জ্যেষ্ঠ আইনজীবীরা বললেন, আল-জাজিরার সম্প্রচার বন্ধ চেয়ে রিট গ্রহণযোগ্য নয়
বাংলাদেশে আল–জাজিরার সম্প্রচার বন্ধ ও অনলাইন প্লাটফর্ম থেকে 'অল দ্য প্রাইম মিনিস্টারস মেন' শীর্ষক প্রতিবেদন অপসারণের নির্দেশনা চেয়ে হাইকোর্টে করা রিটটি গ্রহণযোগ্য নয় বলে মত দিয়েছেন এই ইস্যুতে মতামত দেওয়ার জন্য নিয়োগ পাওয়া ছয়জন এমিকাস কিউরির (আদালত বন্ধু) চারজন।
জ্যেষ্ঠ আইনজীবী কামাল উল আলম, সাবেক অ্যাটর্নি জেনারেল এ জে মোহাম্মদ আলী ও ফিদা এম কামাল এবং ড. শাহদীন মালিক এই মত দেন।
তবে সাবেক আইনমন্ত্রী আব্দুল মতিন খসরু ও জেষ্ঠ্য আইনজীবী প্রবীর নিয়োগী বলেছেন এই রিট চলতে কোনো বাধা নেই। এছাড়াও বাংলাদেশের আইন অনুযায়ী আলজাজিরার সম্প্রচার বন্ধেও বাধা নেই।
রিট না চলার পক্ষে মত দিয়ে চারজন বলেন, এই রিট ফাইল করার আগে আলজাজিরাকে কোনো আইনি নোটিশ দেওয়া হয়নি। ফলে নজির অনুযায়ী এই রিট আদালত গ্রহণ করতে পারে না। এছাড়াও তারা বলেন, ডিজিটাল সিকিউরিটি অ্যাক্ট-এর ৮ ধারা অনুযায়ী- শুরুতে বিটিআরসি প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ নিতে পারতো। কিন্তু সেটা করা হয়নি।
জ্যেষ্ঠ আইনজীবী কামাল উল আলম আদালতকে বলেন, ঘণ্টাব্যাপী একটি প্রতিবেদন সম্প্রচার হলো। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার নাম বলা হচ্ছে। অভিযোগ করা হচ্ছে। কিন্তু তাঁর (প্রধানমন্ত্রী) সঙ্গে কোনো যোগসূত্র দেখা গেল না।
তিনি বলেন, গণতান্ত্রিকভাবে নির্বাচিত রাষ্ট্রের প্রধান ব্যক্তিকে বিতর্কিত করা হলে রাষ্ট্রকেই বিতর্কিত করা হয়। তিনি আরও বলেন, রিট আবেদনকারীর সংক্ষুব্ধ হওয়ার যৌক্তিকতা নেই। রিটটি গ্রহণযোগ্য নয় ।
সোমবার বিচারপতি মো. মুজিবুর রহমান মিয়া ও বিচারপতি মো. কামরুল হোসেন মোল্লার সমন্বয়ে গঠিত হাইকোর্ট বেঞ্চ এই ছয় জনের মতামত নিয়েছেন। ১৭ ফেব্রুয়ারি অ্যাটর্নি জেনারেল এএম আমিন উদ্দিনের বক্তব্য উপস্থাপনের জন্য পরবর্তী দিন ধার্য করেছেন আদালত।
কাতারভিত্তিক টেলিভিশন চ্যানেল আল-জাজিরার সম্প্রচার বাংলাদেশে বন্ধের নির্দেশনা চেয়ে করা রিটের গ্রহণযোগ্যতাসহ পাঁচটি বিষয়ে মতামত দিতে ১০ ফেব্রুয়ারি অ্যামিকাস কিউরি হিসেবে ছয়জন আইনজীবীর নাম ঘোষণা করেন হাইকোর্ট।
অ্যামিকাস কিউরি হলেন আদালতের আইনি সহায়তাকারী। রিট আবেদনকারীর সংক্ষুব্ধ হওয়ার দিক, রিটের প্রার্থনা অনুসারে এই আদালত থেকে কোনো আদেশ দেওয়া হলে বিদেশি কোনো টিভি চ্যানেলের ক্ষেত্রে তা কার্যকর করা যাবে কি না, কোনো আইনি নোটিশ ছাড়া রিট (ম্যান্ডামাস) চলে কি না, রিটের প্রার্থনা অনুসারে এই আদালত থেকে আল-জাজিরার তথ্যচিত্রটি সব মাধ্যমে থেকে বন্ধ করার কোনো নির্দেশনা দেওয়ার প্রয়োজন আছে কি না, ১ ফেব্রুয়ারি তথ্যচিত্রটি প্রকাশের পর এত দেরিতে রিট করার প্রেক্ষাপটে কোনো নির্দেশ দেওয়ার প্রয়োজন আছে কি না—এসব বিষয়ে অ্যামিকাস কিউরিদের মতামত দিতে বলা হয়েছে।
রিটটি করেন আইনজীবী এনামুল কবির ইমন।
আল-জাজিরায় ১ ফেব্রুয়ারি রাতে 'অল দ্য প্রাইম মিনিস্টারস মেন' শিরোনামে একটি প্রতিবেদন প্রচার করা হয়। ভিডিও-সংবলিত ওই ডকুমেন্টারি বিভ্রান্তিকর, বিদ্বেষমূলক ও মানহানিকর উল্লেখ করে দেশে আল-জাজিরার সম্প্রচার ও ওয়েবসাইট বন্ধের নির্দেশনা চেয়ে সুপ্রিম কোর্টের আইনজীবী এনামুল কবির ইমন ৮ ফেব্রুয়ারি রিটটি করেন। ইমন সুনামগঞ্জ জেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক।