অফিস চলাকালীন ফেসবুক পরিহার করতে হবে বিচারকদের: সুপ্রিমকোর্ট
নিম্ন আদালতের বিচারকসহ বিচার বিভাগীয় সকল কর্মকর্তাদের জন্য সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম ফেসবুক ব্যবহারের ক্ষেত্রে বেশ কিছু নিয়ম অনুসরণের নির্দেশনামা জারি করেছেন সুপ্রিমকোর্ট প্রশাসন।
রোববার (২২ সেপ্টেম্বর) এই নির্দেশনাটি জারি করা হয় বলে দ্য বিজনেস স্ট্যান্ডার্ডকে নিশ্চিত করেছেন সুপ্রিম কোর্টের হাইকোর্ট বিভাগের বিশেষ কর্মকর্তা মোহাম্মদ সাইফুর রহমান।
নির্দেশনায় বিচারিক কর্মঘণ্টার পূর্ণ ব্যবহারের লক্ষ্যে অফিস চলাকালীন অর্থাৎ সকাল সাড়ে নয়টা থেকে বিকেল সাড়ে চারটা পর্যন্ত সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে বিচার বিভাগীয় সকল কর্মকর্তাদের উপস্থিতি কঠোরভাবে পরিহার করতে বলা হয়েছে।
নির্দেশনায় বলা হয়েছে, এসব নির্দেশনা না মানলে তা অসদাচরণ হিসেবে গণ্য হবে এবং এক্ষেত্রে বাংলাদেশ জুডিশিয়াল সার্ভিস (শৃঙ্খলা) বিধিমালা-২০১৭ এর পাশাপাশি প্রচলিত আইন ও বিধি-বিধান প্রযোজ্য হবে।
এছাড়া সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম ব্যবহারের ক্ষেত্রে বিচার বিভাগীয় কর্মকর্তাদের ১১ টি বিষয় পরিহার এবং ৮ টি বিষয় অনুসরণ করতে বলা হয়েছে।
নির্দেশনামায় যে ১১টি বিষয় অবশ্যই পরিহার করতে বলা হয়েছে:
ক. জাতীয় ঐক্য ও চেতনার পরিপন্থী কোনো প্রকার তথ্য, মন্তব্য ও অনুভূতি প্রকাশ ও প্রচার।
খ. কোনো সম্প্রদায়ের ধর্মীয় অনুভূতিতে আঘাত লাগতে পারে এমন কোনো তথ্য,মন্তব্য বা অনুভূতি প্রকাশ ও প্রচার।
গ. রাজনৈতিক মতাদর্শ বা আলোচনা সংশ্লিষ্ট কোনো তথ্য, মন্তব্য বা অনুভূতি প্রকাশ ও প্রচার।
ঘ. কোনো সম্প্রদায়ের প্রতি বৈষম্যমূলক বা হেয় প্রতিপন্নমূলক কোনো তথ্য, মন্তব্য বা অনুভূতি প্রকাশ ও প্রচার।
ঙ. কোনো ব্যক্তি, প্রতিষ্ঠান বা রাষ্ট্রকে হেয়প্রতিপন্ন করে এমন কোনো তথ্য, মন্তব্য বা অনুভূতি প্রকাশ ও প্রচার।
চ.লিঙ্গ বৈষম্যমূলক কোনো তথ্য, মন্তব্য বা অনুভূতি প্রকাশ ও প্রচার।
ছ. জনমনে অসন্তোষ ও অপ্রীতিকর মনোভব সৃষ্টি করতে পারে এমন কোনো তথ্য, মন্তব্য বা অনুভূতি প্রচার ও প্রকাশ।
জ. কোনো মামলা সংক্রান্তে বিরূপ মন্তব্য বা ব্যক্তিগত অনুভূতি প্রকাশ বা প্রচার।
ঝ. নিয়ন্ত্রণকারী কর্তৃপক্ষ বা উপযুক্ত কর্তৃপক্ষের কোনো সিদ্ধান্তের বিষয়ে কোনো বিরূপ মন্তব্য বা ব্যক্তিগত অনুভূতি প্রকাশ বা প্রচার।
ঞ. বাংলাদেশ সুপ্রিম কোর্টের মাননীয় বিচারপতিদের ছবি বা ভিডিও ক্লিপ প্রকাশ ও প্রচার।
ট. অপ্রাসঙ্গিক, অপ্রয়োজনীয়, মানহানিকর এবং নৈতিকতা পরিপন্থী কোনো স্ট্যাটাস, পোস্ট, লিংক, ছবি ইত্যাদিতে অন্যজনকে সংযুক্তরণ(ট্যাগিং), আদান-প্রদান(শেয়ারিং), প্রকাশ ও প্রচার।
নির্দেশনামায় যে ৮টি বিষয় অনুসরণ করতে বলা হয়েছে:
ক. প্রকাশিতব্য লেখা, ছবি, অডিও, ভিডিও ইত্যাদি নির্বাচন ও বাছাইয়ের ক্ষেত্রে সতর্ক থাকতে হবে।
খ.প্রকাশিত তথ্য-উপাত্তের যথার্থতা ও নির্ভরযোগ্যতা সম্পর্কে নিশ্চিত হতে হবে।
গ. ব্যক্তিগত ও পারিবারিক তথ্য আদান-প্রদান, প্রকাশ ও প্রচারের ক্ষেত্রে অবশ্যই সতর্কতা এবং বিচারকসুলভ মনোভব অবলম্বন করতে হবে।
ঘ. অপ্রয়োজনীয় বা গুরুত্বহীন বিষয়ে তথ্য, স্ট্যাটাস বা পোস্ট দেওয়া যাবে না।
ঙ. বিচার বিভাগীয় কর্মকর্তাদের জন্য একটি পোর্টাল/ গ্রুপ থাকতে পারে,যেখানে বিচারাধীন মামলার বিষয় এবং ব্যক্তিগত বিষয় ব্যতীত কেবল আইনগত বিষয়ে অ্যাকাডেমিক আলোচনা ও তথ্য আদান-প্রদান করা যাবে।
চ.সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম ব্যবহারের ক্ষেত্রে দায়িত্বশীল ও বিচারকসুলভ আচরণ করতে হবে এবং রাষ্ট্রীয় অনুশাসন মেনে চলতে হবে।
ছ. সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে কোনো তথ্য আদান-প্রদান ও বন্ধু নির্বাচনের ক্ষেত্রে সর্বোচ্চ সতর্কতা অবলম্বন করতে হবে। নিজ কর্মক্ষেত্রে মামলার স্বার্থ সংশ্লিষ্ট বা মামলা পরিচালনার সঙ্গে জড়িত কোনো ব্যক্তি বা প্রতিষ্ঠানকে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমের ব্যক্তিগত অ্যাকাউন্টে বন্ধু হিসেবে গ্রহণ করা যাবে না।
জ. বাস্তব ও স্বাভাবিক অবস্থায় সহকর্মীদের সাথে মিথস্ক্রিয়া সংক্রান্ত নিয়ম-নীতি,করণীয় ও বর্জনীয় দিকসমূহের প্রতিফলন সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমেও নিশ্চিত করতে হবে।