সেতু আছে, নেই সংযোগ সড়ক!
সেতু নির্মাণ শেষ হয়েছে দেড় বছর আগে, অথচ সংযোগ সড়ক না থাকায় প্রায় ১০ কোটি টাকা ব্যয়ে নির্মিত সেতুটি ব্যবহার করতে পারছেন না স্থানীয়রা। ফলে সীমাহীন দুর্ভোগে শরীয়তপুরের নড়িয়া ও জাজিরার দেড় শতাধিক গ্রামের মানুষ।
জমি সংক্রান্ত জটিলতার অজুহাতে প্রকল্পে অন্তর্ভুক্ত থাকা সংযোগ সড়ক নির্মাণ ছাড়াই সংশোধিত প্রাক্কলনে অন্য কাজ করে বিল উত্তোলন করে নিয়েছে ঠিকাদারী প্রতিষ্ঠান। ফলে ভিন্ন প্রকল্পে সংযোগ সড়ক নির্মাণে সরকারকে নতুন করে ব্যয় করতে হচ্ছে বাড়তি ১৩ কোটি টাকা।
নড়িয়া স্থানীয় সরকার প্রকৌশল অধিদপ্তর থেকে জানা যায়, ভোজেশ্বর বন্দরের সঙ্গে জপসা ইউনিয়নসহ জাজিরা উপজেলার সঙ্গে যাতায়াত সহজ করতে কীর্তিনাশা নদীর ওপর ২০১৬ সালে ৯৯ মিটার দৈর্ঘের সেতুটি নির্মাণ শুরু করে এলজিইডি। ৯ কোটি ৮০ লাখ টাকা ব্যয়ে এ সেতু নির্মাণের সঙ্গে দুই প্রান্তে ৪৬৫ মিটার সংযোগ সড়ক নির্মাণের কাজ পায় কামারজানি ব্রোজেন ও আনোয়ারা জেভি নামের দুটি ঠিকাদারী প্রতিষ্ঠান।
সেতুর নির্মাণ শেষ হলেও জমি সংক্রান্ত জটিলতায় আটকে যায় সংযোগ সড়কের কাজ। সংযোগ সড়কের পরিবর্তে ঠিকাদারকে দিয়ে ১০ মিটারের একটি বক্স কালভার্ট ও সেতুর দুই প্রান্তে ৮০ মিটার করে ১৬০ মিটার নদীর তীর প্রতিরক্ষার কাজ করিয়ে পুরো বিল দিয়ে দেয় কর্তৃপক্ষ।
পরবর্তীকালে ২০১৯ সালের ১৮ জুলাই ১৩ কোটি ২১ লাখ টাকা ব্যয়ে নতুন করে সংযোগ সড়ক নির্মাণের কাজ শুরু করে এলজিইডি। ২০২১ সালের জুনে কাজ শেষ করার কথা থাকলেও দেড় বছরে কাজ এগিয়েছে মাত্র ৫০ শতাংশ। সংযোগ সড়কের অভাবে সেতুটি ব্যবহার করতে না পারায় সীমাহীন দুর্ভোগে নড়িয়া-জাজিরার অন্তত দেড় শতাধিক গ্রামের লক্ষাধিক মানুষ।
নির্মাণ কাজ শেষ হলেও সেতুটি ব্যবহার করতে না পারায় প্রভাব পড়েছে কৃষি, শিক্ষা, অর্থনীতি ও যোগাযোগ ব্যবস্থায়। কৃষিপণ্য পরিবহনসহ ব্যবসা-বাণিজ্য পরিচালনায় ব্যয় করতে হচ্ছে অতিরিক্ত অর্থ, অপচয় হচ্ছে সময়ের। দ্রুত সময়ের মধ্যে সংযোগ সড়ক নির্মাণ কাজ শেষ করে সেতুটি যানবাহন চলাচলের জন্য উন্মুক্ত করে দেওয়ার দাবি ভুক্তভোগীদের।
জপসা ইউনিয়নের বাসিন্দা অটোরিকশাচালক আরিফ বেপারী আঞ্চলিক ভাষায় বলেন, 'ছোট্ট একটু পথের ভেতর গাড়ি (অটোরিকশা) চালাই। ওপার যেতে পারলে আমাদের উপার্জন বাড়ত। দূরে দূরে যেতে পারতাম। সবার জন্য ভালো হতো। এখন অসুস্থ রোগী নিয়ে অনেক ঘুরে যেতে হয়। রাস্তা খারাপ হওয়ায় গাড়ি নষ্ট হয়। ব্রিজটা চালু হয়ে গেলে আমাদের উপকার হবে।'
ভোজেশ্বরের বাসিন্দা গৃহিণী বন্যা বেগম বলেন, 'ব্রিজ দিয়ে উপকার পেলাম না। ২০১৬ থেকে কাজ করছে; ২০২১ সাল চলে, এখনো নৌকা দিয়ে নদী পার হতে হয়। আমার ওপারে বাড়ি থাকলেও এপারে ভাড়া থাকি। রাত ৯টার পর কোনো নৌকা থাকে না। অন্তঃসত্ত্বা রোগী নিয়ে অনেক সমস্যা। ব্রিজ যদি কাজেই না আসে, তাহলে বানিয়েছে কেন?'
ভোজেশ্বর বন্দর থেকে জপসা ইউনিয়নে যাওয়ার জন্য মোটরবাইক নিয়ে নৌকা ঘাটে অপেক্ষা করছিলেন শামীম হোসেন। তিনি বলেন, '৫ মিনিটের রাস্তার জন্য ঝুঁকিপূর্ণ এই জায়গা দিয়ে পার হতে হয়। প্রত্যেকদিনই দুয়েকটা দুর্ঘটনা ঘটে। আষাঢ়-শ্রাবণ মাসে তো যাওয়াই যায় না। এই কষ্ট কমাতে বানাল যে ব্রিজ, সেটি তো সেভাবেই পড়ে আছে। কোনো কাজে লাগছে না। শুধু শুধু টাকা নষ্ট!'
নড়িয়া উপজেলা প্রকৌশলী মোঃ সাহাবউদ্দিন খান বলেন, 'প্রকল্পের মেয়াদ শেষ হওয়ায় এবং ভূমি জটিলতায় সংযোগ সড়ক নির্মাণ সম্ভব হয়নি। জমি জটিলতার কারণে এখন আর.ই. ওয়াল প্রযুক্তিতে সংযোগ সড়ক নির্মাণ কাজ শুরু হয়েছে। এটা একটা নতুন প্রযুক্তি। অল্প জায়গায় সড়ক নির্মাণ সম্ভব। নতুন প্রযুক্তিতে কাজ করায় কিছুটা দেরি হচ্ছে। আমরা বসে নেই। আশা করি দ্রুত সময়ের মধ্যে কাজ শেষ করা যাবে।'