১১ বছর পর বিজয়ের সেঞ্চুরি, চট্টগ্রাম-ঢাকা মেট্রোর রুদ্ধশ্বাস জয়
ঢাকা বিভাগের পেসার ইকবাল হোসেন ইমনের শর্ট ডেলিভারিটি উড়িয়ে মেরেই বলের দিকে তাকালেন এনামুল হক বিজয়। বল বাতাসে উড়ে সীমানা ছাড়া হবে, এটা নিশ্চিত হতেই হেলমেট খোলা শুরু করলেন তিনি। বল সীমানা ছাড়া হতেই এক হাতে ব্যাট, আরেক হাতে হেলমেট নিয়ে উইকেটে উপুর হয়ে শুয়ে পড়লেন খুলনা বিভাগের ডানহাতি এই ওপেনার। এরপর শুয়েই মুখ ফেরালেন আকাশপানে, হেলমেট ও ব্যাট উঁচিয়ে তৃপ্তির হাসিতে সারলেন তিন অঙ্কের ম্যাজিক ফিগারে পৌঁছানোর উদযাপনের প্রথম পর্ব।
বিজয়ের হাসির ধরনই বলে দিচ্ছিল এই সেঞ্চুরিটি তার কাছে কতোটা বিশেষ। হওয়ারই কথা, টি-টোয়েন্টিতে তার একটি সেঞ্চুরি ছিল এতোদিন, যেটা তিনি করেন ২০১৩ সালে। ১১ বছর পর এসে আবারও মিললো সেঞ্চুরির স্বাদ। বিজয়ের বাধভাঙা উচ্ছ্বাস এ কারণেই। উইকেটেই শুয়ে কিছুটা উদযাপন করে নেওয়া বিজয় উঠে দাঁড়িয়ে ব্যাট-হেলমেট উঁচিয়ে আরও কিছুক্ষণ সেঞ্চুরির স্বাদ নিলেন। এরপর উষ্ণ আলিঙ্গনে তাকে অভিনন্দন জানান উইকেটে সঙ্গী নুরুল হাসান সোহান।
২০১৩ সালের ডিসেম্বরে বিজয় দিবস টি-টোয়েন্টিতে সিলেট স্টেডিয়ামে প্রাইম ব্যাংক ক্রিকেট ক্লাবের হয়ে মোহামেডান স্পোর্টিং ক্লাবের বিপক্ষে ৬৩ বলে ১০৫ রান করেন বিজয়। সিলেট স্টেডিয়াম এখন সিলেট আন্তর্জাতিক ক্রিকেট স্টেডিয়াম। ভেন্যুর নাম বদলালেও, অন্য টুর্নামেন্ট হলেও ১১ বছর পর বিজয়কে একই দাপটে ব্যাটিং করতে দেখা গেল। এনসিএল টি-টোয়েন্টিতে আজ তিনি খেলেছেন ৬৭ বলে ১০টি চার ও ৫টি ছক্কায় ১০১ রানের হার না মানা এক ইনিংস।
বিজয়ের ব্যাটিং শো-এর দিনে জিতেছে তার দল খুলনা বিভাগও। ঢাকা বিভাগকে ২১ রানে হারিয়েছে নুরুল হাসান সোহানের দল। আগে ব্যাটিং করে বিজয়ের সেঞ্চুরি ও সোহানের ২৩ বলে অপরাজিত ৩৪ রানের ইনিংসে ৩ উইকেটে ১৮০ রান তোলে খুলনা। জবাবে উইকেট ৬ উইকেট হাতে থেকে গেলেও বেশি পথ পাড়ি দিতে পারেনি ঢাকা। তাদের ইনিংস শেষ হয় ১৫৯ রানে। তৈবুর রহমান ৬৩ ও মাহিদুল ইসলাম অঙ্কন ৪৩ রান করেন। খুলনার জায়েদ উল্লাহ ৩টি উইকেট নেন।
এই ম্যাচ চলাকালীন সিলেট স্টেডিয়ামের একাডেমি মাঠে হওয়া ম্যাচে বরিশাল বিভাগকে ৭ উইকেটের বড় ব্যবধানে হারিয়েছে রংপুর বিভাগ। আগে ব্যাটিং করে ১৯.২ ওভারে সব কটি উইকেট হারিয়ে ১০৮ রান তোলে বরিশাল। দলটির কোনো ব্যাটসম্যান ৩০ রানের গণ্ডিও পেরোতে পারেননি। রংপুরের আলাউদ্দিন বাবু ৪টি উইকেট নেন। ২টি করে উইকেট পান মকিদুল ইসলাম মুগ্ধ ও আব্দুল গাফফার সাকলাইন।
জবাবে চৌধুরূ মোহাম্মদ রিজওয়ানের হাফ সেঞ্চুরির পর আব্দুল্লাহ আল মামুন ও অধিনায়ক আকবর আলীর ব্যাটে হেসেখেলেই জয় তুলে নেয় রংপুর। ১৩ বল হাতে রেখেই জয়ের বন্দরে পৌঁছায় দলটি। ওপেনার রিজওয়ান ৪৪ বরে ২টি চার ও ৫টি ছক্কায় ইনিংস সেরা ৫৩ রান করেন। আল মামুন ২৬ বলে ২১ ও আকবর ১৪ বলে অপরাজিত ১৬ রান করেন। বরিশালের মইনুল ইসলাম ও মইন খান একটি করে উইকেট পান।
দিনের পরবর্তী ভাগের দুই ম্যাচের একটিতে রুদ্ধশ্বাস লড়াই শেষে সিলেট বিভাগকে ১ রানে হারায় ঢাকা মেট্রো। আগে ব্যাটিং করে ৭ উইকেটে ১৫৬ রান তোলে মেট্রো। আনিসুল ইসলাম ৩৬ বলে ৩৯ ও আবু হায়দার রনি ঝড়ো গতিতে ২৩ বলে ৪৭ রান করেন। সিলেটের নাইম হোসেন সাকিব ৩টি উইকেট নেন। একটি করে উইকেট পান আল ফাহাদ ও মাহফজুর রহমান রাব্বি।
লক্ষ্য তাড়ায় ৩৯ বলে ৩টি চার ও ৭টি ছক্কায় করা অপরাজিত ৮২ রান করেও সিলেটকে জেতাতে পারেননি অধিনায়ক রাব্বি। দলটি ৭ উইকেটে তোলে ১৫৫ রান। তৌফিক খান তুষার ২৮ ও তোফায়েল আহমেদ ২১ রান করেন। ম্যাচসেরা রনি ব্যাট হাতে ঝড় তোলার পর বল হাতে নেন ২ উইকেট। একটি করে উইকেট পান আরাফাত সানি, শহিদুল ইসলাম ও শামসুর রহমান শুভ।
আরেক ম্যাচে রোমাঞ্চকর জয় পায় চট্টগ্রাম বিভাগ। রাজশাহী বিভাগকে ৪ রানে হারিয়েছে তারা। আগে ব্যাটিং করে মুমিনুল হক, ইরফান শুক্কুরের হাফ সেঞ্চুরিতে ৭ উইকেটে ১৯৮ রান তোলে চট্টগ্রাম। মুমিনুল ৩৬ বলে ৫টি চার ও ৩টি ছক্কায় ৫২ রান করেন। ২৯ বলে ৮টি চার ও একটি ছক্কায় ৫৪ রান করেন ইরফান। ঝড় তোলা শাহাদাত হোসেন দিপু ১৫ বলে ২টি চার ও ৩টি ছক্কায় ৩৫ রান করেন। ১০ বলে ২০ রান করেন নাঈম হাসান। রাজশাহীর সাব্বির হোসেন ৩টি উইকেট নেন।
বড় লক্ষ্য তাড়ায় হাবিবুর রহমান, তাওহিদ হৃদয়, মুশফিকুর রহিমদের লড়াইয়ের পরও ৪ রানের ব্যবধান থাকতে থামে রাজশাহী। তারা ৭ উইকেটে ১৯৪ রান তোলে। চোট কাটিয়ে ফেরা হৃদয় ৫০ বলে ৩টি চার ও ৬টি ছক্কায় ৬৯ রান করেন। চোট থেকে ফিরেছেন মুশফিকও, ফেরার দিনে ৩১ বলে ৪টি চার ও ২টি ছক্কায় ৪৬ রান করেন অভিজ্ঞ এই ব্যাটসম্যান। এর আগে ঝড়ো ব্যাটিংয়ে ২০ বলে ৩টি চার ও ৪টি ছক্কায় ৩৯ রান করেন হাবিবুর। চট্টগ্রামের আহমেদ শরিফ ৩টি ও নাঈম হাসান ২টি উইকেট নেন।