হলি আর্টিজানে হামলা মামলার রায় দ্রুত কার্যকর চান এসি রবিউলের মা
‘‘আমার ছেলেকে তো আর কোনদিন ফিরে পাবোনা। তবে এই মামলায় আদালত যে রায় দিয়েছে তাতে আমি সস্তুষ্ট। আমি চাইব এই রায় যেন দ্রুত কার্যকর হয়। এই সন্তান ছিল আমার মাথার ছায়া। ছেলেকে হারানোর পরে আমরা অসহায় হয়ে পড়েছি।”
কথাগুলো বলছিলেন রাজধানীর হলি আর্টিজান বেকারিতে ২০১৬ সালে জঙ্গি হামলায় নিহত ঢাকা মহানগর গোয়েন্দা পুলিশের সহকারী কমিশনার রবিউল করিমের মা করিমন নেসা।
২০০৮ সালে বিয়ে করেন রবিউল। মা ও একমাত্র ভাই শামসুজ্জামান শামস ছাড়াও ৫ বছরের শিশু পুত্র সাজিদুল করিম সামি ও আট মাসের অন্তঃসত্তা স্ত্রী উম্মে সালমাকে রেখে জঙ্গিদের ছোড়া বুলেটে প্রাণ হারান এসি রবিউল।
রবিউলের ছোটো ভাই শামসুজ্জামান শামস জানান, বাবা মারা যাওয়ার পর মা খুব কষ্ট করে তাদের দুই ভাইকে মানুষ করেছেন। কোনো মতে দিন পার করে বড় হয়েছেন দুই ভাই। সামাজিক কর্মকাণ্ডে সংশ্লিষ্টতা থাকার কারণে তার ভাইকে এলাকার মানুষ খুব পছন্দ করত।
‘‘দেশের জন্য অনেক কিছু করা ইচ্ছে ছিলো ভাইয়ের। কিন্তু জঙ্গিদের বুলেট আমাদের সব শেষ করে দিলো। ভাইয়ের মৃত্যুর পর অনেক সমস্যা হয়েছে আমাদের। তারপরও চলতে হয়েছে।”
রবিউলের স্ত্রী উম্মে সালমা জানান, রবিউল নিহত হওয়ার সময় তাদের প্রথম সন্তান সাজিদুল করিম সামির বয়স ছিল পাঁচ বছর। এ সময় তিনি ছিলেন অন্ত:সত্ত্বা। রবিউল নিহতের পর ছেলে সামি শুধু বাবাকে দেখতে চাইতো।
“একদিকে শাশুড়ি, অন্যদিকে শিশু পুত্র ও আমি। একমাত্র আল্লাহ জানে কিভাবে বেঁচে ছিলাম। রবিউল নিহত হওয়ার পর সরকার জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রশাসনিক কর্মকর্তা পদে আমাকে চাকরি দিয়েছে। এজন্য আমি প্রধানমন্ত্রীর প্রতি কৃতজ্ঞ।”
বর্তমানে ছেলে সাজিদুল করিম সামি (৮) ও রবিউলের মৃত্যুর এক মাস পর জন্ম নেয়া মেয়ে কামরুন নাহার রায়না (৩), শ্বাশুড়ি ও দেবরকে নিয়ে বিশ্ববিদ্যালয় ক্যাম্পাসে থাকেন তিনি।
মানিকগঞ্জ সদর উপজেলার কাটিগ্রাম সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় ও কাটিগ্রাম উচ্চ বিদ্যালয় থেকে এসএসসি পাস করেন রবিউল। ধামরাই উপজেলার কালামপুর আতাউর রহমান খান ডিগ্রী কলেজ থেকে এইচএসসি পাস করে জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয় থেকে বাংলায় অনার্স ও মাস্টার্স করে ৩০তম বিসিএসের মাধ্যমে ২০১২ সালে বাংলাদেশ পুলিশে যোগ দেন তিনি।
পড়ালেখা শেষে চাকরি শুরুর আগে বাড়ির অদূরে মায়ের দান করা ২৯ শতাংশ জমির উপরে ২০১১ সালে বিকনিক লাইট অর্গানাইজেশন অফ ম্যানকাইন্ড অ্যান্ড সোসাইটি (ব্লুমস) নামের একটি বিশেষায়িত স্কুল প্রতিষ্ঠা করেন। এ স্কুলে প্রতিবন্ধী ও অটিজমে আক্রান্ত বিশেষ চাহিদাসম্পন্ন শিশুরা লেখাপড়া করে।
ব্লুমস স্কুলের পরিচালক জাহাঙ্গীর আলম জানান, শারীরিক, বাক, শ্রবণ, বুদ্ধি প্রতিবন্ধী ও অটিজমে আক্রান্ত বিশেষ চাহিদাসম্পন্ন শিশুদের লেখাপড়া করানো হয় এই স্কুলে। স্কুলটি প্রতিষ্ঠার পর মাত্র ১২জন শিশু দিয়ে কার্যক্রম শুরু হলেও বিশেষায়িত এই স্কুলে বর্তমানে ৪৩ জন শিক্ষার্থী রয়েছে। ব্লুমস স্কুল গড়ার আগে ২০০৭ সালে, রবিউল তার বাবার স্বপ্ন পূরণে গ্রামের শিশুদের লেখাপড়ার জন্য ‘নজরুল বিদ্যা সিঁড়ি’ নামে একটি প্রাথমিক বিদ্যালয় প্রতিষ্ঠা করেন।