টমি, জেনি এবং অন্যান্য—ঢাকার হাতির ইতিবৃত্ত
১৮৫৬ সালের জুলাই মাসের কথা। বয়স সাত পেরিয়ে আট বছরে পা দিতে চলেছে দক্ষিণ অস্ট্রেলিয়ার অ্যাডিলেডে বেড়ে ওঠা ক্যালেব। জন্মদিনে বাবার কাছে বায়না ধরল, তাকে বেড়াতে নিয়ে যেতে হবে গেপস ক্রস নামের এক হোটেলে। ক্যালেবের বাড়ি থেকে গেপস ক্রস মাত্র তিন মাইলের পথ। সেখানে আছে টমি নামের এক হাতি। শিশুদের পিকচার বুকে যেমনটা দেখা যায়, 'ই ইজ ফর এলিফ্যান্ট—মন্সট্রাস অ্যান্ড হাই' ঠিক তেমন এক এশীয় হাতি এই টমি, বইয়ের বর্ণনার মতনই অতিকায় তার দেহ। শুধু অতিকায় বললে ভুল হবে, টমি খুব চটপটেও বটে! বছরখানেক আগে কৃষিমেলার দৌড় প্রতিযোগিতায় এক ঘোড়াকে দুই শ গজের ব্যবধানে হারিয়ে পুরস্কার জিতেছিল টমি।
সেই টমিকে দেখতে জন্মদিনে দুই ভাই আর বাবা-মার সাথে দুই চাকার এক ঘোড়ার গাড়িতে চেপে ক্যালেব পৌঁছে গেলেন গেপ্স ক্রসের সামনে। সেখানে গিয়ে দেখেন এলাহী আয়োজন। হোটেলের মালিক টমির পেছনে জুড়ে দিয়েছেন চার চাকার এক গাড়ি। ২০ জন মানুষসহ সেই গাড়ি টেনে চলেছে টমি। বাড়ি ফিরবার কালে ক্যালেবও সুযোগ পেল টমির টানা গাড়িতে চড়বার। পাহাড়ের ঢালে পুরো পরিবারকে নামিয়ে দিয়ে টমি ফিরে চলল হোটেলের পথে। জন্মদিনের এই অভিনব অভিজ্ঞতার কথা ক্যালেব কখনোই ভোলেননি। ক্যালেবের মতন সে সময়ে অ্যাডিলেডে বেড়ে ওঠা আরও অনেকের শৈশব স্মৃতির উজ্জ্বল অনুষঙ্গ টমি। তবে টমি শুধু অ্যাডিলেড নয়, গোটা অস্ট্রেলিয়ার কাছেই এক গুরুত্বপূর্ণ নাম। কেননা অস্ট্রেলিয়া ভূখণ্ডের লোকেদের দেখা প্রথম দুটি হাতির একটি ছিল টমি। টমির সাথে আরও যে হাতিটি অস্ট্রেলিয়া পৌঁছেছিল, তার নাম ছিল জেনি। আর আশ্চর্যজনক হলেও সত্যি, এ দুটি হাতিরই আদি নিবাস ছিল ঢাকা। হাজার হাজার মাইল দূরের অস্ট্রেলিয়ায় কীভাবে পৌঁছাল ঢাকার হাতি? দূর দ্বীপদেশে কেমন ছিল টমি, জেনির দিনগুলি? এবারে সেই গল্প, সাথে থাকছে ঢাকার হাতি এবং এর খেদার আদ্যোপান্ত।
ঢাকার হাতি, হাতির খেদা
হাতি পোষার জন্য ঢাকার খ্যাতি মোগল আমল থেকে। মোগল অমাত্যদের চলাচল, সামরিক প্রয়োজন, মালপত্র টানা অথবা নিছক বিনোদন—এমন নানা প্রয়োজনে বন্য হাতিকে পোষ মানিয়ে ব্যবহারের রেওয়াজ গড়ে ওঠে। হাতি ছিল আভিজাত্যের প্রতীক। তাই হাতি সংগ্রহ করে নিজেদের সামাজিক অবস্থান তৈরি করতেন অনেক জমিদার এবং ধনাঢ্য ব্যক্তি। ঢাকার নওয়াবদের সংগ্রহেও ছিল বিপুলসংখ্যক হাতি। হাতিতে চেপে তারা বন্ধুদের নিয়ে শিকারে যেতেন, অন্যদের প্রয়োজনে সেই হাতি সরবরাহ করতেন। ঢাকার ধর্মীয় ও সামাজিক নানা উৎসব যেমন ঈদ, মহররম ও জন্মাষ্টমীর মিছিলে হাতির উপস্থিতি ছিল বড় আকর্ষণ।
অধ্যাপক শরীফ উদ্দিন আহমেদ সম্পাদিত ঢাকাকোষ গ্রন্থে দেওয়া তথ্যমতে, হাতিকে পোষ মানানোর জন্য ঢাকার উত্তরাংশে মোগল আমলেই বিশালাকার সব খেদা তৈরি করা হয়েছিল। মোগল শাসন শেষে সম্মুখযুদ্ধে হাতির ব্যবহার সীমিত হয়ে আসে। তবে ভারী কামান, অস্ত্রশস্ত্রসহ নানা রকম মাল পরিবহনের জন্য হাতির ব্যবহার অব্যাহত থাকে। সামরিক প্রয়োজনে হাতির নিয়মিত সরবরাহ নিশ্চিত করতে কোম্পানি সরকার ১৮১০ সালের দিকে ঢাকায় হাতি খেদার এই সদর দপ্তর স্থাপন করে। ঢাকার পশ্চিমে ২৯১ একর জায়গা নিয়ে গড়ে ওঠে পিলখানা নামের এলাকা। মূলত হাতি শব্দের ফার্সি 'ফিল' থেকে এই পিলখানা শব্দের উৎপত্তি। পিলখানার কেন্দ্রে ছিল বিশাল ছাউনি; যেখানে ভরদুপুরে হাতিগুলো আশ্রয় পেত। অসুস্থ হাতিদের জন্য ছিল একটি চিকিৎসাকেন্দ্র। ১৮৮১ সালে ঢাকার খেদা বিভাগে একজন সুপারিনটেনডেন্ট, একজন হেড অ্যাসিস্ট্যান্ট, দুইজন ভেটেরিনারি সার্জন, তিনজন ক্লার্ক, একজন পশু হিসাবকারী এবং হাতির রক্ষণাবেক্ষণ কাজে অনেক মাহুত নিয়োজিত ছিলেন। মাহুতেরা যে এলাকায় বাস করতেন, সে এলাকা পরিচিতি পায় মাহুতটুলি নামে।
খেদায় পোষ মানানোর জন্য বন্য হাতি সংগ্রহ করা হতো মধুপুরের জঙ্গল, বিশেষ করে আটিয়ার পরগনা থেকে। ঢাকার সবচেয়ে নিকটস্থ হাতির আবাস ছিল এর উত্তরাংশের জঙ্গল। অতিকায় হাতি প্রায়ই লোকালয়ে হানা দিয়ে ঘরবাড়ি, ফসলের ব্যাপক ক্ষতি করত। রাজস্ব বিভাগের ১৭৬৯ সালের এক হিসাবমতে, হাতির তাণ্ডবে ভাওয়াল অঞ্চলের লোকসংখ্যা ব্যাপকভাবে হ্রাস পাচ্ছিল এবং এ এলাকার রাজস্ব আদায়ের পরিমাণ বিগত বছরগুলোর তিন ভাগের এক ভাগে এসে ঠেকেছিল। হাতি পোষ মানানোর জন্য তাই ঢাকার বাহিরেও অনেকগুলো খেদা তৈরি হয়। ময়মনসিংহের ভোলানাথ চাকলাদার কাপাসিয়া এলাকায় খেদা বানিয়েছিলেন। ১৭৯১ সালে কাশিমপুরে সরকারি ব্যয়ে খেদা তৈরি করা হয়। রমন সুকুমারের লেখা 'দ্য এশিয়ান এলিফ্যান্ট ইকোলজি অ্যান্ড ম্যানেজমেন্ট' গ্রন্থে খেদায় পোষ মানানো এবং শিকার এই দুই উদ্দেশ্যে উনিশ শতকে ধৃত হাতির সংখ্যা বিষয়ে একটি ধারণা পাওয়া যায়। প্রাপ্ত তথ্যমতে, ১৮৬৮ থেকে ১৮৭৬ এই সময়কালে প্রতিবছর গড় ধৃত হাতির সংখ্যা ছিল ৫৯; যা পরবর্তী ৪ বছরে বেড়ে দাঁড়ায় ১৬৮। এ সময়ে চট্টগ্রাম ও আসাম থেকেও বিপুল পরিমাণ বন্য হাতি ধরে এনে পোষ মানানো হয়। ১৮৩৭ সালে প্রকাশিত 'টপোগ্রাফি অব আসাম' থেকে পাওয়া তথ্য অনুযায়ী, প্রতিটি পোষা হাতির গড় দাম ছিল তিন শ টাকা। উনিশ শতকের শেষ ভাগে গারো পাহাড় থেকে ধৃত হাতির সংখ্যা বছরে কমপক্ষে ৪০০-তে পৌঁছায়।
হাতি ধরবার জন্য শিকার দলগুলো ডিসেম্বরের শুরুতে ঢাকা ত্যাগ করত। সিলেট, চট্টগ্রাম ও আসামের বিভিন্ন বনে তিন-চার মাস ধরে চলত হাতি ধরা। হাতি ধরার পদ্ধতিটি ছিল বেশ প্রাচীন। বিপজ্জনক কাজটি সুষ্ঠভাবে শেষ করার জন্য শিকারিদলের সদস্যসংখ্যা অনেক সময় সাড়ে তিন শ ছাড়িয়ে যেত। শীতের শুষ্ক বনভূমিতে ছড়িয়ে পড়া হাতিদের একটি ঘেরাওয়ের ভেতরে আটকে ফেলা হতো। হাতি ধরার টোপ হিসেবে ব্যবহার করা হতো পূর্বে প্রশিক্ষিত মাদী হাতি, যাকে বলা হতো কুনকি। বন্য হাতির পালকে ঘেরাও করে বাজি পুড়িয়ে, ঢাক বাজিয়ে আতঙ্ক তৈরি করা হতো। এভাবে পোষ মানানোর পর বর্ষা শুরুর আগেই দলগুলো ঢাকা ফিরে আসত। সারিবদ্ধভাবে হাতিগুলো ঢাকার পথে রওনা হতো। অধিকাংশ সময়ে স্থলপথ ধরে হাতি নিয়ে আসা হতো। ঢাকার কমিশনার সিমসন চট্টগ্রাম থেকে ঢাকায় হাতি পৌঁছানোর এক অভিনব পদ্ধতির কথা উল্লেখ করেছেন। আরাকানে তৈরি বালাম নামের বিশেষ নৌকায় পার্বত্য চট্টগ্রাম থেকে মেঘনার চরে হাতি পৌঁছে দেওয়ার কথা জানিয়েছেন তিনি। তবে যাত্রাপথে নানা কারণে বেশ কিছু হাতি প্রাণ হারাত।
১৮৭৫ সালের সেপ্টেম্বরে ঢাকার হাতির খেদার দায়িত্ব নিয়েছিলেন স্যান্ডারসন। তিনি যখন দায়িত্ব নেন, তখন খেদায় হাতির সংখ্যা ১৫৯, এর মধ্যে বেশ কিছু হাতিশাবকও ছিল। নিজ অভিজ্ঞতা নিয়ে লেখা 'থার্টিন ইয়ার্স এমং দ্য ওয়ালিড বিস্টস অব ইন্ডিয়া' বইতে তিনি লিখেছেন হাতি নিয়ে ঢাকা ফেরার কথা—'রাঙামাটি থেকে ঢাকা ফেরার পথে দুটি হাতি মারা যায়। যাত্রাপথে কয়েকটি হাতিশাবকের জন্ম হয়েছিল, তবে সেগুলো শেষমেশ টেকেনি। আমরা ঢাকায় পৌঁছাই ৫ মে, সাথে তখন ১৩০টি হাতি। আমাদের দেখতে ঢাকাস্থ সব ইউরোপীয় জড়ো হয়েছিল। সংগৃহীত প্রতিটি হাতির জন্য প্রশিক্ষক নিয়োগ করা হয়।' প্রশিক্ষণের প্রয়োজনে ধৃত হাতিগুলোকে আকার, লিঙ্গ আর স্বভাবভেদে বিভিন্ন নাম দেওয়া হতো। 'প্রসিডিংস অব দ্য প্রভিনশিয়াল কাউন্সিল অব রেভিনিউ অব ঢাকা, ১৭৭৬' থেকে এমন বেশ কিছু হাতির নাম জানা যায়। অতিকায় এক পুরুষ হাতির নাম রাখা হয়েছিল 'শান্তসুন্দর', আরেক পুরুষ হাতির নাম ছিল 'জানবখশ'। বেশ কিছু মাদী হাতির নাম জানা যায়, যেমন যাত্রারানি, পার্বতী, যাত্রাপিয়ারী। ইংরেজ শাসনকালেও এই পদ্ধতি চালু ছিল, তবে দেশি নামগুলোর বদলে ব্যবহার শুরু হয় ইংরেজি নামের। যেমন ঢাকার পিলখানার ১০ ফুট উঁচু অতিকায় হাতির নাম রাখা হয় ব্রুস। পোষ মানানোর পর হাতিগুলো নতুন নামেই সাড়া দিত।
হাতির জন্য ঘাসগুল্মজাতীয় খাবার আসত ঢাকার আশপাশের জলাভূমি থেকে। এক একটি হাতির প্রয়োজন পড়ত দৈনিক প্রায় ১৫০ পাউন্ড ঘাস, পাতা, বিচালি আর ৫০ গ্যালন পানি। সিমসনের দেওয়া তথ্য অনুযায়ী, বর্ষার আগপর্যন্ত শুধু খাবার বাবদ প্রতিটি হাতির পেছনে মাসে ৩০ টাকা খরচ হতো। বর্ষায় শহরের ভেতরে জন্মানো ঘাসপাতার প্রাচুর্যে সেই খরচ নেমে আসত মাত্র ১০ টাকায়। প্রথমদিকে হাতির জন্য নির্ধারিত কোনো চারণভূমি ছিল না। প্রধানত ঢাকেশ্বরী মন্দিরসংলগ্ন জঙ্গলটি ছিল হাতিদের চারণভূমি। হাতি চড়াবার স্থান নির্ধারিত না থাকায় গোটা শহরজুড়ে হাতিরা খাবারের জন্য ছড়িয়ে থাকত। এটা ছিল শহরবাসীর জন্য এক বাড়তি উপদ্রব। তাই ১৮৬৪ সালের পর পৌর কর্তৃপক্ষ চারণভূমি হিসেবে রমনাকে নির্ধারণ করে দেন এবং শহরের উত্তর প্রান্ত ঘেঁষে পিলখানা থেকে রমনায় যাওয়ার এক আলাদা রাস্তা তৈরি করে। কালক্রমে এ সড়কের নাম হয়ে যায় এলিফ্যান্ট রোড।
হাতির প্রধান বিলাসিতা ছিল তার স্নানপর্ব। গ্রীষ্মকালে জলায় নেমে হাতির যে উচ্ছ্বাস, তা ছিল রীতিমতো দর্শনীয় এক বিষয়। ঢাকায় সেকালে প্রচুর জলাভূমি ছিল। নিয়মিত স্নানের জন্য হাতিকে যেসব জায়গায় নেওয়া হতো, তার মাঝে ছিল নবাবগঞ্জের হাতিঘাট, কারওয়ান বাজার এলাকার হাতিরঝিল, ঢাকেশ্বরীর পেছনের জলাধার; আর ছিল বুড়িগঙ্গা। লর্ড বিশপ হিসেবে ১৮২৪ সালে জলপথে কলকাতা থেকে ঢাকা এসেছিলেন হেবার। নৌকা সদরঘাটের কাছাকাছি আসতে বুড়িগঙ্গার পানিতে স্নানরত হাতিদের উচ্ছ্বসিত ডাকে হেবার চমকে ওঠেন। হেবারের মনে হচ্ছিল, নদীর তলদেশ থেকে ঐ জলদগম্ভীর শব্দটা উঠে আসছে। ১৮২৫-২৬ সালে ঢাকার খেদায় হাতির সংখ্যা ছিল ৩০০-এর কাছাকাছি। ১৮৪০ সালে ঢাকা এসেছিলেন কর্নেল ডেভিডসন, দেখতে গিয়েছিলেন পিলখানা। তখন সেখানে হাতির সংখ্যা ছিল ১২৫, যার বেশির ভাগই ছিল অপ্রাপ্তবয়স্ক। হাতিগুলোকে স্নান করানোর জন্য নদীতে নেওয়া হতো। ঢাকার উকিল হৃদয়নাথ মজুমদারের স্মৃতিকথা 'রেমিনিসেন্স অব ঢাকা' বইতেও এ প্রসঙ্গ এসেছে। ১৮৬৪ সালে তিনি ছিলেন পোগজ স্কুলের ছাত্র। তিনি লিখেছেন, '১৮৬৪ সালে আমি যখন ঢাকায় আসি, তখন খেদার কাজ চলছিল পুরোদমে। আসাম থেকে প্রতিবছর হাতি ধরে নিয়ে আসা হতো এখানে এবং যত দিন না তারা ব্যবহারের উপযুক্ত হয়ে উঠছে, তত দিন তাদের রাখা হতো সেখানে। জমিদাররাও সামান্য অর্থের বিনিময়ে সরকারি খেদাতে হাতি রাখতে পারতেন। প্রথম যখন আমি পিলখানা দেখতে গিয়েছিলাম, তখন সেখানে ছিল দেড় শটি হাতি। পিলখানা সরাসরি ছিল ভারত সরকারের অধীন। আঞ্চলিক কোনো সংস্থা পিলখানার ব্যাপারে হস্তক্ষেপ করতে পারত না। ঢাকেশ্বরীর জঙ্গল ব্যবহৃত হতো হাতিদের চরে বেড়াবার জন্য।'
পিলখানায় হাতির প্রশিক্ষণ চলত নভেম্বর পর্যন্ত। এরপর কুনকিগুলো বাদে বাকি প্রশিক্ষিত হাতিগুলোকে কলকাতার কাছে ব্যারাকপুরের সামরিক স্টেশনে পাঠিয়ে দেওয়া হতো। সেখান থেকে ভারতবর্ষের অন্যান্য সামরিক স্টেশনের প্রয়োজন অনুযায়ী হাতি সরবরাহ করা হতো। ঢাকার হাতির এই রপ্তানি শুধু এই ভূখণ্ডের মধ্য সীমিত ছিল না। কালাপানি পার হয়ে বাংলার হাতি পৌঁছে গিয়েছিল ভারতবর্ষের বাইরে ইংরেজ শাসিত অন্যান্য ভূ-খণ্ডে। তারই অন্যতম উদাহরণ টমি, জেনি নামের দুই হাতি। এবারে সেই প্রসঙ্গ।
দূরদেশের পথে
হাতি ছিল ইংরেজ সরকারের এক গুরুত্বপূর্ণ সামরিক সম্পদ। হাতি ব্যবসার সাথে জড়িত ইংরেজের সংখ্যাও নিতান্ত কম ছিল না। এর সাথে যোগ হয়েছিল বন্য হাতির তাণ্ডবের অভিজ্ঞতা। এসব প্রসঙ্গ উঠে আসে সুদূর বিলেতে থাকা আত্মীয়দের কাছে লেখা চিঠিপত্র আর ড্রয়িংয়ে। সচক্ষে ভারতীয় হাতি দেখবার জন্য বিলেতবাসীর আগ্রহকে বহুগুণে বাড়িয়ে তুলেছিল এসব চিঠি, ডায়েরি আর ড্রয়িং। সে সুযোগকে কাজে লাগিয়ে হাতি বাণিজ্যে নতুন মাত্রা যুক্ত হয়। বিলেতসহ অন্যান্য ইংরেজ উপনিবেশে প্রদর্শনের জন্য ভারতীয় হাতি পাঠানোর উদ্যোগ নেওয়া হয়। ব্যক্তিগত সংগ্রহে রাখবার জন্য হাতি আমদানি করেছেন এমন নজিরও বিরল নয়। তবে সেসব হাতি সাধারণত খাঁচায় আটকে রাখা হতো। তুলনামূলক উন্মুক্ত পরিবেশে হাতি রাখার জন্য লন্ডনের রিজেন্টস পার্কের জুয়োলজিক্যাল গার্ডেনে চমৎকার ব্যবস্থা ছিল। এখানে প্রদর্শনীর জন্য রাখা দুটি হাতিই ছিল এশীয় প্রজাতির। স্নানকালে এই হাতিগুলোর উচ্ছ্বাস দর্শকেরা দারুণ উপভোগ করতেন। হাতিগুলো ভারতের কোন বন্দর থেকে লন্ডনে পাঠানো হয়েছিল, তা জানা যায় না। তবে এমন অনেক হাতিই কলকাতা থেকে জাহাজের মাধ্যমে ছড়িয়ে পড়েছিল সে সময়কার অন্য ইংরেজ উপনিবেশগুলোতে। অস্ট্রেলিয়া ছিল এমন এক নতুন উপনিবেশ; ইংরেজদের দখলদারত্ব সেখানে শুরু হয়েছিল আঠারো শতকের শেষ ভাগে। প্রথমদিকে এর নাম ছিল নিউ হল্যান্ড। সিডনিকে কেন্দ্র করে গড়ে ওঠা ইংরেজ রাজত্ব ধীরে ধীরে প্রসারিত হয় পুরো দ্বীপজুড়ে। ভূখণ্ডটির নতুন নাম হয় অস্ট্রেলিয়া।
১৮৫১ সালের আগস্ট মাসের ১২ তারিখে অস্ট্রেলিয়ার হোবার্ট বন্দরে 'রয়্যাল স্যাক্সন' নামে এক জাহাজ ভেড়ে। জাহাজটি কলকাতা থেকে ছেড়েছিল জুন মাসের ১ তারিখে, ক্যাপ্টেন ছিলেন উইলিয়াম চার্লসওয়ার্থ। সাধারণত জাহাজটি ভারতবর্ষ আর নতুন ইংরেজ উপনিবেশ অস্ট্রেলিয়ার ভেতর ইংরেজ বন্দী আনা-নেওয়া করত। এর পাশাপাশি চার্লসওয়ার্থের ব্যক্তিগত আগ্রহে কার্গোয় করে বন্য জীবজন্তুর চালানও যেত। যেমন ১৮৫০ সালে এই জাহাজে চেপে অস্ট্রেলিয়া থেকে গিয়েছিল বেশ কটি স্বাস্থ্যবান ঘোড়া। ভারতবাসী ইংরেজদের কাছে এসব ঘোড়ার ব্যাপক চাহিদা ছিল। এর বিপরীতে কলকাতা থেকে অস্ট্রেলিয়া পৌঁছে ১৫ মাস বয়সী এক রয়েল বেঙ্গল টাইগার, সাথে ছিল এক ভাল্লুক এবং কয়েকটি বানর। ১৮৫১-এর আগস্টে হোবার্টে জাহাজটি পৌঁছেছিল ১৬ জন পুরুষ বন্দী, সাথে কার্গোতে ছিল আফ্রিকান ভাল্লুক, আরবদেশীয় ঘোড়া এবং দুটি এশীয় হাতি। এ বিষয়ে প্রথম যে খবরটি পাওয়া যায়, তা ছাপা হয়েছিল জাহাজ পৌঁছাবার তিন দিন পর, কলোনিয়াল টাইমস নামের স্থানীয় এক পত্রিকার সাপ্লিমেন্টে—'The Royal Saxon has brought two young elephants, one of which may be seen at the Macquarie Hotel.' সে সময়ের পত্রপত্রিকায় হাতি পৌঁছানোর বিষয়টি বিশেষ গুরুত্বের সাথে ছাপানো হয়েছিল; কারণ, এশীয় নানান প্রাণীর কিছু নমুনা ইতিপূর্বে অস্ট্রেলিয়া পৌঁছালেও হাতির সাক্ষাৎ এ অঞ্চলের লোক কখনো পায়নি। রয়্যাল স্যাক্সনে চেপে আসা এই দুটি হাতি ছিল এই ভূখণ্ডের প্রথম হাতি। আরও চমকপ্রদ খবরটি দেখা যায় সিডনি মর্নিং হেরাল্ডের ২৭ সেপ্টেম্বর, ১৮৫১ সংখ্যায়। সেখানে রয়্যাল স্যাক্সনে পৌঁছানো হাতিগুলোর আদি নিবাস হিসেবে ঢাকার নাম উল্লেখ করা হয়। সেখানে আরও উল্লেখ করা হয় যে কলকাতা থেকে ঢাকার দূরত্ব প্রায় ২০০ মাইল এবং এই পথ হাতিগুলো পার হয়েছে জলপথে। হাতিগুলোর মধ্যে একটি ছিল ৩ বছর বয়সী এক পুরুষ হাতি, নাম জামবো। ১৮৫৫ সালের পর এর নাম বদলে রাখা হয় টমি এবং ঐ নামেই সে সর্বাধিক পরিচিতি পায়। এ কারণে নিবন্ধের সর্বত্র পুরুষ হাতিটিকে টমি নামে উল্লেখ করা হয়েছে। টমি বাদে অপর হাতিটি ছিল একটি মাদী হাতি, নাম ছিল জেনি।
হোবার্টে পৌঁছানোর পরপরই ম্যাকোয়েরি হোটেলের সামনে পুরুষ হাতিটিকে নিলামে তোলা হয়। থমাস নামের এক ভদ্রলোক টমিকে কিনে নেন। স্থানীয় পত্রিকা কলোনিয়াল টাইমসে বিজ্ঞাপন দিয়ে হাতিটির প্রদর্শনী শুরু করেন থমাস। অপর দিকে জেনিকে কার্গোতে ভরে রয়্যাল স্যাক্সন জাহাজটি সিডনির উদ্দেশে রওনা হয়। সেখানে তাকে কিনে নেন উইলিয়াম ব্যুমন্ট নামের এক কাঠ ব্যবসায়ী।
টমি অথবা জামবোর কথা
হোবার্টের ক্লাব হোটেলে প্রতিদিন সকাল ১০টা থেকে সন্ধ্যা ৬টা পর্যন্ত খেলা দেখাত টমি। টমিকে দেখবার জন্য প্রাপ্তবয়স্ক দর্শনার্থীদের গুনতে হতো ১ শিলিং আর শিশুদের মাথাপিছু টিকেট ছিল ৬ পেনি। এরপর টমিকে নিয়ে যাওয়া হয় মেলবোর্ন। ক্রেমর্ন চিড়িয়াখানার মালিক জেমস ইলিস টমিকে কিনে সেখানে প্রদর্শনীর ব্যবস্থা করেন। মেলবোর্নের ইয়ারা নদীতীরে এই চিড়িয়াখানা যাত্রা শুরু করেছিল ১৮৫৩ সালে। সেখানে সিংহ, বানর, ইমুসহ নানা জাতের পাখি, ক্যাঙ্গারু এসবই ছিল। তবে হাতিটি কেনার পর এর আকর্ষণ অনেক বেড়ে যায়। কুরিয়ার পত্রিকার ৮ জুলাই, ১৮৫৪ সংখ্যায় লেখে, 'সামনের দিনগুলোতে এই হাতির মহিমা দর্শকদের মাঝে রাজত্ব করবে, বিশেষভাবে সন্ধ্যার প্রদর্শনীতে হাতিটির উপস্থিতি একান্ত কাম্য।' বিশালাকার সব প্যাভিলিয়ন, অর্কেস্ট্রা, ব্যালে ইত্যাদি নানান ব্যবস্থাও সেখানে ছিল। অবশ্য মূল শহর থেকে দূরে হওয়ায় একসময় দর্শক কমে আসে। টমি এরপর এ হাত-সে হাত ঘুরে একসময় এসে পৌঁছায় অ্যাডিলেডে।
অ্যাডিলেডে নতুন মালিক বেন্টলি খেলা দেখানোর জন্য টমির উপর নানা রকম অত্যাচার করছিলেন। এ নিয়ে আইনি অভিযোগ দায়ের করা হয়। বেন্টলি তাই তড়িঘড়ি করে টমিকে জন স্মিথ নামের এক ভদ্রলোকের কাছে বিক্রি করে দেন। জন স্মিথ অ্যাডিলেডের উপকণ্ঠে বেশ কিছু জমিকে আবাদি জমি হিসেবে তৈরি করবার কথা ভাবছিলেন। টমিকে দিয়ে কৃষিকাজের উদ্যোগ নেন স্মিথ, টমির পেছনে লাঙ্গল জুড়ে নামিয়ে দেন জমিতে। স্থানীয় পত্রিকায় টমিকে কৃষিকাজের জন্য নতুন পশু হিসেবে উল্লেখ করা হয়, বলা হয় টমির শক্তি মোষের মতন, কিন্তু স্বভাবে সে মেষের মতনই নমনীয়। তবে ধীরগতির কারণে খুব বেশি দিন টমিকে খামারের কাজে লাগানো যায়নি। ১৮৫৫ সালের শেষ দিকে ৩০০ পাউন্ডের বিনিময়ে টমিকে বিক্রি করে দেওয়া হয় চার্লস ম্যাথুস নামের এক ব্যবসায়ীর কাছে। এই ম্যাথুসের হোটেলই ছিল গেপ্স ক্রস, যার নাম লেখার শুরুতে ক্যালেবের স্মৃতিচারণায় উল্লেখ করা হয়েছে। ম্যাথুসই জামবো বদলে হাতিটির নাম রাখেন টমি।
দক্ষিণ অস্ট্রেলিয়ায় ইংরেজ উপনিবেশের প্রাথমিক দিনগুলোতে বেড়ে ওঠা শিশুদের কাছে টমি ছিল এক গুরুত্বপূর্ণ নাম। খেলা দেখানোর পাশাপাশি টমি মাল টানত, ওয়াগনে চাপিয়ে লোকজনকে এদিক-সেদিক নিয়ে যেত, গাছ সরিয়ে রাস্তা করে দিত, খামারে কাজ করত। এলাকায় রেলপথ বসানোর সময় ভারী মালামাল টানবার জন্য টমিকে নিয়ে যাওয়া হয়। টমি হয়ে ওঠে অ্যাডিলেডের মানুষের নিত্যদিনের বন্ধু।
গেপ্স ক্রস হোটেলের সামনের পানশালায় প্রতি দুপুরের পর অন্য অভাগতদের সাথে টমিকেও মদ, রুটি পরিবেশন করা হতো। এর সাথে উদরপূর্তির জন্য টমি প্রতিদিন পেত পাঁচ বেলা খড়। দুঃখজনক হলো এই খাবার টমির জন্য ছিল অপ্রতুল। প্রায় সময়ই ক্ষুধার্ত অবস্থায় ঘুমাতে যেত টমি। টমির থাকবার জন্য কোনো ছাউনি ছিল না। রাতে তাকে পায়ে শিকল পরিয়ে গাছের সঙ্গে বেঁধে রাখা হতো। এভাবে একরকম দিন চলে যাচ্ছিল। ১৮৫৮ সালের কথা। তখন টমির বয়স মাত্র ৯ বছর। মার্চ মাসের এক শীতের রাতে প্রচণ্ড ঝড় শুরু উঠল। সেই রাতের ঝড়, ঠান্ডা সহ্য করতে পারেনি ক্ষুধার্ত টমি। পা বাঁধা অবস্থাতেই খিঁচুনি উঠে ছটফট করে মারা যায় টমি।
জেনির কথা
আগেই উল্লেখ করা হয়েছে যে মাদী হাতি জেনিকে কিনে নিয়েছিল উইলিয়াম ব্যুমন্ট নামের এক ব্যবসায়ী। সিডনির বোটানি এলাকায় ব্যুমন্টের একটি হোটেল ছিল, নাম স্যার জোসেফ ব্যাঙ্কস হোটেল। সাগরের কোল ঘেঁষে তৈরি সেই হোটেলের আশেপাশে ছিল চমৎকার উদ্যান, সাথে রেসকোর্স। সিডনিবাসী সেখানে ঘোড়া চড়াতেন, ক্রিকেট, ফুটবল খেলতেন। বাড়তি আকর্ষণ হিসেবে উদ্যানে ব্যুমন্ট গড়ে তুলেন ব্যক্তিগত এক চিড়িয়াখানা। এই চিড়িয়াখানার যেসব প্রাণীর নাম জানা যায়, তার মধ্যে আছে রয়েল বেঙ্গল টাইগার প্রজাতির বাঘ, হিমালয়ের কালো ভাল্লুক, ম্যানিলার লাল হরিণ, বাংলার কালো ছাগল ইত্যাদি। তবে নতুন অতিথি জেনির আগমনে চিড়িয়াখানার আকর্ষণ বহুগুণে বেড়ে যায়। সিডনিবাসীর জন্য জেনিই এনে দিয়েছিল প্রথম হাতি দেখার সুযোগ। জেনি ছিল খুবই অমায়িক স্বভাবের। যে কারণে অতিকায় দেহ সত্ত্বেও লোকেরা তার কাছে ভিড়তে ভয় পেত না। চিড়িয়াখানায় বেড়াতে আসা শিশুরা জেনিকে ঘিরে ধরে বিস্কুট আর ফল খাওয়াত।
দীর্ঘ প্রায় ১৭ বছর অস্ট্রেলিয়ার বিভিন্ন শহরে খেলা দেখানো শেষে জেনি আবার হোবার্টে ফিরে আসে। ১৮৬৮ সালের ফেব্রুয়ারিতে সোর্ডফিশ নামের এক জাহাজে চাপিয়ে জেনিকে নিয়ে যাওয়া হয় নিউজিল্যান্ডের ডানেডিন নামক শহরে।
জেনিই ছিল নিউজিল্যান্ডে পদার্পণকারী প্রথম হাতি। সম্ভবত সে সময়ে জেনির নাম দেওয়া হয় সারাহ। স্থানীয় পত্রিকা ওটাগো টাইমসে ছাপানো এক বিজ্ঞাপনে দেখা যায় শহরের হাইবেরনিয়ান হোটেলে হাতিটিকে বিক্রির উদ্যোগ নেয়। ধারণা করা যায়, এই হোটেলের মালিকই জেনিকে নিউজিল্যান্ডে নেয়ার উদ্যোগ নিয়েছিলেন। সস্তায় বিক্রি হবে এমন প্রচার সত্ত্বেও খুব বেশি ক্রেতা পেয়েছিল বলে মনে হয় না।
৯ দিন পর প্রচারিত আরেক বিজ্ঞাপনে দেখা যায়—হাতিটির সাথে একটি মালটানা ওয়াগন যোগ করে সেটিকে বিক্রির চেষ্টা চলছে। আর সেবারও যদি কেউ না কেনে, তবে হাতিটিকে ক্রাইস্টচার্চ শহরে পাঠিয়ে দিতে হবে বলে উল্লেখ করা হয়। ধারণা করা হয়, এই বিজ্ঞাপনের পর অত্যন্ত কম দামে কোনো এক ব্যক্তি জেনিকে কিনে নেন। তবে এ বিষয়ে নিশ্চিত হওয়া যায় না। নতুন এলাকায় প্রদর্শনী অথবা বিক্রি যেকোনো এক উদ্দেশ্যে জেনিকে নিয়ে এর মালিক এপ্রিলের শেষ দিকে রওনা হয়ে যান ক্রাইস্টচার্চের পথে।
সেকালে যাতায়াতব্যবস্থা খুব সহজ ছিল না, রেল যোগাযোগ ছিল অনুপস্থিত, রাস্তাগুলোর দশাও খুব ভালো ছিল না। বিশেষভাবে হাতির মতন অত বড় প্রাণী নিয়ে চলাফেরা করা ছিল খুবই কঠিন। ক্রাইস্টচার্চে যাবার পথে পড়ল ওয়াইতাকি নদী। হাজার অনুরোধেও ফেরির মালিক হাতি পারাপারে রাজি হলেন না। দীর্ঘ পথচলায় ক্লান্ত, ক্ষুধার্ত জেনি লাগাম ছেড়ে নদীর তীর ধরে হেঁটে চলল। হঠাৎ নদীর তীরে সদ্য কচি সবুজপাতা ছেড়েছে এমন এক ঝোপ চোখে পড়ল তার। জেনির জানা ছিল না টুটু নামের এই ঝোপের পাতা বড় বিষাক্ত। ক্ষুধার তাড়নায় নিজ উদর টুটুগাছের পাতা আর নদীর পানিতে পূর্ণ করল জেনি। এর ঘণ্টা দুই পরে স্তব্ধ হয়ে গেল তার শরীর, মৃত্যুর কোলে ঢলে পড়ল জেনি।
পরিশিষ্ট
মৃত জেনির কঙ্কালটি সংরক্ষণের উদ্যোগ নেওয়া হয়। এ কাজে এগিয়ে আসেন হেক্টর নামের এক চিকিৎসক। ওয়েলিংটনের কলোনিয়াল জাদুঘরে নতুন রূপে ঠাঁই পায় জেনি। কয়েক প্রজন্মের শিশুর শারীরবিদ্যা শিক্ষার গুরুত্বপূর্ণ এক অংশ হয়ে ওঠে ঢাকার হাতি জেনি। আর ওদিকে টমির মৃত্যুর পর তার দাঁত আর চামড়া পাঠিয়ে দেওয়া হয় বিলেতে। টমির হাড়গোড়গুলো জেনির মতন সংরক্ষণ করা হয়নি।
তবে অ্যাডিলেডবাসী তাদের শহর গড়ে তোলায় টমির অবদান ভোলেনি। স্মিথের বাড়িতে যে ছাউনিতে টমি থাকত, তা সংরক্ষণ করা হয়েছে। স্মিথফিল্ড রেলস্টেশনের বাইরে বসেছে হাতির দাঁতের ভাস্কর্য। আর প্লেফোর্ড এলাকায় টমির স্মরণে গড়ে তোলা হয়েছে 'দ্য এলিফ্যান্ট ওয়াক' নামে এক পার্ক; যেখানে আজও প্রতি বিকেলে শহরের শিশুরা খেলাধুলা, আনন্দে মেতে ওঠে, যেমনটা মেতে উঠত সেকালের শিশুরা ঢাকার হাতি টমির দেখা পেয়ে।
- তথ্যসূত্র:
১. Khedas in South-Eastern Bengal: Colonialism and Wildlife 1765–1810 by Baijayanti Chatterjee, Global Environment, Volume 14, Number 2, June, 2021.
২. Caleb by Paul M. Hoskins, July, 2011.
৩. Otago Daily Times, January, 1868-March 1868.