সিলেটের জকিগঞ্জে গ্যাস পাওয়ার সম্ভাবনা
গ্যাসক্ষেত্রের জন্য খ্যাতি রয়েছে সিলেটের। ১৯৫৫ সালে সিলেটের হরিপুরে প্রথম গ্যাসের সন্ধান মিলে। এরপর আবিস্কৃত হয়েছে আরও বেশ কয়েকটি গ্যাসক্ষেত্র। এবার সিলেটের সীমান্তবর্তী উপজেলা জকিগঞ্জ থেকে গ্যাস পাওয়ার সম্ভাবনা দেখা দিয়েছে। এই উপজেলায় অনুসন্ধান চালিয়ে একটি গ্যাসক্ষেত্রের সন্ধান পাওয়ার সম্ভাবনা তৈরি হয়েছে। প্রাথমিক অনুসন্ধানে সেখানে গ্যাসের উপস্থিতিও পাওয়া গেছে।
জকিগঞ্জের পশ্চিম আনন্দপুর গ্রামে অনুসন্ধান চালায় বাংলাদেশ পেট্রোলিয়াম এক্সপ্লোরেশন অ্যান্ড প্রোডাকশন কোম্পানি লিমিটেড (বাপেক্স)। বাপেক্সের অনুসন্ধান প্রথম দফার পরীক্ষায় এই ক্ষেত্রে গ্যাসের উপস্থিতি পাওয়া গেছে। আরও কয়েকদফা পরীক্ষা চালিয়ে এ ব্যাপারে নিশ্চিত হওয়া যাবে বলে জানিয়েছেন বাপেক্স কর্মকর্তারা।
সবগুলো পরীক্ষায় গ্যাসের উপস্থিতি পুরোপুরি পাওয়া গেলে গ্যাস উত্তোলনের উদ্যোগ নেওয়া হবে। চূড়ান্তভাবে সফল হতে পারলে এটি হবে জকিগঞ্জ উপজেলার প্রথম ও দেশের ২৮তম গ্যাসক্ষেত্র।
বাপেক্সের অনুসন্ধানে গ্যাসের উপস্থিতি পাওয়ায় মঙ্গলবার (১৫ জুন) সকালে উপজেলা শহরের অদূরে পশ্চিম আনন্দপুর গ্রামের এই অনুসন্ধান কূপে ড্রিল স্টিম টেস্ট (ডিএসটি) 'সৌভাগ্য শিখা' প্রজ্জ্বলন করা হয়।
এই ক্ষেত্রে গ্যাস পাওয়ার যথেষ্ট সম্ভাবনা রয়েছে বলে জানালেও বাপেক্স কর্মকর্তারা বলছেন, এখনও এটি অনুসন্ধান পর্যায়ে রয়েছে। তাই এখনও চূড়ান্ত কিছু বলা যাবে না।
বাপেক্স কর্মকর্তারা জানান, জকিগঞ্জের পার্শ্ববর্তী বিয়ানীবাজার ও গোলাপগঞ্জ উপজেলায় একাধিক গ্যাসক্ষেত্র রয়েছে। জকিগঞ্জেও দীর্ঘদিন ধরেই অনুসন্ধান চালানো হচ্ছে। এই প্রথম আশাবাদী হওয়ার মতো উপকরণ পাওয়া গেছে।
সিলেট গ্যাসফিল্ডের নিয়ন্ত্রণাধীন এই গ্যাসক্ষেত্রের প্রকল্প পরিচালক কবির আহমেদ বলেন, জকিগঞ্জে নতুন গ্যাসক্ষেত্র আবিষ্কারে অনুসন্ধান চালাচ্ছে বাপেক্স। অনুসন্ধানে আশাবাদী হওয়ার মতো অনেক কিছুই মিলছে। তবে এখনই চূড়ান্ত কিছু বলা যাবে না।
বাপেক্স কর্মকর্তারা বলছেন, কূপটির অভ্যন্তরে চাপ রয়েছে ৬ হাজার পিএসআই (প্রতি বর্গ ইঞ্চি) আর ফ্লোটিং চাপ রয়েছে ১৩ হাজারের অধিক। কূপটিতে মোট ৪টি স্তরে গ্যাস পাওয়ার সম্ভাবনা দেখছে বাপেক্স।
বাপেক্সের একজন কর্মকর্তা বলেন, প্রথম দফা পরীক্ষায় গ্যাসের উপস্থিতি পাওয়া গেছে। এখন আরও তিন দফা পরীক্ষা চালানো হবে। এরপর গ্যাসের উপস্থিতি পুরোপুরি নিশ্চিত হওয়া যাবে। তখন নিশ্চিতভাবে বলা যাবে এই কূপে গ্যাস আছে কিনা।
বাপেক্সের উপ মহাব্যবস্থাপক মো. মঞ্জুরুল হক বলেন, আমরা ভালো কিছু আশা করছি। তবে এখনও এখানে পর্যবেক্ষন চলছে।
তিনি বলেন, অনেক সময় অনুসন্ধান কূপে পকেট থাকতে পারে। তাই পর্যবেক্ষণ করা হচ্ছে। চূড়ান্তভাবে সফল হলে আনুষ্ঠানিকভাবে ঘোষণা দেওয়া হবে।
বাংলাদেশে এপর্যন্ত ২৭টি গ্যাসক্ষেত্র আবিস্কৃত হয়েছে। এসব গ্যাসক্ষেত্রে প্রমাণিত মজুদের পরিমাণ ২১ দশমিক ৪ টিসিএফ, আরও ৬ টিসিএফ রয়েছে সম্ভাব্য মজুদ। এরমধ্যে প্রায় সাড়ে ১৮ টিসিএফ উত্তোলন করা হয়েছে। সে হিসেবে প্রমাণিত মজুদ অবশিষ্ট রয়েছে মাত্র ৩ টিসিএফ, আর সম্ভাব্য মজুদ রয়েছে আরও ৭ টিএসএফ'র মতো।