কমপক্ষে বিশ কর্মকর্তা টেন্ডার বাগানোর কাজে সাহায্য করতেন শামীমকে
জি কে শামীম নামেই তিনি সাধারণভাবে পরিচিত। ‘উনাদের’ তিনি নিয়োগ দিয়েছিলেন নিজের ‘এমপ্লয়ি’ হিসেবে।যেন ‘উনারা’ নিজ নিজ বিভাগের কর্তাদের ওপর প্রভাব খাটিয়ে কাজের আদেশ নিয়ে আসতে পারেন। যুবলীগ নেতা গোলাম কিবরিয়া শামীমের নিজের প্রতিষ্ঠান জি কে বিল্ডার্স। এই ‘উনারা’ হলেন গণপূর্ত বিভাগের কমপক্ষে বিশ জন অবসরপ্রাপ্ত কর্মকর্তা। তাদের ‘ভাড়া’ করেছিলেন শামীম, যাতে তাদের মাধ্যমে টেন্ডার বাগানো যায়।
অবসরপ্রাপ্ত ওই কর্মকর্তারা বেতন পেতেন ভালোই। মাসে দু’লাখ থেকে পাঁচ লাখ পর্যন্ত। কিন্তু কেউ নিয়মিত অফিস করতেন না।শামীমের এই ‘কর্মকর্তারা’ কখনও-সখনও সংশ্লিষ্ট সরকারি কর্তৃপক্ষগুলোকে ঘুষও সাধতেন-- ‘বসের’ বিরুদ্ধে সম্ভাব্য সব রকম সরকারি পদক্ষেপ বন্ধ রাখার জন্য।
র্যাবের প্রাথমিক তদন্তে বেরিয়ে এসেছে এসব তথ্য। সরকারের গণপূর্ত বিভাগের ওপর শামীমের এই অবসরপ্রাপ্ত ‘কর্মকর্তা’ নেটওয়ার্কটির শক্তিশালী প্রভাব ছিল।
র্যাবের সূত্র নিশ্চিত করেছে, এই অবসরপ্রাপ্তদের বেশিরভাগ এই মন্ত্রণালয়ের যুগ্ম সচিব ও অতিরিক্ত সচিব, এমনকি পূর্ণ সচিবও ছিলেন। কেবল দুর্নীতিবাজ কর্মকর্তাদের ভাড়া করতেন শামীম। কারণ তাকে টেন্ডার পাইয়ে দেওয়াই ছিল তাদের কাজ।
নিকেতনে তার অফিসে র্যাবের অভিযান থামাতে র্যাব কর্মকর্তাদেরও প্রভাবিত করতে চেষ্টা করেছিলেন বলে অভিযোগ রয়েছে শামীমের বিরুদ্ধে।সূত্র জানিয়েছে, তিনি এমনকি র্যাব কর্মকর্তাদের টাকা সেধেছিলেন— যত টাকা চান ততই দিতে চেয়েছিলেন যাতে তার অফিসে অভিযান না হয়, তাকে গ্রেফতার না করা হয়।
জি কে শামীমকে জিজ্ঞাসাবাদ করেছেন এমন এক কর্মকর্তা নিজের নাম প্রকাশ না করে বললেন, রাজধানীর পাঁচটি ভিন্ন ভিন্ন জায়গায় শামীমের কমপক্ষে পাঁচটি বিলাসবহুল বাড়ি আছে।বাসাবো ও নিকেতনে তার এমন দুটি বাড়ির বিস্তারিত খুঁজে পেয়েছেন র্যাব কর্মকর্তারা। সেগুলো আধুনিক সব উপকরণ দিয়ে সাজানো। নিরাপত্তা ব্যবস্থাও আধুনিক প্রযুক্তিনির্ভর।
শামীম এসব বাড়িতে যেতেন ব্যবসায়িক আলোচনার জন্য। আবার তার আমন্ত্রণে সরকারি কর্তাদেরও অনেকে সেখানে আপ্যায়িত হতে যেতেন বলে আইন-শৃঙ্খলা বাহিনীর সূত্র নিশ্চিত করেছে।
র্যাবের লিগ্যাল অ্যান্ড মিডিয়া উইং-এর ডিরেক্টর সারওয়ার বিন কাসেম অবশ্য শামীমের জিজ্ঞাসাবাদের বিষয়টি নিয়ে বিস্তারিত বলতে চাননি। শুধু জানালেন, শামীমের অবৈধ ব্যবসায়ের অনেক খবরই তারা পেয়েছেন। শামীম বেশ কজন সরকারি কর্মকর্তা ও রাজনীতিবিদদের নাম বলেছেন। তবে, সারওয়ার বললেন, এখনই সব তথ্যের বিস্তারিত জানাতে পারছেন না তারা।
শুক্রবার নিকেতনের অফিস থেকে শামীমকে আটক করা হয়। তখন তার কাছে এক কোটি ৮০ লাখ টাকার মতো নগদ পাওয়া যায়। সে সঙ্গে ছিল ১৬৫ কোটি টাকার ফিক্সড ডিপোজিটের রশিদ।
মাদক নিয়ন্ত্রণ ও অস্ত্র আইনের দুটি মামলায় শনিবার জি কে শামীমকে ১০ দিনের রিমান্ড মঞ্জুর করেছে আদালত। সেখানে তাকে চিহ্নিত অপরাধী হিসেবে উল্লেখ করা হয়েছে। তার কাছে পাওয়া বন্দুক ও তার গানম্যানদের বিষয়ে বলা হয়েছে, তিনি অবৈধভাবে এসব ব্যবহার করতেন জনমনে আতঙ্ক তৈরি করতে।টেন্ডার বাগানো, নানা উপায়ে অর্থ আত্মসাৎ এবং মাদক ও ক্যাসিনো ব্যবসা চালানোর জন্য প্রভাব থাটাতে ব্যবহৃত হত তার অস্ত্র ও বন্দুকধারী সহযোগীরা।
অবৈধ উপায়ে অর্জিত এসব অর্থের বিপুল অংশ দেশের বাইরে পাচার করা হয়েছে বলেও মামলায় উল্লেখ করা হয়।