হতশ্রী ব্যাটিংয়ে বাংলাদেশের বিশাল হার
তৃতীয় দিন শেষেই ম্যাচের ফল অনুমেয় হয়ে ওঠে, বড় হারের অপেক্ষায় থাকতে হয় বাংলাদেশকে। চতুর্থ দিনে কিছুটা পথ পাড়ি দেয় ঘরের মাঠের দলটি, কিন্তু তা বাংলাদেশের ইনিংসে কোনো প্রভাবই ফেলেনি। দুই ইনিংসেই চরম হতাশার ব্যাটিং করা বাংলাদেশ সাড়ে তিন দিনেই অসহায় আত্মসমর্পণ করলো, নাজমুল হোসেন শান্তর দলকে মেনে নিতে হলো বিশাল হার।
সিরিজের প্রথম টেস্টে সোমবার সিলেট আন্তর্জাতিক ক্রিকেট স্টেডিয়ামে শ্রীলঙ্কার বিপক্ষে ৩২৮ রানের বড় ব্যবধানে হেরেছে বাংলাদেশ। যা টেস্টে রানের হিসেবে ষষ্ঠ বড় হার তাদের। লঙ্কানদের বিপক্ষে ২৬ টেস্টে এটা বাংলাদেশের ১৯তম হার। পাঁচটি ম্যাচ ড্র হয় ও বাংলাদেশ একটি ম্যাচ জেতে। সিরিজের দ্বিতীয় টেস্ট চট্টগ্রামের জহুর আহমেদ চৌধুরী স্টেডিয়ামে আগামী ৩০ মার্চ শুরু হবে।
শ্রীলঙ্কার প্রথম ইনিংসে করা ২৮০ রানের জবাবে ১৮৮ রানেই অলআউট হয়ে যায় বাংলাদেশ। প্রথম ইনিংসেই ৯২ রানের লিড পায় লঙ্কানরা। প্রথম ইনিংসের মতো দ্বিতীয় ইনিংসেও সেঞ্চুরি করেন লঙ্কান অধিনায়ক ধনঞ্জয়া ডি সিলভা ও ম্যাচসেরা কামিন্দু মেন্ডিস, তাদের ব্যাটে ৪১৮ রান তোলে শ্রীলঙ্কা। বাংলাদেশের লক্ষ্য দাঁড়ায় ৫১১ রান, যা পাড়ি দিতে নেমে ৪৯.২ ওভারে ১৮২ রানেই গুটিয়ে যায় তারা।
৫১১ রানের লক্ষ্য, যা পাড়ি দেওয়া সাত সমুদ্দুর পাড়ি দেওয়ার মতো। টেস্ট ইতিহাসে সফল রান তাড়ার রেকর্ডই ৪১৮। বিশাল এই লক্ষ্য পাড়ি দিয়ে যে জেতা প্রায় অসম্ভব তা জানা ছিল বাংলাদেশের। এই জন্যই হয়তো কোনো পরিকল্পনাই সাজাতে পারেনি স্বাগতিকরা। মুমিনুল হক ও মেহেদী হাসান মিরাজ ছাড়া কেউ ব্যাট হাতে লড়তেই পারেননি। চতুর্থ দিন দুপুরের মধ্যে হার মেনে নেয় আজ ৩৬.২ ওভার ও ১৮৪ মিনিট ব্যাটিং করা বাংলাদেশ।
তৃতীয় দিনের শেষ বিকেলে ব্যাটিংয়ে নামা বাংলাদেশের ইনিংসে ধস নামে, আসা-যাওয়ার মিছিলে নাম লেখান বাংলাদেশের ব্যাটসম্যানরা। যে উইকেটে ম্যাচসেরা ধনঞ্জয়া ও কামিন্দু রানের ফোয়ারা বইয়ে দেন, সেই উইকেটেই নিজেদের উইকেট বিলিয়ে আসেন ঘরের মাঠের দলটির ব্যাটসম্যানরা। ৩৭ রানেই ৫ উইকেট হারানো বাংলাদেশ ৪৭ রান তুলে তৃতীয় দিনের খেলা শেষ করে। অপরাজিত থেকে মাঠ ছাড়েন মুমিনুল হক ও নাইটওয়াচম্যান তাইজুল ইসলাম।
এর আগে ওপেনার মাহমুদুল হাসান জয় পরাস্থ হয়ে লঙ্কান পেসার বিশ্ব ফার্নান্দোর শিকারে পরিণত হন। অধিনায়ক নাজমুল হোসেন শান্ত হতাশা জাগিয়ে আউট হন, অনেক বাইরের বলে ব্যাট চালিয়ে উইকেটের পেছনে ধরা পড়েন তিনি। উইকেটের পেছনে ক্যাচ দেন ১৯ রান করা জাকির হাসান ও শূন্য রাতে আউট হওয়া শাহাদাত হোসেন দিপুও। উইকেটে গিয়েই তেড়েফুঁড়ে খেলতে গিয়ে আকাশে বল তুলে আউট হন লিটন কুমার দাস।
মুমিনুল ৭ ও তাইজুল ৬ রান নিয়ে চতুর্থ দিনের খেলা শুরু করেন। এদিন তারা বেশি পথ পাড়ি দিতে পারেননি। দলীয় ৬১ রানে থামেন তাইজুল। আগের ইনিংসের সর্বোচ্চ রান করা বাঁহাতি এই স্পিনার এবার ৬ রান করেন। এরপর ম্যাচের সবচেয়ে বড় জুটিটি পায় বাংলাদেশ। ষষ্ঠ উইকেটে ১০৫ বলে ৬৬ রান যোগ করেন মুমিনুল ও মিরাজ। ৫০ বলে ৬টি চারে ৩৩ রান করা মিরাজের বিদায়ে ভাঙে এই জুটি।
মিরাজের বিদায়ের পরও কিছুটা সময় লড়ে বাংলাদেশ। বাঁহাতি পেসার শরিফুল ইসলামের সঙ্গে ৪৭ রানের জুটি গড়েন মুমিনুল। ১২ রান করা শরিফুলকে ফেরান ক্যারিয়ারে দ্বিতীয়বারের মতো ৫ উইকেট নেওয়া লঙ্কান পেসার কাসুন রাজিথা। ৫৬ রানে ৫ উইকেট নেন তিনি, এটাই তার ক্যারিয়ার সেরা বোলিং। তার আগের ৫ উইকেটও বাংলাদেশের বিপক্ষে। অবশ্য তার সেরা তিনটি বোলিং ফিগারই বাংলাদেশের বিপক্ষে।
শরিফুলকে ফেরানোর পরের বলে খালেদ আহমেদকেও সাজঘর দেখিয়ে দেন রাজিথা। শেষ উইকেটে অভিষিক্ত নাহিদ রানার সঙ্গে ১৮ রানের জুটি গড়েন বাংলাদেশের ইনিংসের সর্বোচ্চ রান করা মুমিনুল, জুটির সব রানই তার করা। ১৪৮ বলে ১২টি চার ও একটি ছক্কায় ৮৭ রানে অপরাজিত থাকেন জাতীয় দলের সাবেক এই টেস্ট অধিনায়ক। শ্রীলঙ্কার বিশ্ব ফার্নান্দো ৩টি ও লাহিরু কুমারা ২টি উইকেট নেন।