চার বছর পর সাকিবের পাঁচ
মিরপুর টেস্টের তৃতীয় দিন শ্রীলঙ্কার যাওয়া ৫ উইকেটের তিনটি নিয়েছিলেন সাকিব আল হাসান। এর মধ্যে লঙ্কান অধিনায়ক দিমুথ করুনারত্নের উইকেটটি ছিল 'স্পেশাল'। ভুবন ভোলানো ডেলিভারিতে করুনারত্নেকে ফিরিয়ে প্রশংসায় ভেসেছিলেন বাঁহাতি এই স্পিনার। পুরনো সাকিবের দেখা পেয়ে বাংলাদেশের পেস বোলিং কোচ অ্যালান ডোনাল্ড বলেছিলেন, 'আশা করি সে কাল পাঁচ উইকেট শিকার করবে।'
কোচের আশা পূরণ হয়েছে, চতুর্থ দিনে ২ উইকেট নিয়ে টেস্ট ক্যারিয়ারে ১৯তম বারের মতো ৫ উইকেট শিকার করেছেন সাকিব। যা পেতে দীর্ঘ চার বছর অপেক্ষা করতে হয়েছে বাংলাদেশ অলরাউন্ডারকে। সর্বশেষ ২০১৮ সালের জুলাই মাসে ইনিংসে পাঁচ উইকেট নেন তিনি। ঘরের মাঠের অপেক্ষাটা আরও বড় ছিল। ২০১৭ সালের আগস্টে মিরপুরে অস্ট্রেলিয়ার বিপক্ষে ৫ উইকেট পান সাকিব। অবশ্য ওই টেস্টের দুই ইনিংসে ৫ উইকেট করে পান বিশ্বের অন্যতম সেরা এই অলরাউন্ডার।
সাকিবের ৫ উইকেটে শ্রীলঙ্কাকে অল্প রানে বাধা যায়নি। ৫০৬ রান তুলে প্রথম ইনিংসেই ১৪১ রানে এগিয়ে গেলে লঙ্কানরা। তবে সফরকারীদের ইনিংস আরও বড় হতে পারতো, সাকিব সেই পথে বাধার দেওয়াল তুলেছেন। তাকে সঙ্গ দিয়েছেন ডানহাতি পেসার এবাদত হোসেন, তার শিকার ৪ উইকেট। বাকি উইকেটটি আসে রান আউট থেকে।
টেস্টে নিয়মিত নন সাকিব। গত কয়েক বছরে বাংলাদেশের অনেক টেস্ট মিস করেছেন বাঁহাতি এই স্পিনার। কিন্তু যখনই মাঠে নেমেছেন, তার স্পিন বিষে নীল হয়েছেন প্রতিপক্ষের ব্যাটসম্যানরা। ৫ মাস পর টেস্টে ফিরে চট্টগ্রামে দুই ইনিংস মিলিয়ে সাকিব নেন ৪ উইকেট। মিরপুরে এসে তিনি হয়ে উঠেছেন লঙ্কানদের জন্য যমদূত।
১০ ওভারের বেশি বোলিং করা বাংলাদেশের বোলারদের মধ্যে সবচেয়ে কম ইকোনমিতে রান দিয়ে সবচেয়ে বেশি উইকেট ঝুলিতে পুরেছেন সাকিব। সাকিবের বোলিং আরও আলো ঝলমলে হতে পারতো, কিন্তু বাকি বোলারদের নির্বিষ বোলিংয়ে সেটা সম্ভব হয়নি। অন্য বোলাররা যখন অবলীলায় রান খরচা করে গেছেন, সাকিব বল হাতে ফিরে কমিয়েছেন শ্রীলঙ্কার রানের গতি। পাশাপাশি তুলে নিয়েছেন উইকেটও। ৫ উইকেট নেওয়ার ইনিংসে ৪০.১ ওভার বোলিং করেছেন সাকিব, রান দিয়েছেন ৯৬।
জিম্বাবুয়ে, ওয়েষ্ট ইন্ডিজ ও শ্রীলঙ্কার বিপক্ষে তিনবার করে পাঁচ উইকেট নিয়েছেন সাকিব। দুবার করে পাঁচ উইকেট নিয়েছেন অস্ট্রেলিয়া, দক্ষিণ আফ্রিকা, নিউজিল্যান্ড ও ইংল্যান্ডের বিপক্ষে। ভারত ও পাকিস্তানের বিপক্ষে একবার ৫ উইকেট নিয়েছেন তিনি। আফগানিস্তানের বিপক্ষে এখনও ৫ উইকেট নেওয়া হয়নি তার। অবশ্য আফগানদের বিপক্ষে একটি টেস্টই খেলেছে বাংলাদেশ।
শ্রীলঙ্কার বিপক্ষে ক্যারিয়ারের ৬১তম টেস্ট খেলছেন সাকিব। ১০২ ইনিংসে তার শিকার ২২৪ উইকেট, যা বাংলাদেশের মধ্যে সর্বোচ্চ। বাঁহাতি এই স্পিনারের ক্যারিয়ার সেরা বোলিং নিউজিল্যান্ডের বিপক্ষে, ৩৬ রানে ৭ উইকেট নিয়েছিলেন তিনি। সর্বোচ্চ উইকেট শিকারির তালিকায় দুই নম্বরে থাকা তাইজুল ইসলাম সাকিবের ধারে কাছেও নেই। বাঁহাতি এই স্পিনার ৩৮ টেস্টে (চলতি টেস্টসহ) নিয়েছেন ১৫৮ উইকেট।