অর্থের বিনিময়ে যুবলীগের পদ বিক্রি করতেন সম্রাট
অন্ধকার জগতের গডফাদারদের সুপারিশে যুবলীগের পাঁচটি পদ বিক্রি করেছেন বলে স্বীকারোক্তি দিয়েছেন ক্যাসিনো-সম্রাট ইসমাইল হোসেন চৌধুরী সম্রাট।
নির্ভরযোগ্য সূত্রে জানা যায়, জিজ্ঞাসাবাদে সম্রাট নানা ধরনের অবৈধ কর্মকাণ্ডে নিজের জড়িত থাকার বিষয়ে গুরুত্বপূর্ণ তথ্য দিয়েছেন। ক্যাসিনো ব্যবসা, দলীয় পদ বিক্রি, চাঁদাবাজি, ভূমিদখল এবং সন্ত্রাসীদের মদদ দেবার বিষয়ে তার কাছ থেকে তথ্য পাওয়া গেছে।
মঙ্গলবার অস্ত্র আইন এবং মাদকদ্রব্য নিয়ন্ত্রণ আইনের অধীনে দুটো আলাদা মামলায় সম্রাটকে ১০ দিনের রিমান্ডের আদেশ দেন ঢাকার এক আদালত।একই দিনে ঢাকা মহানগর পুলিশের গোয়েন্দা শাখার জিম্মা থেকে র্যাব সম্রাটকে তাদের হেফাজতে নিয়ে যায়।
সম্রাট যাদের কাছে যুবলীগের পদগুলো বিক্রি করেছিলেন তারা হলেন, খালেদ মাহমুদ ভুঁইয়া, শরহাদ হোসেইন স্বপন, এনামুল হক আরমান, তারেক এবং মিল্কি। তার অন্ধকার জগতের গডফাদার হলেন, জিশান, মানিক, মুরাদ ও পলাশ ওরফে কাইল্যা পলাশ।
ঢাকা মহানগর দক্ষিণ যুবলীগের এই সাবেক প্রেসিডেন্ট এসব লেনদেন থেকে বিশাল অংকের অর্থ পকেটে পোরার কথা স্বীকার করেছেন।
সূত্র আরও জানায়, গডফাদার জিশান ও নাদিম সম্রাটের সাহায্যেই যুবলীগে খালেদ মা্হমুদ ভুঁইয়া ও শরহাদ হোসেন স্বপনকে অন্তর্ভুক্ত করিয়েছেন।
সম্রাট খালেদকে ঢাকা মহানগর দক্ষিণ যুবলীগের সাংগঠনিক সম্পাদক বানিয়েছেন। শরহাদকেও সহ-সভাপতি পদ বাগিয়ে দিতে সম্রাটের সমর্থন ছিল।
ওদিকে, গডফাদার কাইল্যা পলাশের সুপারিশে এনামুল হক আরমানকে যুবলীগের একই শাখায় সহ-সভাপতির পদ দেবার ব্যবস্থা করেন ক্যাসিনো-সম্রাট।
রেজাউল হক মিল্কি ও জাহিদ সিদ্দিকী তারেকও সম্রাটের প্রভাবে যুবলীগে ঢুকতে পেরেছিলেন।২০১৩ সালে গুলশানে এক সন্ত্রাসী হামলায় খুন হন মিল্কি। একই বছর র্যাবের সঙ্গে কথিত বন্দুকযুদ্ধে মারা যান তারেক।
আরও জানা গেছে, মালয়েশিয়ার রাজধানী কুয়ালালামপুরে বিলাসবহুল এপার্টমেন্ট রয়েছে সম্রাটের। সেখানে ২ কোটি টাকায় একটি রাবার বাগানও কিনেছেন তিনি। তাছাড়া বিভিন্ন দেশে অনেক টাকা পাচার করেছেন সম্রাট।
পুলিশের গোয়েন্দা সংস্থায় সম্রাটের বিষয়ে তদন্ত চলাকালীন র্যাপিড অ্যাকশন ব্যাটালিয়ন স্বরাষ্ট মন্ত্রণালয়ের কাছে আবেদন করলে বুধবার তাদের হাতে তদন্তভার দেওয়া হয়। র্যাবের লিগ্যাল এন্ড মিডিয়া উইংয়ের ডিরেক্টর লেফটেন্যান্ট কর্নেল সারওয়ার বিন কাশেম তথ্যটি নিশ্চিত করেছেন। তিনি আরও জানান, র্যাব-১ তদন্তটি পরিচালনা করছে।
উল্লেখ্য, ৬ অক্টোবর র্যাবের একটি দল সম্রাটকে তার প্রধান সহযোগী এনামুল হক আরমানসহ কুমিল্লার চৌদ্দগ্রাম সীমান্তের একটি বাড়ি থেকে আটক করে।
অবৈধ ক্যাসিনো ব্যবসার বিরুদ্ধে র্যাবের চালানো সাম্প্রতিক অভিযানের পরই ঢাকা মহানগর দক্ষিণ যুবলীগের সাবেক এই সভাপতি দেশজুড়ে আলোচনায় আসেন। তাকে গ্রেপ্তারের পর যুবলীগ থেকে বহিষ্কার করা হয়।
গ্রেপ্তারের পর সম্রাটকে ঢাকায় এনে তাকে সঙ্গে নিয়ে তার বাসা ও অফিসসহ কয়েক জায়গায় তল্লাশি চালানো হয়।