রোজিনা মুক্ত না হওয়া পর্যন্ত আন্দোলন চালিয়ে যাবার ঘোষণা সাংবাদিকদের
দৈনিক প্রথম আলোর জ্যেষ্ঠ সাংবাদিক রোজিনা ইসলামকে হেনস্তা ও গ্রেপ্তারের ঘটনায় ফুঁসে উঠেছেন সাংবাদিকরা। হেনস্তাকারীদের উপযুক্ত শাস্তি দাবি করেছেন তারা। রোজিনা ইসলামের নিঃশর্ত মুক্তি ও মিথ্যা মামলা প্রত্যাহারের দাবি তাদের। দাবি আদায় না হওয়া পর্যন্ত রাজপথ না ছাড়ার ঘোষণা দিয়েছেন সাংবাদিকেরা।
বুধবার সেগুনবাগিচায় ঢাকা রিপোর্টার্স ইউনিটি (ডিআরইউ) প্রাঙ্গণের সামনে 'সাংবাদিক রোজিনা ইসলামকে নির্যাতন ও গ্রেপ্তারের ঘটনায় ডিআরইউ'র প্রতিবাদ সমাবেশে এসব দাবি জানায় তারা।
অনুষ্ঠানে উপস্থিত হয়ে দৈনিক প্রথম আলোর সহযোগী সম্পাদক আনিসুল হক বলেন, 'সারা দেশের সাংবাদিকরা এক হয়েছে। তারা এই মামলার প্রত্যাহার চায়। যারা রোজিনাকে হেনস্তা করেছে তাদের শাস্তি চায়'।
তিনি বলেন, 'আমরা জেনেছি, এই মামলা হয় না। এটা পরস্পর বিরোধী। এই মামলার যেহেতু মেরিট নাই, আজকের মধ্যেই এই মামলার প্রত্যাহার চাই'।
প্রেসক্লাবের সাধারণ সম্পাদক ইলিয়াস খান বলেন, 'প্রশাসনের দুর্নীতির খবর গণমাধ্যমে প্রকাশ করে সাংবাদিকদের চক্ষুশূল হয়েছে। যার ফলশ্রুতিতে রোজিনা ইসলামের উপর হামলা'।
তিনি বলেন, 'রোজিনার মামলা যদি প্রত্যাহার না করা হয় তাহলে দুর্বার আন্দোলন গড়ে তোলা হবে। প্রয়োজনে স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয় ও প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয় পর্যন্ত যাব'।
ডিআরইউ এর সভাপতি মুরসালিন নোমানি বলেন, 'রোজিনা কান্ডে স্বাস্থ্যমন্ত্রী অরুচিকর বক্তব্য দিয়েছেন। আমরা এই বক্তব্য প্রত্যাহার চাই। আমরা আরও দেখেছি স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয় একটি তদন্ত কমিটি করেছে। এটা হাস্যকর। যারা রোজিনার উপর হামলা করেছে তারাই আবার তদন্ত করবে, আমরা এটা মানি না। এই তদন্ত কমিটি আমরা প্রত্যাখ্যান করছি'।
তিনি বলেন, 'রোজিনা ইসলাম ছাড়াও যে সমস্ত সাংবাদিক জেলে আছেন তাদেরও মুক্তি দাবি করছি। কাল যদি রোজিনাকে মুক্তি না দেয়া হয় আমরা রিপোর্টার্স ইউনিটিতে একত্রিত হয়ে আদালত অভিমুখে যাব। আমরা রোজিনাকে মুক্ত করেই ঘরে ফিরব'।
সংগঠনটির সাধারণ সম্পাদক মশিউর রহমান বলেন, 'আমরা পেশাদার সাংবাদিক। আমরা রাস্তায় আন্দোলন করতে চাইনা। দ্রুতই রোজিনা ইসলামের মুক্তি চাই'।
সাংবাদিকরা 'আমার বোন নির্যাতিত কেন প্রশাসন জবাব দে, 'প্রশাসনের কালো হাত ভেঙ্গে দাও গুড়িয়ে দাও' 'রোজিনা ইসলামের মুক্তি চাই' ইত্যাদি স্লোগান দেন।
ঢাকা সাংবাদিক ইউনিয়নের সাধারণ সম্পাদক সাজ্জাদ আলম খান তপু বলেন, 'রোজিনা ইসলামের নিঃশর্ত মুক্তি চাই। তার মুক্তি না হওয়া পর্যন্ত আমরা ঘরে ফিরব না। আমরা আশা করছি আগামী বৃহস্পতিবার আদালত যে জামিনের শুনানি করবে, সেই শুনানিতে আমাদের বোন মুক্ত হবে। ঢাকা সাংবাদিক ইউনিয়ন পরিস্থিতি পর্যবেক্ষণ করেছে, নীতিনির্ধারকদের সঙ্গে কথা হয়েছে। আলোচনা করে আমরা পরবর্তীতে সিদ্ধান্ত দেব। আগামী কাল সমাবেশ হবে, সেখানে নির্দেশনা জানানো হবে'।
ডিআরইউ এর সভাপতি মুরসালিন নোমানী বলেন, 'দুর্নীতির খবর প্রকাশ করায় সাংবাদিক রোজিনা ইসলামকে স্বাস্থ্য সচিবের পিএস এর রুমে প্রায় পাঁচ ঘণ্টা আটকে রেখে নির্যাতন করা হয়েছে। যা আইনের চরম লঙ্ঘন। এটা অনুসন্ধানী সাংবাদিকতার পথে বড় বাঁধা। মামলা প্রত্যাহার করতে হবে'।
সমাবেশে ডিআরইউ এর সাবেক সভাপতি রফিকুল ইসলাম আজাদ বলেন, 'রোজিনা ইসলামের বিরুদ্ধে মিথ্যা মামলা করা হয়েছে। তিনি কারাগারে আছেন। আমরা রোজিনা ইসলামের নিঃশর্ত মুক্তি চাই। যারা অন্যায়ভাবে তাকে হেনস্তা করেছে তাদের আমরা শাস্তির দাবি জানাই'।
তিনি বলেন, 'যে তদন্ত কমিটি গঠন করা হয়েছে সেটিতে আমরা আশ্বস্ত নই। আমরা চাই অন্য মন্ত্রণালয়ের নিরপেক্ষ অফিসার দিয়ে তদন্ত কমিটি গঠন করা হোক'।
সমাবেশে সংহতি প্রকাশ করে আরও অংশগ্রহণ করে বাংলাদেশ সেক্রেটারিয়েট রিপোর্টার্স ফোরাম, ল রিপোর্টার্স ফোরাম, ক্রাইম রিপোর্টার্স এসোসিয়েশনসহ কর্মরত সাংবাদিকদের একাধিক সংগঠন।
আরও পড়ুন- রোজিনার মুক্তির দাবিতে সাংবাদিক সংগঠনগুলোর আন্দোলন