নতুন শিক্ষার্থী ভর্তির জন্য মে পর্যন্ত অপেক্ষা করতে হবে প্রাইভেট বিশ্ববিদ্যালয়গুলোকে
কোভিড-১৯ মহামারির কারণে উচ্চ মাধ্যমিকের ফলাফল ঘোষণায় দেরি হওয়ায় এবছর সামার সেমিস্টারের আগ পর্যন্ত কাঙ্ক্ষিত সংখ্যক শিক্ষার্থী পাবেনা প্রাইভেট বিশ্ববিদ্যালয়গুলো।
সাধারণত প্রাইভেট বিশ্ববিদ্যালয়গুলোতে জানুয়ারির শুরুতেই স্প্রিং সেমিস্টারের শিক্ষার্থীরা ভর্তি হন। কারণ জুলাইয়ের মধ্যেই সাধারণত উচ্চ মাধ্যমিকের ফলাফল ঘোষণা করা হয়, ফলাফল ঘোষণার পর বেশিরভাগ শিক্ষার্থীই প্রথমে পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়গুলোতে ভর্তি পরীক্ষার প্রস্তুতি নেন।
পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়গুলোতে আসন স্বল্পতার কারণে অসংখ্য মেধাবী শিক্ষার্থীই বিশ্ববিদ্যালয়গুলোতে ভর্তি হতে পারেন না। তাদের অনেকেই প্রাইভেট বিশ্ববিদ্যালয়গুলোতে ভর্তি হন।
২০২০ সালের উচ্চ মাধ্যমিক পরীক্ষার ফলাফল এবছরের জানুয়ারিতে প্রকাশিত হওয়ায় শিক্ষার্থীরা প্রথমে পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়গুলোতে ভর্তির চেষ্টা করবেন। কোভিড-১৯ মহামারির অবস্থা বিবেচনায় এপ্রিল থেকে ভর্তি পরীক্ষা নেওয়ার পরিকল্পনা করছে বিশ্ববিদ্যালয়গুলো।
ফলস্বরূপ প্রাইভেট বিশ্ববিদ্যালয়গুলোতে নতুন শিক্ষার্থী ভর্তির জন্য সামার সেমিস্টার শুরু হওয়া পর্যন্ত অপেক্ষা করতে হবে, সাধারণত মে মাসে বিশ্ববিদ্যালয়গুলোতে সামার সেমিস্টার শুরু হয়। শিক্ষার্থীদের ভর্তির আয়ের মাধ্যমেই বিশ্ববিদ্যালয়গুলোর সার্বিক কার্যক্রম চালানোর কাজ সহজ হয়।
গত বছর মার্চে শিক্ষা প্রতিষ্ঠান বন্ধ হয়ে যাওয়ার পর দেশের বেশিরভাগ প্রাইভেট বিশ্ববিদ্যালয় গুরুতর আর্থিক সঙ্কটের মুখে পড়েছে।
নর্থ সাউথ বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য অধ্যাপক ড. আতিকুল ইসলাম দ্য বিজনেস স্ট্যান্ডার্ড-কে বলেন, স্প্রিং সেমিস্টারে কাঙ্ক্ষিত সংখ্যক শিক্ষার্থী পাবেন নর্থ সাউথ বিশ্ববিদ্যালয়। "পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়গুলোর ভর্তি পরীক্ষা শেষ হওয়া পর্যন্ত আমাদের অপেক্ষা করতে হবে," বলেন তিনি।
মধ্যবিত্ত ও নিম্ন মধ্যবিত্ত পরিবারের মেধাবী শিক্ষার্থীরা প্রথমে পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয় ও মেডিকেল কলেজে ভর্তি হওয়ার চেষ্টা করবে, তারপর প্রাইভেট বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তি হতে পারে, বলেন ড. আতিকুল ইসলাম।
"মহামারির সময়ে আমাদের বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষার্থী সঙ্কট বা আর্থিক সঙ্কটের মুখে পড়েনি। তবে এটি সত্য সাধারণ সময়ের চেয়ে আমাদের কম আয় হচ্ছে," বলেন তিনি।
"তবে এবার উচ্চ মাধ্যমিক পরীক্ষায় শতভাগ পাস আছে, এটি মিড-র্যাঙ্কিং ও লো-র্যাঙ্কিং প্রাইভেট বিশ্ববিদ্যালয়গুলোর জন্য সুখবর, বরাবরের চেয়ে বেশি শিক্ষার্থী ভর্তি হতে পারে এবার।" যোগ করেন তিনি।
স্ট্যামফোর্ড বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য অধ্যাপক মোহাম্মদ আলী নাকী জানান, বিশ্ববিদ্যালয়টি আগামী মে থেকে নতুন শিক্ষার্থী ভর্তির জন্য প্রস্তুতি নিচ্ছে।
"আমরা জানি শিক্ষার্থীরা প্রথমে পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তি হওয়ার চেষ্টা করবে। এপ্রিলের শেষ সপ্তাহের মধ্যে পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়গুলোর ভর্তি প্রক্রিয়া শেষ হতে পারে। আমাদের সেপর্যন্ত অপেক্ষা করতে হবে," বলেন তিনি।
তিনি আরও বলেন, "নতুন শিক্ষার্থী ভর্তি হওয়ার আগ পর্যন্ত বিশ্ববিদ্যালয়ের কার্যক্রম চালানো বেশ কঠিন হয়ে যাবে। নতুন শিক্ষার্থী ভর্তির পরই আমরা সুষ্ঠুভাবে নিজেদের কার্যক্রম চালাতে পারবো।"
ইউনাইটেড ইন্টারন্যাশনাল ইউনিভার্সিটির উপ-পরিচালক (জনসম্পর্ক) আবু সাদাত মো মোস্তানসিরবিল্লা জানান, গত বছরের তুলনায় এবারের স্প্রিং সেমিস্টারে ভর্তির জন্য খুবই অল্প সংখ্যক আবেদন জমা পড়েছে।
"নতুন শিক্ষার্থীরা সাধারণত স্প্রিং সেমিস্টারেই বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তি হয়। এবছর উচ্চ মাধ্যমিকে ফলাফল দেরিতে প্রকাশিত হওয়ায় স্প্রিং সেমিস্টারে কাঙ্ক্ষিত সংখ্যক শিক্ষার্থী ভর্তি হবে না।" বলেন তিনি।
দেশের ১০৬টি প্রাইভেট বিশ্ববিদ্যালয়ে নতুন শিক্ষার্থীদের জন্য প্রায় ২ লাখ আসন আছে। অন্যদিকে দেশের ৪০টি পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়ের ৩০টিতে এবার গুচ্ছ পদ্ধতিতে ভর্তি পরীক্ষা হবে, বাকি ১০টি বিশ্ববিদ্যালয় আলাদাভাবে পরীক্ষা নেবে।
এ ১০টি বিশ্ববিদ্যালয় হলো ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়, রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়, চটতগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়, জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়, বাংলাদেশ প্রকৌশল বিশ্ববিদ্যালয়, বাংলাদেশ ইউনিভার্সিটি অব প্রফেশনালস, বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবর রহমান মেরিটাইম বিশ্ববিদ্যালয়, বাংলাদেশ টেক্সটাইল বিশ্ববিদ্যালয়, ঢাকা প্রকৌশল ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয় ও বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবর রহমান এভিয়েশন অ্যান্ড অ্যারোস্পেস বিশ্ববিদ্যালয়।
গুচ্ছ পদ্ধতির ভর্তি পরীক্ষায় যেসব শিক্ষার্থীর ন্যূনতম যোগ্যতা থাকবে তারা সকলেই প্রাথমিক আবেদন করতে পারবেন। প্রাথমিক আবেদনের পর বাছাইকৃতরা ভর্তি পরীক্ষা দিতে পারবেন। মোট ১০০ নাম্বারের ভর্তি পরীক্ষা অনুষ্ঠিত হবে, তবে শিক্ষার্থী বাছাইয়ের ক্ষেত্রে মাধ্যমিক ও উচ্চ মাধ্যমিকের ফলাফল যোগ করা হবে কিনা বিশ্ববিদ্যালয়গুলোই সে সিদ্ধান্ত নেবে।
"শিক্ষার্থীডের ভর্তির ক্ষেত্রে ভর্তি পরীক্ষার নাম্বারের সাথে মাধ্যমিক ও উচ্চ মাধ্যমিক ফলাফল সংযুক্ত করা হবে কিনা বিশ্ববিদ্যালয়গুলো আলাদাভাবে সে সিদ্ধান্ত নিতে পারবে।" বলেন জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য ও গুচ্ছ পদ্ধতিতে ভর্তি পরীক্ষা সংক্রান্ত কমিটির যুগ্ম আহ্বায়ক অধ্যাপক মীজানুর রহমান।