মোক্ষলাভের আশায় পবিত্র নগরীতে মৃত্যুর প্রহর গোনেন ভারতের বৃদ্ধরা
ভারতের উত্তর প্রদেশের বারানসি শহরে গঙ্গা নদীর ধারে শান্তিপূর্ণভাবে নিজের মৃত্যুর প্রহর গুনছেন মুরালি মোহন শাস্ত্রী। রয়টার্স সূত্রে জানা যায়, ভারতের লাখ লাখ হিন্দু ধর্মাবলম্বীদের কাছে পবিত্র বলে বিবেচিত এই শহরে বসবাসের জন্য এক দশকেরও বেশি সময় আগে হায়দরাবাদে আরাম ও স্বাচ্ছন্দ্যের জীবন ছেড়ে এসেছেন ৮২ বছর বয়সী এই প্রাক্তন কলেজ শিক্ষক ও তার স্ত্রী।
বর্তমানে তিনি বারানসিতে গঙ্গার কোলেই শেষ নিঃশ্বাস ত্যাগের অপেক্ষায় আছেন, যাতে করে তিনি মৃত্যু ও পুনর্জন্মের চক্র ভেঙে মোক্ষলাভ করেন।
বার্তা সংস্থা রয়টার্সকে শাস্ত্রী বলেন, 'আমরা মৃত্যুকে আহ্বান করি।' ভোরবেলা কাপড় পরা অবস্থায়ই গঙ্গা নদীতে তিনবার ডুব দেন তিনি এবং প্রার্থনা করেন। "মৃত্যু আসলে আমাদের অতিথি। আমরা এই জায়গায় মৃত্যুবরণ করব ভাবলে গর্ব বোধ হয়", যোগ করেন তিনি।
জীবনের শেষ দিনগুলো পবিত্র বারানসিতে নগরীতে কাটাতে চান, এমন মানুষদের জন্য নির্মিত একটি কমিউনিটি হোম 'মুমুক্ষু ভবন'-এ থাকেন শাস্ত্রী ও তার স্ত্রী। জানা যায়, শাস্ত্রীর মাও এই একই জায়গায় থেকে মৃত্যুবরণ করেছেন। মায়ের কাছ থেকেই অনুপ্রাণিত হয়েছেন তারা।
যদিও পশ্চিমা ধাঁচে গড়ে ওঠা বৃদ্ধাশ্রমের জনপ্রিয়তা দিন দিন বৃদ্ধি পাচ্ছে, কিন্তু শাস্ত্রীর এসকল জাগতিক আরাম-আয়েশের প্রতি আর কোনো লোভ নেই। বরং জীবনের শেষ দিনগুলো তিনি পড়াশোনা ও প্রার্থনায় নিমগ্ন থেকে কাটাতে চান।
"আমাদের ভারতীয় দর্শন অনুযায়ী, যারা জাগতিক আরাম-আয়েশের খোঁজে তারা কখনো ঈশ্বরের কাছে পৌঁছাতে পারে না। তাই যতটা সম্ভব এসব জিনিস পরিত্যাগ করতে হবে। এগুলোর ধারেকাছে যাওয়া যাবে না। শুধু ঈশ্বরের কাছে যাওয়ার চেষ্টা করতে হবে", বলেন সাদা চুলের এ বৃদ্ধ। তার কাধে হলুদরঙা একটা শাল, তাতে গেরুয়া রঙে কিছু শাস্ত্রীয় বাণী লেখা।
হিন্দুদের সবচেয়ে পবিত্র গঙ্গা নদীর ধারে গড়ে ওঠা, মন্দিরের জন্য বিখ্যাত প্রাচীন বারানসি নগরীতে দশ লাখেরও বেশি মানুষের বাস। জন্ম থেকে মৃত্যু পর্যন্ত নানা উপলক্ষকে কেন্দ্র করে সারা ভারত থেকে মানুষ ছুটে আসেন বারানসিতে।
স্বামীর জন্য খাবার তৈরি করতে করতে বাড়ির আরেক বাসিন্দা রাম পিয়ারি বলেন, "আমার আর এই পৃথিবীতে বেঁচে থাকার ইচ্ছা নেই।" পিয়ারির স্বামী দিনের বেশিরভাগ সময়ই বিছানায় শুয়ে থাকেন এবং মৃত্যুর অপেক্ষায় দিন গোনেন।
আশির কোঠায় থাকা রাম পিয়ারি আরও বলেন, "একটা মানুষকে এত কষ্ট ভোগ করতে হয় যে সে চরম বিরক্ত হয়ে পড়ে। তাই তখন মনে হয় যে, পরিত্রাণ লাভ করলে আর তাকে সেই কষ্ট করতে হবে না।"
মুমূক্ষু ভবনের ম্যানেজার বলেন, এই বাড়িতে ৮০ জনেরও বেশি মানুষ থাকে এবং এখানে আর জায়গা নেই। যদিও বারানসিতে এ ধরনের বাড়ির চাহিদা অনেক বেশি।
"যত দিন যাচ্ছে, ততই আরও বেশি বেশি মানুষ বারানসিতে এসে থাকতে চাইছে। কিন্তু আমরা শুধু সীমিত সংখ্যক মানুষকেই জায়গা দিতে পারি", বলেন ম্যানেজার মণীশ কুমার পান্ডে।
তবুও যেসকল ধর্মপ্রাণ হিন্দুরা পবিত্র বারানসিতে শেষ নিঃশ্বাস ত্যাগের সুযোগ যারা পান না, তারা সান্ত্বনা নিতে পারেন এই ভেবে যে মৃত্যুর পর তাদেরকে এখানে দাহ করা হলে তারা পরিত্রাণ লাভের দিকে এক ধাপ এগিয়ে যাবেন।"