আর্কেড মেশিন থেকে প্লেস্টেশন: রাজধানীর গেমিং জগতে
২৫১৩ সালের ইস্টকোস্ট। কোনো এক অজানা কারণে ব্ল্যাক মার্কেটিয়ার নামক এক গ্যাং হঠাৎ করেই ডাইনোসর শিকার করতে শুরু করলো। এর ফলো হলো মারাত্মক। নিরীহ গ্রামবাসীদের ওপর চড়াও হলো ডাইনোসরগুলো। ঘটনার তদন্ত করতে নামলো চার জন: জ্যাক টেনরেক, হানাহ ডান্ডি, মুস্তাফা কায়রো এবং মেস ও'ব্র্যাডোভিচ। শুরু হলো ক্যাডিলাকস অ্যান্ড ডাইনোসর গেমের কাহিনী।
নব্বইয়ের দশকে ক্যাডিলাকস অ্যান্ড ডাইনোসরস গেমস বাংলাদেশে এতটাই জনপ্রিয়তা পেয়েছিল যে, পুরো আর্কেড গেমিংয়ের আরেক নামই হয়ে উঠেছিল এর তৃতীয় চরিত্র 'মুস্তাফা'র নামে। লাল পর্দায় ঢাকা আর্কেড গেমিং দোকানগুলোতে শিশু-কিশোরদের কাছে চ্যালেঞ্জই ছিল মাত্র এক কয়েনে গেমটির প্রধান খলনায়ক ড. সাইমন ফেসেন্ডেন তথা 'ডাইনোসর বস'কে হারানো।
আর্কেড গেমের দোকানগুলোর মূল প্রাণ 'মুস্তাফা' হলেও মেটাল স্লাগ আর কিং অফ ফাইটার্সের মতো গেমগুলোও স্কুল পালিয়ে গেম খেলতে আসা শিশু-কিশোরদের শরীরে যথেষ্ট 'অ্যাড্রেনালিন রাশ' ঘটাতো। শতাব্দীর শুরুর দিকে খিলগাঁওয়ের আর্কেড গেমিং দোকান চষে বেড়ানো সাবাহ বিন হোসাইন জানান, "এখন যেমন ক্রিস্টিয়ানো রোনালদোর 'Siuuu' সেলিব্রেশন, তখন গেম জেতার পর কিং অফ ফাইটারের সাদাচুলো ওরোচির সেলিব্রেশন অঙ্গভঙ্গি করে দেখাতো সবাই।"
এরপর বহু সময় গড়িয়েছে। প্রযুক্তির ছোঁয়ার প্রভাব পড়েছে আর্কেড গেমিং দোকানগুলোর ওপরও। শতাব্দীর প্রথম দশকের শেষভাগেই আর্কেড দোকানগুলোর প্রতিপত্তি কমে যেতে থাকে। সে জায়গা দখল করে নেয় সাইবার ক্যাফেগুলো। আর্কেড মেশিনের কন্ট্রোলারের জায়গায় চাপা হতে থাকে কম্পিউটার কীবোর্ডের কীগুলো। আহসানুল্লাহ বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের পুরকৌশল বিভাগের শিক্ষার্থী রেশাদ শাহরিয়ার রিহাদ বলেন, "২০১০-এর দিক থেকেই সাইবার ক্যাফেগুলো গেম খেলার নতুন কেন্দ্র হয়ে ওঠে। তখন নিড ফর স্পিড মোস্ট ওয়ান্টেড, জিটিএ [গ্র্যান্ড থেফট অটো], আইজিআই বা কল অফ ডিউটির মতো গেম খেলা হতো।"
প্রযুক্তির পরবর্তী ধাক্কা লাগতে বেশিদিন সময় লাগেনি। স্মার্টফোন আর ইন্টারনেট সস্তা হয়ে যাওয়ার পর সাইবার ক্যাফেগুলোও ব্যবসা হারাতে থাকে। বাসা-বাড়িতেও ল্যাপটপ কিংবা ডেস্কটপে পিসি গেম খেলার দৃশ্য নিয়মিত হতে শুরু করে।
তবে মিরপুর-১৪-এর মেম্বার বাড়ি মসজিদ এলাকায় এখনো চোখে পড়বে আর্কেড গেমিং মেশিনের একটি দোকান। রবি স্টোর নামের দোকানটিতে ঢুকে দেখা গেল ভঙ্গুর দশার আর্কেড মেশিনগুলোর কাঁপতে থাকা স্ক্রিন। তবে তাতেও কোনো সমস্যা নেই ক্লাস ফাইভে পড়ুয়া মো. রবিউলের। কব্জি ঘুরিয়ে আর্কেড মেশিনের কন্ট্রোলারে ঝড় তুলে কিং অফ ফাইটার্সের একের পর এক প্রতিদ্বন্দ্বীকে নাস্তানাবুদ করতে দেখা গেল তাকে।
"ছুটির দিনে অথবা মাঝেমধ্যে স্কুল-কোচিং শেষ করে সন্ধ্যায় এখানে খেলতে আসি। বেশিরভাগ সময়েই দোকানের অন্য অংশে মোবাইলে ফ্রি ফায়ার খেলা হয়। তবে টাকা না থাকলে এখানে [আর্কেড মেশিনে] খেলা হয়।"
দোকানের কর্মচারী মো. রাসেলের সাথে কথা বলে জানা গেল, দোকানের মূল ব্যবসা স্মার্টফোন 'ভাড়া' দেওয়া। স্কুল-কোচিং শেষ করে বিকালের দিকে বাসায় ফিরে আসা বাচ্চারা ২০ টাকার বিনিময়ে আধা ঘণ্টার জন্য স্মার্টফোনে গেম খেলার সুযোগ পায়। বেশিরভাগই ফ্রি ফায়ার খেলে থাকে। রবি জানান, "এদের বেশিরভাগের বাসাতেই স্মার্টফোন নেই। তাই গেম খেলার জন্য এখানেই ঢুঁ মারে তারা। যখন টাকা কম থাকে, তখন আর্কেড মেশিনের সামনে দেখা যায় তাদেরকে।"
দশ বছর আগে এক টাকায় আর্কেড মেশিনের একটা কয়েন পাওয়া যেত। এখন দাম কিছুটা বেড়েছে, পাঁচ টাকার বিনিময়ে পাওয়া যায় দুটো কয়েন। রাসেল প্রশ্ন করেন, "আর্কেড গেমের চেয়ে ফ্রি ফায়ার বা পাবজির মতো গেমগুলো বাচ্চাদের কাছে ঢের বেশি উত্তেজনাকর। বন্ধুদের সাথে একসাথে মাল্টিপ্লেয়ার খেলার সুযোগও আছে। তাহলে তারা কেনই বা আর্কেড গেম খেলবে?" ঢাকার শেষ আর্কেড গেমিং দোকানগুলোর একটির ভগ্নদশার সামনে দাঁড়িয়ে এর উত্তর পাওয়া যায় সহজেই।
প্লেস্টেশনের দুনিয়ায়
লম্বা করিডরের ঠিক মাঝখানে দুই পাশে দুটো করে দোকান। কাঁচের স্লাইডিং ডোরের ওপর চোখ রাখতেই চোখে পড়লো ভেতরের নীলরঙা ফ্লুয়োরোসেন্ট বাতির হালকা আলো। পুরোপুরি অন্ধকার দূর করতে না পারলেও মেরুন আবরণের সোফার ওপর বসে থাকা অবয়বগুলো বোঝা যাচ্ছে স্পষ্ট।
এয়ার কন্ডিশনড রুমগুলোতে খালি নেই সোফার কোন অংশ। সবার হাতে গেমপ্যাড, একমনে তাকিয়ে আছে প্লেস্টেশনের সাথে সংযোগ দেওয়া মনিটরে। বেশিরভাগ মনিটরেই দেখা গেল ফিফা২৩-এর গেমপ্লে, কোনো কোনোটায় আবার চলছে জিটিএ ফাইভ কিংবা মর্টাল কমব্যাটের দৃশ্য।
খিলগাঁওয়ের তালতলা সিটি সুপার মার্কেটের দ্বিতীয় তলার শেষ প্রান্তটি পরিণত হয়েছে গেমারদের জগতে। বিশেষ কারণ ছাড়া বছরের প্রতিটি দিনই সকাল ৯টা থেকে রাত ১১টা পর্যন্ত খোলা থাকে এই 'জিরো গেম জোন' নামের দোকানটি।
দোকানের মালিক মেহেদি হাসান আল-আমিন বেড়ে উঠেছেন খিলগাঁওয়ের এই অংশেই। শৈশবে আর্কেড গেমস খেলার স্মৃতির পুরোটুকুই এই মার্কেটকে কেন্দ্র করে। জিরো গেম জোনের পাশের দোকানে আর্কেড মেশিন দেখা গেলেও সেগুলো মূলত কম্পিউটারের মনিটর আর কীবোর্ডকে কাস্টমাইজ করে বানানো হয়েছে। আল-আমিন জানালেন তার দোকানের ইতিহাস।
জিরো গেম জোনের যাত্রা শুরু হয়েছিল ২০১৪ সালে। শুরুটা চিরাচরিত সাইবার ক্যাফেগুলোর মতো হলেও শীঘ্রই ব্যবসায় খানিকটা পরিবর্তন আনে তিনি। ল্যান কানেকশনের মাধ্যমে কম্পিউটারে মাল্টিপ্লেয়ার গেম খেলার সুযোগ করে দেন তিনি। এই একটা আইডিয়াই ব্যবসাকে আমূল বদলে দিল। মাল্টিপ্লেয়ার পিসি গেমকে কেন্দ্র করে দোকানটি বিভিন্ন টুর্নামেন্ট আয়োজন করা শুরু করলো। জিতলে রয়েছে ভালো পরিমাণ প্রাইজমানি, যার বেশিরভাগ আসতো দলগুলোর রেজিস্ট্রেশন ফি থেকে।
ফেসবুকের বিভিন্ন গেমিং কমিউনিটির লোকজন এক বা দুই দিনের জন্য পুরো দোকানটিই ভাড়া নিয়ে নেয় টুর্নামেন্টের জন্য। আর যা-ই হোক, একসাথে এরকম গেম খেলার সুযোগ আর কোথায়-ই বা পাওয়া যাবে?
কয়েক বছরের মধ্যেই পিসি ছেড়ে পুরোপুরি গেমিং কনসোলের দিকে ঝুঁকলেন আল-আমিন। দোকানের পরিসর বাড়তে বাড়তে এখন দোকানে রয়েছে মোট ২১টি পিএসফোর (প্লেস্টেশন) কনসোল। প্রতিটিতে গেমপ্যাড কানেক্ট করে খেলতে পারে সর্বোচ্চ ২ জন। আধা ঘণ্টার জন্য দুই জনকে গুণতে হবে মোট ৪০ টাকা। যদি একজনই একটি কনসোলে সিঙ্গেল প্লেয়ার খেলতে চান, সেক্ষেত্রে খরচ হবে ৩০ টাকা। সময় যত গড়াবে, টাকার অঙ্ক বাড়বে একই হারে।
আল-আমিন জানান, সাধারণত ক্লাস নাইন থেকে বিশ্ববিদ্যালয় পড়ুয়া, এমনকি চাকরির চক্করে পড়ে যাওয়া গেমাররাও খেলতে আসেন তার দোকানে। তার দোকানকে কেবল গেম খেলার জায়গা বললে ভুল হবে, বন্ধুদের সাথে ভালো সময় কাটানোরও বিকল্প জায়গা এই 'জিরো গেম জোন'। তালতলা মার্কেটের আশেপাশে বেশ কিছু স্কুল-কলেজ থাকায় সাধারণত সকাল ১০টা থেকে ১২টা আর বিকাল-সন্ধ্যার সময়ে একটু ভিড় বেড়ে যায়। সন্ধ্যার পর দেখা যায় ঘর থেকে আরেকটু স্বাধীনতা পাওয়া বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়ুয়াদের। চাকরি শেষ করে বন্ধুদের সাথে একটু আড্ডা দিতে আর একটু নস্টালজিয়ায় ডুবে যেতেও আসেন অনেকে।
তার কথার সাথে একমত হলেন গেম খেলতে আসা আইডিয়াল কলেজের দ্বিতীয় বর্ষে পড়া মো. তাহসিন পাটোয়ারী। খিলগাঁওয়ের স্থানীয় এই গেমার জানান, এখানে তেমন কেউই একা একা খেলতে আসে না, বরং বন্ধুদেরকে সাথে নিয়ে একসাথে সময় কাটানোই তাদের উদ্দেশ্য। তাহসিন বলেন, "বাসায় গেমিং কনসোল থাকলেও এখানে খেলতে আসি, কারণ এখানে বন্ধুদেরকে নিয়ে একসাথে হই-হুল্লোড় করার সুযোগ আছে। বাসায় পরিবারের অন্য সদস্যরা থাকায় এই জায়গার কমফোর্ট জোনটা পাওয়া যায় না। রাস্তার ফুটপাথে বসে স্মার্টফোনে খেললেও পথচারীরা বাঁকা চোখে তাকায়। তাই এর চেয়ে ভালো জায়গা আর হয় না।" সপ্তাহে কমপক্ষে ২-৩ দিন এখানে আসা হয় বলেও জানান তিনি।
আল-আমিন জানান, আগে কেবল খিলগাঁওয়ের স্থানীয়রাই খেলতে আসতো। তবে এখন মুখে মুখে তার গেমের দোকানের গল্প ছড়িয়ে পড়েছে। প্রতিদিনই ঢাকার বিভিন্ন জায়গা থেকে খেলোয়াড়রা তার দোকানে ভিড় জমান। টুর্নামেন্টের সময় ঢাকার বাইরে থেকেও চলে আসে অনেকে।
এরকমই একজন সেনেগালের নাগরিক হামজা সুলতান ইসমাইল। পড়াশোনা করছেন বারিধারার ইউনিভার্সিটি অফ ইনফরমেশন টেকনোলজি অ্যান্ড সায়েন্সেসের ইলেক্ট্রিকাল অ্যান্ড টেলিকমিউনিকেশন বিভাগে। হামজা জানান, তিনি তার বন্ধুদেরকে নিয়ে মাঝেমধ্যেই এখানে খেলতে আসেন। আর একবার আসলে ৩-৪ ঘণ্টার আগে ওঠা হয় না। উদ্দেশ্য গেম খেলা আর বন্ধুদের সাথে 'হ্যাংআউট' করা। কম পয়সা খরচ করেই প্লেস্টেশনে গেম খেলার সুযোগ আর কোথায় পাওয়া যাবে? তাছাড়া নতুন দেশে এসে গেমিং কনসোল কেনাও বিলাসিতা।
মূলত ঢাকা শহরে সুস্থ বিনোদন আর বন্ধুদের সাথে একসাথে সময় কাটানোর জায়গা ক্রমেই সংকুচিত হয়ে পড়েছে। রেস্তোরাঁ কিংবা কফিশপে নিয়মিত যাওয়াও খরচের কারণে সবসময় যাওয়া সম্ভব হয়ে ওঠে না। তবে কেন এরকম গেমিং জোন শহরের অন্যান্য জায়গাতেও দেখা যাচ্ছে না?
এর একটি কারণ হতে পারে গেমিং কনসোল এবং গেমের দাম। বর্তমান বাজারে একেকটি নতুন পিএস৪-এর দাম প্রায় ৫২ হাজার টাকা। তাছাড়া আসল গেম ডিস্কের দামও বেশ চড়া। আল-আমিন জানান, তার প্রত্যেকটি কনসোলে একেকটি গেম ইন্সটল করতে প্রায় ৭ থেকে ১২ হাজার টাকা খরচ করতে হয়। তাছাড়া সদ্য নতুন গেমের দামও তুলনামূলক বেশি হয়ে থাকে, আর গেমাররা সেটিই খেলতে চান। সবমিলিয়ে এর পেছনে বিনিয়োগের অঙ্কটা কম নয়।
যুগ বদলেছে। গেম নিয়ে বদলেছে চিন্তা-ভাবনাও। আল-আমিন জানান, "আগের যুগে বাবা-মারা গেমকে বেশ খারাপ চোখেই দেখতো। কিন্তু এখন নতুন প্রজন্মের বাবা-মারা নিজেরাই নিজেদের বাচ্চাদের সাথে গেম খেলেন। নিজেরা গেম খেলে বড় হওয়ায় গেমের প্রতি ভ্রান্ত ধারণা কম তাদের।"
শিল্প হিসেবে সংগীত বা মিউজিক, চলচ্চিত্র এবং বইয়ের তুলনায় ভিডিও গেমস অনেকটাই এগিয়ে। স্ট্যাটিস্টার ২০২১ সালের হিসাব অনুযায়ী, বর্তমানে ভিডিও গেমস ইন্ডাস্ট্রির বৈশ্বিক রেভিনিউ ১৯২.৭ বিলিয়ন ডলার। তাছাড়া ই-স্পোর্টস এখন একটি পুরোদস্তুর পেশাদার অবস্থায় রূপ নিয়েছে। অন্যান্য স্পোর্টসের মতোই এটি নিজেই হয়ে উঠেছে প্রতিযোগিতামূলক খেলা, যেখানে প্রতিযোগিতার প্রাইজমানি থাকে কয়েক মিলিয়ন ডলার পর্যন্ত।
এর সাথে যুক্ত হয়েছে লাইভ গেম স্ট্রিমিংয়ের মতো বিষয়ও। নিউজু-এর তথ্য অনুযায়ী, ২০২১ সালে ই-স্পোর্টসের অডিয়েন্সের আকার ছিল মোট ৫৫৭ মিলিয়ন, যার মধ্যে ৩০৭ মিলিয়ন নিয়মিত দর্শক এবং বাকি ২৫০ মিলিয়ন অনিয়মিত দর্শক। বাংলাদেশেও অনেক গেমারই গেমপ্লে লাইভ স্ট্রিম করে থাকেন। তবে তাদের বেশিরভাগই শখের বসে সেটি করে থাকেন। প্রাতিষ্ঠানিকভাবে ই-স্পোর্টসের বাজার বাংলাদেশের জন্য এখনো উপযুক্ত নয়।
ভিডিও গেমসের এই বিশাল বাজার আগামী বছরগুলোতে আরও কয়েক গুণ বাড়বে বলে ধারণা করছে এই শিল্পের সাথে জড়িত থাকা ব্যক্তিরা। আর এর প্রভাব যে বাংলাদেশের ওপর পড়বে তা সহজেই অনুমেয়। হয়তো 'জিরো গেম জোন'-এর মতো কোনো গেমিং দোকান থেকেই বেরিয়ে আসবে পরবর্তী ই-গেমিং সেনসেশন।