স্মরণ: পৃথিবীর সবচেয়ে ভয়াবহ ঘূর্ণিঝড়ের ৫০ বছর
পৃথিবীর ইতিহাসে সবচেয়ে ভয়ংকর প্রাণঘাতী ঝড়ের তালিকা করেছে জাতিসংঘের বিশ্ব আবহাওয়া সংস্থা (ডব্লিউএমও)। বিশ্বের পাঁচ ধরনের ভয়াবহ প্রাণঘাতী আবহাওয়া সংশ্লিষ্ট ঘটনার শীর্ষ তালিকায় স্থান পেয়েছে ১৯৭০ সালের ১২ নভেম্বর তারিখে বাংলাদেশের (সাবেক পূর্ব পাকিস্তান) উপকূলে আঘাত হানা ঘুর্ণিঝড় 'সাইক্লোন ভোলা'।
পাকিস্তান সরকারের হিসেবেই সেই ঝড়ে পাঁচ লাখ মানুষ নিহত হওয়ার কথা স্বীকার করা হয়েছিল। কিন্তু বেসরকারি হিসেবে মৃতের সংখ্যা ছিল কমপক্ষে দশ লাখ। বিশ্ব আবহাওয়া সংস্থার ওয়েবসাইট থেকেও এ তথ্য নিশ্চিত হওয়া গেছে।
ডব্লিউএমও ২০১৭ সালের ১৮ মে তালিকাটি তাদের সংস্থাসহ পৃথিবীর বিভিন্ন আবহাওয়া সংক্রান্ত সংস্থায় প্রকাশ করে। এ বছরের ১২ নভেম্বর ভয়ঙ্কর এ ঘুর্ণিঝড়ের ৫০ বছর পূর্ণ হলো।
প্রলয়ঙ্করী এই ঝড়ে বেঁচে যাওয়া প্রত্যক্ষদর্শী কয়েকজনের সাথে কথা বলে জানা যায়, ঝড়ে সবচেয়ে বেশি প্রাণণহানির ঘটনা ঘটেছিল বর্তমান ভোলা এবং তৎকালীন নোয়াখালী (বর্তমান নোয়াখালী-লক্ষ্মীপুর) উপকূলে। এছাড়া বরগুনা, পটুয়াখালী, চট্টগ্রামসহ উপকুলীয় অঞ্চলে এই ঝড় আঘাত হানে।
ঝড়ে ৩ দিন লড়াই করে বেঁচে যাওয়া কৃষক লক্ষীপুরের কমলনগর উপজেলার উত্তর চর লরেঞ্চ গ্রামের কৃষক আবদুল হক জানান, লক্ষ্মীপুরের সাবেক রামগতির (রামগতি-কমলনগর) চরাঞ্চল ২০ থেকে ৩০ ফুট পানির নিচে তলিয়ে গিয়েছিল। স্রোতে ভেসে যায় শিশু, বৃদ্ধ, নারী, পুরুষসহ অগণিত মানুষ।
ঘূর্ণিঝড়ের পর বঙ্গবন্ধুর গঠিত ত্রাণকমিটির তৎকালীন ভাইস চেয়ারম্যান হাজী নুরুল ইসলাম জানান, ঝড় থেমে যাওয়ার পর দেখি চারিদিকে শুধু লাশ আর লাশ, লাশের গন্ধে মানুষ কাছে যেতে পারেনি। ২০-৩০ ফুটের জলোচ্ছ্বাসের কারণে লাশ মাটি দেওয়া যায়নি।
কমলনগর উপজেলা ঘূর্ণিঝড় প্রস্তুতি কমিটির টিম লিডার ছিলেন কামাল উদ্দিন আহমেদ, তিনি জানান, সে রাতে এ জেলার প্রায় ৫০ হাজার মানুষ প্রাণ হারায়। ঘূর্ণিঝড় আর জলোচ্ছ্বাসে রামগতির মেঘনা উপকূলীয় চর আবদুল্লাহ বর্তমান কমলনগরের ভুলুয়া নদী উপকূলীয় চরকাদিরা এবং নোয়াখালীর হাতিয়া একেবারে বিরাণ ভূমিতে পরিণত হয়।
৫০ বছর পর ওই ঝড়ে নিহতদের স্বজন এবং উপকূলের স্থানীয়দের সাথে "সাইক্লোন ভোলা'' নিয়ে কথা বললে তারা আবেগ আপ্লুত হয়ে পড়েন।
লক্ষ্মীপুরের কমলনগরের অধিবাসী মুক্তিযোদ্ধা ও 'সাইক্লোন ভোলা'র উদ্ধারকর্মী মাস্টার মফিজ উল্লাহ জানান, ১২ নভেম্বরের পর সকালে চারপাশে ছিল লাশ আর লাশ। এত বড় প্রাণহানি এবং ধ্বংসযজ্ঞের ব্যাপারে কেউ কিছু করেনি সেদিন।
এদিকে ২০১৭ সাল থেকে দিনটিকে উপকূল দিবস হিসেবে উপকূলে পালন করা হচ্ছে।
১২ নভেম্বরকে জাতীয় এবং আর্ন্তজাতিক ভাবে উপকূল দিবস ঘোষণা করার দাবি নিয়ে কাজ করছে কোস্টাল জার্নালিস্ট ফোরাম নামের একটি স্থানীয় সংগঠন।
ফোরামের সমন্বয়কারী রফিকুল ইসলাম মন্টু জানান, উপকূলের জন্য একটি পৃথক দিবস থাকলে উপকূল নিয়ে চিন্তা সবার মাঝে দ্রুত ছড়িয়ে দেওয়া সম্ভব হবে। এবং এর মধ্য দিয়ে উপকূলীয় অঞ্চলের ঝুঁকির দিকগুলো এবং এ অঞ্চলের উন্নয়নের বিষয়গুলো সবার নজরে আনা সম্ভব হবে।
প্রসঙ্গত, কক্সবাজারের টেকনাফের শাহপরীর দ্বীপ এবং পশ্চিমে সাতক্ষীরার শ্যামনগরের কালিঞ্চি গ্রাম পর্যন্ত উপকূলের প্রায় ৫ কোটি মানুষ প্রতনিয়তই বহুমূখী দুর্যোগের সঙ্গে বসবাস করেন।