কোভিড-১৯: সংক্রমণ ঢাকার দিকে ধেয়ে আসছে
সীমান্তবর্তী জেলাগুলোর পাশাপাশি অন্য জেলাগুলোতেও করোনাভাইরাসের সংক্রমণ বাড়ছে। সংক্রমণ এখন ঢাকার দিকে ধেয়ে আসছে। আগামী সপ্তাহের মধ্যে ঢাকার সংক্রমণ পরিস্থিতি রাজশাহী-খুলনার মত হতে পারে বলে আশঙ্কা করছেন বিশেষজ্ঞরা।
স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের এক সপ্তাহের তথ্য বিশ্লেষণ করে দেখা যায়, ঢাকা জেলায় করোনা ভাইরাসে আক্রান্তের হার বাড়তির দিকে।
এক সপ্তাহ আগে ঢাকা জেলায় সংক্রমণ হার ৪% থাকলেও এখন এটি ১০% এর বেশি।
ঢাকার আশপাশের জেলাগুলোও এখন ঝুঁকিপূর্ণ হয়ে উঠছে। টাঙ্গাইলে ৩৬%, গাজীপুরে ২৫.৬৬% সংক্রমণ হার।
সরকারের জনস্বাস্থ্য বিশেষজ্ঞ উপদেষ্টা দলের সদস্য জনস্বাস্থ্য বিশেষজ্ঞ ডা. আবু জামিল ফয়সাল বলেন, 'করোনাভাইরাসের সংক্রমণ ঘূর্ণিঝড়ের মত ঢাকার দিকে ধেয়ে আসছে। করোনাভাইরাসের এই সংক্রমণ চেইন ভাঙতে না পারলে আগামী তিন-চার দিনের মধ্যে ঢাকার সংক্রমণ পরিস্থিতি খারাপ হতে পারে'।
করোনাভাইরাসে গত ২৪ ঘণ্টায় দেশে ৬৩ জনের মৃত্যু হয়েছে, নতুন করে ভাইরাসটি ধরা পড়েছে ৩ হাজার ৮৪০ জনের দেহে।
করোনায় আক্রান্ত হয়ে মৃত্যুর সংখ্যার গ্রাফ গত দেড় মাস ধরে ৩০ থেকে ৫০ এর ঘরে উঠানামা করছিল। তবে চলতি সপ্তাহ থেকে তা আবার বাড়তে শুরু করেছে। গত এক বছরে দেশে যত মানুষ করোনাভাইরাসে শনাক্ত হয়েছে তাদের মধ্যে ১ দশমিক ৫৯ শতাংশের মৃত্যু হয়েছে এই রোগে।
এর আগে ২৯ মে স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের জনস্বাস্থ্য কমিটি দেশের ঝুঁকিপূর্ণ জেলাগুলোতে লকডাউন দিতে সরকারের কাছে সুপারিশ করেছিল। এখন দেশের বিভিন্ন জেলায় লকডাউন রয়েছে তারপরও পরিস্থিতির উন্নতি হচ্ছে না।
কমিটির সদস্য ডা. আবু জামিল ফয়সাল বলেন, 'শুধু মুখে মুখে লকডাউন বললে হবে না। কাজ করতে হবে। কিন্তু বিভিন্ন মন্ত্রণালয়ের সমন্বয়ের অভাবে লকডাউন কাজে আসছেনা। বেশি বেশি টেস্ট করে রোগী শনাক্ত করে আইসোলেটেড করলে ভাইরাসের সংক্রমণ ঠেকানো যেত। কিন্তু তা করা হচ্ছে না। তাই সীমান্তবর্তী জেলাগুলো থেকে সংক্রমণ এখন ঢাকার দিকে আসছে'।
প্রথিতযশা ভাইরোলজিস্ট এবং বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয়ের (বিএসএমএমইউ) সাবেক উপাচার্য প্রফেসর ডা. নজরুল ইসলাম বলেন, 'সংক্রমণ পরিস্থিতি এখন খুবই খারাপ। এখন ঢাকার দিকে সংক্রমণ ছড়াচ্ছে। এখন শুধু যারা হাসপাতালে যাচ্ছে তাদেরই টেস্ট করা হচ্ছে ,সেবা পাচ্ছে। অনেক হাসপাতালে আইসিইউ, সেন্ট্রাল অক্সিজেন লাইন নেই। বেডের চেয়ে বেশি রোগী ভর্তি থাকছে। সংক্রমণ মোকাবেলায় কোন পদক্ষেপই নেয়া হয়নি। বাজেটে অর্থ বরাদ্দ দেয়া হলেও তা খরচ করা হচ্ছে না। এবারের ওয়েভ মোকাবেলা করা আরো কঠিন হবে'।
জুলাইয়ে গণটিকা কার্যক্রম পুনরায় শুরু হতে পারে
আগামী জুলাই মাস থেকে আবারও গণটিকা কার্যক্রম শুরু হতে পারে বলে আশা প্রকাশ করেছেন প্রধানমন্ত্রীর মুখ্য সচিব ড. আহমদ কায়কাউস।
বৃহস্পতিবার আশ্রয়ণ-২ প্রকল্পের বিষয়ে প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়ে আয়োজিত এক সংবাদ সম্মেলনে তিনি বলেন, 'আশা করছি আমরা জুলাই মাসে ব্যাপক আকারে টিকাদান কার্যক্রম পুনরায় চালু করতে সক্ষম হব।'
মুখ্য সচিব বলেন, সরকার ইতোমধ্যে কোভিড-১৯ টিকার বিষয়ে বেশ কয়েকটি দেশের সাথে কথা বলেছে। বাংলাদেশ স্থানীয়ভাবে ভ্যাকসিন তৈরির চেষ্টা করছে। আমরা আশা করি শিগগিরই ভ্যাকসিনগুলো পেয়ে যাব।'
ভ্যাকসিন সংগ্রহের জন্য ১৪ হাজার কোটি টাকার তহবিল বরাদ্দ করা হয়েছে উল্লেখ করে তিনি বলেন, 'প্রধানমন্ত্রী সব সময় বলেন যে বাংলাদেশকে বিনামূল্যে ভ্যাকসিন দেয়ার দরকার নেই, আমরা যেখানেই এইগুলো পাবো সেখান থেকেই কিনবো। আমরা অনেক অগ্রগতি করেছি।'
ড. আহমদ কায়কাউস বলেন, সরকার প্রথম থেকেই ভ্যাকসিন সংগ্রহের জন্য আন্তরিকভাবে কাজ করে যাচ্ছে। বাংলাদেশি কূটনীতিকরা মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র, যুক্তরাজ্য, ইউরোপ, চীন এবং অন্যান্য দেশের সাথে (কোভিড-১৯ টি ভ্যাকসিন সংগ্রহের জন্য) যোগাযোগ চালিয়ে যাচ্ছেন।