যে ভাষায় বরফের জন্য আছে ৪০০ শব্দ
মোটমাট আছে ৪২১টি শব্দ। খুঁজে পেয়েছেন গ্লাসগো বিশ্ববিদ্যালয়ের একটি গবেষণা দল। দেশটির নাম স্কটল্যান্ড। ভাষার নাম স্কটিশ, ছোট করে ডাকা হয় স্কট। এটি একটি প্রাচীন ভাষা। বরফ পড়বে পড়বে এর জন্য যেমন শব্দ আছে, তুষারকণার জন্যও আছে, ভারী তুষারপাতের জন্য আছে, টুপটাপ তুষার ঝড়ের জন্য আছে, আবার ধীরে পড়ছে, বরফে জমে যাচ্ছি, বরফে ভাসছির জন্যও আছে শব্দ। প্রতিটিই আলাদা আলাদা শব্দ আর প্রতিটির দাঁড়ায় ভিন্ন ভিন্ন অর্থ। ভারী তুষারপাত আর অনেক তুষারপাতের জন্য কিন্তু দুটি ভিন্ন শব্দ। বৃষ্টির মতো তুষার ঝড়ছে আর পেঁজাতুলার মতো তুষার ভাসছের জন্যও কিন্তু দুটি আলাদা শব্দ। ওই দেশে আমাদের রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের মতো একজন কবি থাকলে কী যে হতো ভাবা যায়! অবশ্য বরফ নিয়ে স্টুয়ার্ট পিটারসন একটি স্নো ব্রেকার নামে এটি কবিতা লিখেছেন বিবিসি জন্য। নাম স্নো ব্রেকার (একটি ভেড়া যে পথ পরিস্কার করে)।
কবিতাটি এমন-
আমি এক দারুণ বরফভাঙা ভেড়া
যে পুরো পালের জন্য পথ পরিস্কার করি
প্রতিটি বরফ খণ্ড আমি ভেঙে করি চুরমার
আমার শরীরই মোড়ানো ভারী ভারী তুষারখণ্ড দিয়ে
আমার নিঃশ্বাসে ঝরে গরম বাতাস
বরফ ঝড়ে আমার চোখ ঝলসে যায়
খুড় আর কপাল দিয়ে আমি ঝাপটা সামলাই
তুষার পথ ধরে হাঁটলে তুমি নিশ্চয়্ই দেখে থাকবে।
এবার ভাষাটি নিয়ে দু-চারটি কথা বলা যাক। পশ্চিম জার্মানিক ভাষাগোষ্ঠির একটি এ ভাষা। স্কটল্যান্ড ছাড়া উত্তর আয়ারল্যান্ডেও এ ভাষার ব্যবহার দেখা যায়। এটি স্কটল্যান্ডের আদি ভাষা। আধুনিক স্কট ভাষা এটি বেশ আলাদা। স্কটিশ গ্যালিক থেকে পৃথক করতে চেয়ে একে লোল্যান্ড স্কট বলেও ডাকা হয়। ইউনেস্কোর জরিপ বলছে, ভাষাটি দিনে দিনে হারিয়ে যাচ্ছে। পনের শতকে এটিও ওল্ডার স্কটকে হারিয়ে দিয়ে জায়গা দখল করেছিল। তবে গোড়া পোতা আছে সপ্তম শতকে অ্যাংলো স্যাক্সনদের আমলে। দিনে দিনে আইরিশ ভাষা থেকেও এটি অনেক শব্দ গ্রহণ করে সমৃদ্ধ হয়েছে। আবার আয়ারল্যান্ডে একে নিয়ে গেছে দুই লাখ লো ল্যান্ডার স্কটস ১৬১০ থেকে ১৬৯০ এর মধ্যে।
আবার বরফ
এবার আবার আসি বরফের কাছে। এস্কিমোদের আছে ৫০টি শব্দ বরফ নিয়ে। কানাডা, আলাস্কা, গ্রিনল্যান্ডে স্কিমে দের বসত। তাঁরা মূলত সিলশিকারী। সিলদের তেল আর চামড়া বিক্রি হয় বাজারে। সুইডিশদের আছে ২৫টি শব্দ বরফ নিয়ে। ফিনল্যান্ডে আছে ৪০টি। হাওয়াইতে বরফকে বলে হাউকিয়া। এখানে হাউ মানে বরফ আর কিয়া মানে সাদা। নেটিভ আমেরিকান চেরোকিদের একটি শব্দ আছে বরফ নিয়ে তা এমন উ-না-তিসি । প্রায় চারলাখ চেরোকি এখনো আছে আমেরিকায়। তাঁরা নর্থ ক্যারোলিনা আর দক্ষিণ টেনেসিতে থাকে। বরফ দিয়ে কিন্তু নামও রাখা হয়। আইরা যেমন, নর্স দেবী একজন, ওয়েলসে শব্দটির অর্থ ধরা হয় বরফ। আবার আইরার একটা বানান সংস্কৃতেও দেখা যায় যার অর্থ পৃথিবী বা ভ'মি। আবার দেখুন নিভিয়া নামের যে ক্রিম আমরা বাজার থেকে কিনি তার অর্থ কিন্তু বরফ। স্প্যানিশ ভাষা থেকে এর আগমন। আসল বানানটি অবশ্য কিছু আলাদা।
বরফ নিয়ে টুকিটাকি
পৃথিবীর মোট ভ'ভাগের দশ ভাগ কিন্তু বরফের দখলে। বরফ দিয়ে তৈরি হয় হিমবাহ বা হিমস্রোত। ১৯৮৭ সালের এক হিসাব বলছে উত্তর মেরুতে প্রায় ৪০ লক্ষ বর্গমাইল ঢাকা থাকে বরফে। টাইটানিক জাহাজ ভেঙে গিয়েছিল হিমবাহের সঙ্গে ধাক্কা লেগেই। এটি আমরা জেমস ক্যামেরনের টাইটানিকেও দেখেছি।
অ্যাভালাঞ্চ মানে বরফধ্বস। এভারেস্ট চড়তে গিয়ে বরফ ধ্বসে মারা যাওযার কথা আমরা মাঝে মধ্যে শুনি।
অনেক নদী কিন্তু বরফ গলেই তৈরি হয়। আমাদের গঙ্গা বা পদ্মা যেমন গাঙ্গোত্রি হিমবাহ তৈরি হয়। ইরান আর আফগানিস্তানে প্রতি বসন্তেই বরফ গলে। আমেরিকার পশ্চিমের পাহাড় থেকেও বরফ গলে বসন্তে।
বরফের ওপর স্কিইং তো শীতের একটি মশহুর খেলা। সারা পৃথিবীতে প্রায় ৮ কোটি স্কিয়ারের কথা জানাচ্ছে ১৯৯৪ সালের এক হিসাব। শুধু আলপাইন অঞ্চলেই ৫ কোটি লোক স্কি করতে যায়। জাপানে আছে দেড় স্কিয়ার।
রাশিয়া, নরওয়েসহ আরো কিছু জায়গার রেল কিন্তু বরফ কেটে পথ করে নেয়। রুশীয় অনেক ছবিতেই তার নজির আছে। নরওয়ের ৪০০০ কিলোমিটার লম্বা রেলপথে ১৫০০ লোকের কাজ কেবল বরফ সরানো।
বরফের মধ্যে বাব রফ নিয়ে অনেক ছবি করেছে হলিউড। এগুলোর মধ্যে কয়েকটির নাম স্নোপিয়ার্সার, স্নো হোয়াইট, ফ্রোজেন, দি ডে আফটার টুমরো, ৬ বিলো ইত্যাদি।