কূটনৈতিক সম্পর্কের ৫০ বছর পূর্তিতে বাংলাদেশ-ব্রাজিলের ভিসা অব্যাহতি চুক্তি
দুই দেশের মধ্যে কূটনৈতিক সম্পর্কের ৫০ বছর পূর্তি উপলক্ষে একটি ভিসা ছাড় চুক্তি স্বাক্ষর করেছে বাংলাদেশ ও ব্রাজিল।
পররাষ্ট্রমন্ত্রণালয়ের এক সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে জানানো হয়, ব্রাজিলে ৪-দিনব্যাপী পররাষ্ট্রমন্ত্রী পর্যায়ের প্রথম সরকারি সফরকালে পররাষ্ট্রবিষয়ক প্রতিমন্ত্রী ও সংসদ সদস্য মোঃ শাহরিয়ার আলম বাংলাদেশ ও ব্রাজিলের কূটনৈতিক সম্পর্কের ৫০ বছর পূর্তিতে কূটনৈতিক ও অফিসিয়াল পাসপোর্টের বাহকদের জন্য ভিসা অব্যাহতি সংক্রান্ত চুক্তিটি স্বাক্ষর করেন।
ব্রাজিল সরকারের পক্ষে এই চুক্তিতে সাক্ষর করেন ব্রাজিলের পররাষ্ট্রমন্ত্রী কার্লোস আলবের্তো ফ্রাঙ্কো ফ্রান্সা।
ফেডারেশন অব বাংলাদেশ চেম্বার অব কমার্স অ্যান্ড ইন্ড্রাস্ট্রি (এফবিসিসিআই) এর সভাপতি জনাব জসীম উদ্দিনের নেতৃত্বে উচ্চ পর্যায়ের একটি ব্যবসায়িক দল এবং বাংলাদেশ-ব্রাজিল চেম্বার অব কমার্সের (বিবিসিসি) প্রতিনিধিরা প্রতিমন্ত্রীর সফরসঙ্গী ছিলেন।
১৮ জুলাই প্রতিমন্ত্রী ব্রাসিলিয়াস্থ কূটনৈতিক প্রশিক্ষণকেন্দ্র রিও ব্রাঙ্কো ইনস্টিটিউটে একটি বক্তৃতা দেন। ওই কেন্দ্রের প্রশিক্ষণার্থী ছাড়াও ব্রাজিল সরকারের উচ্চপর্যায়ের কর্মকর্তা, ব্রাসিলিয়াস্থ বিভিন্ন দেশের রাষ্ট্রদূত ও কূটনৈতিক কোরের সদস্য, ব্রাজিলীয় সংবাদ মাধ্যমের প্রতিনিধি এবং ব্রাজিলের পররাষ্ট্র বিষয়ক গবেষণা কেন্দ্র ফুনাগ এর সদস্যসহ প্রায় শতাধিক ব্যক্তি এই অনুষ্ঠানে অংশ নেন।
বাংলাদেশের স্বাধীনতা যুদ্ধের প্রেক্ষাপট আলোচনাকালে প্রতিমন্ত্রী শাহরিয়ার আলম ভাষা আন্দোলনে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের বলিষ্ঠ ভূমিকা এবং পরবর্তীতে নয় মাসব্যাপী রক্তক্ষয়ী মুক্তিযুদ্ধে তার বলিষ্ঠ নেতৃত্বের অবতারণা করেন।
তিনি দক্ষিণ এশিয়া ও দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়ার বৃহত্তর অর্থনৈতিক সাফল্যে বাংলাদেশের ভূরাজনৈতিক গুরুত্বের ভূমিকা বিশ্লেষণ করেন।
প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার দূরদর্শী বলিষ্ঠ নেতৃত্বে বাংলাদেশের সাম্প্রতিক অভূতপূর্ব আর্থসামাজিক উন্নয়ন বর্ণনা করেন।
রিও ব্রাঙ্কো ইনস্টিটিউটের নবীন প্রশিক্ষণার্থীদের সরকারের স্থিতিশীলতা, গ্রামীণ অর্থনীতিতে বিনিয়োগ এবং নারীর ক্ষমতায়ন বাংলাদেশ আর্থসামাজিক উন্নয়নে কীভাবে ভূমিকা রেখেছে তা ব্যাখ্যা করেন।
১৮ জুলাই বিকালে ব্রাজিলের পররাষ্ট্র দপ্তর থেকে প্রতিমন্ত্রীকে রাষ্ট্রীয় গার্ড অব অনার দিয়ে স্বাগত জানানো হয়। ব্রাজিলের রাষ্ট্রদূত পাউলিনো ফ্রাঙ্কো ডি কারভালহো নেতো, পররাষ্ট্র বিষয়ক ভারপ্রাপ্ত ভাইস-মিনিস্টার, প্রতিমন্ত্রীর সম্মানে মধ্যাহ্নভোজের আয়োজন করেন। মন্ত্রী এবং রাষ্ট্রদূত নেতো বিদ্যমান দ্বিপাক্ষিক সম্পর্কের গতিপথ নিয়ে আলোচনা করেন এবং উভয়ই নতুন করে এটিকে আরও জোরদার করার প্রতিশ্রুতি ব্যক্ত করেন।
তারা বাণিজ্য, বিনিয়োগ, কৃষি, কৃষি-ব্যবসা, খাদ্য, জ্বালানি, ওষুধ ও ক্রীড়ার ক্ষেত্রে দ্রুততর সহযোগিতা করতে সম্মত হয়েছেন। উভয় পক্ষই দ্বিপাক্ষিক বাণিজ্য বৃদ্ধির জন্য প্রচেষ্টা চালাতে সম্মত হয়েছে, যা বর্তমানে সম্ভাবনার তুলনায় অনেক কম। তারা সমসাময়িক রাজনৈতিক ইস্যুসহ পারস্পরিক বহুপাক্ষিক বিষয় নিয়েও আলোচনা করেন।
রাষ্ট্রদূত পাউলিনো প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার দূরদর্শী নেতৃত্বে মিয়ানমারের জোরপূর্বক বাস্তুচ্যুত নাগরিকদের প্রতি বাংলাদেশের মানবিকতার প্রশংসা করেন।
প্রতিমন্ত্রী শাহরিয়ার আলম পররাষ্ট্রমন্ত্রী কার্লোস আলবের্তো ফ্রাঙ্কো ফ্রান্সার সঙ্গে বৈঠক করেন এবং এরপর ভিসা অব্যাহতির চুক্তিতে স্বাক্ষর করেন।
মন্ত্রী কার্লোস ফ্রান্সা পদ্মা সেতুর উদ্বোধন হওয়ায় প্রতিমন্ত্রীকে অভিনন্দন জানান। কৃষি সহযোগিতা, কৃষি প্রক্রিয়াকরণ, জ্বালানি সহযোগিতা ছিল তাদের আলোচনার মূল ক্ষেত্র।
অগ্রাধিকারমূলক বাণিজ্য চুক্তি (পিটিএ) এবং মুক্ত বাণিজ্য চুক্তি (এফটিএ) সমাপ্ত করতে বাংলাদেশ সরকারের আগ্রহ প্রকাশ করে প্রতিমন্ত্রী মারকোসুর-এর পিটিএ এবং এফটিএতে বাংলাদেশের অন্তর্ভুক্তির জন্য পররাষ্ট্রমন্ত্রী কার্লোস ফ্রান্সার সমর্থন কামনা করেন। ব্রাজিল জাতিসংঘের নিরাপত্তা পরিষদের বর্তমান সভাপতি হওয়ায় প্রতিমন্ত্রী ইউক্রেন সংকটের মধ্যেও বাংলাদেশে বাস্তুচ্যুত মিয়ানমারের নাগরিকদের জন্য মানবিক সহায়তার তাগিদ দেন।
পররাষ্ট্রমন্ত্রী কার্লোস ফ্রান্সা প্রতিমন্ত্রীর সাথে সৌজন্য সাক্ষাতের আলোচনায় গত এক দশকে আর্থ সামাজিক উন্নয়নে বাংলাদেশের অভূতপূর্ব উন্নয়নের ভূয়সী প্রশংসা করেন এবং বাণিজ্য-বিনিয়োগ সহ একত্রে কাজ করার প্রত্যয় ব্যাক্ত করেন। আন্তঃবাণিজ্যের পরিধি বৃদ্ধির প্রয়োজনীয়তা নিয়ে দুই মন্ত্রীর মাঝে আলোচনা হয় ।
প্রতিমন্ত্রী শাহরিয়ার আলম ব্রাজিল বাংলাদেশের কূটনৈতিক সম্পর্কের ৫০ বছর পূর্তিতে রাষ্ট্রদূত কর্তৃক আয়োজিত এক অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন।
শুভেচ্ছা বক্তব্যে তিনি স্বাধীনতার ২০০ বছর পূর্তিতে ব্রাজিলের জনগণকে অভিনন্দন জানান।
উক্ত অনুষ্ঠানে ব্রাসিলিয়াস্থ বিভিন্ন দূতাবাসের কূটনীতিকগণ, ব্রাসিলিয়াস্থ বিশ্ববিদ্যালয়ের অনুষদ, সাংবাদিক, ব্যাবসায়ী এবং ব্রাজিল সরকারের উচ্চ পর্যায়ের কর্মকর্তারা উপস্থিত ছিলেন।