্ণমূর্তি। পরিবারের অন্য সদস্যের কথা ভেবে যতোটা সম্ভব নিজেকে শক্ত রেখেছেন ভারতের নারী দলের ডানহাতি এই অলরাউন্ডার। তিনি বলেন, 'এমন অবস্থায়ও পরিবারের অন্য সদস্যদের ঠিক রাখতে আমাকে সাহসী চেহারা ধরে রাখতে হয়ে ছে। কঠিন পরীক্ষার ওই কয়েক সপ্তাহে আমার জন্য এটা শিক্ষার ছিল যে, শোকের সময় কীভাবে মানিয়ে নিতে হয়। যদিও এরপরও সবকিছু ফিরে আসে আপনাকে এলোমেলো করে দিতে।'
পরিবারের একমাত্র সদস্য কৃষ্ণমূর্তি, যিনি করোনায় আক্রান্ত হননি। এটা সচেতনতা নাকি ভাগ্যের সহায়তা সম্ভব হয়েছে, সেই ব্যাখ্যা নেই তার কাছে। তিনি বলেন, 'আমার পরিবার কীভাবে সংক্রমিত হয়েছে এবং আমার বেঙ্গালুরুর কয়েক বন্ধু করোনা পজিজিভ হওয়ার পরও সব পরীক্ষায় আমার ফল কীভাবে নেগেটিভ এসেছে, এটা রহস্যেই থেকে গেছে আমার কাছে। বলতে পারেন হয়তো ভাগ্যের কারণে আমি আক্রান্ত হইনি, অথবা আমি কিছুক্ষণ পর পর হাত ধোয়ার কারণে করোনামুক্ত থাকতে পেরেছি। সত্যি আমি জানি না কীভাবে এটা সম্ভব হয়েছে।'
ট্রমা কাটিয়ে স্বাভাবিক জীবনে ফেরার চেষ্টা করতে থাকা কৃষ্ণমূর্তি নিজের জীবনে মা ও বোনের অস্তিত্বের কথা জানাতে গিয়ে বলেন, 'আমার জীবনের অনেক বড় অংশ ছিল আমার মা ও বোন এবং এভাবেই থাকবে তারা। আমি আজ যা হয়েছি, সেটা তাদের কারণে। আমারা মা আমাকে বলতো, "তুমি দেশের মেয়ে আগে এরপর তুমি আমার মেয়ে।"
'তাদের প্রতি কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করার মতো জন্য আমি কিছু করতে পারব বলে আমার মনে হয় না। আমি সেঞ্চুরি করি কিংবা প্রথম বলেই আউট হয়ে যাই, এটায় তাদের কাছে কোনো ব্যাপারই ছিল না। আমি তাদের প্রিয় ক্রিকেটার ছিলাম। বয়সের কথা ভাবা হয়নি, আমি আমার পরিবারের সবার কাছে শিশুর মতো ছিলাম।' যোগ করেন কৃষ্ণমূর্তি।