করোনায় আরও ২ জনের মৃত্যু, নতুন শনাক্ত ২৬৪
করোনাভাইরাসে আক্রান্ত হয়ে গত ২৪ ঘণ্টায় দেশে ২ জনের মৃত্যু হয়েছে। প্রাণঘাতি ভাইরাসটির কারণে চলতি বছরের জুলাই-আগস্ট দুইমাস টানা শতাধিক মৃত্যু হলেও সেপ্টেম্বর মাসের শুরু থেকে তা অনেকটাই কমেছে। একই সময়ে সংক্রমণ নেমে এসেছে ২ শতাংশের নিচে।
প্রখ্যাত ভাইরোলজিস্ট ও বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয়ের সাবেক উপাচার্য অধ্যাপক ডা. নজরুল ইসলাম দ্য বিজনেস স্ট্যান্ডার্ডকে বলেছেন, পরপর দুই সপ্তাহ করোনা সংক্রমণের হার ৫ শতাংশের নিচে থাকলে করোনা পরিস্থিতি 'নিয়ন্ত্রণে' আছে বলে বিবেচনা করা যায়। তবে এই সময়েও স্বাস্থ্যবিধি মানতে হবে সবাইকে।
গত ৫ সপ্তাহ থেকেই সংক্রমণ হার ২ শতাংশের নিচে রয়েছে।
গত এক বছরেরও বেশি সময়জুড়ে মারাত্মক সংক্রামক এই ভাইরাসটিতে আক্রান্ত হয়ে মৃত্যুর সংখ্যা সাড়ে ২৭ হাজার ছাড়িয়েছে। এ পর্যন্ত দেশে ২৭ হাজার ৯৫৫ জনের মৃত্যু হয়েছে কোভিডজনিত কারণে।
গত এক বছরে দেশে যতো মানুষ করোনাভাইরাসে শনাক্ত হয়েছেন তাদের মধ্যে ১ দশমিক ৭৮ শতাংশের মৃত্যু হয়েছে এই রোগে।
মারাত্মক সংক্রামক এই ভাইরাসটি গত ২৪ ঘণ্টায় শনাক্ত হয়েছে দেশের আরও ২৬৪ জনের দেহে। এর আগে গত ২৮ জুলাই একদিনে সর্বোচ্চ ১৬ হাজার ২৩০ জনের দেহে করোনাভাইরাসের উপস্থিতি শনাক্ত করা হয়েছিল।
মহামারি শুরুর পর থেকে সব মিলিয়ে এই শনাক্তের সংখ্যা পৌঁছেছে ১৫ লাখ ৭৪ হাজার ৩৫২ জনে। গত বছর থেকে দুইটি আলাদা ওয়েভে দেশে করোনার উচ্চ সংক্রমণ দেখা গেলেও চলতি বছরের জুনের প্রথমার্ধ থেকেই করোনা শনাক্তের পরিমাণ ব্যাপকহারে বাড়তে শুরু করে। তবে বর্তমানে শনাক্তের সংখ্যা অনেকটাই কমেছে।
গত দুই মাসে উল্লেখযোগ্য হারে কমতে কমতে বর্তমানে করোনার সংক্রমণ ২ শতাংশের নিচে নেমে এসেছে। গত ২৪ ঘণ্টায় ১৮ হাজার ৬১৪টি কোভিড পরীক্ষার বিপরীতে করোনা সংক্রমণ ধরা পড়েছে শতকরা ১ দশমিক ৪২ জনের মধ্যে।
সরকারের রোগতত্ত্ব, রোগ নিয়ন্ত্রণ ও গবেষণা ইনস্টিটিউট-আইইডিসিআর এর মতে, কোনো এলাকায় করোনাভাইরাসের সংক্রমণ হার ১০ শতাংশের বেশি হলে সেটিকে 'উচ্চ ঝুঁকিপূর্ণ', ৫-১০ শতাংশের মধ্যে হলে 'মাঝারি ঝুঁকিপূর্ণ' এবং ৫ শতাংশের নিচে হলে 'স্বল্প ঝুঁকিপূর্ণ' হিসেবে বিবেচনা করা হয়।
সোমবার (২২ নভেম্বর) সরকারের স্বাস্থ্য অধিদপ্তর থেকে করোনাভাইরাস বিষয়ে পাঠানো নিয়মিত সংবাদ বিজ্ঞপ্তি থেকে এসব তথ্য জানা গেছে।
ওই বিজ্ঞপ্তিতে জানানো হয়, গত দেড় বছরে মোট ১ কোটি ৭ লাখ ৪২ হাজার ৪১১টি নমুনা পরীক্ষার বিবেচনায় সংক্রমণের হার ১৪ দশমিক ৬৬ শতাংশ।
এদিকে স্বাস্থ্য অধিদপ্তর জানিয়েছে, গত ২৪ ঘণ্টায় যে ২ জনের মৃত্যু হয়েছে তাদের দুইজনই নারী ছিলেন।
অধিদপ্তরের পরিসংখ্যান বলছে, ভাইরাসটিতে আক্রান্ত হয়ে দেশে মারা যাওয়া ব্যক্তিদের মধ্যে পুরুষের সংখ্যা নারীদের প্রায় দ্বিগুণ।
ওই বিজ্ঞপ্তিতে জানানো হয়, গত ২৪ ঘণ্টায় ৩৩৯ জন কোভিড-১৯ থেকে সুস্থ হয়েছেন। এ নিয়ে দেশে মোট ১৫ লাখ ৩৮ হাজার ৫৩৭ জন সেরে উঠলেন প্রাণঘাতী এই ভাইরাস থেকে।
দেশে করোনাভাইরাস সংক্রমিত প্রথম রোগী শনাক্ত হয় গত বছরের ৮ মার্চ। এ ভাইরাসে আক্রান্ত হয়ে প্রথম মৃত্যুর ঘটনা ঘটে সে বছরের ১৮ মার্চ। চলতি সেপ্টেম্বরে রোগীর সংখ্যা বেড়ে ১৫ লাখ পেরিয়ে গেছে।
করোনাভাইরাস সংক্রান্ত যেকোনো তথ্যের জন্য একটি বিশেষ ওয়েবসাইট (www.corona.gov.bd) চালু রেখেছে সরকার।
ভাইরাসটির মোকাবিলায় ফেব্রুয়ারি থেকেই দেশজুড়ে টিকাদান কর্মসূচী শুরু করে সরকার। ভারতের সেরাম ইনস্টিটিউট থেকে আনা অক্সফোর্ড-অ্যাস্ট্রাজেনেকার ভ্যাকসিন দিয়ে এই কর্মসূচী শুরু হলেও ভারত ভ্যাকসিন রপ্তানিতে নিষেধাজ্ঞা দেওয়ায় এক দফায় কর্মসূচীটি অনেকটাই স্তিমিত হয়ে পড়ে। বর্তমানে চীন থেকে আনা সিনোভ্যাক ভ্যাকসিন এবং ভ্যাকসিন বিষয়ক আন্তর্জাতিক জোট গ্যাভির বিশ্বব্যাপী টিকাদান কার্যক্রম কোভ্যাক্সের মাধ্যমে পাওয়া ফাইজার ও মডার্না ও অ্যাস্ট্রাজেনেকার টিকার মাধ্যমে এ কর্মসূচি চলছে।