সমাধান ছাড়াই শেষ হলো স্বরাষ্ট্রমন্ত্রীর সঙ্গে পরিবহন মালিকদের বৈঠক, ধর্মঘট চলবে
দেশব্যাপী পরিবহন ধর্মঘটের মধ্যে পরিবহন শ্রমিক-মালিকদের একাংশের নেতারা শনিবার স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খাঁন কামালের সাথে দেখা করলেও বৈঠকে কোনো সমাধান হয়নি।
ট্রাক ওনার্স অ্যাসোসিয়েশনের বাংলাদেশ কাভার্ড ভ্যানের অতিরিক্ত মহাসচিব আবদুল মোতালেব বলেন, জ্বালানির দাম বৃদ্ধির সিদ্ধান্ত প্রত্যাহার না হওয়া পর্যন্ত বা পরিবহন ভাড়া পুনর্বিন্যাস না হওয়া পর্যন্ত আমরা ধর্মঘট চালিয়ে যাওয়ার সিদ্ধান্ত নিয়েছি। আমাদের দাবির বিষয়ে সরকারের পক্ষ থেকে কোনো ইতিবাচক সিদ্ধান্ত না পাওয়ায় আমরা আমাদের কর্মসূচি চালিয়ে যাব।
স্বরাষ্ট্রমন্ত্রীর বাসভবনে বৈঠক শেষে সাংবাদিকদের সঙ্গে আলাপকালে তিনি এ মন্তব্য করেন।
মোতালেব বলেন, মন্ত্রী যে কোনো সময় আমাদেরকে ফোন করে বিষয়টি নিয়ে প্রধানমন্ত্রীর সিদ্ধান্ত জানাতে পারেন।
জ্বালানি তেলের মূল্য বৃদ্ধির প্রতিবাদে শুক্রবার থেকে শুরু হওয়া অনির্দিষ্টকালের পরিবহন ধর্মঘট দ্বিতীয় দিনের মতো চলছে। এতে সাধারণ যাত্রীদের সীমাহীন দুর্ভোগ পোহাতে হচ্ছে।
শনিবার দ্বিতীয় দিনের মতো রাজধানীতে আন্তজেলার সকল বাস ও মাইক্রোবাস চলাচল বন্ধ রয়েছে। এতে সাধারণ ও অফিসগামী যাত্রীরা চরম ভোগান্তিতে পড়েছেন।
রাজধানীর বিভিন্ন এলাকায় ইউএনবি দেখতে পেয়েছে, মানুষজন গন্তব্যে যাওয়ার জন্য রাইড শেয়ারিং ক্যাব ও অটোর জন্য সড়কে উগ্রীবভাবে অপেক্ষা করছেন।
অনেক যাত্রী অভিযোগ করেছেন, পরিস্থিতির সুযোগ নিয়ে অটো ও রিকশাচালকারা তাদের কাছ থেকে অতিরিক্ত ভাড়া নিচ্ছেন।
এক অফিসগামী যাত্রী বলেন, 'অটোচালকরা দ্বিগুণ ভাড়া দাবি করছেন। এটা আমাদের জন্য দুঃস্বপ্ন।'
ট্রাফিক পরিদর্শক (উত্তরা রাজলক্ষ্মী) আখতারুজ্জামান বলেন, 'সকাল থেকে সড়কে আমি একটি বাসও দেখিনি। শুধু ক্যাব, ব্যক্তিগত যানবাহন ও অটো চলছে।'
বৃহস্পতিবার বাংলাদেশ ট্রাক-কাভার্ড ভ্যান, ট্যাঙ্ক লরি এবং প্রাইম মুভার্স মালিক ও শ্রমিক সমন্বয় পরিষদের আহ্বায়ক মো. রুস্তম আলী অনির্দিষ্টকালের ধর্মঘটে যাওয়ার সিদ্ধান্ত ঘোষণা করেন।
বাংলাদেশ বাস-ট্রাক ওনার্স অ্যাসোসিয়েশন, বাংলাদেশ সড়ক পরিবহন শ্রমিক ফেডারেশন এবং বাংলাদেশ ট্রাক-কভার্ড ভ্যান ড্রাইভার ইউনিয়নের পক্ষ থেকে এক বিবৃতিতে বলা হয়, সরকার 'অযৌক্তিকভাবে' গত ২ নভেম্বর বঙ্গবন্ধু সেতু ও মুক্তারপুর সেতুর টোল ২৫৮ শতাংশ থেকে বাড়িয়ে ৩০০ শতাংশ করেছে। এরপর আবার জ্বালানির দাম বাড়িয়েছে।
বিবৃতিতে তারা বলেন, করোনার কারণে গত দুই বছরে দীর্ঘ সময়ের জন্য গণপরিবহন বন্ধ ছিল। এখন যখন পরিবহন মালিকরা করোনার ক্ষতি কাটিয়ে ওঠার চেষ্টা করছেন, সরকার তখন সেতুর টোল এবং জ্বালানির দাম বাড়ানোর সিদ্ধান্ত নিয়েছে। জ্বালানি তেলের দাম বাড়ানোর সিদ্ধান্ত প্রত্যাহার অথবা ভাড়া বাড়ানো না হলে শুক্রবার সকাল ৬টা থেকে সারাদেশে বাস এবং পণ্যবাহী গাড়ি চলাচল বন্ধ থাকবে।
উল্লেখ্য, বুধবার সরকার খুচরা পর্যায়ে ডিজেল ও কেরোসিনের দাম প্রতি লিটার ৬৫ টাকা থেকে বাড়িয়ে ৮০ টাকা করেছে।
বিদ্যুৎ, জ্বালানি ও খনিজ সম্পদ মন্ত্রণালয় এ সংক্রান্ত এক বিবৃতিতে বলেছে, 'বাংলাদেশ পেট্রোলিয়াম কর্পোরেশন (বিপিসি) লিটার প্রতি ১৩ দশমিক ০১ টাকা কম দামে ডিজেল এবং ৬ দশমিক ২১ টাকায় ফার্নেস অয়েল বিক্রি করায়, প্রতিদিন ২০ কোটি টাকা লোকসান হচ্ছে। প্রতি লিটারের বিক্রয়মূল্য, তাদের আমদানি করা দামের চেয়ে কম। তাই আন্তর্জাতিক বাজারে পেট্রোলিয়ামের মূল্যবৃদ্ধির প্রেক্ষাপটে পেট্রোলিয়ামের দাম পুনর্বিন্যাস করা হয়েছে।'