হায়দরাবাদকে গুঁড়িয়ে আইপিএল চ্যাম্পিয়ন কলকাতা
রান বন্যা বইয়ে দেওয়ায় সানরাইজার্স হায়দরাবাদকে অনেকেই 'রানরাইজার্স' নামে ডেকেছে। এবারের ইন্ডিয়ান প্রিমিয়ার লিগে (আইপএল) সর্বোচ্চ দলীয় সংগ্রহ হায়দরাবাদের, সেরা চারটির তিনটিই তাদের। সেই দলটিই শিরোপার লড়াইয়ে ব্যাট হাতে হাঁটলো উল্টে পথে, নেমে এলো বিপর্যয়। পুরো আসরজুড়ে খরুচে বোলিং করে আসা কলকাতা নাইট রাইডার্সের পেসার মিচেল স্টার্ক কোয়ালিফায়ারের পর আবার হয়ে উঠলেন দুর্বার। দাপট দেখালেন আন্দ্রে রাসেল, হার্শিত রানাসহ বাকিরাও। হায়দরাবাদকে অল্প রানে আটকে দাপুটে জয়ে আইপিএলের শ্রেষ্ঠত্বের মুকুট জিতে নিলো কলকাতা।
রোববার চেন্নাইয়ের এমএ চিদাম্বরম স্টেডিয়ামে আইপিএলের ফাইনালে হায়দরাবাদকে ৮ উইকেটের বড় ব্যবধানে হারিয়েছে কলকাতা। সেরা হওয়ার লড়াইয়ে হায়দরাবাদ পাত্তাই পায়নি, আইপিএলের ইতিহাসে এটাই সবচেয়ে একপেশে ফাইনাল। এ নিয়ে তৃতীয়বারের মতো আসরটির শিরোপা জিতলো কলকাতা। এর আগে ২০১২ ও ২০১৪ সালে চ্যাম্পিয়ন হয় তারা। চারবার ফাইনাল খেলে তিনবার শিরোপা ছুঁয়ে দেখলো ফ্র্যাঞ্চাইজিটি। হায়দরাবাদ একবারই শিরোপার স্বাদ পেয়েছে। ২০১৬ আসরে রয়্যাল চ্যালেঞ্জার্স বেঙ্গালুরুকে হারিয়ে চ্যাম্পিয়ন হয় তারা। তৃতীয় ফাইনালে এটা দ্বিতীয় হার হায়দরাবাদের।
টস জিতে আগে ব্যাটিং করতে নামা হায়দরাবাদ শুরুতেই দিক হারায়। স্টার্কের করা অবিশ্বাস্য ডেলিভারিতে অভিষেক শর্মা ফেরার পর তাদেরকে পেয়ে বসেন কলকাতার বোলাররা। এরপর নিয়মিত ধারায় উইকেটে পড়েছে, প্রতিপক্ষের দুর্বার বোলিংয়ের সামলে কেউ-ই পারেননি হায়দরাবাদকে পথ দেখাতে। কেউ ২৫ রানের গণ্ডিও পেরোতে পারেননি, সর্বোচ্চ ২৪ রান করেন অধিনায়ক প্যাট কামিন্স। বিপর্যয়ে পড়া হায়দরাবাদ ১৮.৩ ওভারে ১১৩ রানে অলআউট হয়ে যায়, যা এবারের আসরে তাদের সর্বনিম্ন সংগ্রহ। জবাবে রহমানউল্লাহ গুরবাজ ও উইকেটে গিয়েই তাণ্ডব চালানো ভেঙ্কটেশ আইয়ারের ব্যাটে ১০.৩ ওভারেই জয় তুলে নেয় কলকাতা।
ছোট লক্ষ্যে দাপুটে শুরু করে কলকাতা। যদিও তাদের উদ্বোধনী জুটি টেকেনি। দ্বিতীয় ওভারেই ক্যাচ তুলে আউট হন ব্যাটে-বলে দারুণ আসর কাটানো সুনীল নারাইন। কিন্তু বাঁহাতি এই ওপেনারকে হারানোর চাপ বুঝতেই হয়নি কলকাতাকে। তৃতীয় ওভার থেকেই ঝড় ব্যাটিং শুরু করেন ভেঙ্কটেশ। গুরবাজ দেখেশুনে খেললেও বাঁহাতি এই ব্যাটসম্যান চার-ছক্কার ফুলঝুরি সাজিয়ে বসেন।
ভেঙ্কটেশের মারকুটে ব্যাটিংয়ে পাওয়ার প্লের ৬ ওভার থেকেই ৭২ রান পায় কলকাতা। দ্বিতীয় উইকেটে মাত্র ৪৫ বলে ৯১ রানের জুটি গড়েন ভেঙ্কটেশ ও গুরবাজ। নবম ওভারে ভাঙে এই জুটি। হায়দরাবাদের স্পিনার শাহবাজ আহমেদের বলে এলবিডব্লিউ হয়ে ফেরার আগে ৩২ বলে ৫টি চার ও ২টি চক্কায় ৩৯ রান করেন গুরবাজ। অধিনায়ক শ্রেয়াস আইয়ারকে সঙ্গে নিয়ে বাকি কাজটুকু সারেন ভেঙ্কটেশ। ২৪ বলে হাফ সেঞ্চুরি করা কলকাতার এই ব্যাটসম্যান ২৬ বলে ৪ টি চার ও ৩টি ছক্কায় ৫২ রানে অপরাজিত থাকেন। ৩ বলে অপরাজিত ৬ রান করেন শ্রেয়াস। কলকাতার কামিন্স ও শাহবাজ একটি করে উইকেট নেন।
এর আগে ব্যাটিং করা হায়দরাবাদকে শুরুতেই বিপদে ফেলেন স্টার্ক। ইনিংসের প্রথম ওভারে স্বপ্নের এক ডেলিভারিতে অভিষেক শর্মার স্টাম্প উপড়ে নেন অস্ট্রেলিয়ান বাঁহাতি এই পেসার। দ্বিতীয় ওভারে ট্রাভিস হেডকে ফিরিয়ে দেন ভৈবভ আরোরা। শুরুতেই দুই উইকেট হারিয়ে বসার চাপ আর কাটিয়ে উঠতে পারেনি দারুণ মৌসুম পার করা হায়দরাবাদ। চেষ্টা করেও পার্থক্য গড়তে পারেননি এইডেন মার্করাম, নিতীশ কুমার রেড্ডি, হেনরিখ ক্লাসেনরা। শেষ দিকে হাল ধরে দলকে ১০০ পেরিয়ে দেন অধিনায়ক কামিন্স।
মার্করাম ২০, নিতীশ ১৩, ক্লাসেন ১৬ ও কামিন্স ২৪ রান করেন। হায়দরাবাদের আর কোনো ব্যাটসম্যান দুই অঙ্কের রান করতে পারেননি। কামিন্সদের দিক ভুলিয়ে দেওয়া কলকাতার পেসার স্টার্ক ৩ ওভারে ১৪ রান খরচায় ২টি উইকেট নেন, হার্শিত রানার শিকারও ২ উইকেট। ২.৩ ওভারে ১৯ রানে ৩টি উইকেট নেন আন্দ্রে রাসেল। এ ছাড়া একটি করে উইকেট পান ভৈবভ, নারাইন ও বরুণ।