শিক্ষা বোর্ড চেয়ারম্যানের নামে রাজশাহী মেয়রকে হুমকিমূলক চিঠি, শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের শো-কজ
রাজশাহী সিটি করপোরেশনের মেয়র ও আওয়ামী লীগের প্রেসিডিয়াম সদস্য এ এইচ এম খায়রুজ্জামান লিটনের দপ্তরে আসা একটি চিঠিকে কেন্দ্র করে রাজশাহী শিক্ষাবোর্ডের চেয়ারম্যান হাবিবুর রহমানকে ব্যাখ্যা দিতে বলে নোটিশ দিয়েছে শিক্ষা মন্ত্রণালয়।
মেয়র এ এইচ এম খায়রুজ্জামান লিটনকে উদ্দেশ্য করে রাজশাহী শিক্ষা বোর্ডের চেয়ারম্যানের নামে আসা সে চিঠিতে লেখা হয়েছে, "আপনার সঙ্গে আমাকে দেখা করার জন্য গেটে অপেক্ষা করতে হবে আপনার কাছে সময় চাইতে হবে? বিষয়টি কল্পনা করা আমার জন্য দুরূহ। আপনি জানেন কি আমার জা শ্বাশুড়ি এমপি। আমার আওয়ামী পরিবারের জন্ম। ভবিষ্যতে আমিও এমপি বা মন্ত্রী হতে পারি। গাজীপুরের ও কাটাখালির মেয়রদের দিকে তাকান। বর্তমানে তাদের কী অবস্থা?
গত ১৮ জুলাই মেয়রের দপ্তরে এসেছিল চিঠিটি। এরপর এ চিঠির বিষয়ে এএইচএম খায়রুজ্জামান লিটনের পক্ষ থেকে স্থানীয় সরকার মন্ত্রণালয়কে বিষয়টি জানানো হয়।
এরপর স্থানীয় সরকার মন্ত্রণালয়ের উপসচিব মোহাম্মদ জহুরুল ইসলাম স্বাক্ষরিত এক চিঠিতে গত ২৪ আগস্ট শিক্ষা মন্ত্রণালয়কে চিঠি দিয়ে চেয়ারম্যানের বিরুদ্ধে বিভাগীয় ব্যবস্থা নিতে অনুরোধ করা হয়।
গত ২২ সেপ্টেম্বর শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের উপসচিব মোহাম্মদ আবু নাসের বেগ স্বাক্ষরিত নোটিশে হাবিবুর রহমানকে ১০ দিনের মধ্যে ব্যাখ্যা দিতে বলা হয়।
নোটিশে চেয়ারম্যান হাবিবুর রহমানকে উদ্দেশ্য করে বলা হয়, 'একটি গুরুত্বপূর্ণ পদে অধিষ্ঠিত থেকে রাষ্ট্রীয় মর্যাদার প্রতি উদাসীন এবং ঔদ্ধত্যপূর্ণ আপনার ধরণের মন্তব্য একজন দায়িত্বশীল সরকারি কর্মকর্তা হিসেবে সরকারি কর্মচারী বিধিমালা, ২০১৮ এর পরিপন্থি।'
এর আগে গত ২৬ জুলাই মেয়র খায়রুজ্জামানকে এ বিষয়ে ব্যখ্যা পাঠিয়েছিলেন বোর্ড চেয়ারম্যান হাবিবুর রহমান।
চেয়ারম্যানের দপ্তর থেকে পাঠানো ব্যখ্যায় বলা হয়, 'রাজশাহী শিক্ষা বোর্ডের চেয়ারম্যান প্রফেসর মো: হাবিবুর রহমান এর অনুরূপ (জাল/স্ক্যান) স্বাক্ষরে একটি আপত্তিকর পত্র রাজশাহী সিটি কর্পোরেশনের মাননীয় মেয়র বরাবর প্রেরণ করা হয়। উক্ত পত্রে রাজশাহী শিক্ষা বোর্ডের কোন স্বারক নম্বর ব্যবহার করা হয়নি। উক্ত পত্রটি উপশহর পোস্ট অফিস থেকে পোস্ট করা হয়েছে যা মেয়র মহোদয়ের দপ্তর হতে নিম্নস্বাক্ষরকারী অবহিত হয়েছেন। এখানে উল্লেখ্য যে, রাজশাহী শিক্ষা বোর্ডের সমস্ত অফিসিয়াল পত্র বোর্ড সংলগ্ন জি.পি.ও-৬০০০ হতে পোস্ট করা হয়। পত্রটিতে যে ধরণের প্যাড এবং ফরমেট ব্যবহার করা হয়েছে তা রাজশাহী শিক্ষা বোর্ডের কোন দাপ্তরিক পত্রে ব্যবহার করা হয় না। আরো উল্লেখ্য যে, রাজশাহী সিটি কর্পোরেশনের মেয়র মহোদয়ের নিকট শিক্ষা বোর্ডের চেয়ারম্যান সম্পর্কে বিভ্রান্তি তৈরির জন্য কে বা কারা উক্ত স্মারকবিহীন পত্রটি উপশহর পোস্ট অফিসে পোস্ট করেছে। বিষয়টি নিয়ে রাজশাহী শিক্ষা বোর্ড বিব্রত এবং তা তদন্তের দাবী রাখে। বর্ণিত পত্রের সাথে রাজশাহী শিক্ষা বোর্ডের চেয়ারম্যানের কোনরূপ সংশ্লিষ্টতা নাই। বিষয়টি মহোদয়ের সদয় অবগতির জন্য প্রেরিত হলো।'
বিষয়টি নিয়ে জানতে চাইলে রাজশাহী শিক্ষা বোর্ড চেয়ারম্যান মো. হাবিবুর রহমান বলেন, আমি এই ধরনের কোনো চিঠি মেয়রকে দিইনি। চিঠিটি কিভাবে গেল তা আমি জানি না। চিঠিটি মেয়র মহোদয় দেখানোর পর আমি তাকে বলেছিলাম, জা শ্বাশুড়ি শব্দটি আমি প্রথম শুনলাম। দায়িত্বশীল একটি পদে থেকে এরকম চিঠি লেখার প্রশ্নই আসে না। চিঠি আমি পেয়েছি। ব্যাখ্যা চেয়ে চিঠি দেওয়া হয়েছে। আমার পক্ষ থেকে ব্যাখ্যার উত্তর দিবো।
এ বিষয়ে সিটি মেয়র এএইচএম খায়রুজ্জামান লিটন জানান, মাস দুয়েক আগে তাকে শিক্ষা বোর্ড চেয়ারম্যানের পক্ষ থেকে তাকে এমন চিঠি দেওয়া হয়েছে।
'আমি এ বিষয়ে কিছু বলতে চাই না। চিঠি কেন দিয়েছেন তা-ও তিনি জানেন না। বিধি মোতাবেক যা হচ্ছে তাই হোক।'