ঢাকার উদ্দেশে বেরিয়ে পড়লেন ক্ষুব্ধ মিরাজ, টিম হোটেলে হইহুল্লোড়
মেহেদী হাসান মিরাজের নেতৃত্বে চট্টগ্রাম চ্যালেঞ্জার্সকে সুখী পরিবারই মনে হচ্ছিল। তারুণ্য নির্ভর দলটিকে পথ দেখিয়ে এগিয়ে নিয়ে যাচ্ছিলেন জাতীয় দলের এই ক্রিকেটার। তার নেতৃত্বে চার ম্যাচে দুটিতে জয় পায় চট্টগ্রাম। কিন্তু মুহূর্তেই সব পাল্টে গেছে, হঠাৎ করে অধিনায়কত্ব থেকে সরিয়ে দেওয়া হয়েছে তাকে। যা মানতে পারছেন না মিরাজ। যে কারণে দল ছেড়ে ঢাকা ফিরে যাওয়ার সিদ্ধান্ত পর্যন্ত নিয়ে ফেলেন তিনি।
মাঝ পথে দেশে ফিরে গেছেন চট্টগ্রামের কোচ পল নিক্সনও। দেশে ফিরলেও চট্টগ্রামের সঙ্গে তার নিয়মিত যোগাযোগ হচ্ছে। তার নির্দেশনামাফিকই অধিনায়ক বদলানো হয় বলে জানান চট্টগ্রামের চিফ অপারেটিং অফিসার সৈয়দ ইয়াসির আলম। তবে রোববার বিকেলে ঢাকার উদ্দেশে রওনা দিতে যাওয়া মিরাজ জানালেন, ইয়াসির আলমের দুর্ব্যবহারের কারণেই চট্টগ্রামের হয়ে খেলতে চান না তিনি।
এভাবে অধিনায়কত্ব থেকে সরিয়ে দেওয়ার ব্যাপারটিও মিরাজের কাছে রীতিমতো অপমানজনক মনে হয়েছে। যে কারণে ঢাকা ফিরে যাওয়ার সিদ্ধান্তও নিয়ে নেন মিরাজ। বিষয়টি বিসিবিতেও জানিয়েছেন তিনি। বিসিবির প্রধান নির্বাহী নিজাম উদ্দিন চৌধুরী বরাবর পাঠানো চিঠিতে মায়ের অসুস্থতার বিষয়টি উল্লেখ করেছেন বাংলাদেশের এই অলরাউন্ডার। যদিও এটা চিঠিতেই সীমাবদ্ধ, আসল কারণ অন্যটা।
বোরবার দুপুরে জহুর আহমেদ চৌধুরী স্টেডিয়ামে অনুশীলন ছিল চট্টগ্রামের। এদিন দলের সঙ্গে মাঠে যাওয়া বা অনুশীলন, কোনোটাই করেননি মিরাজ। বিকালে সাড়ে ৫টার ফ্লাইটে ঢাকার ফেরার টিকেট কাটেন তিনি। স্ত্রী-সন্তানকে নিয়ে বিমানবন্দরের উদ্দেশে বিকাল সোয়া চারটার দিকে চট্টগ্রামের পেনিনসুলা হোটেল থেকে বের হয়ে যান মিরাজ।
নিচে গিয়ে গাড়ির জন্য অপেক্ষা করছিলেন চট্টগ্রাম অলরাউন্ডার। এ সময় চট্টগ্রামের লজিস্টিক ম্যানেজার হিরক নিচে নেমে মিরাজকে অনেক বুঝিয়ে হোটেলে ফেরান। লবিতে বসে দীর্ঘক্ষণ মিরাজকে অনুরোধ করতে থাকেন হিরক। সোয়া পাঁচটার দিকে মিরাজকে নিয়ে উপরে ওঠেন হিরক। তখনও স্ত্রী-সন্তানকে গাড়িতে বসার কথা বলে যান মিরাজ। এর কিছুক্ষণ পর হিরক নিচে নেমে মিরাজের স্ত্রী-সন্তানকে উপরে নিয়ে যান। এরপর মিরাজকে নিয়ে আলোচনায় বসে চট্টগ্রামের টিম ম্যানেজমেন্ট।
হোটেলের বাইরে দাঁড়িয়ে ক্ষুব্ধ মিরাজ দ্য বিজনেস স্ট্যান্ডার্ডকে বলেন, 'খেলার তিন ঘণ্টা আগে আমাকে বলেছে তুমি অধিনায়কত্ব করছো না। সেটা নিয়ে কোনো সমস্যা নেই। আমি জানতে চেয়েছি কেন আপনারা এমন সিদ্ধান্ত নেবেন। আপনাদের হয়তো চিন্তা ভাবনা থাকলে আমাকে আগে থেকেই জানিয়ে দিতেন। আমি কী বলেছি আমার অধিনায়কত্ব লাগবে? এটা তো খেলোয়াড়ের জন্য অপমানজনক। এখানে ম্যানেজার যারা আছে, সিইও মিলে হয়তো একটা সিদ্ধান্ত নিয়েছে।'
কোচের নির্দেশনায় মিরাজকে অধিনায়কত্ব থেকে সরিয়ে দেওয়ার ব্যাপারটি মিথ্যা বলে দাবি করেন মিরাজ। পল নিক্সনের সঙ্গে ফোনে আজও ৩০ মিনিট কথা হয়েছে জানিয়ে মিরাজ বলেন, 'আমার কাছে মনে হয় মালিককে নিয়ে আমার কোনো অভিযোগ নেই। মালিক অনেক ভালো মানুষ।'
'কোচ চলে গেছে, উনি যাওয়ার আগে নাকি আমাকে নিয়ে অনেক কথা বলে গেছে। আমি নাকি নিজের জন্য ক্রিকেট খেলি। আমি নাকি স্বার্থপর। ও আজ (পল নিক্সন) আমাকে ফোন দিয়েছে। প্রায় ৩০ মিনিটের মতো কথা হয়েছে। ও আমাকে এমন কিছু বলেনি। অথচ আমাকে বলা হয়েছে সিদ্ধান্তের ক্ষেত্রে কোচের নাকি মদদ আছে।' যোগ করেন মিরাজ।
চট্টগ্রামের চিফ অপারেটিং অফিসার ইয়াসির আলমকে নিয়ে মিরাজের সবচেয়ে বড় আপত্তি। ইয়াসিরের অপেশাদার আচরণের কারণে চট্টগ্রামে খেলার অবস্থা নেই বলে মনে করেন তিনি। মিরাজের ভাষায়, 'সব সময় তো ব্যস্ত থাকে দেখি। সে যদি দলে থাকে আমি থাকব না। ইয়াসির যদি না থাকেন, তাহলে আমি দলে খেলব, নয়তো খেলব না।'