পাকিস্তানকে হারিয়ে চ্যাম্পিয়ন দুর্বার শ্রীলঙ্কা
আসরে শুরু হয়েছিল হার দিয়ে। কিন্তু দৃশ্যপট পাল্টে নিতে একেবারেই সময় নেয়নি শ্রীলঙ্কা। পরের ম্যাচ থেকেই বদলে যাওয়া এক দলের দেখা মেলে। একের পর এক দারুণ জয়ে লক্ষ্যের দিকে ছুটতে থাকে দুর্বার শ্রীলঙ্কা। প্রথম সেই হারের পর তাদেরকে আর কোনো প্রতিপক্ষই হারাতে পারেনি। সেই ধারাবাহিকতায় এবার লঙ্কান হুঙ্কারে পাকিস্তান স্রেফ উড়ে গেল। দাপুটে জয়ে এশিয়া কাপের শিরোপা জিতে নিলো দাসুন শানাকার দল।
রোববার দুবাই আন্তর্জাতিক ক্রিকেট স্টেডিয়ামে এশিয়া কাপের একপেশে ফাইনালে পাকিস্তানকে ২৩ রানে হারিয়েছে শ্রীলঙ্কা। ফাইনালের মতো স্নায়ুযুদ্ধে শাসন করে জেতা শ্রীলঙ্কার লম্বা অপেক্ষার অবসান হলো। ২০১৪ সালের পর প্রথমবারের মতো এশিয়া কাপে চ্যাম্পিয়ন হলো দ্বীপদেশটি। এশিয়ার শ্রেষ্ঠত্বের আসরে এটা শ্রীলঙ্কার ষষ্ঠ শিরোপা। এশিয়া কাপে চতুর্থ ফাইনালে এ নিয়ে তৃতীয়বার পাকিস্তানকে হারালো লঙ্কানরা। ১৯৮৬, ১৯৯৭, ২০০৪, ২০০৮, ২০১৪ এশিয়া কাপে চ্যাম্পিয়ন হওয়ার পর এবার শিরোপার স্বাদ নিলো শ্রীলঙ্কার।
টস হেরে আগে ব্যাটিং করতে নেমে দুঃস্বপ্নের শুরুর পরও ৬ উইকেটে ১৭০ রান তোলে শ্রীলঙ্কা। এর নেপথ্যে ছিলেন ভানুকা রাজাপাকসে। শুরুতেই দিক হারানো দলকে পথ দেখিয়ে শেষ পর্যন্ত ব্যাটিং করা বাঁহাতি এই ব্যাটসম্যান শ্রীলঙ্কার ইনিংসের সর্বোচ্চ রান করেন। মাঝারি ইনিংস খেলে অবদান রাখেন ধনঞ্জয়া ডি সিলভা ও ভানিন্দু হাসারাঙ্গারাও।
জবাবে প্রমোদ মাদুশানের বোলিং তোপে শুরুতেই হোঁচট খাওয়া পাকিস্তানকে ১৭তম ওভারে ম্যাচ থেকে ছিটকে দেন হাসারাঙ্গা। ৫ বলে ৩ উইকেট নিয়ে শ্রীলঙ্কার জয়ের পথটি সহজ করে দেন এই লেগ স্পিনার। পাকিস্তানের পক্ষে মোহাম্মদ রিজওয়ান ও ইফতিখার আহমেদ ছাড়া কেউ-ই ব্যাট হাতে দায়িত্বশীলতার পরিচয় দিতে পারেননি। তাদের ৮ জন ব্যাটসম্যান দুই অঙ্কের রানও করতে পারেননি। বাবর আজমের দলের ইনিংস শেষ হয় ১৪৭ রানে।
জয়ের লক্ষ্যে ব্যাটিং করতে নেমে প্রতিপক্ষের ভুলে দাপুটে শুরু করার সুযোগ পায় পাকিস্তান। নো বল ও ওয়াইডের চক্করে কোনো বল না করেই ৯ রান খরচা করেন লঙ্কান তরুণ পেসার দিলশান মাদুশাঙ্কা। ছয় নম্বর ডেলিভারিতে প্রথম বৈধ ডেলিভারি করেন বাঁহাতি এই পেসার। প্রথম ওভারে ১২ রান খরচা করেন মাদুশাঙ্কা, ৯ রানই দেনই অতিরিক্ত। এমন বোলিংয়ে শুরুতেই অস্বস্তিতে পড়ে যায় শ্রীলঙ্কা।
যদিও প্রতিপক্ষের দুর্বল শুরুকে কাজে লাগাতে পারেনি পাকিস্তান। চতুর্থ ওভারে পাকিস্তানকে দিক ভুলিয়ে দেন প্রমোদ মাদুশান। পরপর দুই বলে বাবর আজম ও ফকর জামানকে ফিরিয়ে দেন ডানহাতি এই লঙ্কান পেসার। ২২ রানে ২ উইকেট হারিয়ে দল বিপদে পড়লে দায়িত্ব কাঁধে তুলে নেন মোহাম্মদ রিজওয়ান ও ইফতিখার আহমেদ।
টি-টোয়েন্টির তুলনায় কিছুটা ধীর গতিতে ব্যাটিং করতে থাকলেও এ দুজন দলকে ছন্দে ফেরান। তৃতীয় উইকেটে ৫৯ বলে ৭১ রানের জুটি গড়েন রিজওয়ান-ইফতিখার। ক্রমেই যখন এ দুজন চড়াও হাচ্ছিলেন, তখন আবারও আঘাত হানেন শুরুতেই ২ উইকেট নেওয়া মাদুশান। ৩১ বলে ২টি চার ও একটি ছক্কায় ৩২ রান করা ইফতিখারকে নিজের তৃতীয় শিকারে পরিণত করেন লঙ্কান এই পেসার।
শুরু থেকেই চাপ সামলে খেলতে থাকা রিজওয়ানের সঙ্গে যোগ দেন মোহাম্মদ নওয়াজ। যদিও এই জুটির পথচলা কিছুক্ষণের মধ্যেই থেমে যায়। শ্রীলঙ্কার আরেক পেসার চামিকা করুনারত্নেকে তুলে মারতে গিয়ে ডিপ ব্যাকওয়ার্ড স্কয়ারে ধরা পড়েন ৬ রান করা নওয়াজ। এই উইকেটেও নাম জড়িয়ে পাকিস্তানের প্রথম ৩ উইকেট নেওয়া মাদুশানের, ক্যাচটি নেন তিনি।
ততোক্ষণে রান-বলের ব্যবধান অনেক বেড়ে গেছে, ২৮ বলে তখন পাকিস্তানের দরকার ৬৯ রান। এটা মাথায় রেখেই হাত খুলে খেলতে শুরু করেন রিজওয়ান। পাকিস্তানি এই ওপেনার বিশাল ছক্কায় পূর্ণ করেন হাফ সেঞ্চুরি। কিন্তু ১৭তম ওভারে ম্যাচ থেকে ছিটকে যায় পাকিস্তান। ৫ বলে ৩ উইকেট তুলে নেন লঙ্কান স্পিনার ভানিন্দু হাসারাঙ্গা।
একে একে রিজওয়ান, আসিফ আলী ও খুশদিল শাহকে ফিরিয়ে দেন হাসারাঙ্গা। ব্যাট হাতে দারুণ ছন্দে থাকা রিজওয়ান ৪৯ বলে ৪টি চার ও একটি ছক্কায় ৫৫ রান করেন। এক ওভারে হারানো পাকিস্তানের ঝুলিতে অবশিষ্ট থাকে ৩ উইকেট, কিন্তু রান-বলের ব্যবধান তখন অনেক। এমন কঠিন সময়ে কেবল শাদাব খান ছিলেন ভরসা হিসেবে।
কিন্তু কঠিন এই সময়ে শক্ত হাতে ব্যাট চালাতে পারেননি তিনি। মাহেশ থিকশানাকে তুলে মারতে গিয়ে গুনাথিলাকার হাতে ধরা পড়েন ৮ রান করা ডানহাতি এই ব্যাটসম্যান। পরের দুই উইকেট থেকে পাকিস্তান পায় ২৭ রান, তাদের ইনিংস থামে ১৪৭ রানে। দুর্দান্ত বোলিং করা লঙ্কান পেসার মাদুশান ৪ ওভারে ৩৪ রানে ৪টি উইকেট নেন। ৪ ওভারে ২৭ রান খরচায় ৩টি উইকেট নেন হাসারাঙ্গা। বাকি দুই উইকেট নেন চামিকা করুনারত্নে।
এর আগে ব্যাটিং করতে নামা শ্রীলঙ্কা প্রথম ওভারেই ওপেনার কুশল মেন্ডিসকে হারায়। পাকিস্তানের তরুণ পেসার নাসিম শাহর বলে উপড়ে যায় এক বল মোকাবেলা করা মেন্ডিসের স্টাম্প। রানের খাতা খোলার আগেই বিদায় নেন তিনি। শ্রীলঙ্কা শুরুর চাপ কাটিয়ে উঠতে না উঠতেই পাথুম নিসাঙ্কাকে ফিরিয়ে দেন পাকিস্তানের আরেক পেসার হারিস রউফ। ১১ বলে ৮ রান করে থামেন তিনি।
২৩ রানে ২ উইকেট হারানো শ্রীলঙ্কার বিপদ আরও বাড়ান হারিস। দুই ওভার পরই দানুশকা গুনাথিলাকাকে নিজের দ্বিতীয় শিকারে পরিণত করেন তিনি। এক পাশ আগলে ব্যাট চালাতে থাকা ধনঞ্জয়ার সঙ্গে জুটি বাধেন রাজাপাকসে। চাপ কাটিয়ে এ দুজন সাবলীল ব্যাটিং শুরু করলেও জুটি বড় করতে পারেননি।
দলীয় ৫৩ রানে বিদায় নেন ধনঞ্জয়া। ফেরার আগে ২১ বলে ৪টি চারে ২৮ রান করেন তিনি। চতুর্থ উইকেট হারিয়ে আবারও চাপ বাড়ে শ্রীলঙ্কার। কারণ একটু পরই ২ রান করা লঙ্কান অধিনায়ক দাসুন শানাকাকে ফিরিয়ে দেন পাকিস্তানের লেগ স্পিনার শাদাব খান। যদিও উইকেট হারানোর দলকে বুঝতেই দেননি রাজাপাকসে ও হাসারাঙ্গা।
ষষ্ঠ উইকেটে ৩৬ বলে ৫৮ রানের মহাগুরুত্বপূর্ণ জুটি গড়েন তারা। দলীয় ১১৬ রানে হাসারাঙ্গার বিদায়ে ভাঙে এই জুটি। এর আগে ২১ বলে ৫টি চার ও একটি ছক্কায় ৩৬ রান করেন তিনি। চামিকা করুনারত্নেকে নিয়ে বাকিটা সময় দাপুটে ব্যাটিং করেন রাজাপাকসে।
বাঁহাতি এই ব্যাটসম্যান ৪৫ বলে ৬টি চার ও ৩টি ছক্কায় ৭১ রানের অসাধারণ ইনিংস ইনিংস খেলেন। ১৪ বলে অপরাজিত ১৪ রান করেন করুনারত্নে। পাকিস্তানের হারিস রউফ সর্বোচ্চ ৩টি উইকেট নেন। একটি করে উইকেট পান নাসিম, হারিস ও ইফতিখার আহমেদ।