দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধ নিয়ে সর্বকালের সেরা ২০ চলচ্চিত্র
দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের সাথে আমাদের অনেকেরই প্রথম পরিচয় চলচ্চিত্রের মাধ্যমে। সাদাকালো যুগের কালজয়ী সিনেমা থেকে শুরু করে একবিংশ শতাব্দীতে এসেও দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধ নিয়ে সিনেমা বানানোর উপকরণের অভাব পড়েনি কখনো। দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের ছবি দেখতে গেলেই আমাদের সামনে ভেসে ওঠে একদল 'ভালো লোক' বনাম একদল 'খারাপ লোক' এর লড়াই; যার সাথে জড়িয়ে থাকে ইতিহাস, বীরের মতো আত্মত্যাগ এবং অন্যদিকে দুশ্চরিত্র ভিলেন! হৃদয়স্পর্শী গল্প এবং উগ্র দেশপ্রেমী প্রোপাগান্ডার জন্য সমালোচনা, দুই দিক থেকেই চলচ্চিত্রে দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের প্রাসঙ্গিকতা অনেক বেশি।
তবে সময়ের সাথে সাথে দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধ সম্পর্কে মানুষের মনোভাব এবং যুদ্ধের পেছনে থাকা মানবিক সংকটকে ভিন্ন ভিন্নভাবে ব্যাখ্যা করা হয়েছে এবং সেগুলো তুলে ধরা হয়েছে বিভিন্ন চলচ্চিত্রে। শুরুর দিকের ছবিগুলোতে দেশপ্রেমের প্রকাশ কিংবা আধুনিককালে আরও সূক্ষ ব্যাখ্যা; আমাদের উচিত আসল সত্যটা জানা। ইতিহাস যেন তার পুনরাবৃত্তি না করে, তার জন্য সঠিক সূত্র ও বিশ্লেষণ ছাড়াই সিনেমায় আমেরিকানদের 'হিরো' হিসেবে মেনে নেওয়ার প্রবৃত্তি থেকে বেরিয়ে আসতে হবে দর্শককে।
সত্য জানতে চাইলে আপনি অবশ্যই একটা ভালো বই পড়তে পারেন। কিন্তু মানব সভ্যতার ইতিহাসের সবচেয়ে স্মরণীয় এই ঘটনা নিয়ে বেশকিছু অসাধারণ চলচ্চিত্রও হতে পারে আপনার জ্ঞানার্জনের বিষয়। আজ পাঠকের জন্য থাকছে দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের পটভূমিতে নির্মিত তেমনই ২০টি চলচ্চিত্রের নাম।
দ্য গ্রেট এসকেইপ
পল ব্রিকহিলের নন-ফিকশন বই 'দ্য গ্রেট এসকেইপ' অবলম্বনে নির্মিত হয়েছে এই চলচ্চিত্র। জার্মান নাৎসি বাহিনীর বন্দিশালা থেকে ব্রিটিশ কমনওয়েলথ যোদ্ধাদের পালানোর চেষ্টা নিয়ে ছবির গল্প। টিকে থাকার জন্য সৈন্যদের নানা কৌশল এবং বিশেষত, সৈন্যদের তাড়া করে বেড়ানোর দৃশ্যগুলো চিত্রায়ণের জন্য এটি একটি সেরা ক্লাসিক ছবি হিসেবে বিবেচিত।
কাম অ্যান্ড সি
বেলারুশিয়ান যুদ্ধবিরোধী চলচ্চিত্র 'কাম অ্যান্ড সি'তে পূর্ব ইউরোপে নাৎসি বাহিনীর নৃশংসতা ও অত্যাচারের চিত্র তুলে ধরা হয়েছে। বেলারুশের এক টিনেজ বালকের বর্ণনায় একই সাথে কাব্যিক ও বাস্তবধর্মী উপায়ে বিষয়বস্তুর গভীরতা ফুটিয়ে তোলা হয়েছে।
দ্য ইমিটেশন গেম
ছবিতে বিখ্যাত ব্রিটিশ ক্রিপ্ট্যানালিস্ট বা কোড ব্রেকার অ্যালান টুরিং এর ভূমিকায় অভিনয় করেছেন বেনেডিক্ট কাম্বারব্যাচ। নাৎসি বাহিনীর গোপন যোগাযোগে ব্যবহৃত এনিগমা মেশিনের সংকেত উদ্ধার করেন এই অসামান্য প্রতিভাবান গণিতবিদ। কিন্তু এই প্রভাবশালী ব্যক্তিত্বের পেছনে টুরিং এর নিজেরও রয়েছে এক গোপন জীবন!
স্টালিনগ্রাড
বিশ্বনন্দিত এই রুশ চলচ্চিত্রটি অন্যদের চাইতে একটু ভিন্ন। কারণ এখানে নাৎসি বাহিনীর স্টালিনগ্রাড দখলের ডামাডোলের মধ্যেই উত্থান হয়েছে এক জটিল প্রেমকাহিনীর।
লাইফ ইজ বিউটিফুল
দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের চলচ্চিত্রের প্রসঙ্গ সামনে আসলেই রবার্তো বেনিনির এই অস্কারজয়ী ছবিটির কথা বলতে হয়। নাৎসি বাহিনীর হাতে পরিবারসমেত ধরা পড়ার পরেও এক ইতালিয়ান বাবা চায় তার ছেলেকে যুদ্ধের এই নির্মম সত্য থেকে দূরে রাখতে; নৃশংসতার বদলে তাকে দেখাতে চায় এক স্বাধীন দুনিয়া!
দাস বুট
আটলান্টিক মহাসাগরে একটি জার্মান ইউ-বোটের টিকে থাকার লড়াই নিয়ে নির্মিত এই চলচ্চিত্র দর্শককে সমুদ্রের বুকে যুদ্ধটা কেমন ছিল তা দেখার সুযোগ করে দিবে।
ইনগ্লোরিয়াস বাস্টার্ড
অ্যাডলফ হিটলারের নির্মম মৃত্যুকে সিনেমার পর্দায় তুলে ধরতে অভিনব পন্থা বেছে নিয়েছেন টারান্টিনো। এক ইহুদি কিশোরীর প্রতিশোধের গল্প, প্রতি মুহূর্তে উত্তেজনা ও একঝাক খ্যাতনামা অভিনেতার সমন্বয় ঘটেছে এই ছবিতে।
গ্রেভ অব দ্য ফায়ারফ্লাইস
দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের সময় জাপানে যুক্তরাষ্ট্রের ফায়ারবম্বিং এর কারণে মা-বাবার থেকে বিচ্ছিন্ন হয়ে যায় দুই ভাইবোন। যুদ্ধের নির্মমতার মধ্যেই চলতে থাকে দুজনের টিকে থাকার লড়াই। অ্যানিমেশন চলচ্চিত্র হলেও ইসাও তাকাহাতা পরিচালিত এই ছবিটি এর মর্মস্পর্শী গল্পের জন্য বিশ্বনন্দিত।
শিন্ডলার'স লিস্ট
নাৎসি বাহিনীর গণহত্যা এবং এরই মাঝে এক ব্যবসায়ীর ইহুদিদের ত্রাণকর্তা হয়ে ওঠাকে সুনিপুণভাবে রূপালি পর্দায় তুলে ধরেছেন স্টিভেন স্পিলবার্গ।
ক্যাসাব্লাঙ্কা
যুদ্ধ নাকি প্রেম? এই দুইয়ের টানাপোড়েন মিলিয়েই ক্যাসাব্লাঙ্কা হয়ে উঠেছে একই সাথে দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের এবং রোমান্টিক জনরার সর্বকালের সেরা একটি ছবি।
দ্য ব্রিজ অন দ্য রিভার কাওয়াই
জাপানি ক্যাম্পে একদল যুদ্ধবন্দিকে দিয়ে সেতু নির্মাণের পরিকল্পনা করেন এক ব্রিটিশ কর্নেল। কর্নেল চান তার এই কাজ স্মরণীয় হয়ে থাকুক, কিন্তু তার সফলতার পথে চক্রান্ত এবং শেষ দৃশ্যের নাটকীয় ব্যর্থতা এই ছবিটিকে অদ্বিতীয় করেছে।
সেভিং প্রাইভেট রায়ান
সিনেমাপ্রেমীরা ইতোমধ্যেই অনেকেই এই ছবিটির সাথে পরিচিত। নর্ম্যান্ডি দখলের ঘটনাপ্রবাহের সাথে সাথে যুদ্ধের সহিংসতাকে তুলে ধরা হয়েছে... এবং পরিচালক? আবারও স্পিলবার্গ!
ডেফিয়ান্স
চার ভাই মিলে আস্তানা গাড়ে পূর্ব ইউরোপের ঘন জঙ্গলে, যোগ দেয় রাশিয়ান যোদ্ধাদের সাথে। এই বনের মধ্যেই তারা গড়ে তোলে ইহুদিদের ক্যাম্প, কঠোর সংগ্রামের মধ্যেও বাচিয়ে রাখে তাদের।
লেটারস ফ্রম ইয়ো জিমা
অস্কারের জন্য মনোনয়নপ্রাপ্ত ও ক্লিন্ট ইস্টউড পরিচালিত এই ছবিতে দেখানো হয়েছে এক বিপরীত চিত্র, তা হলো নিজের শত্রুপক্ষের প্রতি সহানুভূতি।
ডানকার্ক
পরিচালক ক্রিস্টোফার নোলান মানেই যেন বিশেষ কিছু, আর তা যদি হয় যুদ্ধের চলচ্চিত্র তাহলে তো কথাই নেই। দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধে মিত্রশক্তির নর্দার্ন ফ্রান্স উপকূলে ডানকার্ক উদ্বাসন নিয়ে নির্মিত হয়েছে এই ছবি।
দ্য লংগেস্ট ডে
মিত্রশক্তির ফ্রান্সের নর্ম্যান্ডি বিচ দখল যা ডি-ডে নামে পরিচিত, সেটিই এই অস্কারজয়ী ছবির গল্প। মিত্রশক্তি ও অক্ষশক্তি, দুই পক্ষের দৃষ্টিকোণ থেকেই এখানে ডি-ডে কে তুলে ধরা হয়েছে।
সন অব সাউল
পোল্যান্ডের অসউইচ ছিল নাৎসি বাহিনীর সবচেয়ে বড় কনসেন্ট্রেশন ক্যাম্প। এখানের এক বন্দী শ্মশান থেকে এক বালকের মৃতদেহ নিয়ে আসে, তাকে যথাযথ নিয়ম মেনে সৎকার করার চেষ্টা চালায় সে। নৈতিকতা ও চেতনাবোধের চমৎকার সংমিশ্রণ দেখা যায় হাঙ্গেরিয়ান এই চলচ্চিত্রে।
ডাউনফল
দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের শেষ সময়টায় বার্লিনের বাঙ্কারে অ্যাডলফ হিটলারের জীবনের শেষ দিনগুলো তুলে ধরা হয়েছে অস্কার মনোনয়নপ্রাপ্ত এই ছবিতে।
দ্য ডার্টি ডজন
ডি-ডে বা নরম্যান্ডি আক্রমণের দিন একদল অপরাধী একজোট হয় একটি আত্মঘাতী মিশনের জন্য।
জোজো র্যাবিট
অ্যাডলফ হিটলারের চরিত্রে নিজেকে বসানোর সাহস খুব কম কমেডিয়ানেরই আছে। কিন্তু তাইকা ওয়েতিতির এই স্যাটায়ারিক্যাল ছবিতে একেবারেই অল্পবয়সী এক বালকের দৃষ্টিভঙ্গি থেকে যুদ্ধকে দেখানো হয়েছে, যে কিনা হিটলারের ইউথ বাহিনীর সদস্য। কিন্তু যুদ্ধের বাস্তবতা তার শৈশবের নির্মলতাকে নষ্ট করে দেয়; কিন্তু তবুও সে বাচে এবং বন্ধুত্বপূর্ণ সম্পর্ক গড়ে তোলে তারই বাড়িতে আশ্রয় নেওয়া এক ইহুদি কিশোরীর সাথে।