ঘূর্ণিঝড় আম্পান: চলছে প্রশাসনের প্রস্তুতি
ধেয়ে আসছে ঘূর্ণিঝড় আম্পান। এরইমধ্যে দেশের কয়েকটি নদীবন্দরে চার নম্বর বিপদ সংকেত দেখানো হয়েছে। ঝড়টি বাংলাদেশে আদৌ আঘাত হানবে কি না, তা জানতে সোমবার পর্যন্ত অপেক্ষা করতে হবে বলে জানিয়েছে আবহাওয়া অধিদপ্তর। কক্সবাজারসহ উপকূলীয় কয়েকটি জেলায় রোববার ছিল তীব্র গরম। আকাশ ছিল রৌদ্রজ্জ্বল।
তবে বসে নেই সংশ্লিষ্ট মন্ত্রণালয় ও জেলা প্রশাসন কর্মকর্তারা। বিপদ সংকেত দেখানো জেলাগুলোতে এরইমধ্যে প্রশাসনের উদ্যোগে জরুরি বৈঠক অনুষ্ঠিত হয়েছে। সাইক্লোন সেন্টার প্রস্তুত করাসহ স্বেচ্ছাসেবক নিযুক্ত করার মতো সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে।
প্রতিনিধিদের পাঠানো প্রতিবেদন-
খুলনা জেলা প্রশাসনের প্রস্তুতি
সম্ভাব্য ঘূর্ণিঝড় আম্পানের মোকাবিলায় খুলনা জেলা প্রশাসন প্রাথমিক প্রস্ততি গ্রহণ করেছে। রোববার বেলা সাড়ে ১১টায় জেলা প্রশাসকের সম্মেলন কক্ষে জেলা ও দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা কমিটির সভা অনুষ্ঠিত হয়। এতে জেলা প্রশাসক মোহাম্মদ হেলাল হোসেন সভাপতিত্ব করেন।
সভায় জেলার ৯ উপজেলায় কন্ট্রোল রুম খোলা ও ৩৩৯টি সাইক্লোন শেল্টার প্রস্তুত রাখার জন্য স্থানীয় উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তাদের নির্দেশ দেওয়া হয়।
এদিকে, মোংলা বন্দরের হারবার মাস্টার কমান্ডার শেখ ফখর উদ্দিন জানান, সেখানে স্বাভাবিক অবস্থা বিরাজ করছে। বন্দরে বর্তমানে সাতটি জাহাজ অবস্থান করছে। জাহাজের মালামাল স্বাভাবিকভাবে ওঠা-নামা করানো হয়েছে।
খুলনা জেলা সহকারী আবহাওয়াবিদ আমিরুল আলম জানান, সামান্য এগোলেও বঙ্গোপসাগরে সৃষ্ট ঘূর্ণিঝড় আম্পান আরও শক্তিশালী হয়ে উঠেছে। এ কারণে মোংলা ও পায়রা সমুদ্রবন্দরে চার নম্বর স্থানীয় হুঁশিয়ারি সংকেত দেখিয়ে যেতে বলা হয়েছে।
বরগুনায় ৫০৯টি আশ্রয়কেন্দ্র প্রস্তুত রাখার সিদ্ধান্ত
ঘূর্ণিঝড় আম্পানকে কেন্দ্র করে বরগুনায় প্রস্তুতিমূলক সভা সম্পন্ন করেছে জেলা প্রশাসন। রোববার বিকেলে জেলা প্রশাসকের কার্যালয়ে এ সভা অনুষ্ঠিত হয়।
জেলা প্রশাসন সূত্রে জানা গেছে, ঘূর্ণিঝড় প্রস্তুতিমূলক সভায় বরগুনার ৫০৯টি আশ্রয়কেন্দ্র পরিষ্কার পরিচ্ছন্ন করার পাশাপাশি প্রস্তুত রাখার সিদ্ধান্ত গ্রহণ করা হয়েছে। এ ছাড়া পাঁচ নম্বর বিপদ সংকেত জারি হওয়ার সঙ্গে সঙ্গে এসব আশ্রয়কেন্দ্রে বরগুনার নদী ও সমুদ্র তীরবর্তী বাসিন্দাদের নিয়ে আসা হবে বলে জানানো হয়েছে। এজন্য আশ্রয়কেন্দ্রগুলোতে সামাজিক দূরত্ব বজায় রাখতে বরগুনার সকল উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তাসহ সংশ্লিষ্ট ইউনিয়ন পরিষদ চেয়ারম্যান ও সদস্যদের নির্দেশনা দেওয়া হয়েছে।
অন্যদিকে, জেলার ৪২টি ইউনিয়নে ৪২টি মেডিকেল টিম গঠন করা হয়েছে। এ মেডিকেল টিমের সব ধরনের প্রস্তুতি সম্পন্ন করার জন্য বরগুনার সিভিল সার্জনকে নির্দেশ দেওয়া হয়েছে। এখনো সমুদ্রে মাছ ধরার যেসব ট্রলার রয়েছে, সেগুলোকে নিরাপদ স্থানে নিয়ে যেতে জেলা ট্রলার মালিক সমিতিকে নির্দেশনা দেওয়া হয়েছে।
সদর উপজেলা ঘূর্ণিঝড় প্রস্তুতি কর্মসূচির (সিপিপি) টিম লিডার জাকির হোসেন মিরাজ বলেন, বরগুনায় আমাদের ছয় হাজার ৩৩০ জন স্বেচ্ছাসেবী প্রস্তুত রয়েছেন।
পটুয়াখালীতে প্রস্তুত থাকবে সাইক্লোন শেল্টার
পটুয়াখালীর পায়রা বন্দরে চার নম্বর হুঁশিয়ারি সংকেত দেওয়ায় ঘূর্ণিঝড় আম্পান মোকাবিলায় করণীয় এবং সম্ভাব্য ক্ষয়-ক্ষতি কমাতে রোববার বিকেলে জেলা প্রশাসকের সম্মেলন কক্ষে এক জরুরি সভা অনুষ্ঠিত হয়।
সভায় জেলার আটটি উপজেলার সকল সাইক্লোন শেল্টার প্রস্তুত রাখাসহ বিভিন্ন সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়। এ ছাড়া অতিরিক্ত সাইক্লোন শেল্টারের জন্য বিভিন্ন শিক্ষা প্রতিষ্ঠান প্রস্তুত রাখার নির্দেশ দেওয়া হয়।
অবশ্য ঘূর্ণিঝড়ের কোনো লক্ষণ পটুয়াখালীসহ উপকূলীয় এলাকায় নেই। প্রচণ্ড রোদ ও তাপদাহে সারাদিন জনজীবন অতিষ্ঠ ছিল। দেশের বিভিন্ন স্থানে হালকা বৃষ্টির যে আভাস আবহাওয়া অফিস থেকে দেওয়া হয়েছে, এর কোনো লক্ষণও নেই উপকূলে।
সাতক্ষীরায় দূর্যোগ ব্যবস্থাপনা কমিটির সভা
আম্পান মোকাবিলায় প্রস্তুতি গ্রহণ করেছে সাতক্ষীরা প্রশাসন। রোববার বেলা তিনটায় জেলা দূর্যোগ ব্যবস্থাপনা কমিটির সভা অনুষ্ঠিত হয়।
সাতক্ষীরা আবহাওয়া অধিদপ্তরের ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা জুলফিকার আলী জানান, সোমবার জানা যাবে ঘূর্ণিঝড় আম্পান বাংলাদেশে আঘাত হানবে কি না। বর্তমানে (রোববার বেলাসাড়ে ৩টা) ঘূর্ণিঝড়টি সাতক্ষীরা উপকূল থেকে ১২৩০ কিলোমিটার দূরে অবস্থান করছে।