আত্মঘাতী বাংলাদেশ, অল্পতেই গুটিয়ে গেল ইনিংস
ভালো শুরুর ইঙ্গিত দিয়ে হঠাৎ-ই মেজাজ হারালেন জাকির হাসান। তেড়েফুঁড়ে শট খেলতে গিয়ে ক্যাচ তুলে বিদায় নেন বাঁহাতি এই ওপেনার। এরপর বাংলাদেশের আরও কয়েকজন ব্যাটসম্যান যেন তাকে অনুসরণ করলেন, আত্মাহুতি দিয়ে ফিরলেন সাজঘরে। যে তালিকায় বড় নাম নাজমুল হোসেন শান্ত, মুশফিকুর রহিম, নুরুল হাসান সোহান। কেউ-ই পারলেন না দায়িত্ব নিতে, নিউজিল্যান্ডের বিপক্ষে দ্বিতীয় ও শেষ টেস্টে চরম ব্যাটিং ব্যর্থতায় অল্পতেই শেষ হলো বাংলাদেশের প্রথম ইনিংস।
বুধবার মিরপুর শেরে বাংলা জাতীয় ক্রিকেট স্টেডিয়ামে টস জিতে আগে ব্যাটিং করতে নামা বাংলাদেশ ৬৬.২ ওভারে ১৭২ রানেই অলআউট হয়ে গেছে। স্বাগিতক দলটি কোনো ব্যাটসম্যানই পারেননি ৪০ রানের কোটা পেরোতে, সর্বোচ্চ ৩৫ রান করেন বাংলাদেশের প্রথম ব্যাটসম্যান হিসেবে 'অবস্ট্রাক্টিং দ্য ফিল্ড' আউট হওয়া মুশফিকুর রহিম। বাংলাদেশের পাঁচজন দুই অঙ্কের রান করতে ব্যর্থ হন।
ভালো শুরুর ইঙ্গিতই দিয়েছিলেন বাংলাদেশের দুই ওপেনার মাহমুদুল হাসান জয় ও জাকির হাসান। খাঁটি টেস্ট মেজাজেই ব্যাট চালাচ্ছিলেন তারা। কিন্তু হঠাৎ বিপর্যয়ে দুই উইকেট হারিয়ে চাপে পড়ে বাংলাদেশ। মাত্র পাঁচ বলের ব্যবধানে ফিরে যান ঘরের মাঠের দলটির দুই ওপেনার। মেজাজ হারিয়ে নিজের উইকেট বিলিয়ে আসেন জাকির। নিউজিল্যান্ডের বাঁহাতি স্পিনার মিচেল স্যান্টনারের বলে তুলে মারতে গিয়ে আউট হন ২৪ বলে একটি চারে ৮ রান করা বাঁহাতি এই ব্যাটসম্যান।
শুরুর ধাক্কা সামলে ওঠার আগেই বিপদ বাড়ে জয়ের বিদায়ে। কিউই বোলারদের বিপক্ষে ধুঁকতে থাকা ডানহাতি এই ব্যাটসম্যান এজাজ প্যাটেলের বলে শর্ট লেগে কেন উইলিয়ামসনের হাতে ক্যাচ দেন। ৪০ বলে ২টি চারে ১৪ রান করেন তিনি। এই চাপ কাটিয়ে ওঠা হয়নি বাংলাদেশের। ৯ বলের মধ্যে ফিরে ডান সাবেক টেস্ট অধিনায়ক মুমিনুল হক ও বর্তমান অধিনায়ক নাজমুল হোসেন শান্ত। রিভার্স সুইপ খেলতে গিয়ে উইকেট ছুঁড়ে আসেন অধিনায়ক শান্ত।
৪৭ রানেই ৪ উইকেট হারিয়ে বাংলাদেশ রীতিমতো ধুঁকতে থাকে। নিজেদের ভুল ও নিউজিল্যান্ডের দুই স্পিনারের তোপে দ্রুত উইকেট হারিয়ে দিশাহারা হয়ে পড়া বাংলাদেশ কিছুটা স্বস্তি খুঁজে পায় অভিজ্ঞ মুশফিকুর রহিম ও তরুণ শাহাদাত হোসেন দিপুর কল্যাণে। এ দুজনের ব্যাটে বিপর্যয় কাটিয়ে মধ্যাহ্ন বিরতিতে যায় বাংলাদেশ। ইনিংসের সবচেয়ে বড় ৫৭ রানের জুটি গড়েন এই দুজন। তবে এই জুটির শেষটা হয় চরম হতাশায়।
দলীয় সংগ্রহ ১০০ পেরনোর পর অদ্ভূতভাবে আউট হন মুশফিক। হাত দিয়ে বল ফিরিয়ে ক্রিকেট ইতিহাসের ২৩তম ব্যাটসম্যান 'অবস্ট্রাক্টিং দ্য ফিল্ড' আউট হন তিনি। বাংলাদেশের ইনিংসের ৪১তম ওভারের খেলা চলছিল, বোলিং করছিলেন নিউজিল্যান্ড পেসার কাইল জেমিসন। তার করা বাউন্সার গোছের চতুর্থ ডেলিভারি ডিফেন্স করেন মুশফিক, বল পড়ে পেছনে যাচ্ছিল। স্টাম্পে আঘাত করবে ভেবে তিনি হাত দিয়েই বল ফেরান।
হাত দিয়ে বল ধরায় নিউজিল্যান্ড আবেদন করে, আম্পায়ার তাকে আউট ঘোষণা করেন। যদিও বল অফ স্টাম্পের অনেক বাইরে দিয়ে বেরিয়ে যাচ্ছিল। কিন্তু আইসিসির নিয়ম অনুযায়ী হাত দিয়ে বল ফেরালে আর প্রতিপক্ষ আবেদন করলে সেই ব্যাটসম্যানকে আউট ঘোষণা করা হয়। চরম হতাশা নিয়ে মাঠ ছাড়তে হয় ৮৩ বলে ৩টি চার ও একটি ছক্কায় ৩৫ রান করা মুশফিককে।
দারুণ ব্যাটিং করতে থাকা শাহাদাতও ইনিংস বড় করতে পারেননি। আগের টেস্টে অভিষেক হওয়া ডানহাতি এই ব্যাটসম্যান ১০২ বলে ২টি চারে ৩১ রান করেন। তার আউট হওয়ার ধরনও ছিল দৃষ্টিকটু। এরপর মেহেদী হাসান মিরাজ ২০, শরিফুল ইসলাম ১০ ও নাঈম হাসান অপরাজিত ১৩ রান করেন। শেষ দিকে তোপ তাগেন আরেক কিউই স্পিনার গ্লেন ফিলিপস। তিনি ও স্যান্টনার ৩টি করে উইকেট নেন। ২টি উইকেট পান এজাজ প্যাটেল। অধিনায়ক টিম সাউদির শিকার একটি উইকেট।