দেশ থেকে সাকিবের অবসরের ‘খুব ভালো সম্ভাবনা আছে’
ঘরের মাঠে দক্ষিণ আফ্রিকার বিপক্ষে ম্যাচ খেলে টেস্ট থেকে বিদায় নিতে চান সাকিব আল হাসান। এর জন্য দেশে ফিরতে নিরাপত্তা নিশ্চয়তার কথা জানান অভিজ্ঞ এই অলরাউন্ডার। নিরাপত্তার আলোচনায় তার দেশ থেকে অবসর নেওয়া নিয়ে তৈরি হয় অনিশ্চয়তা, তবে তা কেটে যাওয়ার ইঙ্গিত মিলেছে। ঘরের মাঠ থেকেই সাকিবের অবসর নেওয়ার ভালো সম্ভাবনা আছে বলে জানিয়েছেন ফারুক আহমেদ।
পরিচালকদের বোর্ড সভা শেষে সোমবার সন্ধ্যায় সংবাদমাধ্যমকে এটা জানান বিসিবি সভাপতি। দেশ থেকে সাকিবের টেস্ট অবসরের বিষয়ে তিনি বলেন, 'সাকিবের সঙ্গে আমার যোগাযোগ হয়েছে। সাকিবের খুব ভালো সম্ভাবনা আছে বাংলাদেশ থেকেই অবসর নেওয়ার।' বর্তমানে যুক্তরাষ্ট্রে ন্যাশনাল লিগ টি-টেনে খেলায় ব্যস্ত থাকা সাকিব ভারত সফরে পুনে টেস্টের আগে সংবাদ সম্মেলনে টেস্ট ও টি-টোয়েন্টি থেকে অবসরের ঘোষণা দেন।
টি-টোয়েন্টি অধ্যায়ের ইতি টেনে ফেলার কথা জানালেও মিরপুরে দক্ষিণ আফ্রিকার বিপক্ষে ক্যারিয়ারের শেষ টেস্ট খেলার ইচ্ছার কথা জানান সাকিব, ম্যাচটি শুরু হবে আগামী ২১ অক্টোবর। বিদায়ী টেস্ট খেলতে নিরাপত্তা নিশ্চয়তার কথা উল্লেখ করেন তিনি। সেদিনই বিসিবি সভাপতি ফারুক আহমেদ জানান, সাকিবের নিরাপত্তার দায়িত্ব নেবে না তারা, এককভাবে কাউকে নিরাপত্তা দেওয়ার সামর্থ্য বিসিবির নেই।
কদিন পরে বিষয়টি নিয়ে কথা বলেন অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের যুব ও ক্রীড়া উপদেষ্টা আসিফ মাহমুদ সজীব ভূঁইয়া। তিনি জানান, ফ্যাসিস্ট সরকারের সংসদ সদস্য হওয়ায় সাকিবের বিরুদ্ধে জনমনে তৈরি হওয়া ক্ষোভের বিপরীতে তার নিরাপত্তা নিশ্চয়তা চাওয়ার ব্যাপারটি অবান্তর। ক্রীড়া উপদেষ্টার মতে, ক্রিকেটার সাকিবকে নিরাপত্তা দেওয়া সম্ভব হলেও জনগণের ক্ষোভ থাকলে সেই নিশ্চয়তা দেওয়া 'সম্ভব নয়'। যদিও কদিন পর বক্তব্য পাল্টে সাকিবকে দেশের মাটিতে সর্বোচ্চ নিরাপত্তা দেওয়ার কথা জানান আসিফ মাহমুদ।
খেলা অবস্থাতেই রাজনীতিতে নাম লেখান সাকিব। গত জানুয়ারিতে আওয়ামী লীগের মনোনীত প্রার্থী হিসেবে মাগুরা-১ আসন থেকে সংসদ সদস্য হন তিনি। গত আগস্টে শেখ হাসিনা সরকারের পততের কিছুদিন পর হত্যা মামলায় আসামী করা হয় সাকিবকে। দেশে ফিরতে এটাই মূলত প্রধান বাধা তার, এ কারণে নিরাপত্তা নিশ্চয়তা চান দেশের সর্বকালের সেরা এই ক্রিকেটার। দেশে ফিরে নিরাপদে থাকাসহ নির্বিঘ্নে দেশ ছাড়ার বিষয়েও নিশ্চয়তা চেয়েছিলেন সাকিব।
নিরাপত্তার ব্যাপারে সাকিবকেই সিদ্ধান্ত নিতে হবে, আগে এমন জানালেও বিসিবি সভাপতির কণ্ঠে পরিবর্তনের সুর। সহায়তার আশ্বাস দিয়ে ফারুক আহমেদ আজ বলেছেন, 'লিগ্যাল প্রসিডিউর তো আমি বলতে পারব না। আমি তো ছোট মানুষ, একজন বোর্ড সভাপতি। আমার কথা হচ্ছে, সাকিবের ব্যাপারটি পুরোপুরি সরকারের পর্যায় থেকে আসতে হবে।'
'আগেও বলেছি, আইনশৃঙ্খলা বাহিনী আছে, উপদেষ্টা আছেন, প্রধান উপদেষ্টা আছেন, তারাই সিদ্ধান্ত নেবেন সামগ্রিক দায়িত্ব নেওয়ার। আমাদের যতোটুকু ক্ষমতা… যেমন স্টেডিয়ামের ভেতরে সে ইনডোরে যাবে, মাঠে খেলবে, অনুশীলন মাঠে যাবে, এসব দায়িত্ব নেওয়াটা তো আমার জন্য খুব সহজ। এটা আমরা নিতে পারব।' বলেন তিনি।
দীর্ঘ সময় ধরে দেশের বাইরে আছেন সাকিব। টি-টোয়েন্টি বিশ্বকাপ খেলে দেশে ফিরে দুদিনের মধ্যেই যুক্তরাষ্ট্রে চলে যান দেশের ইতিহাসের সেরা এই অলরাউন্ডার, খেলেন মেজর লিগ ক্রিকেট (এমএলসি)। পরে কানাডাতে বাংলা টাইগার্স মিসিসাগার অধিনায়ক হিসেবে খেলেন গ্লোবাল টি-টোয়েন্টি। এরপর পাকিস্তানের মাটিতে টেস্ট সিরিজ খেলেন। এই সিরিজের পর ইংল্যান্ডে সারের হয়ে কাউন্টি চ্যাম্পিয়নশিপে একটি ম্যাচ খেলে ভারতে বাংলাদেশ দলের সঙ্গে যোগ দেন সাকিব। টেস্ট সিরিজ খেলে যুক্তরাষ্ট্রে যান তিনি।