জেলের বদলে শাস্তি বই পড়া, গাছ লাগানো
মামলায় কোনো ব্যক্তি দোষী সাব্যস্ত হলে তাকে সাধারণত জেলে যেতে হয়; দিতে হয় জরিমানা। কিন্তু দোষী ব্যক্তিকে যদি জেল-জরিমানার পরিবর্তে শাস্তি হিসেবে বই পড়তে, গাছ লাগাতে বা সিনেমা দেখতে বলা হয় তাহলে কেমন হবে?
এমনই ঘটনা ঘটেছে মাগুরায়। সেখানে পারিবারিক সহিংসতার কারণে দোষী সাব্যস্ত হওয়া ইব্রাহীম হোসেন (৩০) নামের এক তরুণকে ছয় মাসের কারাভোগের পরিবর্তে শাস্তি হিসেবে বই পড়তে, সিনেমা দেখতে ও গাছ লাগাতে বলা হয়েছে। তবে এই সুবিধার জন্য তাকে আদালতের কিছু শর্ত মেনে চলতে হবে।
সোমবার বিকেলে ব্যতিক্রমী এই রায়টি দিয়েছেন মাগুরার মুখ্য বিচারিক আদালতের বিজ্ঞ হাকিম মোহাম্মদ জিয়াউর রহমান।
ইব্রাহীম মাগুরা জেলার মহম্মদপুর উপজেলার হরে কৃষ্ণপুর গ্রামের মৃত হান্নান মোল্লার ছেলে।
রাষ্ট্রপক্ষের আইনজীবী সৈয়দ আমীর আলী জানান, ২০১৭ সালের ১৫ সেপ্টেম্বর পারিবারিক বিরোধের জের ধরে স্থানীয় হরে কৃষ্ণপুর গ্রামে সায়লা আক্তার নামে এক নারী আহত হন। এ ঘটনায় সায়লার ছেলে মোহাম্মদ রকি মহম্মদপুর থানায় একই গ্রামের ইব্রাহিম, কামাল ও চায়না বেগমকে আসামি করে মামলা করেন। ওই মামলার সাক্ষ্য প্রমাণে চায়না বেগম নির্দোষ প্রমাণিত হন এবং অপর আসামি কামাল হোসেন চার্জশিট থেকে অব্যাহতি পান।
অন্যদিকে ছয় মাসের কারাদণ্ড ভোগের পরিবর্তে সংশোধনের জন্য ইব্রাহিমকে দণ্ডবিধির ৩২৪ ধারার পরিবর্তে প্রবেশন কর্মকর্তার তত্ত্বাবধানে এক বছর সময়কালের জন্য সাতটি শর্তে প্রবেশন মঞ্জুর করেন বিজ্ঞ হাকিম জিয়াউর রহমান।
শর্ত সাতটি হলো- প্রবেশন সময়ে দোষী ব্যক্তি কোনোরূপ অপরাধের সঙ্গে জড়িত হবেন না বা একই ধরনের অপরাধ করবেন না। শান্তি বজায় রাখবেন এবং ভালো ব্যবহার করবেন। আদালত এবং আইন প্রয়োগকারী সংস্থা তলব করলে যথাসময়ে উপস্থিত হবেন। কোনোরূপ মাদক বা নেশাজাতীয় দ্রব্য সেবন করবেন না। কোনও খারাপ সঙ্গীর সঙ্গে আর মিশবেন না। প্রবেশনকালীন সময়ে আসামি মহান মুক্তিযুদ্ধের উপর দুইটি বই (জাহানারা ইমামের একাত্তরের দিনগুলো ও রণাঙ্গনের মুক্তিযোদ্ধাদের লেখা) একাত্তরের চিঠিসহ ইসলাম ও নৈতিকতার ওপর আরো দুইটি বই পড়বেন এবং আগুনের পরশমনি নামের সিনেমা দেখবেন। এ সময়ে আসামি পরিবেশের প্রতি দায়িত্বশীল হিসেবে দুটি বনজ ও তিনটি ফলজ গাছ লাগাবেন।
প্রবেশনার আসামি ইব্রাহিম প্রবেশনের কোনো শর্ত ভঙ্গ করলে বা তার আচরণ সন্তোষজনক না হলে তার প্রবেশন আদেশ বাতিল করা হবে এবং অপরাধের জন্য নির্ধারিত দণ্ডাদেশ ছয় মাসের কারাদণ্ড ভোগ করবেন। প্রবেশনার কর্মকর্তা প্রতি তিনমাস অন্তর পরপর শর্ত প্রতিপালন ও অগ্রগতি সম্পর্কে রিপোর্ট দাখিল করবেন।