সমালোচনার কারণে বিসিবির এই বোধোদয়?
![](https://tbsnews.net/bangla/sites/default/files/styles/big_3/public/images/2025/02/06/bpl.jpg)
দীর্ঘ পথচলা শেষে পর্দা নামার অপেক্ষায় বাংলাদেশ প্রিমিয়ার লিগ (বিপিএল)। প্রস্তুত ফাইনালের মঞ্চ মিরপুর শেরে বাংলা জাতীয় ক্রিকেট স্টেডিয়াম, প্রস্তুত ফাইনালের দুই দল ফরচুন বরিশাল ও চিটাগং কিংসও। প্রস্তুতির অংশ এতোটুকুই, ফাইনাল নিয়ে আগের দিন বিকাল পর্যন্তও বিশেষ কোনো পরিবল্পনা ছিল না বিপিএল গভর্নিং কাউন্সিল বা বাংলাদেশ ক্রিকেট বোর্ডের (বিসিবি)। বিশেষ পরিকল্পনা না হয় না-ই থাকলো, ফাইনালের আগে যে ট্রফি নিয়ে দুই দলের অধিনায়কের ফটোসেশন হয়, সেটাও বেমালুম ভুলে গিয়েছিল কর্তৃপক্ষরা।
টুর্নামেন্ট শুরুর আগে সাধারণত অংশগ্রহণকারী দলের অধিনায়কদের নিয়ে ফটোসেশন হয়। এবারের বিপিএলে এমন কোনো আয়োজন ছিল না। ফাইনালে ওঠা দুই দলের অধিনায়ককে নিয়ে ফটোসেশন করার তাড়াও অনুভব করেনি আয়োজকরা। বিষয়টি নিয়ে বৃহস্পতিবার সকাল থেকেই আলোচনা-সমালোচনা, দুপুরে এ নিয়ে কথা বলেন ফাইনালে ওঠা ফরচুন বরিশালের অধিনায়ক তামিম ইকবাল। বিকালের দিকে এসে টনক নড়ে বিসিবির, সাড়ে ৫টার দিকে এক বিবৃতিতে জানানো হয়; ঢাকার একটি হোটেলে সন্ধ্যা সাড়ে ৭টায় হবে ফাইনালে ওঠা দুই দলের অধিনায়কের ফটোসেশন।
প্রশ্ন জাগতে পারে, ফটোসেশনের ভেন্যু কেন হোটেল। উত্তরটা হচ্ছে, এই হোটেলেই আছে ফাইনালে ওঠা দুই দল। তড়িঘড়ি করা আয়োজনে হোটেলকেই সেরা জায়গা মনে হয়েছে বিসিবিকে। পরিকল্পনা না থাকায় এর চেয়ে ভালো আয়োজন করার সুযোগও ছিল না বিসিবি। তবে বিপিএলের গত দুই আসরের ফাইনালের আগের দিন বিশেষ কোনো স্থাপনাকে ভেন্যু হিসেবে বেছে নিয়েছিল তারা। ২০২৩ বিপিএলে ট্রফি নিয়ে দুই দলের প্রতিনিধির ফটোসেশন হয় মেট্রোর স্টেশনে। সর্বশেষ বিপিএলের ফটোসেশন হয় ঐতিহাসিক আহসান মঞ্জিলের সামনে।
এবার যে এমন কোনো আয়োজনের পরিকল্পনা ছিল না, বিসিবির কথাতেই সেটা স্পষ্ট। বিষয়টি জানতে বেশ কয়েকজন বিসিবি পরিচালকের সঙ্গে যোগাযোগ করা হলে তারা জানান, এ ব্যাপারে কোনো ধারণা নেই তাদের। বিপিএলের দায়িত্বে থাকা শীর্ষ কর্তারাও এ ব্যাপারে কোনো তথ্য দিতে পারেননি। উল্টো, বিষয়টি নিয়ে না লেখার অনুরোধ জানানো হয়। বিসিবির এক পরিচালক নাম না প্রকাশ করার শর্তে দ্য বিজনেস স্ট্যান্ডার্ডকে বলেন, 'এই আয়োজনটা থাকলে ভালো হতো। না হওয়ায় আলোচনা হতেই পারে। আরও বেশি দায়িত্বশীল হওয়া উচিত ছিল আমাদের।'
ফটোসেশন বা আনুষ্ঠানিক সংবাদ সম্মেলনের ব্যাপারে ফাইনালের দুই দলকে আগে থেকে কোনো বর্তা দেয়নি বিসিবি। ফরচুন বরিশাল আজ মিরপুর স্টেডিয়ামের একাডেমি মাঠে অনুশীলন করে। অনুশীলনের পর নিজ দায়িত্বে সংবাদ সম্মেলন করে দলটি, এ ব্যাপারে তারা আগেই জানিয়ে রেখছিল। চিটাগং কিংস অনুশীলন করেনি, মিরপুর স্টেডিয়ামে আসার প্রয়োজনও মনে করেনি তারা। ফাইনালের আগে তারা আনুষ্ঠানিক সংবাদ সম্মেলন করেছে টিম হোটেলে। আজ দুপুর আড়াইটার দিকে দলটি জানায়, ৫টায় সংবাদ সম্মেলন করবে তারা।
জাতীয় দলের ক্ষেত্রে এমন সংবাদ সম্মেলনের রীতি নেই। এমনটি পেশাদার টুর্নামেন্টেও এমন ঘটনা বিরল। ফাইনালের আগে কোনো দল টিম হোটেলে সংবাদ সম্মেলন করেছে, এমন ঘটনা খুঁজে বের করা দুষ্কর। ভেন্যু সংবাদ সম্মেলন করার ব্যাপারে যে বিসিবি থেকে কোনো নির্দেশনা দেওয়া হয়নি, চিটাগং সূত্রে সেটা জানা গেছে। এ ব্যাপারে কোনো বার্তা দেওয়া হয়নি কেন, এমন প্রশ্নের জবাবে বিসিবির এক পরিচালক উল্টো বিস্ময় প্রকাশ করলেন; তবে দায় নিতে চাইলেন না। তিনি বলেন, 'দল ভেন্যুতে বা মাঠে সংবাদ সম্মেলন করবে, এটাই তো স্বাভাবিক। এমনটা হওয়া উচিত নয়। বিসিবিকে এটা বলতে হবে কেন, এই ব্যাপারটা তো সবারই তো জানা।'
ফটোসেশনের ব্যাপারে এক প্রশ্নের উত্তরে তামিম জানান, আরও অনেক কিছু হতে পারতো। এবারের বিপিএলে ভালো অনেক কিছুছে জানিয়ে বরিশাল অধিনায়ক বলেন, 'অনেক কিছু হতে পারতো, অনেক কিছু করা যেত, এসব নিয়ে আমরা সারাক্ষণ বিতর্ক করতে পারি। তবে অনেক কিছু ভালো হয়েছে, এটাও স্বীকার করতে হবে। মাঠের ক্রিকেট ভালো হয়েছে, উইকেট, রান এগুলো ভালো ছিল। কোনো সন্দেহ নেই, অনেক ঘাটতি পূরণ করার ব্যাপার আছে। তবে দিন শেষে এটা আমাদের নিজের টুর্নামেন্ট। আমিও অনেক প্রশ্ন তুলেছি, আরও অনেক ক্রিকেটার বলেছে, মিডিয়া করেছে। তবে এটা আমাদেরই টুর্নামেন্ট।
'কোনোভাবে এটাকে রক্ষা করতে হবে আমাদের, যেন ওই সুযোগটা থাকে পরের বছর আরও ভালো করার। এটাকে যদি আমরা প্রতিদিন একই কথা বলে নষ্ট করে দিই, তাহলে বার্তাগুলো খুব বেশি ভালো যায় না বিদেশে। অবশ্যই আমরা কাজগুলোও এ রকম করছি যে, ভালো বার্তা যাওয়ার মতো নয়। এটাকে ডিফেন্ড করছি না। তবে কখনও কখনও নিজের বাসার জিনিস একটু রক্ষা করে চলতে পারলে তা শুধু ক্রিকেটারদের জন্যই ভালো নয়, সবার জন্যই ভালো। আমাদেরকে দেখতে হবে, সম্মানটাকে আমরা কীভাবে রাখতে পারি।' যোগ করেন তামিম।
বিপিএলের সর্বশেষ আসরের ফাইনাল খেলে ফরচুন বরিশাল ও কুমিল্লা ভিক্টোরিয়ান্স। বরিশালের অধিনায়ক ছিলেন তামিম, কুমিল্লার লিটন কুমার দাস। কিন্তু আহসান মঞ্জিলের সামনে করা ফটোসেশনে বরিশালের প্রতিনিধি হিসেবে ছিলেন মেহেদী হাসান মিরাজ ও কুমিল্লার জাকের আলী অনিক। আগের দিন ম্যাচ খেলায় পরের দিন সকালে ফটোসেশনে অংশ নেওয়া কঠিন ছিল বলে জানান তামিম। অবশ্য নিজের দোষও মেনে নেন অভিজ্ঞ এই ওপেনার। তবে তামিমের চাওয়া পরিকল্পনার ব্যাপারে আগেই দলগুলোকে জানিয়ে রাখা উচিত।
গত আসরের ফটোসেশনের উদাহরণ টেনে তামিম বলেন, 'গতবার গিয়েছিল মিরাজ ও জাকের আলী। হওয়া উচিত ছিল আমার ও লিটন দাসের। আমাদেরও দোষ আছে। তবে এই জিনিসটা যদি আরেকটু ভালোভাবে পরিকল্পনা করা যায়… যেমন, আমি তখন যাইনি, কারণ আগের রাতে খেলেছি সেমি-ফাইনাল (কোয়ালিফায়ার), ঘুম থেকে উঠে আমার পক্ষে ওই জায়গায় যাওয়া অসম্ভব ছিল প্রায়। আমি নিশ্চিত, এটা হলে অবশ্যই ভালো হতো। কিন্তু পরিকল্পনা আগের থেকে জানা থাকলে এটা গোছানোভাবে করা সম্ভব।'