চুল ঝরে পড়ছে, কারণ কোভিড?
কোভিড-১৯ মহামারিতে অনেক অপ্রত্যাশিত সমস্যায় পড়েছি আমরা। এর মধ্যে আছে চুল পড়ে যাওয়ার বিড়ম্বনাও।
চুল ঝরার কারণ? এক কথায় উত্তর দিতে গেলে: ধকল।
চর্মরোগবিশেষজ্ঞ পারভিশা প্যাটেল বলেছেন, কোভিড-১৯-এর কারণে এভাবে চুল পড়ে যাওয়াকে টেলোজেন এফ্লুভিয়া (টিই) বলা হয়। শরীর ও মনের ওপর দিয়ে বড়সড় ধকল গেলে টিই হয়।
মহামারির কারণে সৃষ্ট বিশৃঙ্খল পরিস্থিতিই টিই ঘটানোর জন্য যথেষ্ট। তার ওপরে আপনি যদি করোনায় আক্রান্ত হন, তাহলে তো টিই-র শিকার হওয়ার সম্ভাবনা হয়ে যায় দ্বিগুণ। কেননা শারীরিক অসুস্থতার ধকলের কারণেও টিই হয়ে থাকে।
ড. প্যাটেল বলেন, দীর্ঘদিন ধরে চলছে করোনা মহামারি। সে কারণে বেড়েছে টিই। বাধাগ্রস্ত হচ্ছে নতুন চুল গজানোর প্রক্রিয়া।
কোভিড-১৯ এর ধকলে বাড়ছে চুল পড়া
টিই-র ব্যাপারটা বোঝার জন্য আগে চুলচক্র বুঝতে হবে।
প্রথম, অর্থাৎ চুল গজানোর পর্যায়কে বলা হয় অ্যানাজেন, দ্বিতীয় ও শেষ পর্যায়ের নাম টেলোজেন।
টেলোজেন পর্যায়ের শেষে চুল পড়ে যায়, এবং ফের অ্যানাজেন পর্যায় আরম্ভ হয়—অর্থাৎ আবার শুরু হয় চুল গজানো।
কিন্তু তীব্র, শক্তিশালী কোনো চাপ এলে এই চক্র বাধাগ্রস্ত হয়। তখন সরাসরি টেলোজেন পর্যায় শুরু হয়, অর্থাৎ চুল অকালে ঝরতে থাকে।
সন্তান জন্মদান, হাসপাতালে ভর্তি হওয়া, সার্জারি, দ্রুত ওজন হারানো এবং তীব্র ও আকস্মিক চাপ—এসব কারণে চুলচক্র বাধাগ্রস্ত হয়।
চুল গজানোর জন্য শরীর থেকে প্রচুর শক্তি খরচ হয়ে যায়। প্রচণ্ড চাপে থাকার সময় টিকে থাকার জন্য আমাদের শরীর শক্তি পুনর্বিন্যস্ত করে। কোন কাজগুলোকে অগ্রাধিকার দেবে, সে ব্যাপারেও নতুন করে সিদ্ধান্ত নেয় আমাদের শরীর। চুল সুন্দর রাখার কাজটা তখন স্বাভাবিকভাবেই অগ্রাধিকারের তালিকা থেকে বাদ পড়ে যায়।
টিই হতে থাকলেও চুলচক্রের দৈর্ঘ্যের কারণে তা প্রকাশ্যে না-ও দেখা যেতে পারে। প্রচণ্ড চাপ ভোগের তিন মাস পর দেখা দিতে পারে টিই—কারণ, চুলচক্রের দৈর্ঘ্য। এই একই কারণে নতুন মায়ের চুল পড়া শুরু হয় সন্তান জন্মদানের তিন মাস পর থেকে।
কোভিড-১৯ আমাদের পুরো শরীরের ওপর প্রভাব ফেলে। জ্বর, শরীরের ওপর বয়ে যাওয়া ধকল ও চুলের গোড়ায় অক্সিজেন না পৌঁছানোর কারণে আরম্ভ হতে পারে চুল ঝরা।
কোভিডে আক্রান্ত হয়ে হাসপাতালে ভর্তি হয়েছিল, এমন কিছু মানুষকে পর্যবেক্ষণ শেষে একটি নিবন্ধ প্রকাশিত হয় মেডিক্যাল জার্নাল ল্যানসেট-এর জানুয়ারি ২০২১ সংখ্যায়। সেখান থেকে জানা যায়, আক্রান্ত হওয়ার ছয় মাস পর মানুষগুলোর মধ্যে সাধারণ কিছু উপসর্গ দেখা গেছে। উপসর্গগুলোর মধ্যে আছে ক্লান্তি বা পেশির দুর্বলতা (৬৩ শতাংশ), ঘুমের সমস্যা (২৬ শতাংশ), এবং বিষণ্ণতা (২৩ শতাংশ)। তবে ২২ শতাংশ মানুষ চুল পড়ার সমস্যাতেও ভুগেছেন।
কোভিড-১৯ এর কারণে চুল ঝরলে যা করবেন
ভালো খবর হচ্ছে, টিই অস্থায়ী। তবে খারাপ খবর, চুলচক্রে অ্যানাজেন (গজানোর) পর্যায় ফের শুরু হওয়ার জন্য আপনাকে বেশ অনেকদিন অপেক্ষা করতে হবে। অ্যানাজেন পর্যায় শুরু হতে ছয় থেকে নয় মাস লেগে যায়।
মহামারি দীর্ঘস্থায়ী হওয়ার কারণেই সম্ভবত চুল গজানো স্বাভাবিক পর্যায়ে ফিরতে বেশি সময় লাগছে। দীর্ঘমেয়াদী চাপের কারণে চুল পড়ার ঘটনা নিয়মিতও হতে পারে।
এ সমস্যার সমাধানের জন্য এমন খাবার খেতে হবে যা চুলের স্বাস্থ্য ও বৃদ্ধির জন্য উপকারী। অর্থাৎ পর্যাপ্ত প্রোটিন, ভিটামিন ডি ও আয়রনসমৃদ্ধ খাবার খেতে হবে প্রচুর পরিমাণে।
তবে এরপরও এ সমস্যার সমাধান না হলে চিকিৎসকের শরণাপন্ন হতে হবে।
- সূত্র: এভরিডেহেলথ.কম