দাপুটে জয়ে সুপার ফোরে বাংলাদেশ
হারলেই বিদায়, তাই পাহাড় সমান চাপ নিয়েই আফগানিস্তানের বিপক্ষে খেলতে নামতে হয় বাংলাদেশকে। এমন ম্যাচে একাদশসহ ব্যাটিং অর্ডারেও পরিবর্তন এলো। সেটাই যেন টনিকের মতো কাজ করলো। প্রথমে ব্যাট হাতে শাসন, মেহেদী হাসান মিরাজ ও নাজমুল হোসেন শান্তরা দারুণ ব্যাটিংয়ে সেঞ্চুরি তুলে দলকে এনে দিলেন বড় সংগ্রহ। পরে বল হাতেও দাপট। বিশাল লক্ষ্যে আফগানরা চেষ্টা করলেও শরিফুল, তাসকিন, মিরাজদের বোলিংয়ের সামনে তা যথেষ্ট হলো না। দাপুটে জয় নিয়ে মাঠ ছাড়লো বাংলাদেশ।
রোববার এশিয়া কাপে নিজেদের দ্বিতীয় ম্যাচে লাহোরে আফগানিস্তানকে ৮৯ রানে হারিয়েছে বাংলাদেশ। এই জয়ে কার্যত সুপার ফোরে উঠে গেছে বাংলাদেশ। শ্রীলঙ্কা-আফগানিস্তান ম্যাচের দিকে না তাকালেও চলবে সাকিবদের। কারণ ওই ম্যাচের ফলাফল যাই হোক, দুই দলেরই রানরেট বাংলাদেশের চেয়ে বেশি হওয়ার কোনো সম্ভাবনা নেই।
টস জিতে আগে ব্যাটিং করতে নেমে ৫ উইকেটে ৩৩৪ রান তোলে বাংলাদেশ। ওয়ানডেতে আফগানিস্তানের বিপক্ষে এটাই বাংলাদেশের সর্বোচ্চ সংগ্রহ, সব মিলিয়ে তৃতীয় সর্বোচ্চ। আফগানদের বিপক্ষে আগের সর্বোচ্চ ছিল ৩০৬ রান, ২০২২ সালে চট্টগ্রামে। তৃতীয় উইকেটে দ্বিতীয় সেরা জুটি গড়ে দলকে বড় সংগ্রহের পথে এগিয়ে দেন ম্যাচসেরা মিরাজ ও শান্ত। শেষ দিকে মুশফিকুর রহিমের পর ক্যামিও ইনিংস খেলে তা আরও এগিয়ে নেন অধিনায়ক সাকিব। জবাবে ইব্রাহিম জাদরান, হাশতউল্লাহ শহিদিদের লড়াইয়ের পরও ৪৪.৩ ওভারে ২৪৫ রানে অলআউট হয়ে যায় আফগানিস্তান।
বড় লক্ষ্যে ব্যাটিং করতে নেমে দ্বিতীয় ওভারেই উইকেট হারায় আফগানরা। রহমানউল্লাহ গুরবাজকে ফিরিয়ে দেন শরিফুল ইসলাম। যদিও শুরুর চাপ কাটিয়ে দ্বিতীয় উইকেটে প্রতিরোধ গড়ে তোলেন রহমত শাহ ও ইব্রাহিম জাদরান, ৭৮ রান যোগ করেন তারা। ৫৭ বলে ৩৩ রান করা রহমতের বিদায়ে ভাঙে এই জুটি, তার স্টাম্প উপড়ে নেন তাসকিন।
এরপর আবারও প্রতিরোধ, ইব্রাহিমের সঙ্গে যোগ দিয়ে দলকে এগিয়ে নিতে থাকেন অধিনায়ক হাশতউল্লাহ। এ দুজন ৫২ রানের জুটি গড়েন। ইব্রাহিমকে ফিরিয়ে এই জুটি ভাঙেন হাসান মাহমুদ। ফেরার আগে ৭৪ বলে ১০টি চার ও একটি ছক্কায় ইনিংস সেরা ৭৫ রান করেন ইব্রাহিম। তৃতীয় উইকেট হারানোর পরও দিক হারায়নি আফগানরা। নাজিবুল্লাহ জাদরানের সঙ্গে ৫২ বলে ৬২ রানের জুটি গড়েন তোলেন হাশমতউল্লাহ।
দলীয় ২০০'র কাছাকাছি গিয়ে থামেন আফগান অধিনায়ক। ৬০ বলে ৬টি চারে ৫১ রান করেন তিনি। হাশমতউল্লাহর বিদায়ের পর দ্রুত উইকেট হারাতে থাকে আফগানরা। শেষ দিকে ঝড় তুলে ১৫ বলে ৩টি চার ও একটি ছক্কায় ২৪ রান করেন রশিদ খান। ৮.৩ ওভারে ৪৪ রান খরচায় ৪টি উইকেট নেন তাসকিন। ৯ ওভারে ৩৬ রানে ৩টি উইকেট পান শরিফুল। ব্যাট হাতে সেঞ্চুরির পর ৮ ওভারে ৪১ রানে একটি উইকেট নেন মিরাজ, হাসানও পান একটি উইকেট।
এর আগে ব্যাটিং করা বাংলাদেশের শুরুটা ভালোই হয়। উদ্বোধনী জুটিতে ১০ ওভারে ৬০ রান যোগ করেন নাঈম শেখ ও মিরাজ। ভালো শুরুর স্বস্তি হারিয়ে যায় চার বলের ব্যবধানে দুটি উইকেট হারানোয়। ৩২ বলে ২৮ রান করা নাঈম ও তাওহিদ হৃদয় আউট হলে হঠাৎ-ই চাপে পড়ে বাংলাদেশ। এক পাশ আগলে থাকা মিরাজের সঙ্গে যোগ দেন শান্ত, শুরু হয় এই জুটির লড়াই।
মিরাজ ততোক্ষণে উইকেটে থিতু হয়ে গেছেন, শান্তও বেশি সময় সময় নেননি। শুরু থেকেই মারকুটে মেজাজে ব্যাটিং করতে থাকেন শান্ত। সাবলীল ব্যাটিংয়ে মুহূর্তেই চাপ কাটিয়ে দারুণ ব্যাটিং করতে থাকেন তারা, বড় সংগ্রহের পথে এগিয়ে যেতে থাকে বাংলাদেশ। হঠাৎ দিক হারানো দলকে পথ দেখিয়ে ২৫৭ রান পর্যন্ত নিয়ে যান মিরাজ-শান্ত। সেঞ্চুরি তুলে নেওয়া এই দুই ব্যাটসম্যান ১৯৪ রান যোগ করেন, যা তৃতীয় উইকেটে বাংলাদেশের দ্বিতীয় সেরা জুটি। আর যেকোনো উইকেটে ষষ্ঠ সেরা জুটি।
ওয়ানডেতে দ্বিতীয়বারের মতো ইনিংস উদ্বোধন করতে নেমেই তিন অঙ্কের ম্যাজিক ফিগারে পৌঁছান মিরাজ, এটাই তার ওয়ানডে ক্যারিয়ারের প্রথম সেঞ্চুরি। ২০১৮ সালের এশিয়া কাপের ফাইনালে ভারতের বিপক্ষে প্রথমবারের মতো ওয়ানডেতে ওপেন করেন মিরাজ, সেই ম্যাচে ৩২ রান করেন তিনি। পাঁচ বছর পর একই মঞ্চে সুযোগ পেয়ে চোখ ধাঁধানো ব্যাটিংয়ে ডানহাতি এই ব্যাটসম্যান করলেন সেঞ্চুরি। তার ইনিংসটি আরও বড় হতে পারতো, কিন্তু আঙুলে টান পড়ায় মাঠ স্বেচ্ছায় মাঠ ছাড়তে হয় তাকে।
এর আগে ১১৯ বলে ৭টি চার ও ৩টি ছক্কায় ১১২ রানের হার না মানা অসাধারণ এক ইনিংস খেলেন সাধারণত সাত বা আট নম্বরে ব্যাটিং করা মিরাজ। বাঁচা-মরার ম্যাচ, সঙ্গে ওপেনিং সামলানোর চাপ; সব জয় করে মিরাজ দেখালেন তার সামর্থ্য। স্বীকৃত ওপেনার হয়েও বাংলাদেশের বেশিরভাগ ব্যাটসম্যান যা করতে পারেন না, একবার সুযোগ পেয়েই তা করে দেখালেন ২৫ বছর বয়সী এই ক্রিকেটার।
মিরাজ মাঠ ছাড়ার কিছুক্ষণের মধ্যেই ওয়ানডে ক্যারিয়ারের দ্বিতীয় সেঞ্চুরি পূর্ণ করেন শান্ত। সেঞ্চুরি করলেও মিরাজের মতো তারও আক্ষেপ থাকার কথা। রান নিতে গিয়ে ফিরে আসার পথে পা পিছলে পড়ে যাওয়ায় রান আউট হতে হয় ১০৫ বলে ৯টি চার ও ২টি ছক্কায় ১০৪ রান করা শান্তকে।
রান আউটে কাটা পড়েন ১৫ বলে একটি করে চার ও ছক্কায় ২৫ রান করা মুশফিকও। শেষ পর্যন্ত দাপুটে ব্যাটিং করেন সাকিব। বাংলাদেশ অধিনায়ক ১৮ বলে ৪টি চার ও একটি ছক্কায় ৩২ রানে অপরাজিত থাকেন। অভিষিক্ত শামীম হোসেন পাটোয়ারী ৬ বলে ১১ রান করেন। আফগানিস্তানের মুজিব-উর-রহমান ও গুলবাদিন নাঈব একটি করে উইকেট নেন।