আন্তর্জাতিক আর্থিক প্রতারক চক্রের দুইজন গ্রেপ্তার
বিপুল পরিমাণ বৈদেশিক মুদ্রা আত্মসাৎ ও অবৈধভাবে লেনদেনের অভিযোগে আন্তর্জাতিক আর্থিক জালিয়াত চক্রের ২ সদস্যকে গ্রেফতার করেছে ঢাকা মেট্রোপলিটন পুলিশের (ডিএমপি) কাউন্টার টেরোরিজম অ্যান্ড ট্রান্সন্যাশনাল ইউনিট (সিটিটিসি)। ডিএমপির বিশেষায়িত এই ইউনিটের কর্মকর্তাদের মতে, চক্রটি এরই মধ্যে ১৫ হাজার মার্কিন ডলার বা প্রায় ১৩ লাখ টাকা সরিয়ে নিয়েছে, তবে তাদের প্রকৃত লেনদেনের তথ্য জানতে আরো সময় লাগবে।
সিটিটিসি'র হাতে গ্রেফতার হওয়া চক্রটির সদস্যরা হলেন--মো. জিয়াউল হক ও মো. সাজিদ হাসান সেতু ।
গতকাল মঙ্গলবার (১০ নভেম্বর) বিশেষ অভিযান পরিচালনা করে সিরাজগঞ্জ জেলা থেকে তাদেরকে গ্রেফতার করে সাইবার ক্রাইম ইনভেস্টিগেশন বিভাগের একটি টিম।
সাইবার ক্রাইম ইনভেস্টিগেশন বিভাগের উপ-কমিশনার আফম আল কিবরিয়া দ্য বিজনেস স্ট্যান্ডার্ডকে জানান, গ্রেপ্তারকৃতদের বিরুদ্ধে একটি বিদেশি বিনিয়োগ পরামর্শক প্রতিষ্ঠানে প্রতারণার মাধ্যমে বিপুল পরিমাণ বৈদেশিক মুদ্রা আত্মসাৎ ও অবৈধ লেনদেনের অভিযোগ পেয়েছেন তারা।
প্রতিষ্ঠানটিতে একাউন্ট খোলার প্রক্রিয়ার অংশ হিসেবে ব্যক্তিগত তথ্য প্রদানের পাশাপাশি ব্যাংক হিসাবের তথ্যও দিতে হয়। একাউন্ট ভেরিফিকেশনের অংশ হিসেবে প্রতিটি নতুন রেজিস্ট্রেশনকৃত একাউন্টের বিপরীতে অনধিক ১ ডলারের সমপরিমাণ অর্থ সংযুক্ত ব্যাংক হিসাবে সাময়িকভাবে দিয়ে থাকে প্রতিষ্ঠানটি। ভেরিফিকেশন প্রক্রিয়া সম্পন্ন হলে এই অর্থ ২-৩ দিনের মধ্যেই ওই প্রতিষ্ঠানের হিসাবে ফেরত চলে যায়।
প্রতিষ্ঠানটির এই একাউন্ট সুনিশ্চিত করার প্রক্রিয়ার সুযোগ নিত প্রতারকরা। তারা প্রথমে বিভিন্ন সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে দেশি-বিদেশি প্রতারক চক্রের কাছ থেকে পারফেক্ট মানি, ওয়েব মানি, পেওনিয়ার ইত্যাদি পরিষেবার মাধ্যমে ভুয়া নাম-ঠিকানা সম্বলিত সোশ্যাল সিকিউরিটি নম্বর ও বিদেশি ব্যাংকের বেনামে তৈরি করা একাউন্ট কিনত। অনলাইন থেকে কেনা এই তথ্যগুলো কাজে লাগিয়ে তারা প্রতিটি ব্যাংক একাউন্টের বিপরীতে উক্ত বিনিয়োগ পরামর্শক প্রতিষ্ঠানটিতে ৩০০/৪০০টি ভুয়া একাউন্ট তৈরি করত।
একাউন্ট ভেরিফিকেশনের অর্থ একসাথে নির্দিষ্ট ব্যাংক হিসাবে জমা হলে, চক্রটি সংশ্লিষ্ট প্রতিষ্ঠানে ফেরত যাবার পূর্বেই এসব অর্থ সরিয়ে নিতঅন্য একটি ব্যাংক হিসাবে। এ প্রক্রিয়া সম্পন্ন করতে তারা মূলত গোটুব্যাংক, চাইম ব্যাংক ইত্যাদি আন্তর্জাতিক মোবাইল ব্যাংকিং প্লাটফর্ম ব্যবহার করত।
অসংখ্য ভুয়া একাউন্ট তৈরি করে হাজার হাজার মার্কিন ডলার প্রতারণার মাধ্যমে আত্মসাৎ করার কথা গ্রেপ্তারকৃতরা প্রাথমিকভাবে স্বীকার করেছে।
পুলিশের এ কর্মকর্তা টিবিএস'কে বলেন, তারা আদালতের মাধ্যমে চক্রের সদস্যদের ব্যাংক লেনদেনের তথ্য জানতে বাংলাদেশ ফিন্যান্সিয়াল ইন্টলিজেন্স ইউনিটকে চিঠি দেবেন। 'বিএফআইইউ'র তথ্য পাওয়া গেলে প্রকৃত লেনদেন ও আত্মসাৎ করা অর্থের পরিমাণ জানা যাবে'- বলেও উল্লেখ করেন তিনি।
তিনি আরও বলেছেন, ফ্রিল্যান্সাররা যারা নিজেদের দক্ষতার বিদেশ থেকে অর্থ আয় করছেন, তারা এই ধরনের প্রতারণার বড় ঝুঁকিতে থাকেন। ফ্রিল্যান্সিং সেক্টরে কাজ করা তরুণরা সহজেই এসব মাধ্যমে অপরাধপ্রবণ হতে পারেন কিংবা ফাঁদে পা দিতে পারেন। এসব বিষয়ে তাদের আরো সতর্ক হওয়ার অনুরোধ করছি।