চট্টগ্রামে ১৮টি গার্মেন্টসসহ চালু রয়েছে ১০৮টি কারখানা; ঝুঁকিতে কয়েক লাখ শ্রমিক
সরকার ঘোষিত সাধারণ ছুটি এবং বিজিএমইএ ও বাংলাদেশ রপ্তানি প্রক্রিয়াজাতকরণ এলাকা (বেপজা) থেকে সকল কারখানা বন্ধ রাখার ঘোষণা দেয়া হলেও তা মানছে না শতাধিক কারখানা মালিক।
চট্টগ্রামে নিষেধাজ্ঞা উপেক্ষা করে চালু রয়েছে ১৮টি তৈরি পোশাক কারখানাসহ ১০৮টি কারখানা। ফলে করোনা আক্রান্তের ঝুঁকিতে রয়েছে এসব কারখানায় কাজ করা কয়েক লাখ শ্রমিক।
ইতোমধ্যে চট্টগ্রামে পোশাক কারখানার এক কর্মকর্তা ও তার পরিবারের চারজন করোনায় আক্রান্ত হলেও করোনা সংক্রমণের এ ঝুঁকি আমলে না নেয়ার বিষয়টি আত্মঘাতী ও অপরিণামদর্শী মনে করছেন স্বাস্থ্য বিশেষজ্ঞরা।
অন্যদিকে প্রণোদনা দেওয়ার ঘোষণার পরও তৈরি পোশাক কারখানা খোলা রাখায় অনেকেই ক্ষোভ প্রকাশ করেছেন।
চট্টগ্রাম শিল্প পুলিশের তথ্য মতে চট্টগ্রামে ৭১১টি পোশাক কারখানাসহ ১ হাজার ২২৯টি কারখানা আছে। এর মধ্যে আদেশ অমান্য করে চট্টগ্রামে ১১৬টি কারখানা চালু রয়েছে। এগুলোর মধ্যে চট্টগ্রাম রপ্তানি প্রক্রিয়াজাতকরণ এলাকায় (সিইপিজেড) ৪টি, ডাবলমুরিং এলাকায় ২টি, পাহাড়তলী-হালিশহর ও আকবরশাহ এলাকায় ১টি, চান্দগাও এলাকায় ৩টি, পাঁশলাইশ-খুলশী এলাকায় ২টি, বায়েজিদ বোস্তামী এলাকায় ৩টি, কোতোয়ালী-বাকলিয়া এলাকায় ২টি এবং কর্ণফুলী এলাকায় ১টিসহ মোট ১৮টি পোশাক কারখানা চালু রয়েছে।
এছাড়া নন আরএমজি কারখানার মধ্যে পতেঙ্গায় ১৭টি, সিইপিজেডে ১টি, পাহাড়তলী-হালিশহর ও আকবরশাহ এলাকায় ৬টি, সীতাকুন্ড এলাকায় ৩৭টি, চান্দগাও এলাকায় ৬টি, পাঁশলাইশ-খুলশী এলাকায় ২টি, বায়েজিদ বোস্তামী এলাকায় ১০টি, কোতোয়ালী বাকলিয়া এলাকায় ২টি এবং কর্ণফুলী এলাকায় ১৫টিসহ মোট ৯৬টি কারখানা চালু রয়েছে।
নগরীর পাহাড়তলীতে কয়েকজন করোনা আক্রান্ত পাওয়ার পরও এই এলাকায় খোলা রয়েছে কয়েকটি কারখানা। এইসব কারখানা শ্রমিকেরা যেমন ঝুঁকির মধ্যে কাজ করছেন তেমনি পাহাড়তলি এলাকায়ও এরা ঝুঁকি বাড়িয়ে দিচ্ছে।
চট্টগ্রাম শিল্প পুলিশের সিনিয়র সহকারী পুলিশ সুপার কামরুল হাসান বলেন, আমরা কারখানা মালিকদের নিরুৎসাহিত করছি কারখানা চালু না রাখার জন্য। কিন্তু তারপরও তারা কারখানা চালু রেখেছে।
তিনি আরো বলেন, চট্টগ্রামে গার্মেন্টস কর্মকর্তার করোনা সংক্রমণ ধরা পড়েছে। তার মধ্যে পাহাড়াতলী এলাকা ঝুঁকিপূর্ণ হলেও ওইখানে অনেক কারখানা চালু রয়েছে। যেখানে করোনা সংক্রমণের ভয় বেশি। এসব কারখানা বন্ধ রাখার জন্য কোন ধরণের নির্দেশ দিতে পারে না শিল্প পুলিশ। তাই আমরা বার বার অনুরোধ করছি মালিকদের যাতে কারখানা বন্ধ থাকে।
প্রসঙ্গে চট্টগ্রাম ইপিজেডের মহাব্যবস্থাপক খুরশিদ আলম বলেন, কোনো গার্মেন্টসের শিপমেন্ট থাকলে বা শেষ পর্যায়ের কাজ থাকলে অনুমতি সাপেক্ষে কারখানা খোলা হচ্ছে। বৃহস্পতিবারও ১৫টি কারখানায় শিপমেন্টের পণ্যের জন্য ৭০০ মতো শ্রমিক কাজ করেছে। এছাড়াও পিপিই উৎপাদনকারী দুইটি প্রতিষ্ঠান চালু রয়েছে। প্রতিষ্ঠান দুইটি হলো স্মার্ট জিন্স ও ইন্ডাস্ট্রিয়াল হ্যান্ড প্রোটেকশন।
একই প্রসঙ্গে কর্ণফুলী রপ্তানি প্রক্রিয়াজাতকরণ এলাকা (কেইপিজেড) ভারপ্রাপ্ত মহাব্যবস্থাপক মসিউদ্দিন বিন মিসবাহ বলেন, ইপিজেডের ৩-৪টি কারখানা শ্রমিকদের বেতন দেওয়ার জন্য চালু রয়েছে। এছাড়া কোন প্রতিষ্ঠান চালু নেই।
এ প্রসঙ্গে জনস্বাস্থ্য অধিকার রক্ষা কমিটির সদস্য সচিব ডা. সুশান্ত বড়ুয়া জানান, সরকার ও বিভিন্ন সংগঠন বন্ধ রাখার ঘোষণার পরও কোন কারখানা চালু রাখার সিদ্ধান্ত অপরিণামদর্শি। এর মাধ্যমে যে ক্ষতি হবে তা পরবর্তীতে লাখ লাখ ডলার দিয়েও পোষানো যাবে না। একেকটি কারখানা হবে করোনা ভাইরাসের খোঁয়াড়। স্বাস্থ্য বিধি ও স্বাস্থ্য সুরক্ষার কথা বলা হলেও যে পরিবেশে তারা কাজ করে তাতে করে কখনো তা বাস্তবায়ন করা সম্ভব হবে না। এছাড়া তারা যে পরিবেশে থাকেন তা সংক্রমণের জন্য উর্বর জায়গা।
বিজিএমইএ চট্টগ্রামের পরিচালক মো. আতিক বলেন, বিজিএমইএ থেকে কঠোরভাবে কারখানা বন্ধ রাখার জন্য বলা হয়েছে। কিন্তু কেউ যদি কারখানা চালু রাখে তার দায় দায়িত্ব কেউ নিবে না।