জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়: টাকা ভাগাভাগি নিয়ে নতুন ফোনালাপ
কেন্দ্রীয় ছাত্রলীগের সদ্যসাবেক সাধারণ সম্পাদক গোলাম রাব্বানী ও জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয় শাখা ছাত্রলীগের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক সাদ্দাম হোসেনের একটি অডিও রেকর্ড সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে ছড়িয়ে পড়েছে। খবর ইউএনবির।
ফোনালাপটি মূলত ছ’মিনিটের। বিশ্ববিদ্যালয়ের অধিকতর উন্নয়ন প্রকল্পের টাকার ভাগাভাগি নিয়ে সেখানে দুজনকে কথা বলতে শোনা যায়। আলাপে বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য অধ্যাপক ফারজানা ইসলামের পরিবারের বিরুদ্ধে দুর্নীতির অভিযোগ করেন সাদ্দাম।
ফোনালাপে বলা হয়, উপাচার্য ফারজানা ইসলামের বাসায় ছাত্রলীগের নেতাদের উন্নয়ন প্রকল্পের টাকার ভাগ দেওয়া হয়। টাকা নেবার জন্য সেখানে উপস্থিত ছিলেন বিশ্ববিদ্যালয় ছাত্রলীগের সভাপতি জুয়েল রানা ও সাধারণ সম্পাদক আবু সুফিয়ান চঞ্চলসহ কজন।
ইউএনবি জানায়, ফোনালাপ প্রসঙ্গে অধ্যাপক ফারজানা ইসলামের সঙ্গে যোগাযোগ করা হলে তিনি বলেন, “অডিওতে আমি টাকা দিয়েছি এমন গল্প ফেঁদেছে। এ মিথ্যাটা সত্য করার দায়িত্ব আমার নয়। ওরা করুক। আর ওরা তো বলতেই পারে। সাদ্দাম বলতে পারে রাব্বানীকে যে, উপাচার্য আমাদের টাকা দিলেন বলে আমরা টাকা পেলাম। রাব্বানীর যেহেতু পদ নেই তাই সে ষড়যন্ত্র থেকে এসব বলাতে পারে। কিন্তু নিশ্চিত থাকেন, আমরা বাসায় কোনো টাকা পয়সার কথাই বলিনি।”
ওই ফোনালাপের মধ্যস্থতাকারী হামজা রহমান অন্তর ইউএনবিকে জানিয়েছেন, ‘আমার ফোন থেকেই কথোপকথন হয়েছে। রাব্বানী ভাই আমাকে ফোন দিয়েছিলেন। তখন আমি বেশি কিছু জানি না বলে সাদ্দাম ভাইয়ের কাছে ফোনটা দিয়ে দিই।’
ফোনালাপটি সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে ছড়িয়ে দেওয়ার সঙ্গে তিনি জড়িত নন দাবি করে অন্তর আরও বলেন, “রোববার সন্ধ্যা পর্যন্ত ফোনালাপটি ফাঁসের বিষয়ে আমি কিছু জানতাম না। বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রক্টর স্যারও আমাকে ফোন দিয়ে হুমকি-ধমকি দিয়েছেন। সম্প্রতি বিষয়টি নিয়ে কেন্দ্রীয় ছাত্রলীগ ও জাবি ছাত্রলীগের বিরুদ্ধে অনেক চক্রান্ত চলছে। সার্বিক প্রেক্ষাপটে আমি নিজেও নিরাপত্তাহীনতায় ভুগছি।”
ফোনালাপে অংশগ্রহণকারী জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয় শাখা ছাত্রলীগের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক সাদ্দামের সঙ্গে যোগাযোগ করা হলে তিনি বলেন, “গোলাম রাব্বানী ভাই সাধারণ সম্পাদক ছিলেন কেন্দ্রের। আমি তার রাজনীতি করতাম। ভাইয়ের নির্দেশনা অনুযায়ী যা বলছেন তাই বলেছি। যা করতে বলছেন তাই করছি। তিনি বিভিন্ন সময় বিভিন্ন কথা বলছেন, আমিও ওইভাবে কথা বলেছি।”
প্রসঙ্গত, জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের অধিকতর উন্নয়ন প্রকল্পের দুর্নীতি নিয়ে কয়েক দিন ধরেই নতুন গুঞ্জন ডালপালা মেলছে। বিভিন্ন গণমাধ্যমে উপাচার্যের মধ্যস্থতায় কেন্দ্রীয় ছাত্রলীগ ও বিশ্ববিদ্যালয় শাখা ছাত্রলীগকে দু’কোটি টাকা ভাগ করে দেওয়ার অভিযোগ উঠেছিল।
এর মধ্যেই প্রধানমন্ত্রীকে পাঠানো ছাত্রলীগ সাধারণ সম্পাদক গোলাম রাব্বানীর একটি চিঠি গণমাধ্যমে প্রকাশিত হয়। সেখানে তারা দাবি করেন, জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন বিশ্ববিদ্যালয় শাখা ছাত্রলীগকে ১ কোটি ৬০ লাখ টাকা দিয়েছে। বিষয়টি নিয়ে বিশ্ববিদ্যালয়ে অস্থিতিশীল পরিস্থিতি তৈরি হলে তারা উপাচার্যের সঙ্গে দেখা করেন।
ওদিকে, বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য অধ্যাপক ড. ফারজানা ইসলাম দাবি করেন, ছাত্রলীগের সাধারণ সম্পাদক গোলাম রাব্বানী বিশ্ববিদ্যালয়ের উন্নয়ন প্রকল্পের দুর্নীতি নিয়ে প্রধানমন্ত্রীকে যে খোলা চিঠি দিয়েছেন তা সাজানো গল্প ও অপপ্রচার।
শনিবার (১৪ সেপ্টেম্বর) গণমাধ্যমের সঙ্গে আলাপকালে তিনি চিঠির বিষয়ে সম্পর্কে চ্যালেঞ্জ ছুঁড়ে দিয়ে বলেন, “আসল সত্য কী ছিল তা চ্যান্সেলর এবং ইউজিসি তদন্ত করে দেখতে পারেন।”
এরপর সেদিন সন্ধ্যায় গণভবনে শেখ হাসিনার সভাপতিত্বে আওয়ামী লীগের কেন্দ্রীয় কার্যনির্বাহী কমিটির সভার সিদ্ধান্তে ছাত্রলীগের সভাপতি রেজওয়ানুল হক চৌধুরী শোভন ও সাধারণ সম্পাদক গোলাম রাব্বানীকে নেতৃত্ব থেকে সরিয়ে দেওয়া হয়।