বাংলাদেশে জাপানিজ প্রকাশনীর মাঙ্গা ম্যাগাজিন!
কমিকস পড়তে ভালোবাসেন না- এমন মানুষ নেই বললেই চলে। আর তা যদি হয় জাপানিজ কমিকস (যা 'মাঙ্গা' হিসেবে পরিচিত), তাহলে তো কথাই নেই। নারুতো, আকিরা, উযুমাকি, ডেথ নোট, ওয়ান পিস, ড্রাগন বল সহ অজস্র মাঙ্গার জনপ্রিয়তা পুরো বিশ্বজুড়েই। জাপানে তো আছেই, বাংলাদেশেও মাঙ্গাপ্রেমীদের সংখ্যা নেহাত কম নয়।
'মাঙ্গা'- শব্দটি মূলত জাপানে নির্মিত এবং প্রকাশিত বিভিন্ন কমিক বই, ব্যঙ্গ চিত্রায়ন ও গ্রাফিক উপন্যাসের জন্য ব্যবহৃত হয়। এটি জাপানের যেকোনো বয়সী ও শ্রেণী-পেশার মানুষের মধ্যে ভীষণ জনপ্রিয়। বিগত এক যুগ ধরে বাংলাদেশেও সমানতালে রাজত্ব করে যাচ্ছে জাপানিজ মাঙ্গা।
বাংলাদেশে মাঙ্গাপ্রেমীদের পছন্দের তালিকায় থাকা মাঙ্গাগুলোর প্রায় সবই জাপানিজ ভাষা থেকে ইংরেজি ভাষায় অনূদিত। যদিও সিংহভাগ ক্ষেত্রেই দেখা যায়, সেসব অনূদিত মাঙ্গার সাথে জাপানের সরাসরি সম্পৃক্ততা নেই। কপিরাইটের তোয়াক্কা না করে অনেকেই বিনা অনুমতিতে অনুবাদ করে বাংলাদেশে প্রকাশ করে যাচ্ছেন সেসব।
তাই এবার জাপানের বুকবাইন্ডিং প্রতিষ্ঠান 'ফোরনেটশা'র সরাসরি উদ্যোগে 'ফোরনেটশা বাংলাদেশ লিমিটেড' এর তত্ত্বাবধানে বাংলাদেশেই প্রকাশিত হতে যাচ্ছে 'সোর্স' নামের মাঙ্গা ম্যাগাজিন। জাপান ছাড়াও ইন্দোনেশিয়ান মাঙ্গা, ফ্রেঞ্চ মাঙ্গা (মানফ্রা), অস্ট্রেলিয়ান মাঙ্গা এবং ওয়েস্টার্ন মাঙ্গা বিশ্বব্যাপী অনেক আগ থেকে সফল জনপ্রিয়।
যেন এক টুকরো জাপান!
অতীতে বাংলাদেশী প্রতিষ্ঠানের মাধ্যমে বাংলা ভাষায় মৌলিক মাঙ্গা প্রকাশিত হলেও এবার জাপানি প্রতিষ্ঠানের হাত ধরে বাংলা ভাষায় আসছে মাঙ্গা ম্যাগাজিন- এমন সংবাদই মাঙ্গাপ্রেমীদের উত্তেজনার পারদ চড়িয়ে দেয়ার জন্য যথেষ্ট। তাই কালক্ষেপণ না করে 'সোর্স' ম্যাগাজিনের দ্বারে যখন কড়া নাড়লাম, তখনই সামনে উন্মোচন হলো জাপানি মাঙ্গার ভিন্ন এক জগত। 'ফোরনেটশা বাংলাদেশ লিমিটেড' এর পুরো অফিসই সাজানো জাপানি মাঙ্গা কিংবা অ্যানিমের নানা রকমের পোস্টার দিয়ে। জাপানি আমেজে এক পাশে ঝুলতে দেখা যাচ্ছিলো জাপানি লণ্ঠন। জায়গাটায় পা দেওয়া মাত্রই মনে হচ্ছিলো, জাপানের এক টুকরো অংশ বোধহয় এখানেই লুকায়িত আছে।
বলে রাখা ভালো, 'ফোরনেটশা' জাপানের সবচেয়ে বড় প্রিন্টিং ও বুকবাইন্ডিং প্রতিষ্ঠান। জাপানের সবচেয়ে বড় মাঙ্গা প্রকাশনা সংস্থা 'কোডানশা'র প্রিন্টিং এর কাজ করে থাকে ফোরনেটশা। তাই বাংলাদেশে এবার প্রকাশনার দায়িত্ব নিয়েছে এ প্রতিষ্ঠানই। তবে এখানে জাপানি মাঙ্গা শিল্পীরা নয়, প্রাধান্য পাবে বাঙালি মাঙ্গাশিল্পীরা। 'সোর্স' ম্যাগাজিনের ক্ষেত্রেও তার কোনো ব্যাত্যয় ঘটেনি।
২০১৮ সাল থেকেই বাংলাদেশে 'ফোরনেটশা' কাজ করে যাচ্ছে। এক বছর ধরে দীর্ঘ পরিকল্পনা ও গবেষণার পর ২০২২ সালের মাঝামাঝি সময়ে আগে 'সোর্স' ম্যাগাজিন তৈরির উদ্যোগ নেয় প্রতিষ্ঠানটি। বাংলাদেশের তরুণ প্রজন্মের মধ্যে মাঙ্গার জনপ্রিয়তা থাকায় বাংলাদেশকে মাঙ্গা বা অ্যানিমের অন্যতম হাব হিসেবে প্রতিষ্ঠিত করতে চায় ফোরনেটশা বাংলাদেশ লিমিটেড। পাশাপাশি বাংলাদেশি শিল্পীরা যাতে নিজেদের কাজকে সবার সামনে তুলে ধরতে পারে তার জন্য নতুন একটি প্ল্যাটফর্ম তৈরি করাও প্রতিষ্ঠানের লক্ষ্য।
বাংলার শিল্পীদের মাঙ্গা
জাপানিজ ফরম্যাট অনুসরণ করেই 'সোর্স'কে ম্যাগাজিনের মতো সাজানো হয়েছে। তাতে টাইটেল অনুযায়ী অনেকগুলো অধ্যায় দেওয়া আছে। আর তার ভেতরেই মাঙ্গা। টাইটেল অনুবাদ ও শিল্পীদের নিজস্ব সৃজনশীলতা দিয়েই সাজানো হয়েছে পুরো বইটিকে।
ম্যাগাজিনের ভেতরে জাপানিজ একটি টাইটেলের বাংলা অনুবাদ থাকবে। বাকি অংশ থাকবে বাংলাদেশের শিল্পীদের দ্বারা তৈরি মাঙ্গা। পুরো কাজটি করতে তাদের সময় লেগেছে ছয় মাসের মতো। অনুবাদের অংশটুকু ফোরনেটশা বাংলাদেশের সদস্যরাই করেছেন, যা শেষ করতে তাদের চার মাসের মতো সময় লেগেছে। অপরদিকে ম্যাগাজিনের বাকি অংশ সাজাতে দুই মাস সময় ব্যয় করতে হয়েছে তাদের।
তিন মাস পরপর বছরে চারবার 'সোর্স' বাজারে আসবে ফোরনেটশার হাত ধরে। যেহেতু সোর্সের মূল কারিগর বাংলাদেশি শিল্পীরা, তাই তাদের কথা মাথায় রেখেই নির্ধারিত সময় পর মাঙ্গা প্রকাশের উদ্যোগ নিয়েছে প্রতিষ্ঠান।
সোর্সের চিফ এডিটর ফাইয়াজ মোহাম্মদ ইশরাক ইউসুফ জানান, 'জাপানে মাঙ্গা ম্যাগাজিনের মাধ্যমে আর্টিস্টরা নিজেদের কাজ ছাপায়। প্রতি সপ্তাহে তারা একটি করে অধ্যায় বের করে। এভাবে যখন অনেকগুলো অধ্যায় হয়ে যায় এবং জনপ্রিয়তাও বেড়ে যায়, তখন তারা ম্যাগাজিনের মাধ্যমে কাজ প্রকাশ করে।'
দেশীয় প্রেক্ষাপটকে মাথায় রেখেই সাজানো সোর্স ম্যাগাজিনকে। তবে এক্ষেত্রে মাঙ্গাশিল্পীদের দেওয়া হয়েছে অবাধ স্বাধীনতা। তারা যেভাবে চেয়েছে সেভাবেই সাজিয়েছে সোর্সকে।
বিপুল যাচাই বাছাইয়ের পর তবেই গল্পগুলোকেই স্থান দেওয়া হয়েছে সোর্সে। এক্ষেত্রে জাপানের ফোরনেটশা পালন করেছে বিচারকের ভূমিকা। ফোরনেটশা বাংলাদেশ থেকে গল্প অনুমোদনের পর তা জাপানে পাঠানো হয়েছে। সেখানকার পেশাদার মাঙ্গা শিল্পীদের অনুমোদনের পরই তা সোর্সের জন্য নির্বাচিত হয়েছে।
ভিন্ন টাইটেল অনুসারে অধ্যায় বাড়ার পর তা ভলিউম আকারে প্রকাশ করার ভাবনাও সোর্সের রয়েছে। তবে অবশ্যই সেটি জনপ্রিয়তার উপর নির্ভর করবে।
বাংলা সংস্কৃতির প্রতিনিধিত্বকারী 'সোর্স'
বাংলা সংস্কৃতির আদলে এর আগেও বাংলায় মাঙ্গা প্রকাশিত হয়েছে। তারই ধারাবাহিকতায় সোর্সও চেষ্টা করেছে বাংলা সংস্কৃতি নির্ভর কাজ করার। ফোরনেটশা বাংলাদেশ লিমিটেডের মার্কেটিং এক্সিকিউটিভ রাফি মোহাম্মদ ফাহিম সিয়াম জানান, 'টাইটেল অনুযায়ী গল্প বলার ধরন ভিন্ন হয়। কিছু গল্প আমরা বাংলাদেশকে মাথায় রেখে করছি। সেখানে আমরা বাংলাদেশি সংস্কৃতিকে অনুসরণ করে কাজ করেছি। খুব সহজ একটি উদাহরণ দেই। মাঙ্গাতে দেখা যায়- খাবার খাওয়ার সময় চপস্টিক ব্যবহার করা হয়। আমরা সেখানে দেখাবো, খাওয়ার সময় ভাত খাচ্ছে।'
'আমাদের পরিকল্পনা, শুধু যে বাংলাদেশে প্রকাশ করবো তা নয়। এখানে জনপ্রিয়তা অর্জনের পর আমাদের লক্ষ্য তা জাপানে বিক্রি করার। বাংলাদেশের শিল্পীরা যাতে বিশ্বব্যাপী স্বীকৃতি পায়।'
ইতোমধ্যে 'মাঙ্গা স্টেজ' বাংলা মাঙ্গা নিয়ে কাজ করেছেন এবং জাপান সেগুলোর সম্বন্ধে অবগত হয়েছে।
বাংলাদেশে বিভিন্ন খুচরা বিক্রিকারী প্রতিষ্ঠান যেমন বাতিঘর, পিবিএস, রকমারি প্রভৃতি প্রতিষ্ঠান বৈধ উপায়ে জাপানিজ মাঙ্গা আমদানি করে।
কপিরাইটের বিষয়টি যে ফোরনেটশা বাংলাদেশের সদস্যদের কাছে সত্যিই গুরুত্বপূর্ণ- তার এক দফা প্রমাণ পেলাম দেয়ালে ঝোলানো বিভিন্ন চরিত্রের পোস্টারের ছবি তুলতে গিয়ে। প্রতিষ্ঠানের ভাষ্যমতে, পোস্টারগুলো খোদ জাপান থেকেই আনার কারণে ছবি তোলায় বারণ রয়েছে। তবে তারা বাংলাদেশ থেকে যে পোস্টারগুলো তৈরি করেছেন বা বাঁধিয়েছেন, সেগুলোর ছবি তোলার জন্য সানন্দে মত দিয়েছেন।
কেমন হতে পারে 'সোর্স' এর দাম
জাপানে প্রকাশিত মাঙ্গার দাম বাংলাদেশি মূল্যে বেশি হওয়ায় আসল মাঙ্গা কিনতে না পারার আক্ষেপ অনেকের মধ্যেই রয়েছে। জাপানে প্রকাশিত একটি মাঙ্গা হাতে নিয়ে এর দাম দেখাচ্ছিলেন প্রতিষ্ঠানের মার্কেটিং এক্সিকিউটিভ রাফি। বাংলাদেশের আসার পর একেকটি মাঙ্গার দাম যে ১,০০০ টাকার ঊর্ধ্বে চলে যায়, সেটিই বলছিলেন তিনি।
'আমাদের 'সোর্স' এর দাম ৫০০ টাকার আশেপাশেই থাকবে। মূল্য যথাসম্ভব সাশ্রয়ী রাখার চেষ্টা করছি আমরা। ভিজ্যুয়াল বইয়ের কারণেই আসলে দামটা বেড়ে যায়, সেটা যারা নিয়মিত মাঙ্গা পড়ে তারা বুঝতে পারে। আমরা জানি অধিক দাম হলে মানুষ কিনে পড়বে না। তাই যত কমে রাখা যায়, আমরা রাখবো।'
বাংলাদেশে মাঙ্গাপ্রেমী অনেক থাকলেও সোর্সের জন্য তারা কীভাবে মাঙ্গা শিল্পীদের সন্ধান পেয়েছেন, সেটি জানার কৌতুহল জন্মালো ভীষণ। কর্তৃপক্ষ জানালো, ফেসবুক থেকেই মূলত তারা শিল্পীদের সন্ধান পেয়েছেন। শিল্পী খোঁজার তাগিদে তারা মাঙ্গার প্রতিযোগিতা আয়োজন করে। সেখানে মাঙ্গা স্টেজ ইভেন্ট পার্টনার হিসেবে প্রচারণায় সহায়তা করেছিলো। সেখান থেকে বিপুল সাড়াও পান। তাছাড়া পূর্ব পরিচিত শিল্পীরাও প্রাধান্য পেয়েছেন এ যাত্রায়।
নতুন কোনো মাঙ্গা শিল্পী যদি কাজ করতে চান তার সুযোগও ফোরনেটশা বাংলাদেশ লিমিটেড রেখেছে। পূর্বে করা কোনো কাজ সমেত তারা চাইলেই ফেসবুকের মাধ্যমে যোগাযোগ করতে পারবে কর্তৃপক্ষের সাথে।
জাপানের শিনচ্যান অ্যানিমের সাথে যারা পরিচিত, তারা কম বেশি শিনচ্যানের পছন্দের অ্যাকশন হিরো 'অ্যাকশন কামিন'-কেও চেনেন। অ্যাকশন কামিনের মতো অনেক রকমের অ্যাকশন হিরোর প্রতিকৃতিও পাওয়া যাবে ফোরনেটশা বাংলাদেশের কাছে। জাপান থেকেই সবটা এনেছেন তারা।
প্রকাশ করতে চান বাংলা ভাষায় 'লাইট নভেল'
বাংলাদেশে এই প্রথমবার মাঙ্গা প্রকাশ করতে যাওয়ায় দর্শক প্রতিক্রিয়া কেমন আসবে তা নিয়ে কিঞ্চিৎ সন্দিহান ফোরনেটশা বাংলাদেশ লিমিটেডের সদস্যরা। মার্কেটিং এক্সিকিউটিভ রাফি বলেন, 'আমরা যে এখানে কাজ করছি, তা আমাদের পরিবার ঠিকমতো বোঝে না। আমাদের বই যখন হাতে আসবে, তখন হয়তো বোঝাতে পারবো। অনেকে ধরে নিচ্ছে আমরা জাপানি টাইটেল বাংলায় অনুবাদ করে দিচ্ছি। অথচ একটি টাইটেল অনুবাদ ছাড়া আমাদের পুরো জিনিসই বাংলাদেশি আর্টিস্টদের নিজেদের গল্পে বানানো হচ্ছে। এটা সবাইকে বোঝানোই চ্যালেঞ্জিং হয়ে যাচ্ছে।'
চিফ এডিটর ফাইয়াজ বলেন, 'একটি ম্যাগাজিনের মাধ্যমে আস্তে স্টোরি বের হবে এবং সেখান থেকে ভলিউম বানানো হবে এটি আর কোথাও নেই। তাই এটি বোঝানো অনেক কষ্টকর।'
আগামী বছর মাঙ্গা ছাড়াও বাংলা ভাষায় 'লাইট নভেল' প্রকাশ করার পরিকল্পনাও ফোরনেটশা বাংলাদেশ লিমিটেডের রয়েছে। লাইট নভেল বা গ্রাফিক উপন্যাস জাপানে ভীষণ জনপ্রিয়। প্রতিষ্ঠানের মার্কেটিং এক্সিকিউটিভ রাফি বলেন, 'লাইট নভেলের সাথে আমাদের দেশের উপন্যাসের মিল রয়েছে। আমাদের উপন্যাসে গল্প লেখা থাকে। কিন্তু লাইট নোভেলে ডায়ালগ অনুসারে লেখা থাকে। চরিত্রদের দিক থেকে পুরো গল্পটি বলা হয়। সেখানে ৪/৫ পৃষ্ঠা পর মাঙ্গার মতো ইলাস্ট্রেশন থাকে, যেটা আমাদের উপন্যাসে থাকে না।'
মাঙ্গা পড়ার কায়দা-কানুন
জাপানি শব্দ 'মাঙ্গা' এসেছে মাঙ ও গা থেকে। ১২ শতকের পটচিত্রের সাথে মাঙ্গার জন্মসূত্রের সাদৃশ্য আছে বলে ধরে নেওয়া হয়; যার সাথে যুক্ত আছে জাপানের অতীত ইতিহাস। সে সময়কার পটচিত্রে ডান দিক থেকে বাম দিকে পড়ার রেওয়াজ ছিলো। ধরা হয়, মাঙ্গা পড়ার ভিত্তিও এই পটচিত্রই।
এদো শাসনামলে তোবা এহোন শিজি নো ইয়ুকিকাই প্রকাশের মাধ্যমে প্রথম 'মাঙ্গা'-র ধারণাটি আনেন। ১৯ শতকে হোকুসাই মাঙ্গা প্রকাশের সাথে সাথে 'মাঙ্গা' শব্দটি জনপ্রিয় হওয়া শুরু করে। ১৯৫০ সাল থেকে জাপানের পাবলিশিং ইন্ডাস্ট্রিতে মাঙ্গা গুরুত্বপূর্ণ স্থান দখল করে রয়েছে। যার রেশ ছড়িয়ে পড়েছে গোটা বিশ্বে।
মাঙ্গা এবং অ্যানিমে- দুটো কী একই নাকি ভিন্ন তা নিয়ে অনেকের মনেই দোনোমোনো রয়েছে। মাঙ্গা হলো হাতে আঁকা কমিক্স কিংবা গ্রাফিক উপন্যাস। অপরদিকে অ্যানিমে হলো মাঙ্গার অডিও ভিজ্যুয়াল রূপ বা অ্যানিমেটেড রূপ। মাঙ্গার বিষয় বা জনরাতে অ্যাকশন, কৌতুক, থ্রিল, হাস্যরস, অতিপ্রাকৃত, ইতিহাস, রহস্য, যৌনতা, রোম্যান্স, গোয়েন্দা ইত্যাদির আধিক্য বেশি দেখা যায়।
জাপানি মাঙ্গার বিশেষত্ব হচ্ছে, প্রায় সবসময়ই এটি সাদা-কালো রূপে প্রকাশিত হয়। বিশেষ প্রকাশের ক্ষেত্রে বাহারি কালার প্রিন্ট ব্যবহৃত হয়।
জাপানি মাঙ্গা পড়ারও বিশেষ কায়দা রয়েছে। আমরা সাধারণত কোনো বই যখন পড়ি সেগুলো বামদিক থেকে ডানদিকে পড়ি। কিন্তু মাঙ্গার ক্ষেত্রে তা একেবারে উল্টো। মাঙ্গা পড়া শুরু করা হয় ডান দিক থেকে। পড়তে পড়তে বাম দিকে আসতে হয়।
বেশিরভাগ মাঙ্গা সিরিজকেই দীর্ঘদিন ধরে ভলিউম আকারে প্রকাশিত হতে দেখা যায়। তাই নতুন মাঙ্গা পড়া শুরু করার সময় ক্রম বা ভলিউম যথাযথভাবে অনুসরণ করা প্রয়োজন।
কেন বাংলাদেশে মাঙ্গা জনপ্রিয়?
মাঙ্গা বাংলাদেশে কেন এতটা জনপ্রিয়- এই প্রশ্ন অবশ্য অনেকের মনেই রয়েছে। মাঙ্গা ভক্তদের কাছ থেকে এর উত্তর পেতে অবশ্য খুব একটা বেগ পেতে হয়নি। অনেকের কাছে ছবির মাধ্যমে উপস্থাপনের কারণে মাঙ্গা বেশ পছন্দের। আবার অনেকে মনে করেন, মাঙ্গার গল্প বলার ধরন আকর্ষণীয়। কেউবা ছোটবেলা থেকে কমিক্স পড়তে পড়তে মাঙ্গার দিকে ঝুঁকে পড়েছেন।
আবার যাদের অ্যানিমের দিকে ঝোঁক রয়েছে, তারা মাঙ্গা পড়েন পুঙ্খানুপুঙ্খভাবে গল্প জানার জন্য। কিছু মানুষ মনে করেন- মাঙ্গা বন্ধুর মতো আপন, অবসরে সময় কাটানোর উৎস। তবে অধিকাংশই সচিত্র পড়া ও চিত্তাকর্ষক গল্পের জন্য মাঙ্গাকে পছন্দের তালিকার শীর্ষে রেখেছেন।
সোর্সকে মানুষের হাতে পৌঁছে দিতে প্রতিষ্ঠান জোর কদমে চালিয়ে যাচ্ছে প্রচারণা। চলতি বছরের পহেলা ফেব্রুয়ারি বাজারে আসতে চলেছে বইটি। বই পাওয়ার জন্য সোর্সের ফেসবুক পেজে যোগাযোগ করলেই চলবে।