ক্রিকেট আনন্দে বিজয় উদযাপন
সবখানে উৎসবমুখর পরিবেশ, চারপাশে বিজয়ের ঘ্রাণ। ১৯৭১ সালের আজকের দিনে লাল সুবজের বিজয় কেতন উড়িয়ে স্বাধীনতার স্বাদ নিয়েছিল বাংলাদেশ। ১৬ ডিসেম্বর বাঙালি জাতির ইতিহাসে গৌরবময় দিন, প্রতি বছরই এই দিনে উৎসবে মাতে বাংলাদেশ। এবারও বিজয়ের আনন্দে পালিত হচ্ছে বাঙালি জাতির ইতিহাসের সবচেয়ে বড় উৎসবের দিনটি।
এই উৎসবে শামিল থাকে বাংলাদেশ ক্রিকেট বোর্ড (বিসিবি)। প্রতি বছরের মতো এবারের বিজয় দিবসেও দেশের দুই সূর্য সন্তান শহীদ আব্দুল হালিম চৌধুরী জুয়েল ও ক্রীড়া সংগঠক মুশতাক আহমেদের স্বরণে এক প্রদর্শনী ম্যাচ আয়োজন করেছিল দেশের ক্রিকেটের সর্বোচ্চ নিয়ন্ত্রক সংস্থাটি। এই ম্যাচকে কেন্দ্র করে শনিবার মিরপুর শেরে বাংলা জাতীয় ক্রিকেট স্টেডিয়াম পরিণত হয়েছিল সাবেক ক্রিকেটারদের মিলন মেলায়।
বিজয়ের সুবাস মাখিয়ে এদিন ক্রিকেট ম্যাচ হলো। সাবেক ক্রিকেটার ও তাদের পরিবার, শহীদ মুস্তাক-শহীদ জুয়েলের পরিবারের সদস্য, বিসিবির কর্মকর্তারা মিলে দারুণ দিন কাটালেন। দিনের শুরুতে দুই দলের ক্রিকেটাররা গা গরম করে নেন, টস হয় ১১টার পরে। টসের পর দুই দলের ক্রিকেটাররা মাঠে দাঁড়িয়ে নিরবতা পালন করেন দেশ মুক্ত করার লড়াইয়ে নিজেদের জীবন উৎসর্গ করা শহীদদের সম্মানে, গান জাতীয় সঙ্গীত।
এরপর সাবেক ক্রিকেটারদের অংশগ্রহণে মাঠে গড়ায় ম্যাচ। এই ম্যাচে খেলেছেন মেহরাব হোসেন অপি, তুষার ইমরান, হাবিবুল বাশার, আব্দুর রাজ্জাক, জাভেদ ওমর বেলিম, মোহাম্মদ রফিক, ফয়সাল হোসেন ডিকেন্স, মিনহাজুল আবেদীন নান্নু, আকরাম খান, খালেদ মাহমুদ সুজন, সেলিম শাহেদ, এহসানুল হক সেজান, হাসানুজ্জামান ঝরুসহ অন্যান্য সাবেক ক্রিকেটাররা। ম্যাচে শহীদ আব্দুর রাজ্জাকের নেতৃত্বাধীন শহীদ মুস্তাক একাদশকে ৭ উইকেটে হারায় মিনহাজুল আবেদীনের দল শহীদ জুয়েল একাদশ।
১৫ ওভারের ম্যাচে টস জিতে আগে ব্যাটিং করে শহীদ মুশতাক একাদশ। ৭ উইকেটে ১২৯ রান তোলে তারা। ২৬ বলে ৬টি চার ও একটি ছক্কায় সর্বোচ্চ ৩৫ রান করেন তুষার ইমরান। মেহরাব অপি ২৩ এবং হাবিবুল বাশার, এহসানুল হক ও নিয়ামুর রশিদ রাহুল ১৪ রান করে করেন। শহীদ জুয়েল একাদশের পক্ষে সেরা বোলিং করেন সাবেক ওপেনার জাভেদ ওমর। ২১ রানে ২ উইকেট নেন তিনি। একটি করে উইকেট নেন রফিক, সাজেদুল ইসলাম ও ডিকেন্স।
লক্ষ্য তাড়ায় ৩ উইকেট হারিয়ে এক ওভার আগেই জয় নিশ্চিত করে শহীদ জুয়েল একাদশ। ম্যাচসেরা ডিকেন্স ৪৩ বলে ৬টি চার ও ৪টি ছক্কায় ৬৬ রান। ডলারের ১৬ বলে খেলা ৩৩ রানের ইনিংসে ছিল একটি চার ও তিনটি ছক্কা। মিনহাজুল আবেদীন ৭ ও মোহাম্মদ রফিক ১৮ রান করেন। শহীদ মুস্তাকের অধিনায়ক আব্দুর রাজ্জাক ২৬ রানে ২টি উইকেট নেন।
১৯৭১ সালের ২৫ মার্চের কালরাতে পাকিস্তানি হানাদারদের হাতে নিহত হন ক্রীড়া সংগঠক মুশতাক আহমেদ। মুক্তিযুদ্ধ-পূর্ব বাংলাদেশের অন্যতম সেরা ব্যাটসম্যান ও গেরিলা মুক্তিযোদ্ধা আবদুল হালিম চৌধুরী (জুয়েল) শহীদ হয়েছিলেন পাকিস্তানি বাহিনীর হাতে বন্দি অবস্থায়। তাদের স্মৃতির উদ্দেশে ১৯৭২ সাল থেকে অনুষ্ঠিত হচ্ছে বিজয় দিবস প্রদর্শনী ম্যাচ। এই ম্যাচের মধ্য দিয়ে তাদের স্মৃতিকে বাঁচিয়ে রাখার প্রচেষ্টা বিসিবির। এ ছাড়া মিরপুর স্টেডিয়ামের দুটি স্ট্যান্ডের নামকরণও করা আছে এই দুই কৃতি সন্তানের নামে।