স্যামসন-সূর্যকুমার তাণ্ডবে ভারতের রেকর্ড সংগ্রহ, রানচাপায় বাংলাদেশ
সরাসরি সম্প্রচার হচ্ছে কিনা, সেদিকে নজর না দিয়ে কেউ ইনিংসটি দেখলে নিশ্চিতভাবেই হাইলাইটসের কথা ভাববেন। ম্যাচের মাঝে কিংবা পরে ব্যাটিং ইনিংসের হাইলাইটস এমনই হয়, যেখানে জায়গা হয় কেবলই চার ও ছক্কার। ভারতের ইনিংসটি পুরোপুরি তেমনই। ২৫টি চার ও ২২টি ছক্কা, ২০ ওভারে মাত্র ২টি ওভারে দশের নিচে রান তুলেছে স্বাগতিকরা। এমন খুনে ব্যাটিংয়ের প্রধান কারিগর সেঞ্চুরিয়ান সঞ্জু স্যামসন, তার সঙ্গে ঝড় তোলেন অধিনায়ক সূর্যকুমার যাদব। পরে উইকেটে গিয়ে তাণ্ডব চালান রিয়ান পারাগ ও হার্দিবক পান্ডিয়াও।
এই কজনের ব্যাটে বাংলাদেশের বোলারদের 'গলি'র বোলার বানিয়ে রেকর্ডে রেকর্ডে এগিয়ে গেছে ভারত। শনিবার হায়দরাবাদের রাজিব গান্ধী আন্তর্জাতিক স্টেডিয়ামে সিরিজের তৃতীয় ও শেষ টি-টোয়েন্টিতে আগে ব্যাটিং করে ৬ উইকেটে ২৯৭ রানের বিশাল সংগ্রহ গড়েছে ভারত। টি-টোয়েন্টিতে ভারতের এটা সর্বোচ্চ দলীয় সংগ্রহ। তাদের আগের সেরা ইনিংস ছিল ২৬০ রানের, শ্রীলঙ্কার বিপক্ষে। বাংলাদেশের বিপক্ষেও এটা কোনো দলের সর্বোচ্চ দলীয় সংগ্রহ। আগের সর্বোচ্চ ছিল দক্ষিণ আফ্রিকার, ২২৯। আজ সেটাও ছাড়িয়ে গেল বাংলাদেশের লক্ষ্য। টি-টোয়েন্টিতে বাংলাদেশের সফল রানতাড়া ২১৪।
টস জিতে ব্যাটিং করতে নামা ভারত দাপুটে শুরু করে। শেখ মেহেদি হাসানের করা ইনিংসের প্রথম ওভার থেকে তোলে ৭ রান। পরের ওভারে চলে চার-বৃষ্টি। আগের ম্যাচে দারুণ বোলিং করা তাসকিন আহমেদকে টানা ৪টি চার মারেন স্যামসন। ২ ওভারে ২৩ রান তোলা ভারত অবশ্য পরের ওভারেই হোঁচট খায়। তানজিম হাসান সাকিবের শর্ট বল তুলে মারতে গিয়ে শেখ মেহেদির হাতে ধরা পড়েন অভিষেক শর্মা।
প্রথম উইকেট হারানোর চাপ মুহূর্তের জন্যও বুঝতে হয়নি ভারতের। স্যামসন মারকুটে মেজাজেই ছিলেন, তার সঙ্গে যোগ দেন এই ফরম্যাটে 'খুনে মেজাজী' হিসেবে পরিচিত ভারতের অধিনায়ক সূর্যকুমার যাদব। মুহূর্তেই জমে ওঠে তাদের জুটি, দুজনই ব্যাট হাতে ঝড় তোলেন। হুহু করে বাড়তে থাকে ভারতের রান। স্যামসন-সূর্যকুমারের ব্যাটে পাওয়ার প্লে ৬ ওভার থেকে ৮২ রান তোলে ভারত।
স্বাগতিকদের দলীয় সংগ্রহ ১০০ ছাড়ায় ৭.১ ওভারেই। বাংলাদেশের সব বোলারদের উপর দিয়ে সাইক্লোন বইয়ে দেন ভারতের এই দুই ব্যাটসম্যান। প্রথম ওভারে ১৬ রান খরচা করা তাসকিন দ্বিতীয় ওভারেও দেন ১৬ রান। প্রথম ওভারে ১১ রান দিয়ে উইকেট নেওয়া তানজিম পরের ওভারে দেন ১৯ রান। সপ্তম ওভার করা রিশাদ খরচা করেন ১৬ রান।
আইপিএলে সানরাইজার্স হায়দরাবাদের যে মাঠে 'ফিজ' হয়ে ওঠেন মুস্তাফিজুর রহমান, সেই মাঠেও আজ তিনিও সুবিধা করতে পারেননি। প্রথম দুই ওভারে ২৬ রান খরাচা করেন তিনি। বর্ণনাতেই পরিষ্কার যে, বাংলাদেশের বোলারদের ওপর দিয়ে কেমন ঝড় বইয়ে দিয়েছেন স্যামসন ও সূর্যকুমার। মাত্র ২২ বলে হাফ সেঞ্চুরি পূর্ণ করেন স্যামসন, যা ভারতের হয়ে বাংলাদেশের পক্ষে দ্রুততম।
সূর্যকুমারও সময় নেননি, ২৩ বলেই তুলে নেন ক্যারিয়ারের ২১তম হাফ সেঞ্চুরি। এর আগের ওভারে ছক্কা-বৃষ্টি নামান স্যামসন। দশম ওভারে বাংলাদেশের লেগ স্পিনার রিশাদকে টানা ৫ ছক্কা মারেন ডানহাতি এই ওপেনার। ১০ ওভারে ভারতের স্কোরকার্ডে যোগ হয় ১ উইকেটে ১৫২ রান, স্যামসন পৌঁছে যান তার টি-টোয়েন্টি ক্যারিয়ারের প্রথম সেঞ্চুরির কাছে।
১৩তম ওভারের প্রথম বলে শেখ মেহেদিকে চার মেরে সেঞ্চুরিতে পূর্ণ করেন ভারতের এই ওপেনার। ৪০ বলেই স্যামসন পৌঁছান তিন অঙ্কের ম্যাজিক ফিগারে। তার সেঞ্চুরিটি টি-টোয়েন্টিতে ভারতের দ্বিতীয় দ্রুততম, ফরম্যাটটির ইতিহাসের দশম দ্রুততম। ভারতের পক্ষে দ্রুততম সেঞ্চুরির মালিক রোহিত শর্মা, ২০১৭ সালে ইন্দোরে শ্রীলঙ্কার বিপক্ষে ৩৫ বলে সেঞ্চুরি করেন ভারতের সাবেক টি-টোয়েন্টি অধিনায়ক।
সেঞ্চুরির পর বেশি পথ পাড়ি দেওয়া হয়নি স্যামসনের। ১৪তম ওভারে মুস্তাফিজকে তুলে মারতে গিয়ে টাইমিংয়ের গড়বড়ে ডিপ স্কয়ারে ধরা পড়েন ৪৭ বলে ১১টি চার ও ৮টি ছক্কায় ১১১ রানের ঝলমলে ইনিংস খেলেন ডানহাতি এই ওপেনার। এটাই তার টি-টোয়েন্টির ক্যারিয়ার সেরা ইনিংস। দ্বিতীয় উইকেটে মাত্র ৭০ বলে ১৭৩ রানের জুটি গড়েন স্যামসন-সূর্যকুমার।
টি-টোয়েন্টিতে দ্বিতীয় উইকেটে এটা ভারতের দ্বিতীয় সেরা জুটি, যেকোনো উইকেটে তৃতীয় সেরা। স্যামসনের বিদায়ের পরের ওভারে থামেন সূর্যকুমার। এর আগে ৩৫ বলে ৮টি চার ও ৫টি ছক্কায় ৭৫ রানের ঝড়ো ইনিংস খেলেন ভারত অধিনায়ক। এ দুজনের বিদায়ের পরও থামেনি ভারতের ব্যাটিং ঝড়। উইকেটে গিয়েই তাণ্ডব শুরু করেন রিয়ান পারাগ ও হার্দিক পান্ডিয়া। চতুর্থ উইকেটে মাত্র ২৬ বলে ৭০ রানের জুটি গড়েন এ দুজন।
পারাগ ১৩ বলে একটি চার ও ৪টি ছক্কায় ৩৪ ও হার্দিক ১৮ বলে ৪টি করে ৪ ও ছক্কায় ৪৭ রানের ক্যামিও ইনিংস খেলেন। ৪ বলে ৮ রানে অপরাজিত থাকেন রিঙ্কু সিং। পুরো ইনিংসজুড়ে বাংলাদেশের বোলারদের শাসন করে গেছেন ভারতের ব্যাটসম্যানরা। কোনো বোলারই ইকোনমি ১০ এর নিচে রাখতে পারেননি। তানজিম ৩টি উইকেট, কিন্তু ৪ ওভারে তার খরচা ৬৬ রান। যা বাংলাদেশি বোলারদের মধ্যে সর্বোচ্চ।
টি-টোয়েন্টিতে আগের খরুচে বোলিং ছিল মাশরাফি বিন মুর্তজা ও রুবেল হোসেনর, দুজনেরই খরচা ছিল ৬৪ রান করে। একটি উইকেট নেওয়া তাসকিন আহমেদ ৪ ওভারে দেন ৫১ রান। ৪ ওভারে সবচেয়ে কম ১১.২৫ ইকোনমিতে ৪৫ রান দেওয়া শেখ মেহেদি কোনো উইকেট পাননি। এক উইকেট নিতে ৪ ওভারে মুস্তাফিজের খরচা ৫২ রান। সবচেয়ে ২৩.০০ ইকোনেমিতে রান দেওয়া রিশাদ ২ ওভারে ৪৬ রানে থেকেছেন উইকেটশূন্য। ক্যারিয়ারের শেষ টি-টোয়েন্টি খেলতে নামা মাহমুদউল্লাহ রিয়াদ ২ ওভারে ২৬ রানে একটি উইকেট পান।