ক্রিকেট মাঠে সুরের লহর
মিরপুর শেরে বাংলা জাতীয় ক্রিকেট স্টেডিয়াম; হোম অব ক্রিকেট। বছরজুড়ে এখানে থাকে ক্রিকেটের মেলা, চার-ছক্কার ফুলঝুরি আর উইকেটে পতনে গ্যালারি হয় উন্মত্ত, বয়ে যায় আনন্দের জোয়ার। থাকে বেদনার পর্বও। মঙ্গলবার মিরপুর স্টেডিয়ামের গ্যালারি উন্মাতাল হলো, চললো হইহুল্লোড়; তবে এসব ক্রিকেটের জন্য নয়। উপলক্ষ্য এবার এ আর রহমান। সুরের ঝঙ্কারে কয়েক ঘণ্টার জন্য ১২ হাজার দর্শককে মাত করে রাখলো ভারতের অঙ্কারজয়ী গুণী এই শিল্পী ও তার দল।
জাতির জনক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের জন্মশতবার্ষিকী উদযাপনে অনেক পরিকল্পনা সাজিয়েছিল বাংলাদেশ ক্রিকেট বোর্ড (বিসিবি)। কিন্তু করোনাভাইরাসের প্রকোপে সব পরিকল্পনা ভেস্তে যায়। এর মধ্যে কেবল 'ক্রিকেট সেলিব্রেটস মুজিব হান্ড্রেড' নামের কনসার্টটি আলোর মুখ দেখলো। যে আয়োজনের মধ্যমণি হয়ে মঞ্চ মাতালেন মাদ্রাজ মায়েস্ত্রো এ আর রাহমান। তার দলে ছিলেন হরিহরণ অনান্থ সুব্রামানি, রশিদ আলী, বেনি দায়াল, জনিতা গান্ধী, আদিত্য নারায়ণসহ আরও কয়েকজন।
এই কনসার্টকে ঘিরে বিসিবির ব্যস্ততা গত কয়েকদিন ধরে। পুরো স্টেডিয়াম সাজানো হয় পতাকার রং লাল-সবুজ বাতি দিয়ে, সন্ধ্যা হলেই গত কয়েক দিন অপূর্ব সাজে সেজে উঠেছে মিরপুর স্টেডিয়াম। মঙ্গলবার এ আর রহমানের সুরের লহরের সঙ্গে ছিল আলোর ঝলকানিও। স্টেডিয়ামের ভেতরের পুরোটাজুড়ে ছিল আলোর খেলা।
বিসিবির এই বিশাল আয়োজনে অংশ নেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। সন্ধ্যা সাড়ে ৮টায় স্টেডিয়ামে প্রবেশ করেন তিনি। জাতীয় সঙ্গীতের মধ্য দিয়ে শুরু হয় এর আর রহমানের মূল অনুষ্ঠান। অবশ্য এর বেশ আগেই অনুষ্ঠান শুরু করা হয়। দর্শকদের জন্য স্টেডিয়ামের গেট উন্মুক্ত করা হয় দুপুর ১টায়, খোলা রাখা হয় বিকাল সাড়ে ৫টা পর্যন্ত।
ছেলে-মেয়েদের সমবেত কণ্ঠে ৪টা ২০ থেকে ৪টা ২৫ মিনিট পর্যন্ত চলে জাতীয় সংগীত পরিবেশনা। বিকাল ৪টা ৩০ মিনিট থেকে ৫টা ১৫ মিনিট পর্যন্ত গান পরিবেশনা করেন বাংলাদেশি ব্যান্ড মাইলস। এরপর বিকাল ৫টা ২৫ মিনিটে মঞ্চে ওঠেন মমতাজ। ৬টা পর্যন্ত সবাইকে সুরের জালে বেধে রাখেন বাংলাদেশের ফোকসম্রাজ্ঞী।
৬টার দিকে বিরতি নেওয়া হয়। কিন্তু বিরতির মাঝেই ঘটে যায় বিপত্তি। ৬টা ২৫ মিনিটে শুরু হয় বৃষ্টি, চলে ৭টা পর্যন্ত। ১০ হাজার ও ৫ হাজার টাকায় টিকেট কেটে মাঠে বসা দর্শকদের এতে ভোগান্তিতে পড়তে হয়। কেউ কেউ দৌড়ে নিরাপদ জায়গায় গেলেও অনেকে বৃষ্টিতে ভিজতে থাকেন। বৃষ্টি থামার পর মমতাজ আবারও শুরু করেন, সব মিলিয়ে বেশ কয়েকটি গান পরিবেশনা করেন তিনি।
সাড়ে আটটায় প্রধানমন্ত্রী আসেন, সমবেত কণ্ঠে জাতীয় সঙ্গীত গাওয়ার পর আবারও মঞ্চে ওঠেন মমতাজ। এ আর রহমান ও তার দলকে তাদের সেটআপ প্রস্তুত করার সময় দিতে মূলত তিন দফায় গান গাইতে হয় তাকে। ৯টার দিকে মঞ্চে ওঠেন ভারতের কিংবদন্তি গায়ক উদিত নারায়নের ছেলে আদিত্য নারায়ন, কিছুক্ষণ কথা বলে মঞ্চ ছাড়েন তিনি। এরপর আরও কিছুটা সময় যায়, ৯টা ৪০ মিনিটে মঞ্চে ওঠেন এ আর রহমান ও তার দল, ২৫টি গান পরিবেশনা করে তারা।
অস্কারজয়ী গান 'জয় হো' দিয়ে শুরু করেন এ আর রহমান নিজেই। এরপর জনিতা গান্ধীকে নিয়ে তিনি 'মুককালা মুকাবিলা' গানটি গান। পরের গান 'রাংদে বাসান্তি'তে বেনি দায়ালসহ আরও কয়েকজন অংশ নেন। এরপর গান নিয়ে মঞ্চে হাজির হন বর্ষীয়ান গায়ক হরিহরণ, তিনি 'চান্দারে, চান্দারে' গানটি পরিবেশনা করেন।
এরপর আবারও সুরের ঝঙ্কার তোলেন এ আর রহমান, তার বিখ্যাত গান 'দিল সে রে' গানটি পরিবেশনা করেন তিনি। পরের গানটি গান জনিতা গান্ধী, ' জিয়া জালে' গানটি গান তিনি। 'কাহি তো' গানটি পরিবেশনা করেন রশিদ আলী। সব সময়ের জনপ্রিয়তার শীর্ষে থাকা গান 'তুহি রে' গান নিয়ে আবারও মঞ্চে ওঠেন হরিহরণ।
এরপর দলকে নিয়ে এক টানা বেশ কয়েকটি গান পরিবেশনা করেন এ আর রহমান। 'দাম মাস্তকালান্দার, মাস্ত মাস্ত', 'ফায়াকুন', 'খুয়াজা মেরি খুয়াজা' গেয়ে কিছুটা সময়ের জন্য বিরতিতে যান কিংবদন্তি এই সঙ্গীত পরিচালক। এরপর একক একক বাদ্য পরিবেশনায় সবাইকে মাত করে রাখেন কিংবদন্তি ড্রামার শিভামানি।
উপস্থাপকের ভূমিকায় থাকা আদিত্য নারায়ণও গান পরিবেশনা করেন। তার বাবার জনপ্রিয় গান 'এ আজনবি' গানটি গান তিনি। জনিতা গান্ধী আবারও মঞ্চে আসেন 'কেহনাহিয়া, চালনে লাগি' গান নিয়ে। এরপর 'আগার তুম সাথ হো' এবং এ আর রহমানের সঙ্গে 'ও হাম দাম, বিন তেরে কেয়া জিনা' গান পরিবেশনা করেন জনিতা।
এরপর বঙ্গবন্ধুর জন্মবার্ষিকী উপলক্ষ্যে তৈরি করা গান 'জয় বাংলা' জয় বাংলা, জয় বাংলাদেশ' গানটি গান এ আর রহমান, প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা তখন ভিআইপি বক্সে বসে সেটা ভিডিও করছিলেন। এ আর রহমান পরের গানটি গান 'আমার সোনার বাংলা'; এই গানটিও বঙ্গবন্ধুর জন্মবার্ষিকী উপলক্ষ্যে তৈরি করা।
হরিহরণ 'তু মেরে পাস হে', লতা মঙ্গেশকরকে উৎসর্গ করে এর আর রহমানের 'লুকাছুপি'র পর 'কাভি কাভি তো লাগি' গানটি পরিবেশনা করেন রশিদ আলী। বেনি দায়াল-জনিতা মিলে 'ইশকে শাবা' গাওয়ার পর ১০ মিনিটের মতো ইনস্ট্রুমেন্টাল বাজে। এরপর জনিতা 'পারাম সুন্দরী', 'হায় চাকা চাকা চাক হে তু', রশিদ আলী 'লাল মেরি ছোরি' গান পরিবেশনা করেন। শেষদিকে 'মুস্তফা মুস্তফা'সহ আরও কয়েকটি গান পরিবেশনা করেন এ আর রহমান। কনসার্টটি চলে রাত পৌনে একটা পর্যন্ত।