অ্যারিস্টটল থেকে মার্গারেট থ্যাচার- ক্লিনটন: সুযোগ পেলেই নিতেন ‘পাওয়ার ন্যাপ’
ইতিহাসের অনেক বিখ্যাত চরিত্রই স্থান-কাল-পাত্র ভুলে একটুখানি 'পাওয়ার ন্যাপ' দিয়ে নিতেন। পাওয়ার ন্যাপের জন্য বিশেষ খ্যাতি পেয়ে গিয়েছিলেন তারা। সে তালিকায় আছে অ্যারিস্টটল, আইনস্টাইন, উইনস্টন চার্চিলের মতো ব্যক্তিত্ব। দিনের বেলায় কয়েক ধাপে ঘুমাতেন তারা। পাওয়ার ন্যাপ হলো অল্প সময়ের ঘুম, যা গভীর নিদ্রার আগেই ভেঙে যায়।
দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের সময় চার্চিল মধ্যদুপুরের দিকে প্রতিদিন অন্তত দু-ঘণ্টা করে ঘুমাতেন। স্মৃতিকথায় তিনি লিখেছেন, প্রকৃতি মানুষকে সকাল আটটা থেকে মাঝরাত পর্যন্ত টানা কাজ করার উপযোগী করে তৈরি করেনি।
সালভাদর ডালি তার ৫০ সিক্রেটস অভ ম্যাজিক ক্রাফটসম্যানশিপ বইয়ে উদীয়মান শিল্পীদের এক সেকেন্ডের 'মাইক্রো-ঘুম' নেওয়ার পরামর্শ দিয়েছেন। তার দাওয়াইমাফিক, এ ঘুম নিতে হবে বসে, হাতে চাবি নিয়ে। মেঝেতে থাকবে প্লেট। ঘুমিয়ে পড়লেই হাত থেকে চাবি পড়ে যাবে প্লেটের ওপর। চাবি পড়ার আওয়াজে তৎক্ষণাৎ জেগে উঠবে শিল্পী। আলবার্ট আইনস্টাইনও প্রায় একই পদ্ধতি প্রয়োগ করতেন। তিনি অবশ্য চাবির বদলে চামচ বা পেন্সিল ব্যবহার করতেন।
অ্যারিস্টটলও এই মাইক্রো-ঘুমের ভক্ত ছিলেন। তিনি বলেছেন, এই আধো-ঘুম আধো-জাগরণের সময় অনেক আইডিয়া ও অনুপ্রেরণা পাওয়া যায়।
মোনালিসা আঁকার সময় লিওনার্দো দা ভিঞ্চি প্রতিদিন দু-ঘণ্টা ঘুমাতেন। এ সময় তিনি একটা ঘুমচক্র অনুসরণ করতেন। এই ঘুমচক্রের নাম তিনি দিয়েছিলেন উবারম্যান ঘুমচক্র। এই চক্রে প্রতি চার ঘণ্টা অন্তর অন্তর ২০ মিনিট করে ঘুমিয়ে নিতেন তিনি।
সাবেক মার্কিন প্রেসিডেন্ট জন এফ কেনেডি রোজ দুপুরে খাওয়ার পর স্ত্রীকে নিয়ে 'ভাতঘুম' দিতেন। এ সময় তার ঘরের দরজা বন্ধ থাকত। সমস্ত ফোনকল নিষেধ ছিল, কোনো কাগজপত্রের কাজও এ সময় কেনেডির কাছে নিয়ে যাওয়া যেত না। তার বাড়ির প্রধান কর্মচারী জেবি ওয়েস্ট জানান, 'কেউ কোনো কারণেই উপরতলায় যেত না।'
প্রেসিডেন্ট হওয়ার পর জো বাইডেনের প্রথম বক্তৃতা অনুষ্ঠানে বিল ক্লিন্টনকে ঘুমাতে দেখা গেছে। ক্লিন্টন একবার বলেছিলেন, যেদিন তার ঘুমের ঘাটতি হয়ে যেত, সেদিন তিনি ১৫ মিনিট বা আধঘণ্টার ছোট্ট ঘুম দিয়ে সেই খামতি পুষিয়ে নেওয়ার চেষ্টা করতেন।
দিনের বেলায় ঘুমের অভ্যাস নিয়ে একটু লজ্জিতই ছিলেন রোনাল্ড রিগান। জানা যায়, প্রতিদিন দুপুরে তিনি স্ত্রী ন্যান্সির সঙ্গে একটু ঘুমিয়ে নিতেন। যদিও অলস তকমা পাওয়ার ভয়ে এ অভিযোগ তিনি অস্বীকার করেছিলেন।
মার্গারেট থ্যাচার রাতে চার ঘণ্টা ঘুমাতেন। তবে দিনের বেলায় একটুখানি ঘুমের লোভ তিনি সামলাতে পারতেন না। সরকারি গাড়িতে বসে যাতায়াতের সময় প্রতিদিন তিনি সিটে হেলান দিয়ে ঘুমিয়ে পড়তেন। তার এ অভ্যাস নিয়ে কর্মকর্তারা রীতিমতো উদ্বিগ্ন ছিলেন। তাদের ভয় ছিল, কোন দিন না জানি সিটে হেলান দিয়ে ঘুমানোর সময় আহত হন থ্যাচার!
ইংল্যান্ডের রাজপ্রাসাদের অন্দরমহলে কী ঘটে-না-ঘটে, তা নিয়ে দারুণ গোপনীয়তা বজায় রাখা হয়। তবে ২০০৪ সালে ডুসেলডর্ফে চিকিৎসাবিদ্যার ওপর এক বক্তৃতা শুনতে গিয়ে তাকে ঘুমিয়ে পড়তে দেখা যায়। সেদিন হয়তো দুর্ঘটনাক্রমেই ঘুমিয়ে পড়েছিলেন তিনি। কিংবা কে জানে, রানির এমন কুম্ভকর্ণের ঘুমের ইতিহাস হয়তো বেশ লম্বাই।
- সূত্র: দ্য গার্ডিয়ান