তামাকের পরিবর্তে বাড়ছে সবজি আবাদ
উত্তরাঞ্চলে প্রতিবছরই কমছে তামাক চাষ। তার পরিবর্তে জমিতে লাগানো হচ্ছে ভুট্টা আর বিভিন্ন রকমের শীতকালীন ফসল। দুই বছর আগে রংপুর অঞ্চলে ১৩ হাজার ৭৮৭ হেক্টর জমিতে তামাক চাষ হত। গত বছর (২০১৯) তামাক চাষ হয়েছে ১৩ হাজার ৫৫৭ হেক্টর জমিতে। আর এ বছর ২০২০ সালে, এ পযন্ত ৩ হাজার ৫৫৫ হেক্টর জমিতে তামাক চাষ করা হয়েছে।
চাষীরা বলছেন তামাক চাষ করলে জমির মাটির উর্বরতা শক্তি কমে যায়। জমির অন্য ফসল চাষে প্রভাব পড়ে। চাষীরা আরও জানান, তামাক চাষে শ্বাসকষ্টের সমস্যাসহ অন্য শারীরিক সমস্যাও হয়, তারা জেনেছে তামাক চাষে ক্যান্সারে আক্রান্ত হওয়ার ঝুঁকিও আছে। এই সচেতনতা থেকেই অনেক কৃষক তামাক চাষ ছেড়ে ভুট্টা, আলু ও অন্য সবজি চাষে ঝুঁকেছে।
রংপুরের তারাগঞ্জ উপজেলার পোদ্দারপাড়া গ্রামের চাষী মোনায়েম খান জানান, ৩০ শতক জমিতে তিনি তামাক চাষ করেছেন চলতি বছর। গত বছর তিনি এক একর জমিতে তামাক চাষ করেছিলেন। তামাক চাষের স্বাস্থ্য ঝুঁকির সঙ্গে উৎপাদন খরচ ও পরিশ্রম বেশী। শ্রমিকদের মজুরিও বেশি।
একই গ্রামের ইমরান আলী শেখ জানান, গত বছর এক বিঘা জমিতে তামাক চাষ করেছিলেন এ বছর সে তামাক চাষ পুরোপুরি বাদ দিয়ে আলু চাষ করেছেন। তামাক চাষে পরিশ্রম বেশি এবং স্বাস্থ্যের জন্য ক্ষতিকর বলেই এ চাষ করা থেকে সরে দাঁড়িয়েছেন।
তারাগঞ্জ উপজেলার পোদ্দার পাড়া গ্রামের চাষী কুতুব উদ্দিন জানান, গত দুই বছর আগে তামাক আবাদ করে পরিবারের কয়েকজন অসুস্থ হয়ে পড়ায়, তামাক চাষ বাদ দিয়ে শীতকালীন সবজি আলু ভুট্টা গম চাষ করেছেন। এতে তামাক চাষের চেয়ে লাভ বেশি হয়েছে।
শ্রমিক দুলাল মিয়া জানান, তামাক খেতে কাজ করে প্রতিদিন ৩শ থেকে সাড়ে ৩শ টাকা মজুরী পান। এই মজুরী দিয়ে তার সংসার চলে না। আবার পরিশ্রম বেশি, সকাল থেকে বিকাল পর্যন্ত জমিতে কাজ করতে হয়। তামাক খেতে কাজ করে তারা নানা রকম শারীরিক সমস্যাও হচ্ছে। কিন্তু করোনার কারণে কাজ কমে গেছে। এখন বাধ্য হয়েই তামাক খেতে কাজ করছেন। আলুর জমিতে কাজ করলে ৪শ থেকে সাড়ে ৪শ টাকা মজুরী পাওয়া যেত।
রংপুর কৃষি অফিসের তথ্য অনুযায়ী ২০১৮ সালে সবচেয়ে বেশি তামাক চাষ হয়েছিল লালমনিরহাট জেলায় ৯ হাজার ১০০ হেক্টর জমিতে। রংপুরে ১ হাজার ৫৪০ হেক্টর, গাইবান্ধায় ৪০ হেক্টর চাষ হলেও কুড়িগ্রামে তামাক চাষ করেনি চাষীরা। নীলফামারীতে তামাক চাষ হয় ৩ হাজার ১শ সাত হেক্টর জমিতে।
২০১৯ সালে উত্তরাঞ্চলের জেলাগুলোতে তামাক চাষ হয়েছিল,লালমনিরহাট জেলায় ৮হাজার ৯৫০ হেক্টর, নীলফামারী জেলায় তিন হাজার ২৩ হেক্টর, রংপুরে ১ হাজার ৫২৫ হেক্টর, গাইবান্ধায় ৯ হেক্টর, কুড়িগ্রামে ৫০ হেক্টর জমিতে তামাক চাষ করা হয়েছিলো।
২০২০ সালে উত্তরাঞ্চলের লালমনিরহাট জেলায় ৩ হাজার ৫শ ৫৫ হেক্টর, রংপুরে ১৫ হেক্টর, আর অন্য জেলা গুলোতে এখনো তামাক চাষ করা হয়নি। তবে তথ্য অনুযায়ী, প্রতিবছর বিষাক্ত এই তামাক চাষ আবাদ ছেড়ে অন্য ফসল চাষে ঝুঁকছেন চাষীরা।
রংপুর কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের উপ-পরিচালক কৃষিবিদ ড. সরওয়ারুল হক জানান, প্রতিবছরের রংপুর অঞ্চল থেকে তামাক চাষ আবাদ কমে যাচ্ছে।অধিক পরিশ্রম আর ক্ষতিকারক হিসেবে তামাক চাষ ছেড়ে সবজি চাষে ঝুকে পড়ছে চাষীরা।