করোনার ক্ষতি পোষাতে “সবাই” এখন পশু ব্যবসায়ী
চট্টগ্রাম নগরের ব্যস্ততম বহদ্দারহাট এলাকার 'শাহ আমানত ঝাল বিতান এন্ড ভাতঘর"। সারাবছর এই দোকানে বিভিন্ন ধরনের খাবার বিক্রি করা হলেও এখন সেখানে বিক্রি হচ্ছে কোরবানির গরু। সব আসবাব সরিয়ে দোকানের ভেতরেই বিক্রির জন্য বেঁধে বাখা হয়েছে চারটি ষাঁড়।
দোকান মালিক ইদ্রিস মিয়া দ্য বিজনেস স্ট্যান্ডার্ডকে বলেন, "২০ বছর ধরে খাবারের দোকান করছিলাম। কিন্তু গত বছর করোনা মহামারি শুরুর পর থেকে ব্যবসার অবস্থা ভালো যাচ্ছে না। কিছুদিন পরপর সরকারি নির্দেশনার কারণে দোকান বন্ধ রাখতে হয়। তাই নিরুপায় হয়ে ক্ষতি পোষাতে এবার সব পুঁজি দিয়ে গরু বিক্রিতে নেমেছি।"
শুধু ইদ্রিস মিয়া নন। করোনায় ক্ষতিগ্রস্ত ব্যবসায়ী, দেশে আটকে যাওয়া প্রবাসী, চাকরি হারিয়ে বেকার, একমনকি শিক্ষার্থীদের অনেকেই কুরবানি উপলক্ষে মৌসুমি পশু ব্যবসায় নেমেছেন। অনেকেই হাঁট থেকে পশু কিনে তা আবার অনলাইনে বিক্রির চেষ্টা করছেন। একারণে চট্টগ্রামের পশুর হাটের পেশাদার ব্যবসায়ীরা ভালো দাম পাচ্ছেন না বলেও অভিযোগ করেছেন।
বিজিএমইএ এর সহ সভাপতি ও আর ডি এম গ্রুপের চেয়ারম্যান রাকিবুল আলম চৌধুরী দ্য বিজনেস স্ট্যান্ডার্ডকে বলেন, "করোনা মহামারিতে সারাদেশে ব্যবসা যখন বিপর্যস্ত তখন নিজের অনিশ্চিত ভবিষ্যৎ নিয়ে ভাবতাম। একদিন হঠাৎ চিন্তায় এলো, ছোট্ট একটা খামার করার। সে চিন্তা থেকেই এবার ইদুল আযহা উপলক্ষে ৮৮ টি গরু মোটাতাজা করেছিলাম, ইতোমধ্যে ৪৫ টি বিক্রি করতে পেরেছি। আশা করছি আগামী দুইদিনে বাকি গরুগুলোও বিক্রি হয়ে যাবে।"
রোববার নগরের ঐতিহ্যবাহী পশুর বাজার বিবির হাটে কথা হয় ওমান প্রবাসী সোহাইল শরীফের সঙ্গে। তিনি জানান, করোনা পরিস্থিতিতে ওমান সরকারের নিষেধাজ্ঞার কারণে সে দেশে যাওয়া যাচ্ছেনা। কিন্তু দেশে কোনো আয়-রোজগারের ব্যবস্থা না থাকায় পরিবার চালাতে হিমশিম খাচ্ছেন।
সোহাইল বলেন, "আমার চার লাখ টাকা ছিলো, আরও দুই বন্ধুকে নিয়ে নাটোর থেকে ১২ লাখ টাকা খরচ করে ৯টি ষাঁড় এনেছি। গতকাল বিকেল পর্যন্ত ৫টি গরু বিক্রির পর ৮ লাখ টাকা উঠে এসেছে। আশা করছি বাকি গরু গুলো কেনা দামে বিক্রি করলেও খরচ বাদ দিয়ে তিনজনের ৩০ হাজার টাকা করে লাভ থাকবে।"
এদিকে করোনাকালে চট্টগ্রামে বেশ জমে উঠেছে অনলাইনে পশু কেনাকাটা। প্রাণিসম্পদ অধিদপ্তরের তথ্য অনুযায়ী, চট্টগ্রাম বিভাগে গত ১৬ জুলাই পর্যন্ত অনলাইনে ৯৮১ কোটি ৬৮ লাখ ৯১ হাজার টাকার পশু বিক্রি হয়েছে। এই সময়ে চট্টগ্রাম সহ ৮ বিভাগে পশু বিক্রি হয়েছে ১৮৩২ কোটি ৯৭ লাখ ৮৩ হাজার ২৫৭ টাকার পশু।
চট্টগ্রামে অনলাইনে পশু বিক্রির ক্ষেত্রে এগিয়ে আছেন তরুণ খামারি ও শিক্ষার্থীরা। নাহার অ্যাগ্রো গ্রুপের সহকারি ব্যবস্থাপক সোহেল রানা জানান, কোরবানি উপলক্ষে তাদেরদের ৪৫০ টি গরু প্রস্তুত করা হয়। শুক্রবার পর্যন্ত ১৮৭ টি গরু বিক্রি হয়েছে। অধিকাংশ ক্রেতারাই অনলাইনে পছন্দ করে পরে এসে গরু নিয়ে যাচ্ছেন।
মুরাদপুর আখতারুজ্জামান ফ্লাইওভারের নিচে দুটি গরু নিয়ে অপেক্ষা করছিলেন সাতকানিয়ার কৃষক জিয়াবুল ইসলাম। তিনি বলেন, "এলাকা থেকে দুটি গরু কিনে বিবিরহাট বাজারে এসেছিলাম কিছু লাভের আশায়। কিন্তু ইজারাদারেরা হাটে প্রবেশের অনুমতি দেননি। তাই এখানেই গরু গুলো বিক্রির চেষ্টা করছি।"
বিবিরহাট পশু বাজার ইজারাদার আরিফ চৌধুরী বলেন, "বিরাট অংকের টাকা দিয়ে হাঁট ইজারা নিয়েছি। কিন্তু এবছর মৌসুমি বিক্রেতার সংখ্যা বেশি হওয়ায় তারা কম দামেই গরু ছেড়ে দিচ্ছে। এতে আমরা ভালো হাসিল পাচ্ছিনা। এবার ইজারার টাকা উঠে আসবে কিনা তা নিয়ে দুশ্চিন্তায় আছি।"
চট্টগ্রাম বিভাগীয় প্রাণিসম্পদ দপ্তরের পরিচালক (ভারপ্রাপ্ত) ডা. মো. আশরাফুল আলম খান দ্যা বিজনেস স্ট্যান্ডার্ডকে বলেন, "অন্যবারের তুলনায় এবার হাঁটের বাইরে পশু বিক্রির পরিমান বেড়েছে। বিশেষ করে প্রায় পাঁচ হাজারের কাছাকাছি মৌসুমি ব্যবসায়ী এবার বাজারে ঢুকে পরেছেন, যারা অনলাইনে এবং শহরের অলিতে গলিতে পশু বিক্রি করছেন। করোনা ঝুঁকি ও হাসিল এড়াতে ক্রেতারাও বাজারের বাইরে থেকে পশু কিনতে অভ্যস্ত হয়ে উঠছেন।"