ক্যাসিনোর হোতারা পাচার করেছে ১১৬৯ কোটি টাকা: সিআইডি
ক্যাসিনোকাণ্ডে জড়িত যুবলীগের সাবেক নেতা ইসমাইল হোসেন চৌধুরী সম্রাট, খালিদ মাহমুদ ভুঁইয়া ও এনামুল হক আরমানসহ ১৬ ব্যক্তি বিদেশে প্রায় ১ হাজার ১৬৯ কোটি ৩০ লাখ টাকা অবৈধভাবে পাচার করেছে বলে হাইকোর্টকে জানিয়েছে পুলিশের অপরাধ তদন্ত বিভাগ (সিআইডি)।
রোববার হাইকোর্টের সংশ্লিষ্ট শাখায় এই তথ্য সম্বলিত প্রতিবেদন দাখিল করেছেন সিআইডির বিশেষ পুলিশ সুপার (ফাইন্যানসিয়াল ক্রাইম) মো. হুমায়ুন কবির। প্রতিবেদনে বলা হয়, দায়ের হওয়া ৮টি মামলার সঙ্গে এসব পাচার হওয়া অর্থ জড়িত। মামলাগুলো ২০১৯ ও ২০২০ সালে দায়ের হয়েছে।
সিআইডি বলেছে, পাচার হওয়া বিপুল পরিমাণ অর্থ উদ্ধারে কাজ করছে বাংলাদেশ ফাইন্যান্সিয়াল ইন্টেলিজেন্স ইউনিট (বিএফআইইউ)। পাচার হওয়া টাকাগুলোর মধ্যে প্রায় ৩৪ মিলিয়ন মার্কিন ডলার উদ্ধার করে দেশে ফেরত আনা হয়েছে। আর বাকিগুলো উদ্ধারের চেষ্টা করছে বিএফআইইউ।
প্রতিবেদনটির বিষয়ে ডেপুটি অ্যাটর্নি জেনারেল এ কে এম আমিন উদ্দিন মানিক বলেন, হাইকোর্টের নির্দেশে এই প্রতিদেনটি দাখিল করেছে সিআইডি। আগামী ২১ অক্টোবরের পর বিচারপতি মো. নজরুল ইসলাম তালুকদারের হাইকোর্ট বেঞ্চে এই প্রতিবেদন উপস্থাপন করা হবে। এ বিষয়ে শুনানি হওয়ার পর পরবর্তী নির্দেশনা দেবেন আদালত।
প্রতিবেদনে বলা হয়, ইসমাইল হোসেন চৌধুরী সম্রাট ও এনামুল হক আরমান ২৩২ কোটি ৩৭ লাখ ৫৩ হাজার ৬৯১ টাকা সিঙ্গাপুরে পাচার করেছে। যুবলীগের আরেক সাবেক নেতা খালিদ মাহমুদ ভুইয়াঁ ৮ কোটি ৮৩ লাখ ৬৮ হাজার ৬৯৬ টাকা সিঙ্গাপুর, থাইল্যান্ড ও মালেশিয়ায় পাচার করেছে। রাজিব হোসেন রানা ও জামাল ভাটারা নামের দুইজন ৮১ লাখ টাকা টাকা সিঙ্গাপুর পাচার করেছে। শরিফুল ইসলাম ও আওলাদ নামের দুইজন ৮৩ লাখ টাকা পাচার করেছে সিঙ্গাপুরে।
ঢাকা দক্ষিণ সিটির ৯ নম্বর ওয়ার্ডের সাবেক কাউন্সিলর মোমিনুল হক সাঈদ সিঙ্গাপুর ও মালেশিয়ায় ২৪ কোটি ৯৯ লাখ ৮২ হাজার ৩৫৯ টাকা পাচার করেছেন। শাহজাহান বাবলু নামের একজন ২ কোটি ১০ লাখ টাকা পাচার করেছে দুবাইয়ে। অজানা দুই ব্যক্তি ফিলিপাইন ও শ্রীলংকায় পাচার করেছে ৮৫৮ কোটি ৫০ লাখ টাকা। যার মধ্যে প্রায় ৩৪ মিলিয়ন ডলার উদ্ধার করে দেশে আনা হয়েছে। এছাড়াও চট্টগ্রামের ৫ ব্যক্তি দুবাইয়ে পাচার করেছে ৪০ কোটি ৮৫ লাখ ১০ হাজার টাকা।
জনস্বার্থে দায়ের করা এক রিটের প্রেক্ষিতে গত ২৭ ফেব্রুয়ারি বাংলাদেশি বিভিন্ন ব্যক্তি ও প্রতিষ্ঠান থেকে গোপনে সুইস ব্যাংকসহ বিভিন্ন বিদেশি ব্যাংকে কার কার টাকা আছে তার তালিকা চান হাইকোর্ট। একইসঙ্গে পাচার হওয়া টাকা ফেরত আনতে কী পদক্ষেপ নেওয়া হয়েছে তাও জানতে চাওয়া হয়েছে।
এছাড়া পানামা ও প্যারাডাইস পেপারে যাদের নাম এসেছে তাদের বিষয়ে তদন্ত করতে কেন নির্দেশ দেওয়া হবে না তা জানতে চেয়ে রুল জারি করা হয়েছে।
পাশাপাশি বিদেশে পাচার হওয়া টাকা ফেরত আনতে সংশ্লিষ্টদের নিষ্ক্রিয়তা কেন অবৈধ ঘোষণা করা হবে না তা জানতে চাওয়া হয়।
বিচারপতি মো. নজরুল ইসলাম তালুকদার ও বিচারপতি মহি উদ্দিন শামীমের হাইকোর্ট বেঞ্চ এ আদেশ দেন।
সুপ্রিম কোর্টের দুই আইনজীবী আব্দুল কাইয়ুম খান ও সুবীর নন্দী দাসের করা রিট আবেদনের ওপর শুনানি শেষে রবিবার এ আদেশ দেওয়া হয়।
আদালতে রিট আবেদনের পক্ষে আব্দুল কাইয়ুম খান নিজেই শুনানি করেন।
রিট আবেদনে প্রধানমন্ত্রী কার্যালয়ের সচিব, অ্যাটর্নি জেনারেল, অর্থ সচিব, বাণিজ্য সচিব, পররাষ্ট্র সচিব, স্বরাষ্ট্র সচিব, আইন সচিব, দুর্নীতি দমন কমিশন (দুদক), বাংলাদেশ ব্যাংকের গভর্নর ও পুলিশের মহাপরিদর্শকসহ ১৫ জনকে রুলের জবাব দিতে বলা হয়েছে।
সুইচ ব্যাংকে থাকা টাকার বিষয়ে দেশি বিদেশি বিভিন্ন সংবাদপত্রে প্রকাশিত প্রতিবেদন যুক্ত করে ওই রিট আবেদন করা হয়।