মাহমুদউল্লাহ-জাকির ঝড়ের পর হৃদয়ভাঙা হার বাংলাদেশের
এত কাছে তবু এত দূরে, বাংলাদেশের জন্য এই ম্যাচ এর থেকে ভালো কিছু দিয়ে বোঝানো সম্ভব নয়। জাকের আলি ও মাহমুদউল্লাহ রিয়াদের দুর্দান্ত দুটি ইনিংস শেষ পর্যন্ত ব্যর্থ হলো। তিন ম্যাচ সিরিজের প্রথম টি-টোয়েন্টিতে শ্রীলঙ্কার কাছে মাত্র তিন রানের ব্যবধানে হেরেছে বাংলাদেশ।
লঙ্কানদের দেওয়া ২০৭ রানের বড় লক্ষ্যও প্রায় টপকেই গেছিল বাংলাদেশ। মাহমুদউল্লাহ রিয়াদ ও জাকের আলির বীরত্ব আলোর মুখ দেখেনি শেষে। বাংলাদেশ জিতলে সোনায় সোহাগা হতো বটে, তবে সিলেটের দর্শকরা পয়সা উশুল করা এক ম্যাচই দেখেছেন।
শ্রীলঙ্কার দেওয়া ২০৭ রানের বড় লক্ষ্য তাড়া করতে নেমে ইনিংসের প্রথম ওভারের তৃতীয় বলেই ফিরে যান লিটন কুমার দাস। এরপর সৌম্য সরকার আর তাওহিদ হৃদয়ও টিকতে পারেননি বেশিক্ষণ। উইকেটে আসার পর প্রথম বলেই ছক্কা হাঁকানো মাহমুদউল্লাহ যেন পণ করেই নেমেছিলেন, দলে ফেরাটা রাঙিয়েই রাখবেন।
সেদিকেই এগোচ্ছিলেন তিনি, খেলেছেন ঝলমলে ৫৪ রানের এক ইনিংস। ৩১ বলের ইনিংসে মেরেছে দুই চার ও চার ছক্কা। মাহমুদউল্লাহর এই ইনিংসের পরেও মনে হয়নি বাংলাদেশ ম্যাচ জিততে পারে বা জেতার কাছেও যেতে পারে। যেটি মনে করিয়েছেন জাকের আলি। এই সিরিজে সুযোগই পেতেন না তিনি যদি না আলিস ইসলাম চোট না পেতেন।
সেই জাকির খেলেছেন ৩৪ বলে ৬৮ রানের দুর্দান্ত এক ইনিংস। চারটি চার ও ছয়টি ছয় মেরেছেন এই ডানহাতি ব্যাটসম্যান। তিনি আউট হওয়ার সময় দলের প্রয়োজন ছিল তিন বলে ১০ রান। শরিফুল ইসলাম এসেই চার মেনে সমীকরণ নামিয়ে আনেন দুই বলে ছয়ে। তবে শেষ দুটি বলে মাত্র দুটি সিঙ্গেল বের করতে পেরেছেন শরিফুল ও তাসকিন। বাংলাদেশ হার মেনেছে মাত্র তিন রানের ব্যবধানে।
এর আগে টস জিতে ফিল্ডিং নেওয়ার সিদ্ধান্ত যা ভেবে নিয়েছিলেন নাজমুল হাসান শান্ত, সেটি তো কাজ করেইনি, উল্টো রান পাহাড়ের নিচে চাপা পড়ে বাংলাদেশ। সিলেটে প্রথম টি-টোয়েন্টিতে আগে ব্যাট করে ২০ ওভার খেলে শ্রীলঙ্কা তোলে ২০৬ রান। মাত্র তিনজন ব্যাটসম্যানকে সাজঘরের পথ দেখাতে পেরেছেন বাংলাদেশের বোলাররা।
শরিফুলের করা ইনিংসের প্রথম বলেই চার মেরে ঠিক পরের বলেই উইকেটের পেছনে ক্যাচ দিয়ে ফিরে যান আভিষ্কা ফার্নান্দো। তখন মনে হচ্ছিল, টস জিতে ফিল্ডিং করার সিদ্ধান্তটা কাজে লাগতে যাচ্ছে। কিন্তু এরপরের গল্পটা শুধুই লঙ্কান ব্যাটসম্যানদের। কুশল মেন্ডিস, সাদিরা সামারাবিকরামা ও অধিনায়ক চারিথ আসালাঙ্কা ব্যাট হাতে যে ঝড় তুললেন, সেটি অসহায়ের মতো চেয়ে দেখেছেন শরিফুল-মুস্তাফিজ-তাসকিনরা।
তিন পেসার নিয়ে খেলতে নেমেছিল বাংলাদেশ। উইকেটে কিছুটা সবুজের আস্তরণ থাকাতেই হয়তো এই সিদ্ধান্ত নেওয়া। শরিফুল প্রথম ওভারেই ব্রেকথ্রু এনে দিয়ে সিদ্ধান্তের প্রতি ন্যায়বিচারও করলেন যেন কিছুটা। এরপর কামিন্দু ও কুশল- দুই মেন্ডিস মিলে ৩৩ রানের জুটিতে প্রাথমিক ধাক্কা সামলালেন। কামিন্দু বেশিক্ষণ না চালিয়ে যেতে পারলেও কুশল চালিয়েছেন ঠিকই। একপ্রান্তে ধীরে সুস্থে এগিয়েছেন সামারাবিকরামা।
দুজনে মিলে তৃতীয় উইকেট জুটিতে যোগ করেছেন ৯৬ রান। মাত্র ২৮ বলে হাফসেঞ্চুরি পূর্ণ করা কুশল মেন্ডিস আউট হন ৩৬ বলে ছয় চার ও তিন ছয়ে ৫৯ রান করে। এরপর হাত খুলেন সামারাবিকরামাও। শেষ পর্যন্ত তিনি অপরাজিত থাকেন ৪৮ বলে আট চার ও এক ছয়ে ৬১ রান নিয়ে। শ্রীলঙ্কার রান ২০০ পার হওয়ার পেছনে মেন্ডিস ও সামারাবিকরামার চেয়েও বড় অবদান বলা চলে চারিথ আসালাঙ্কার। অধিনায়কের মতোই এক ইনিংস খেলেছেন এই বাঁহাতি ব্যাটসম্যান।
মাত্র ২১ বলে ৪৪ রান করে অপরাজিত থাকেন লঙ্কান অধিপতি। কোনো চার মারেননি তিনি, তবে হাঁকিয়েছেন ছয়টি বড় ছয়। বাংলাদেশের হয়ে একটি করে উইকেট পেয়েছেন শরিফুল, তাসকিন ও রিশাদ। তিন পেসারদের মধ্যে শরিফুল দিয়েছেন ৪৭ রান, তাসকিন দিয়েছেন ৪০ রান ও মুস্তাফিজ দিয়েছেন ৪২ রান।