ক্লাসে যোগ দিতে বাধ্যতামূলকভাবে মাস্ক পরতে হবে
আগামী ১২ সেপ্টেম্বর থেকে প্রাথমিক-উচ্চ মাধ্যমিক পর্যায়ের ক্লাসে যোগ দেওয়ার জন্য বাধ্যতামূলকভাবে শিক্ষার্থীদের মাস্ক ব্যবহার এবং হাত ধুতে হবে। শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের একজন উচ্চপদস্থ কর্মকর্তা এ কথা জানিয়েছেন।
মাধ্যমিক ও উচ্চশিক্ষা অধিদপ্তরের মহাপরিচালক অধ্যাপক সৈয়দ গোলাম ফারুক দ্য বিজনেস স্ট্যান্ডার্ডকে বলেন, "শিক্ষক এবং শিক্ষার্থীদের মাস্ক ব্যবহার এবং হাত ধোয়া ছাড়া স্কুলে প্রবেশ করতে দেওয়া হবে না। ভাইরাস থেকে সুরক্ষার জন্য প্রয়োজনীয় নিয়মগুলো মানা হচ্ছে কি না তা কঠোরভাবে পর্যবেক্ষণ করব আমরা।"
তিনি আরো বলেন, "যদি কোনো স্কুলে করোনাভাইরাস স্বাস্থ্যবিধি লঙ্ঘন করা হয়, তাহলে আমরা সে স্কুল বন্ধ করে দেব, এবং এ বিষয়ে কঠোর ব্যবস্থা নেব।"
কোভিড-১৯ বিষয়ক জাতীয় কারিগরি পরামর্শক কমিটির (এনটিএসি) স্কুল পুনরায় খোলার সুপারিশের সাথে সামঞ্জস্য রেখে শিক্ষা মন্ত্রণালয় তাদের বিভাগীয়, জেলা এবং উপজেলা পর্যায়ের কর্মকর্তাদেরকে স্কুলগুলোতে ভাইরাস হতে সুরক্ষা ব্যবস্থা নিশ্চিতে কাজ করতে বলেছে।
এদিকে মাধ্যমিক ও উচ্চ শিক্ষা অধিদপ্তর এবং প্রাথমিক শিক্ষা অধিদপ্তরও শিক্ষকদের অনুরোধ করেছে যাতে তারা অভিভাবকদেরকে 'নো মাস্ক নো এন্ট্রি' বিষয়ে সতর্ক করে। তাছাড়া শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানগুলোকে আগে থেকেই কিছু মাস্ক মজুদ করে রাখার নির্দেশ দিয়েছে শিক্ষা মন্ত্রণালয়। এতে করে শিক্ষার্থীরা বাড়ি থেকে মাস্ক আনতে ভুলে গেলেও নিরাপদে ক্লাস করতে পারবে।
উল্লেখ্য, আগামী ১২ সেপ্টেম্বর থেকে দেশব্যাপী প্রাথমিক, মাধ্যমিক ও উচ্চ মাধ্যমিক শিক্ষা প্রতিষ্ঠানগুলো পুনরায় একযোগে চালু হবে বলে শুক্রবার চাঁদপুরে এক সভায় জানান শিক্ষামন্ত্রী ড. দীপু মনি।
এদিকে স্কুল পুনরায় খোলার বিষয় চূড়ান্ত করতে এবং স্কুলে সংক্রমণের ঝুঁকি কম রাখার বিষয়ে পরিকল্পনার জন্য রোববার শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের একটি বৈঠক অনুষ্ঠিত হবে। শিক্ষা মন্ত্রণালয়, প্রাথমিক ও গণশিক্ষা মন্ত্রণালয় এবং স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ের কারিগরি কমিটির সদস্যরা উপস্থিত থাকবেন এ বৈঠকে।
অধ্যাপক সৈয়দ গোলাম ফারুক জানান, "আমরা শিক্ষা প্রতিষ্ঠানগুলোতে ইতোমধ্যেই স্বাস্থ্য নির্দেশিকা পাঠিয়েছি, এবং রোববার বৈঠকের পর আমরা আরো একটি চিঠি পাঠাব।"
তিনি জানান, বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার (ডব্লিউএইচও) স্বাস্থ্য নির্দেশিকা এবং স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ের নির্দেশনা কঠোরভাবে অনুসরণ করবে সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষ। তিনি আরো বলেন, শুক্রবার মানিকগঞ্জ জেলার দশটি স্কুল পরিদর্শন করে তিনি সেখানে 'বেশ ভালো পরিবেশ' দেখতে পান।
বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয়ের (বিএসএমএমইউ) ফার্মাকোলজি বিভাগের চেয়ারম্যান অধ্যাপক সায়েদুর রহমান বলেন, "প্রতিষ্ঠানগুলো পুনরায় খোলার পর শিক্ষার্থীদেরকে তাদের সহপাঠীদের সাথে আড্ডা দেওয়া বা স্কুল প্রাঙ্গণে ভিড় করার অনুমতি দেওয়া উচিত নয়। এছাড়া, শিক্ষা প্রতিষ্ঠানগুলোকে পরিষ্কার পরিচ্ছন্ন রাখার পাশাপাশি সেখানে পর্যাপ্ত বায়ু চলাচল নিশ্চিত করতে হবে"।
তবে প্রখ্যাত ভাইরোলজিস্ট এবং বিএসএমএমইউ'র সাবেক উপাচার্য অধ্যাপক ডা. নজরুল ইসলাম বলেছেন, স্কুলগুলোর সুরক্ষার বিষয়ে তিনি উদ্বিগ্ন।
তিনি বলেন, "যদি শিক্ষার্থী এবং শিক্ষকরা স্বাস্থ্য সুরক্ষার বিষয়ে শিথিল পন্থা অবলম্বন করেন, তাহলে শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান পুনরায় খোলার ফলে সংক্রমণের মাত্রা বাড়তে পারে।"
এর আগে, পরামর্শক কমিটির চেয়ারম্যান অধ্যাপক মোহাম্মদ সহিদুল্লা বৃহস্পতিবার রাতে গণমাধ্যমকে বলেন, "শিক্ষা প্রতিষ্ঠান পুনরায় চালু করতে কোনো বাধা নেই। কিন্তু ভাইরাসের পরিবর্তিত পরিস্থিতি বিবেচনা করে প্রয়োজনীয় সতর্কতামূলক পদক্ষেপ নিতে হবে"।
দেশে বর্তমানে প্রাথমিক থেকে উচ্চশিক্ষা পর্যন্ত মোট ৪.৫ কোটি শিক্ষার্থীসহ শিক্ষা প্রতিষ্ঠান রয়েছে ১.৫ লক্ষ। মহামারিজনিত সংকটের কারণে শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানগুলো বন্ধ হয়ে যাওয়ায় গত বছরের ১৭ মার্চ থেকেই একাডেমিক জীবন থেকে একপ্রকার বিচ্ছিন্ন রয়েছে শিক্ষার্থীরা।