কোভিড-১৯: ২৪ ঘণ্টায় আরও ৭ মৃত্যু, শনাক্তের সংখ্যা আবারও বেড়ে ৪৬৯
করোনাভাইরাসে আক্রান্ত হয়ে গত ২৪ ঘণ্টায় বাংলাদেশে আরও সাত জনের মৃত্যু হয়েছে।
গত ২৪ ঘণ্টায় আগের সপ্তাহের তুলনায় আবারও বেড়েছে শনাক্তের সংখ্যা। মারাত্মক সংক্রামক এই ভাইরাসটি গত ২৪ ঘণ্টায় শনাক্ত হয়েছে দেশের আরও ৪৬৯ জনের দেহে। এর আগে গত ২৮ জুলাই একদিনে সর্বোচ্চ ১৬ হাজার ২৩০ জনের দেহে করোনাভাইরাসের উপস্থিতি শনাক্ত করা হয়েছিল।
প্রাণঘাতি এই ভাইরাসের কারণে জুলাই-আগস্ট দুইমাস টানা শতাধিক মৃত্যু হলেও সেপ্টেম্বর মাসের শুরু থেকে তা কমেছে। একই সময়ে সংক্রমণ কমে ৫ শতাংশের নিচে আসায় এ পরিস্থিতিকে 'স্বল্প ঝুঁকিপূর্ণ' বলছে সরকারের রোগতত্ত্ব, রোগ নিয়ন্ত্রণ ও গবেষণা ইনস্টিটিউট-আইইডিসিআর।
প্রখ্যাত ভাইরোলজিস্ট ও বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয়ের সাবেক উপাচার্য অধ্যাপক ডা. নজরুল ইসলাম দ্য বিজনেস স্ট্যান্ডার্ডকে বলেছেন, পরপর দুই সপ্তাহ করোনা সংক্রমণের হার ৫ শতাংশের নিচে থাকলে করোনা পরিস্থিতি 'নিয়ন্ত্রণে' আছে বলে বিবেচনা করা যায়। তবে এই সময়েও স্বাস্থ্যবিধি মানতে হবে সবাইকে।
তবে, গত ২৪ ঘণ্টায় শনাক্তের হার আবারও ২ শতাংশ ছাড়িয়েছে। গত গত ২৪ ঘণ্টায় ২১, হাজার ৩০৮টি কোভিড পরীক্ষার বিপরীতে করোনা সংক্রমণ ধরা পড়েছে শতকরা ২ দশমিক ২০ জনের মধ্যে। এর আগে, বিগত তিন দিনই শনাক্তের হার ২ শতাংশের নিচে ছিল।
গতকাল সোমবার ২৪ ঘণ্টায় কোভিডজনিত মৃত্যুর সংখ্যা ছিল ১০, শনাক্ত হয়েছিল ৩৩৯ জন।
গত এক বছরেরও বেশি সময়জুড়ে মারাত্মক সংক্রামক এই ভাইরাসটিতে আক্রান্ত হয়ে মৃত্যুর সংখ্যা ২৭ হাজার ছাড়িয়েছে। এ পর্যন্ত দেশে ২৭ হাজার ৭৮৫ জনের মৃত্যু হয়েছে কোভিডজনিত কারণে।
গত এক বছরে দেশে যতো মানুষ করোনাভাইরাসে শনাক্ত হয়েছেন তাদের মধ্যে ১ দশমিক ৭৭ শতাংশের মৃত্যু হয়েছে এই রোগে।
মহামারি শুরুর পর থেকে সব মিলিয়ে এই শনাক্তের সংখ্যা পৌঁছেছে ১৫ লাখ ৬৬ হাজার ২৯৬ জনে। গত বছর থেকে দুইটি আলাদা ওয়েভে দেশে করোনার উচ্চ সংক্রমণ দেখা গেলেও চলতি বছরের জুনের প্রথমার্ধ থেকেই করোনা শনাক্তের পরিমাণ ব্যাপকহারে বাড়তে শুরু করে। তবে বর্তমানে শনাক্তের সংখ্যা অনেকটাই কমেছে।
সরকারের রোগতত্ত্ব, রোগ নিয়ন্ত্রণ ও গবেষণা ইনস্টিটিউট-আইইডিসিআর এর মতে, কোনো এলাকায় করোনাভাইরাসের সংক্রমণ হার ১০ শতাংশের বেশি হলে সেটিকে 'উচ্চ ঝুঁকিপূর্ণ', ৫-১০ শতাংশের মধ্যে হলে 'মাঝারি ঝুঁকিপূর্ণ' এবং ৫ শতাংশের নিচে হলে 'স্বল্প ঝুঁকিপূর্ণ' হিসেবে বিবেচনা করা হয়।
মঙ্গলবার (১৯ অক্টোবর) সরকারের স্বাস্থ্য অধিদপ্তর থেকে করোনাভাইরাস বিষয়ে পাঠানো নিয়মিত সংবাদ বিজ্ঞপ্তি থেকে এসব তথ্য জানা গেছে।
স্বাস্থ্য অধিদপ্তর জানিয়েছে, গত ২৪ ঘণ্টায় যে ৭ জনের মৃত্যু হয়েছে তাদের মধ্যে পুরুষ ৩ জন ও নারী ৪ জন। অধিদপ্তরের পরিসংখ্যান বলছে, ভাইরাসটিতে আক্রান্ত হয়ে দেশে মারা যাওয়া ব্যক্তিদের মধ্যে পুরুষের সংখ্যা নারীদের প্রায় দ্বিগুণ।
ওই বিজ্ঞপ্তিতে জানানো হয়, গত দেড় বছরে মোট ১ কোটি ১ লাখ ৩৫ হাজার ৪২টি নমুনা পরীক্ষার বিবেচনায় সংক্রমণের হার ১৫ দশমিক ৪৫ শতাংশ।
ওই বিজ্ঞপ্তিতে জানানো হয়, গত ২৪ ঘণ্টায় ৬৯৭ জন কোভিড-১৯ থেকে সুস্থ হয়েছেন। এ নিয়ে দেশে মোট ১৫ লাখ ২৯ হাজার ৬৮ জন সেরে উঠলেন প্রাণঘাতী এই ভাইরাস থেকে।
দেশে করোনাভাইরাস সংক্রমিত প্রথম রোগী শনাক্ত হয় গত বছরের ৮ মার্চ। এ ভাইরাসে আক্রান্ত হয়ে প্রথম মৃত্যুর ঘটনা ঘটে সে বছরের ১৮ মার্চ। চলতি সেপ্টেম্বরে রোগীর সংখ্যা বেড়ে ১৫ লাখ পেরিয়ে গেছে।
করোনাভাইরাস সংক্রান্ত যেকোনো তথ্যের জন্য একটি বিশেষ ওয়েবসাইট (www.corona.gov.bd) চালু রেখেছে সরকার।
ভাইরাসটির মোকাবিলায় ফেব্রুয়ারি থেকেই দেশজুড়ে টিকাদান কর্মসূচি শুরু করে সরকার। ভারতের সেরাম ইনস্টিটিউট থেকে আনা অক্সফোর্ড-অ্যাস্ট্রাজেনেকার ভ্যাকসিন দিয়ে এই কর্মসূচী শুরু হলেও ভারত ভ্যাকসিন রপ্তানিতে নিষেধাজ্ঞা দেওয়ায় এই কর্মসূচী অনেকটাই স্তিমিত হয়ে পড়ে। বর্তমানে চীন থেকে আনা সিনোভ্যাক ভ্যাকসিন এবং ভ্যাকসিন বিষয়ক আন্তর্জাতিক জোট গ্যাভির বিশ্বব্যাপী টিকাদান কার্যক্রম কোভ্যাক্সের মাধ্যমে পাওয়া ফাইজার ও মডার্না ও অ্যাস্ট্রাজেনেকার টিকার মাধ্যমে এ কর্মসূচি চলছে।